![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২টা ৪৩ মিনিট, হাতে ঘড়ি নাই, মোবাইলে সময় দেখে মোবাইল টা পকেটে রাখতে যাবে এমন সময় মোবাইল ভাইব্রেশন দিতে শুরু করে, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অপু ফোন দিয়েছে।
কল রিসিভ করতেই অপু -
- ওই তুই কই রে?
- সেলুনে
- সেলুনে কি করিস?
- ডিম পাড়তে আসছি, মানুষ তো সেলুনে ডিম পাড়তে আসে তাই না??
- ত্যানা পেছাইস না, কতক্ষন লাগবে?
- চুল কাটা হইছে, শেভ করবো তারপর।
- তারা তাড়ি করিস, তোরে বিশ্বাস নাই, আমরা যাচ্ছি তো??
- ওই শেভ কি জাদুমন্ত্র বললেই শেষ হয়ে যাবে? কই যাবার কথা বলছ?
- গাঞ্জা খাইছস নাকি?? দিনাজপুর যাচ্ছি তো??
- গাঞ্জা আমি খামু কেন, ওইটা তোর কাজ, হুম যাচ্ছি
- ওই কি বললি তুই? আমি গাঞ্জা খাই?
- গাঞ্জা না খাস, বিড়ি তো খাস ! ওই একই হইলো।
- এক না, বিড়ির মর্ম তুই কি বুঝবি। ভালোই হইছে মনে পড়ে গেল, আমার বিড়ি শেষ, কেনা লাগবে।
- ওই তোর প্যাঁচাল বন্ধ কর, দূরে গিয়া মর তোর বিড়ি নিয়া, এবার ফোন রাখ।
৪.৩০ এর দিকে অপু ফোন দিয়ে ঈশান কে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতে বলে।
ঈশান মার থেকে বিদায় নিয়ে আসে, দিনাজপুর ঈশানের কাজিনের বাসায় কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছে।
অপুর কাধে ব্যাগ, হাতে সাদা পলিথিনের ব্যাগ দেখে ঈশান বলা শুরু করে।
- কিরে ফকিন্নি? তোর হাতে এইটা কিসের পোঁটলা? কি ভিক্ষা করি আনলি। ?
- চুপ থাক হারামি, এইখানে আমার বিড়ি।
- কয় টাকার কিনলি? আকিজ বিড়ি কিনছস, তাই শরমে এমনে আনছিস। কি আর করবি যে দোকানে থেকে কিনছিস সেখানে এই ব্যাগ এর থেকে আর ভালো কি হবে, যা পাইছিস তাই অনেক। হে হে।
- ৭৪০ টাকার কিনছি, অনেক গুলা কিনলাম তাই এই প্যাকেটে দিছে, বিড়ির দোকানে কোনদিন কোন ব্যাগ জাতীয় কিছু দেখছস?
- শালার গাঞ্জা খোর, মানুষ খাইতে পায় না আর উনি ৭৫০ টাকার বিড়ি খায়, আমি ওই ৩০টাকা দিয়ে একটা চিপস খাইতে চাইলাম আর কি পচান পচাইলি, আর তুই !!
- বক বক কম কর, রিকশা ঠিক কর।
- রিকশা কেন? কোন পর্যন্ত ঠিক করমু? রিকশা করে কই জাবি? আবার বিড়ি কিনতে?
- তোর প্রিয়ার বাড়িতে যামু, শালা ট্রেন করে যামু তো তুমি সদর ঘাট পর্যন্ত ঠিক করবা?? আবে ওই প্রিয়া ডা কেডা?
- কেন চান্দু?? তোমার ডার্লিং??
- ওই ওর নাম নীলা, জানস না?
- নীলা হোক আর শিলা হোক, তোরে যা কইছি তাই কর।
রিকশা করে দুই ফ্রেন্ড কমলা পুর রেল স্টেশনে যায়, ঘড়িতে তখন ৫টা ৪৭মিনিট, শীতকাল তাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য কাউন্টার ৪/৫টা থাকার পর কেবল মাত্র একটা কাউন্টার থেকে টিকেট দেয়া হচ্ছে, তাতে আবার পুরুষ-মহিলা দুই লাইন হয়ে গেছে। অনেকে মহিলাদের দিয়েই টিকেট কাটিয়ে নিচ্ছে !!
