নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক

Short Memory

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোহানকে ভালবাসা (ডায়রির পাতা হতে)

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:২০

ছোটবেলায় আমি অনেক লাজুক ছিলাম, এখনকার মত এত কথা বলতাম না, (দার্শনিকগিরির তো প্রশ্নই আসে না)। কিন্তু, আমার প্রকৃতিটা ছিল অনেকটা বাড়ির পোষা বিড়ালটার মত। মিনমিন করে মিয়াউ মিয়াউ করে গেলেও একদম পায়ে পায়ে কোল ঘেষে থাকে।

আমিও ছোটবেলা থেকেই সকলের সাথে মিশতে পারতাম, সবার সাথেই ছিল সদ্ভাব। হগগলেই আমার বন্ধু। বন্ধুদের আমি সেইরকম ভালবাসতাম (আরকি, এখনও বাসি)। বন্ধুর জন্য আমার চোখের পানি পড়েছে, বন্ধুর জন্য একবার অনেক বড় ত্যাগও স্বীকার করতে হইছে...কিন্তু বন্ধুত্বকে ত্যাগ করতে পারি নাই।



আমি আবার সরাসরি ক্লাশ ওয়ানে ভর্তি হই প্রি-ক্যাডেটে। প্রথম বন্ধুত্ব হয় সোহান নামে এক ছেলের সাথে। ক্যাডেটের হেডস্যার ছিল ওর চাচা। ওর বাবা-মা ছোটবেলাতেই মারা যায়, মানুষ হয় দাদার কাছে। এরপর চাচা ওকে তার কাছে নিয়ে আসে, ক্যাডেটে ভর্তি করায়। কিন্তু ও প্রতিদিন কাঁদত দাদার জন্য। ওর গল্প শূনে আমিও কাঁদতাম। চাচা ছিল ওর কাছে নেগেটিভ ক্যারেক্টার। একমাত্র ওর জন্য হেডস্যার অসাধারণ পড়াইলেও আমার কাছেও ছিল নেগেটিভ ক্যারেক্টার।

এরপর পরিচয় হয় ক্লাশের সেকেন্ড গার্ল নুপূর এর সাথে। (৫ বছরের মধ্যে শুধু ক্লাশ ফাইভ এর ফাইনাল ছাড়া সব পরীক্ষায় ফার্স্ট বয় ছিলাম আমি আর থার্ড বয় ছিল সোহান। আমাদের ৩ জনের মাঝে সেইরাম কম্পিটিশন হইত। মাগার প্রতিবারই রেজাল্টে র‌্যাঙ্কিং একই থাকত)। নুপূরের প্রসঙ্গ আসতেই বলে নেয়া ভাল- ও মেয়ে হলেও তখনও ছেলে-মেয়ে ব্যাপারটা বুঝতাম না, অন্তত আমি না। প্রেম-ভালবাসা তো আরও না। ও ধারণা আমার হয় আমার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে দেরিতে। সেই ক্লাশ ৭-৮ এ গিয়ে। সে কথায় পরে আসি। তো, আমরা ৩ জন এত বেশিই মজা করেছি, খেলধূলা করেছি যে, ছোটবেলার হইলেও সেইসব ভোলার না। সেই দোলনা, গোল্লাছুট, স্লিপার......এখনও চোখে ভাসে।



এরপরে ক্লাশ ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষায় আমি বৃত্তি পাইলেও হেডস্যার কোন টেকাটুকা না দেওয়াও ক্লাশ সিক্সে আমার বাপে আমারে ক্যাডেট থিকা বাইর কইরা নিয়া আসে। ওদের সাথেও আর যোগাযোগ থাকে না। তবে, পৃথিবীটা তো গোল। বহু বহুদিন পর ২ বছর আগে দৈবক্রমে আমার এক স্টুডেন্ট পড়াতে গিয়ে সোহানের খোঁজ পাই। ফোনে কথা বলার পর একদিন দেখাও করলাম- একজন আরেকজনকে তো চিনি না, এমনই অবস্থা। জানলাম আমি চলে আসার পরের ইতিহাস।

ও নূপুরকে অফার করেছিল। নুপূর একবার কইত- ফ্রেন্ড আছস, ফ্রেন্ড থাক, নাইলে কিন্তু আমি তোর লগে আর কথা কমু না। আবার কখনও কইত- তুই ছাড়া আমার কেউ নাই রে, তুই আমারে কত ভালবাসস রে...? নূপুর ভালবাসত এক ছেলেকে, এডিক্টেড। সেই ছেলের সাথে যেদিন ঝগড়া হইত, একমাত্র সেদিনই সোহানের কপাল খুলত। পাখি ফোন দিত- কথা কইতে, সময় কাটাইতে, সোহানের সেই সময় গুরুদায়িত্ব তার খারাপ মনরে ভাল করানো। চলতে থাকল বহুদিন।



সোহান একটা জব করত। ওর দাদাকে কাছে নিয়ে এসে রাখত। পাশাপাশি লেখাপড়া। কিন্তু, সোহান এর ধ্যান-জ্ঞান ছিল নুপূরই। হাত-খরচার টাকা বাঁচাইয়া যেই টাকা জমাইত তার উপর্যুপরি ব্যবহার করত নুপূরের জন্যে। জন্মদিনে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন থেকে শুরু করে ফোনে ফ্লেক্সিলোড পর্যন্ত সবই সে করত তার ভালবাসার জন্য। ভালবাসা তারে ভাল রকমের বাঁশ দিল ইন্টার পরীক্ষার সময়।