ট্রেন ৭টার দিকে খুব বেশী দেরী নেই, অবশেষে ঈশান এর পালা, সে টিকেট কিনবে।
কাউন্টার থেকে জানানো হয় তৃতীয় শ্রেণী ছাড়া আর কোন টিকেট হবে। সে ফিরে আসে।
ঈশানকে ফিরতে দেখেই হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আসে, কেননা ঈশান দেখলে তার খবর আছে।
- কিরে টিকেট কই?
- নাই
- নাই মানে নাই?
- আমার বাপের সম্পত্তি নাকি চাইলেই দেবে?
- চেতস ক্যা?
- ১ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর, পাবলিকের গুতা, ঠাসা খাইতে খাইতে কাউন্টারে গেলাম টিকেট নাই। সাইড দিয়া আগে জিগাইছিলা তখন ভাবের ঠ্যালায় কথায় কয় না, লাইনে গিয়ে দাঁড়ান ! আগে কইলেই পারতো।
- এখন কি করবি?
- এখন পঙ্খিরাজ ভারা করমু, উইরা উইরা যামু। ওই তুই হাসছ কেন??
- ব্ল্যাকের টিকেট পাইছি, কেবিন তো ৫২০ করে, ১২০০ চাইসে, ৮০০ বললাম রাজি হয় না।
- তুই ৮০০ দিয়া এই লক্কর ঝক্কর ট্রেনে যা, আমি ওই ৮০০ দিয়া এসি বাসে যামু।
কতক্ষন তর্ক বিতর্কের পর ঠিক হল তারা গাবতলী থেকে শ্যামলী বা হানিফে করে যাবে।
কমলাপুর থেকে কোন বাস নেই, বাসে গেলে আবার মতিঝিল জেতে হবে। তারা সি.এন.জি খুজে।
মেজাজ ভয়ানক গরম তার উপর এবারো গাড়ি ঠিক করতে হয় ঈশানকে।
- ওই মামা গাবতলী যাবা?
- যামু।
- কত?
- ৪০০?
- ওই ব্যাটা গেছস জীবনে?? গাবতলী দিয়া দিনাজপুরের জন্য যাবার চেয়ার কোচে লাগে ৪৫০, আর এইখান দিয়া গাবতলী ৪০০??
- কত দিবেন?
- ১৫০ দিমু
- ৩৫০ তে যাবেন?
- ২০০ দিমু, গেলে যাও না গেলে বইসা থাক, টাকা পাখনা গজাইয়া উরে উরে আসবে
- চলেন।
সি.এন.জি তে ওঠার পর অপু সিগারেট ধরাতেই মুখ থেকে টেনে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়।
- এইটা কি করলি? ২২টাকা ওইটার দাম
- চুপ গাঞ্জা খোর, কথা বলবি না, আর যদি বিড়ি ধরাইস গেট খুলে এবার তোরে বাইরে ফালামু
- মামা যে খায়।
- এই জন্যেই তো কই এত গন্ধ কেন??
ওই মামা ওইটা বাইরে ফেলাও।
- মামা অর্ধেক শেষ
- ওই মামা নিভাও, পড়ে খাবা
- মামা শেষ করি এইটা।
- ওই ব্যাটা গাড়ি সাইড কর, যামু না তোর গাড়িতে।
- ঠিক আছে মামা, নিভাইতেছি
রাগে ঈশানের চেহারা লাল হয়ে আছে, হেড ফোন টা প্যাঁচ লেগে আছে বলেই নিজেই নিজের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করে ঈশান। ঈশান একেবারেই গান পাগলা, গান শুনতে না পারলে কেমন যেন পাগল হয়ে যায়। ঈশানের কাজে অপু হাসতেছে।
অপুর দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠে হাসি বন্ধ কর, নইলে তোর খবর আছে।
গাবতলী নামার কথা থাকলেও শ্যামলী তেই নেমে যায়।
রাত ১০.৩০ গাড়িতে ওঠে তারা। পরদিন ভোরে ৭টার আগেই তারা পৌঁছে যায়,
দিনাজপুরের বড় শহীদ মিনার থেকে খানিক দূরেই ঈশানের কাজিনের বাসা, সেখানে গিয়েই ঘুম দেয়, দু’জনের ঘুম ভাঙ্গে ১২টায়, তারপর খেয়ে দেয় ৩টার দিকে বের হয় ঘুরতে। প্রথম দিন আসে পাশেই ঘুরে বেড়ায়। বড় শহীদ মিনারের মাঠে বসে দুই ফ্রেন্ড আড্ডা দিতে শুরু করে।
হটাৎ পাশে এসে এক মেয়ে দাড়ায়
আরে অপু না? তুমি এখানে?
- হুম, ঘুরতে আসলাম
-তা কোথায় ভর্তি হলে?
-এন.এস.টি.ইউ তে, অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি তে
এই বাস ছেড়ে দিল, তাড়াতাড়ি আয়। ডাক শুনে আর কথা না বাড়িয়ে হাত নাড়িয়ে মেয়েটা চলে গেল।
ঈশান তো অবাক যে ছেলে মেয়ে দেখলেই নাক সিটকায় সে এভাবে কথা বলে, কিন্তু ওর সাথে অপুর পরিচয় কিভাবে?
- কিরে মামা, কে এইটা?
- ইনি ই সেই, যাকে নিয়ে তুই আমার সাথে বাজি লেগেছিলি
- মানে?
- আরে মফিজ, এই মেয়ের কারনেই আমি হাজী দানেশের ই.সি.ই তে চান্স পেয়েও ভর্তি হয় নাই। মেরিট পজিশনে এই মেয়েই আমার সামনে ছিল, ভর্তি হতে গিয়ে যখন এই মেয়েই সামনে পড়লো তখন তোর সাথে বাজির কথা মনে পড়ে যায়, তাই ভর্তি হই নাই।
- তুই আসলেই একটা খ্যাত, এত সুন্দরী একটা মেয়ে তুই ভর্তি না হয়ে বাজির কথা মনে করে চলে আসলি?? এই মেয়ের সাথে তোর বন্ধুত্ব হবে বলে বাজি লেগছিলাম, আজ আমি বলেই দিচ্ছি এই মেয়েই তোর গার্ল ফ্রেন্ড হবেই হবে। তুই যা নিয়েই এটাতে বাজি লাগাস না কেন আমি রাজি।
- তুই জানোস মেয়েদের আমার সহ্য হয় না, তার উপর এই শাক চুন্নি ৩২ পাটি দাত বের করে এমন ভাবে হাসে দেখলেই গা গুলিয়ে ওঠে, একে আবার ৪বছর সহ্য করতে হবে !!
- আরে ভোম্বল এইতো শুরু, তোমার গা গুলিয়ে ওঠে নাই ওনার সাথে তোমার কাছে স্পেশাল লেগেছে কিন্তু তুমি মেয়েদের দেখতে পারো তাই এমন ভাবে বলছ !! গাঞ্জা খোর এত সুন্দর একটা মেয়ে তাই বলস শাকচুন্নি !! তোর কাছে ওই বিড়ি ই সুন্দর।
- হ, আমার কাছে বিড়ি এই শাকচুন্নির থেকে সুন্দর, তা শাকচুন্নিরে যখন তোর এতই ভালো লাগছে তুই যা না।
- আরে ইয়ার, আমি তোর যায়গায় থাকলে কবেই যেতাম, মেয়ের নাম কি?
- নাম? তা কে জানে? তুই গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়, এখান থেকে এবার সর, আমি বিড়ি খামু।
- তোরে পাবনায় ভর্তি করা উচিৎ, খা খা ভালো করে খা।
এরপর দু জন মিলে বেশ খানিক খন রিকশায় করে, পায়ে হেটে শহর টা ঘুরে বেড়ায়, শহর টা বেশ বড়। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় অপু বলতে থাকে মেয়েটার নাম অর্পিতা হাসনাইন, ডাকনাম রুপন্তি।
- আর বাহ। তুই না নাম জানিস না?
- শেষ করতে দে। তখন নাম মনে ছিল না।
- বল।
ওর সাথে পরিচয় হাজী দানেশে পরীক্ষা দিতে গিয়ে, আমি ওর কথাই তোকে বলেছিলাম, তোর সাথে একে বাজি লেগেছিলাম আর দ্বিতীয়ত সামনে একটা মেয়ে থাকবে এটা আমার ভালো লাগছিল না। আর আমি ই কিনা হব ওই ডিপার্টমেন্টের লাস্ট স্টুডেন্ট তাই আর ভর্তি হই নাই। যাক গিয়ে বাদ দে। থার্ড পারসন নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না। আর তুই তো জানিস ই আমার মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা। সো বাদ দে। বাসায় চল খুব খিদা লাগছে।
পরেরদিন দিনাজ পুর থেকে কিছুটা দূরে স্বপ্নপুরীতে ঘুরতে যায় তারা, তার পরদিন দিনাজপুরের কয়লা খনি ঘুরে সন্ধ্যায় এক ফাস্ট ফুডের দোকানে বসে দুই ফ্রেন্ড খাচ্ছে।
- ওই রাক্ষস খালি খাবি না একটু কথাও শুনবি।
- তুই বড় পেইন দেস, খাইতে দে। পড়ে বলতে পারবি না? ফুরিয়ে যাচ্ছে নাকি?