নুপূর বাসা থিকা ভাগছে ঐ পোলার লগে বিয়া করব। বাইর হইয়া খাইছে কট, পোলা দিছে চম্পট। মাইয়া এখন কি করে, কার কাছে যায়!! ফোন দিল সোহানরে। সব ঘটনা কইল। এরপর কইল- তুই এখন আমারে কোথাও নিয়া যা, নাইলে আমি আত্মহত্যা করমু।

সোহান সেই রাতে বাসা থিকা বাইর হইয়া নুপূররে জিগাইল- কই যাবি। কয়- কক্সবাজার। এরপর তাহারা দুইজনে রাতের গাড়িতে কক্সবাজার গেল। যাওয়ার পথে নুপূর সারা রাইত বাসে কাঁদল। সকালে পৌছাইয়া বিচে হাঁটাহাঁটি করল, নাস্তা করল, মন ভাল হইল। (তাই বইলা, সোহানের লগে কিন্তুক তেমন কথাও হইল না)। দুপুরে রওনা হইয়া রাতে ঢাকায় ফিরল। নূপূর কইল- আমি বাসায় কেমনে যামু, তুই কিছু কর। সোহান ফোন দিল বাসায়- কইল, ও আমার সাথে বের হইছিল। আমরা ঝোকের মাথায় ভুল করে ফেলছি। ওরে বকাঝকা কইরেন না। ওরে ফিরায় দিয়া গেলাম। এরপর বাসায় পৌছাইয়া সিএনজি থিকা নাইমা নুপূর সোহানরে কইল- থ্যাঙ্কস।



এতটুকুর ঘটনায় যদি একজন ফিল্মের দর্শক কিংবা নভেলের পাঠক হিসেবে দেখি, তাইলে দেখব- ঘটনাপ্রবাহে আমরা নুপূরকে দেখলাম, তার সাথেই আগালাম। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় সোহানের মনের অবস্থাকে দেখলাম না। গত রাতে নুপূরের ফোনে এতদিনের গড়া স্বপ্নচূড়ের কথাগুলো শোনার পরে সোহানের কি অবস্থা হয়েছিল? নুপূরকে বাচাতে সোহানকেই বের হতে হল।

আমরা নভেল পড়ি, ফিল্ম দেখি। অনেক সময় গল্পের ক্যারেক্টারের মধ্যে ঢুকে যাই, নিজেকে সেখানে নিয়ে কল্পনা করি। অনুভূতিগুলো নিজেকে দিয়ে ফীল করি। কিন্তু, কতটুকু পারি?? সোহানের মনে আসলেই কি ঘটেছিল, কতটুকু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সে বলা আমার পক্ষে সম্ভব না, বোধকরি একমাত্র হুবহু সেই পরিস্থিতি পড়েছে এমন ব্যাক্তি ছাড়া আর কারও পক্ষে বলা সম্ভব না। সেসব মন গড়ানো কল্প-কাহিনীতে যাব না। এতক্ষন নিশ্চুপ থাকার পর নুপূরকে বাসায় পৌছায়া দিয়ে বাসায় ফিরে সোহান রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিশব্দে কেঁদে চলল। সে রাতে সোহান ঘুমাল না। জীবনের এ প্রান্তে দাঁড়িয়ে হিসেব করে চলল চাওয়া-পাওয়া, লাভ-ক্ষতির।



ঘটনার ২ মাস পরেই সোহানের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সেসময় ও বলেছিল- নুপূরকে ও এরপরেও কল দেয়। কিন্তু, আগের মতই হঠাৎ হঠাৎ কথা হয়। হয়ত প্রতিবারই নিঃসঙ্গতা কাটাতে। এরপরে সোহানের নাম্বার নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ২-১ দিন কথাও হয়েছিল। এরপর আবার দীর্ঘ বিরতি। আমরা সবাই-ই আজীব। ব্যস্ততা আমাদেরকে বারবার সেই বানীকেই সত্য করে দেয়- 'Out of Sight, Out of Mind'। কেমন ক্করে যেন, আবারও সোহানের সাথে আমার যোগাযোগ হ'ল না। বহুদিন পর হঠাৎ এক কাজে ক্যাডেটের ওদিকে যেতেই সোহানের কথা মনে পড়ল। কল দিলাম, নাম্বার বন্ধ। পরপর কয়েকদিন ট্রাই করলাম- নাম্বার বন্ধ, আর কোনও নাম্বারও জানি না।

কিছুদিন আগে খবর পেলাম- নুপূর নয় সোহান আত্মহত্যা করেছে।



(লেখাটা এখানেই থামালাম। সব কিছুই লিখে প্রকাশ করা যায় না। সব মনের কথাও পড়া যায় না। সোহানের মনের সব কথাও আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। শুধুই এটুকুই বলার- দোস্ত, প্রথম বন্ধু তুই ছিলি। বন্ধুত্ব শিখিয়েছিলি তুই। সেই খেলাধূলা, আম চুরি, আমার জন্যে তোর বকা খাওয়া, দুপুরে ক্ষুধা পেলে হোস্টেল থেকে তোর লাঞ্চের খাবার নিয়ে এসে আমাকে খাওয়ানো.........কি করে ভুলি?? দোস্ত তোর খোঁজ় নিতে পারিনি, আমাকে ক্ষমা কর। দোস্তরে, তুই কেন চলে গেলি। তোকে যে বলা হয়নি- ভীষণ ভালবাসি তোকে। ভীষণ...)



ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ...... /:)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৩৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:




মন খারাপ হয়ে গেলো। আপনার বন্ধু যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

মষ্তিষ্ক প্রক্ষালক দার্শনিক বলেছেন: দোয়া করবেন।

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫

তওসীফ সাদাত বলেছেন:



মানুষ শুধুমাত্র মানুষ হতে শিখলে হয়তো এখানে ঘটনাটা অন্যদিকে যেতে পারতো..............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.