- কাল হিলি যাব, পরের দিন যাব নীলফামারি নীল সাগর দেখতে।
- এখানে বেড়াতে আসছি না পুড়া উত্তর বঙ্গের ট্যুরে আসছি? কাল হয়তো বলে বসবি চল এখান থেকে বগুড়া তো কাছেই, ঘুরে আসি?
- খারাপ না, করা যায়। আরে সবচেয়ে কাছে এখানের রাম সাগর টাই তো ঘোরা হল না, কাল ওখানে যাব।
প্ল্যান মতই দুপুরে খেয়ে ঈশান আর অপু বের হয়, রামসাগরে থাকা রেস্ট হাউস টার ওখানে কিছু ফুলের বাগান আছে, তার পাশে দিয়েই একটা খাঁচায় হরিণ আছে। ঈশান সেদিকে প্রায় দৌড়ে ছবি তুলতে চলে যায়। অপু পিছন পিছন চলে যায়, গিয়ে দেখে ঈশান হরিণের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। অপু ওখান থেকে চলে এসে রেস্ট হাউসে রুম ভাড়া করে, আজ রাতে এখানেই থাকবে। ঘুরতে এসে যদি ভালো করে মজাই না হয় কেমন হবে, ঈশানকে আগে বললে রাজি হত না, তাই পড়ে বলে রাজি করিয়েছে।
সেখান থেকে ফিরে অপু আর রিকশায় উঠতে চায় না, বলে বাকি টুকু পায়ে হেটেই ঘুরব। রিকশা ছেড়ে কিছু দূর এগুতেই দেখে সামনে দীঘির এই ঘাট বাধানো অংশে শাক চুন্নি কয়েকজনের সাথে বসে আছে। অপুকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বলে “দেখ ব্যাটা তোর শাঁকচুন্নি তোর আসবার খবর আগেই জেনে গেছে। ” অপু ধাক্কা মেরে বলে “দূর হ এখানে থেকে”
শাকচুন্নি অপুকে দেখেই ফেলে। শাঁকচুন্নি ওদের দেখে কথা বলার জন্য আসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপুকে যেতে হয়, তার উপর ঈশান মিটি মিটি হাসছে। অপুর ইচ্ছা করছে রুপন্তি মেয়েটাকে নিয়ে দীঘির জলে চুবান দিতে। তার জন্য সিগারেট টা একটু খেয়েই ফেলে দিতে হয়েছে।
রুপন্তি তার বাকি দুই ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, একজন নিসা, আরেকজন স্বর্ণা, এখানে নিসার বাসায় বেড়াতে এসেছে। রুপন্তি বলা শুরু করে সেদিনের জন্যে সরি, আসলে ভার্সিটি এখান থেকে অনেক দূরে, ভার্সিটির কাজে এসেছিলাম। এখন ৪/৫ দিনের বন্ধ পেয়েছি তাই ভাবলাম নিসার বাসা থেকেই ঘুরে যাই।
অপুঃ নাহ, কিছু মনে করি নি, তা কবে এখানে এসেছ?
রুপন্তিঃ গতকাল সন্ধ্যায়।
অপু ছাড়া পাবার জন্যে উশ খুস করছে বিষয়টা খুব মজা লাগছে ঈশানের কাছে, এইতো সুযোগ ব্যাটারে বাঁশ দেয়ার। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সে, রুপন্তি আর অপু তোমাদের কথা বলতে মনে হয় মনে একটু অসুবিধা হচ্ছে, তোমরা ওদিক টায় ঘুরে আসো। আমরা এখানে আছি।
রুপন্তিঃ আসলে তোমরা এখানে ঘুরতে এসেছ কিন্তু আমি এভাবে তোমাদের বিরক্ত করছি, কাজ টা ঠিক হচ্ছে না মনে হচ্ছে।
রুপন্তির কথায় কিছুটা খুশি হয়েছে অপু, মনে মনে বলছে শাঁকচুন্নি এবার ছাড়া পাই আর তোর সামনে পড়ছি না। কিন্তু বিধি বাম। অপুর খুশি ভাব টা ঈশান বুঝতে পারে। মনে মনে বলে “মামা তুমি একটু আগে আমাকে বাঁশ দিলা, তুমি উত্তর পাবা না, তা তো হয় না”
রুপন্তি আর কিছু বলার আগেই ঈশান বলে ওঠে না, না, এসব কিছুই না, আজ রাতে আমরা এখানে মানে রেস্ট হাউজে থাকছি, তাই পরে আবার ঘুরে দেখতে পারবো না।
নিসাও সায় দেয়, ঈশান খারাপ বলে নি।
গতকাল ঈশান অপুর দুইটা সিগারেট ভেঙ্গে নষ্ট করে দিছে। তার আগের দিন নীল সাগর ঘুরতে গিয়ে অপুর ৩০০টাকার সিগারেট পানিতে ফেলে নষ্ট করেছে তাতেও অপুর এত রাগ হয় নি। অপুর তো রাগে ফেটে যাবার মত অবস্থা, ঈশানকে একবার বাগে পেলে হয় ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মত গুঁতো দিয়ে ওর ১৩টা বাজিয়ে দেবে। এদিকে বেনসন পাওয়াই দুষ্কর সেখানে অপুর ব্ল্যাক, ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক কিংবা গুদাং পাবার কোন চান্স ই নাই, অন্তত ছেলেটাকে কয়দিন সিগারেট থেকে দূরে রাখা যাবে। এই ভেবে কাজ গুলো করে ছিল ঈশান।
অপু আর রুপন্তি চলে যায়, রুপন্তির বিষয়ে খোজ খবর জেনে নেয় ঈশান। অপু আর রুপন্তি পুরোটা হেটে ঘুরে বেড়ায়। দুজনের মাঝে ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। অপুর নাম্বার নিয়ে নেয় রুপন্তি। প্রায় সাড়ে ৪ কিলো পথ দুজন একত্রে হেঁটেছে। অপু ফিরে আসার পর ঈশান অপুকে দেখে অবাক। বিন্দু মাত্র রাগ নেই ছেলেটার মুখে বরং বেশ হাসি খুশি।
রাত ১২টার পর দুই ফ্রেন্ড রেস্ট হাউজের বাইরে বের হয় ঘুরবার জন্যে, রাতে ঘুরে বেড়ানোর বদ অভ্যাস ওদের, দীঘির ঘাট বাধানো অংশে কি আড্ডা বাজি শুরু করতেই অপুর শাঁকচুন্নি রুপন্তি ফোন দেয়, অপু আর রুপন্তির মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। অপুর আগে থেকেই ইচ্ছে মেডিক্যালে পড়বে, রুপন্তির ও তাই ইচ্ছে। কথার সারমর্ম দাড়ায় তারা দুজন একই কোচিং এ ভর্তি হবে, আর একই সাথেই পরীক্ষা দেবে। অপুর কাছে জানতে চাওয়া হয় ওরা কবে ঢাকায় ফিরবে? অপু জানায় কালকের পরের রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করবে।
পরদিন রুপন্তি দেখা করে অপুর সাথে, জানায় ওদের সাথে সেও পরের দিন ঢাকা ফিরবে, তাই আজ ভার্সিটিতে চলে যাচ্ছে। পরদিন সকালে রুপন্তি ফিরে আসে, সারাদিন একসাথে ঘুরে বেড়ায়। রাত ১২টার বাসে তারা উঠবে। ঈশান আর অপু বিদায় নিয়ে আসে, এসে দেখে রুপন্তি বাস কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছে।
দেখেই অপু কে খোঁচা মেরে বলে মামা তোর শাঁকচুন্নি কিন্তু তোর পাশেই বসবে।
- মানে?
- আমরা তিনজন, ও আর তুই একসাথে, আর আমি পিছনে। রাতে তোর কাধে মাথা রেখে ঘুমাবে তোর শাঁকচুন্নি। মজা হবে না??
- তুই আমার বন্ধু না শত্রু?? শালা খালি বাঁশ দিস আমারে।
কোন কথা বলার চান্স না দিয়েই রুপন্তির সামনে এসে অপুর প্যাঁচাল শুরু করে রুপন্তির কাছে।
ঈশান তার প্ল্যান সফল করেই ছাড়ে। বলতে গেলে সারা রাত ই এই দুই ছেলে মেয়ে পটর পটর করে গেছে। সকাল বেলা এসে দুজনেই ঘুমিয়েছে।
তেজকুনি পাড়ায় রুপন্তির বাসা, অপু আর রুপন্তি দুজনেই ফার্মগেটের রেটিনায় ভর্তি হয়। ধীরে ধীরে তারা একজন আরেকজনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে মেডিক্যাল এর ভর্তি পরীক্ষা হয়ে যায়। অপু স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে আর রুপন্তি বারডেম এ অ্যাডমিশন নেয়। আর ঈশান ওদিকে জাহাঙ্গীর নগরে আগে থেকেই আই.টি তে পড়ছে। তাকে রি-অ্যাডমিশন নিতে হয় নি।
দেখতে দেখতে তারা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়। প্রায়ই একই সাথে ঘুরতে যাওয়া। পাশা পাশি চুপ করে বসে থাকা কিংবা পড়ার কারন দেখিয়ে প্রায়ই এক জন আরেকজনকে দেখার অজুহাত প্রতিদিনের ব্যপার হয়ে দাড়ায়।
একই বিষয়ে দুজন পড়ছে, পড়া নিয়ে আলোচনা, ঘুরতে যাওয়া, রাত জেগে আড্ডা মারা, এসব করতে করতে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক গাঢ় হয়ে যায়।
প্রায় বছর ২ পার হয়ে গেছে, বন্ধুত্ব ভালবাসায় রূপ নেয়, এর পিছনের ইতিহাসে আবার ঈশান।
তার ভালবাসার মানুষটি তার সাথে প্রতারণা করে, সে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে।
ঠিক এরকম একটি খবর কানে আসে অপুর, ঈশান এর সাথে নীলার সমস্যা চলছে শুনেছিল অপু কিন্তু বিষয় টা যে এরকম হবে ভাবে নি। বন্ধুর এই অবস্থা, যত ক্লাস আর পরীক্ষাই থাকুক, ওকে এখন সঙ্গ দিতেই হবে। রুপন্তির সাথে আজ অপুর দেখা করার কথা, অপু জানিয়ে দেয় আজ সে পারবে না।
অপুর হঠাৎ এরকম আচরণে রুপন্তি অবাক হয়ে যায়, সে ভেবে পায় না অপু কেন এমন করছে, অপুকে সে বার বার ফোন দিতে থাকে। বিরক্ত হয়ে অপু ফোন কেটে বন্ধ করে দেয়। অপুর কাজে রুপন্তি খুব কষ্ট পায়, সে কষ্ট পেয়ে হাত কাটে। ভাগ্যক্রমে রুপন্তির বান্ধবী সামিয়া বাসায় আসে। সে রুপন্তির এই অবস্থা দেখে অপুকে ফোন দেয় নাম্বার বন্ধ। বাধ্য হয়ে সে ঈশানকে ফোন দেয়। খুব রাগী ভাবে ঈশানের সাথে সামিয়া কথা বলে যেন এর জন্যে ঈশান ই দায়ী।
ঈশান হলের ছাদের উপর উঠে বসেছিল, পায়ের শব্দে ফিরে দেখে অপু এসেছে। ঈশান শুধু বলে আপনারা এখন ই আমার ক্যাম্পাসে চলে আসুন। এই টুকু বলে রেখে দেয়।
অপু কোন কথা না বলেই ঈশানের পাশে বসে পরে, ঈশান তখন ও চুপ। অপু ঈশানকে জড়িয়ে ধরতেই ঈশান কেঁদে দেয়। কিছুক্ষন পর সব আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
– ওদিকে চল
- ওদিকে কই যাবি?
- আরে চল, ভয় পাস নাকি?
- না, জিজ্ঞাসা করলাম আর কি
- জিমনেশিয়াম এর ওদিকে পুকুর পারে গিয় বসব।
- ঠিক আছে, চল।
ঈশান আর অপু পুকর পাড়ে গিয়ে বসার কিছুক্ষন পর রুপন্তি ফোন দেয়, তাকেও পুকুর পাড়ে আসতে বলা হয়। রুপন্তি কিছুক্ষন পর পিছনে এসে দাড়ায়। অপু ঘটনার আকস্মিকতায় উঠে দাড়ায়। এক জন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে ঈশান অপুর মাথায় চাটি মারে বলে, শালা আমার এখানে আসতে তোমার বউরে বলতে সমস্যা কি? দুজনের চেহারা দেখে ঈশান বুঝে এরা একজন আরেকজনকে ভালবাসলেও কেউ কিছু বলে নি। এক ছোট ভাইকে যেতে দেখে কিছুটা এগিয়ে এসে ঈশান ছেলেটাকে কি যেন বলে। ছেলেটা একটু পর ফিরে আসে।
ছেলেটার হাত থেকে গোলাপ নিয়ে অপুর হাতে দিয়ে অপুকে ইশারা করে।
- কি করবো এটা দিয়ে?
- এটাও আমারে বলে দিতে হবে?
- মজা করিস না তো
ঈশান বলে ওঠে বাবা ডাক্তার এবার তোমার রোগীকে সুস্থ কর, ফুল টা দিয়ে তাকে প্রপস কর। অপু চুপ চাপ দাড়িয়ে, আর রুপন্তি মিটি মিটি হাসছে। ঈশান আবার মাথায় চাটি মারে, অই তারাতারি কর। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তোদের যাওয়া লাগবে।
অপু প্রপস করে, তারপরের সময় টা অনেক হাসি খুসি ই যায়, আড্ডা দিয়ে, হাসি ঠাট্টায় সময় চলে যায়। ৬ টার দিকে ওরা সবাই চলে যায়।
সন্ধ্যার পর ঈশান হলের মাঠের এক পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছিল, জয় ঈশানের রুম মেট, সে পাশে এসে বসে। জয় বলে
- এটা কি করিস তুই? তুই যা সবাইকে না করতি, আজ তুই করিস? একটা মেয়ের জন্যে এরকম হবি?
- যা ঠিক আছে আর খাব না।
- ওরা আসছিল, ঘটনা কি রে?
- হা হা, উপর ওয়ালার যা করলো, আমার রিলেশন ভেঙ্গে দিয়ে আজ আবার আমার হাতেই আরেকটা রিলেশন গড়িয়ে দিল। হা হা।
জয়, ঈশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
এর পরের সময়টা অপু আর রুপন্তির জন্যে স্বপ্নের থেকেও সুন্দর হতে থাকে...
সারাদিন ই অপু আর রুপন্তির চড়ুই এর মত ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়।
২৭ নভেম্বর রুপন্তির বার্থ ডে, রুপন্তিকে সারপ্রাইজ দিতে হবে। সারপ্রাইজ দিতে চলে যায় রুপন্তির বাসায়। রুপন্তি দের বাড়িটা দোতলা, রুপন্তির রুমের একটা বারান্দা দক্ষিণ দিকে আরেকটা পূর্ব দিকে। যেহেতু দোতলায় বারান্দা, আর পাশে একটা নতুন বাড়ি হচ্ছে, সবে এক তলা করা হয়েছে। ওয়াল বেয়ে কোন মতে সেই বাড়ির ছাদে উঠে পড়ে অপু। কাল রুপন্তির কি যেন একটা পরীক্ষা আছে, সে পড়ছে দেখতে পাচ্ছে অপু। পড়ার টেবিল বারান্দা থেকে দেখা যায়। অপু ১২.০১ মিনিটের জন্যে অপেক্ষা করছে, ওহ ঘড়িটা এত আস্তে চলে কেন? মশা গুলো জামাই আদর শুরু করেছে। দেশে কি মশার মারার কোন ওষুধ নাই নাকি? না এই এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ম্যাপের বাইরে নাকি? ভাবতে গালে আর ঘাড়ে আবার মশার আদর। কষে গাল চর দিল না মশা মারলো বোঝা গেল না, এই এলাকার লোকের কি কুকুরের বদলে মশা পালে নাকি, ধুর, একে তো মশার জামাই আদর তারউপর কারো কাছে ধরা গেলে খবর আছে, আর রুপন্তির বাবা সেকেলে মানুষ, চৌধুরী সাহেব দের চেয়ে কম যান না...
এই বেজে গেল রে, ১২.০১... আর ৩০ সেকেন্ড... কল দিল রুপন্তির মোবাইলে... নেটওয়ার্ক বিজি...
ধুর শালার কপাল খারাপ... পরের বার কল দিতেই “আপনার একাউন্টে যথেষ্ট পরিমান টাকা...” ইচ্ছা হচ্ছিল মোবাইল টা ছুরে মারে... ব্যাটা হাঁদারাম আগের বার বললেই পারতি আমার ফোনে টাকা নাই, যা হবার হয়ে গেছে, একে তো শীতকাল বেশিক্ষন বাইরে থাকা যাবে না। রুপন্তির জন্যে আনার ফুলে অবস্থা টাইট ! কয়েকটা তো মনে রেল স্টেশন থেকে টিকেট কেটে ফিরেছে...
যাই হোক জানালার কাছে গিয়ে রুপন্তি ডাক দেয়, ওই রুপন্তি... বলেই বুঝল ভুল হয়ে গেছে, ফ্রেন্ড না সে গার্ল ফ্রেন্ড ডাকছে, ভালো ফ্রেন্ড হলে তুই ছাড়া যে চলে না সেই বদভ্যাস এখনো যায় নি। রুপন্তি এসেই ঝাড়ি
- “এটা কি বাজার পাইছ? চেঁচাও কেন? বাবা শুনতে পেলে কি হবে?”
জামার উপরের দিকটা একটু ডানে বামে টেনে অপু বলে
- ভয় পাই নাকি চৌধুরী সাহেব কে??
- কি বললা তুমি আমার বাবারে?
- কই, কিছু বলি নাই তো, আমার শ্বশুর মশাই না? কিছু বলতে পারি বল?
অপুর ন্যাকামি করা আদুরে ভঙ্গিতে বলা শুনে রুপন্তি ক্ষেপে যায়।
- ওই তুমি পাইছো কি? সারাদিন জ্বালাও, এখন আবার আসছ?
- কি আর করি বল? এই পাড়ায় একটা মেয়েরে প্রেম নিবেদন করতে আসছিলাম
- তা আমার কাছে কি? ধইরা রাখছি তোমারে?
- তোমাদের এলাকা তো মশার আড়ত, যে পরিমান জামাই আদর করলো, তাতে প্রেম নিবেদন করতে পারলাম না
- তুমি যাবা না বাবারে ডাকমু?
- ডরাই নাকি চৌধুরী রে? আসুক সে...
- তুমি, তুমি একটা...
- কি? কি আমি?
- কিছু বলার থাকলে বল, নইলে ভাগ এখন...
অপু একটা চকলেটের প্যাকেট আর হ্যাপি বার্থ ডে বলতে বলতে রেসলিং খেলা বিধ্বস্ত গোলাপের তোরা রুপন্তিকে দেয়।
কিছুটা একপাশে সরে আসাতে এতক্ষণে অপুর চেহারা টা ভালো করে দেখা যাচ্ছে, রুপন্তি হেসে ওঠে...
- হাসো কেন?
রুপন্তির হাসির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
- থামো, চৌধুরী চলে আসবে কিন্তু...
- আসুক চৌধুরী...
- এহরে আজ কপালে দুঃখ আছে আমার...
- যেমন তুমি, তেমনি তোমার গোলাপ...
- আমি আবার কি করলাম?
- বাড়ি গিয়ে নিজের চেহারা দেখে নিও, চেহারার কি করছো...
- যেমন চৌধুরী তেমনি তার মেয়ে, গেলাম আমি
- মদন বাড়ি পৌঁছে আমাকে ফোন দিও
- ফোনে টাকা নাই, গেলাম গো সুন্দরি,
যাবার আগে আরেকবার হ্যাপি বার্থ ডে বলে অপু...
নামার পথ খুজতে গিয়ে বুঝতে পারে রুপন্তি কেন হেসেছিল, সে গায়ে মুখে মশার সাথে ধুলো বালির মেকাপ করে উঠেছিল, আর ওয়ালের শেওলা দিয়ে সাদা বেজারের সুন্দর রঙ দিয়েছিল। তেমন চিন্তা ভাবনা না করেই উপর থেকে লাফ দেয়ার কথা ভাবে অপু, এক তলা উচু এ আর এমন কি। লাফ দিয়ে নিচে পড়ে, কিন্তু লাফে একটু গণ্ডগোল হয়ে পড়ে, তার উপর ভালো ঝামেলাই বাঁধিয়েছে পা তো মচকেছেই তারপর হাত কেটেছে পুরাতন টিনে। তাতেও যদি হত, কিন্তু আরও কিছু যে বাকি ছিল,কন্সট্রাকশনের কাজে ব্যবহার হওয়া কাঠের গায়ে থাকা পেরেক বিধেছে বাম পায়ের মাংস পেশিতে। কোন মতে টেনে হিঁচড়ে সেখান থেকে মেইন রাস্তায় উঠে এল। এই মুহূর্তে তার সাহায্য দরকার কিন্তু কাউকে যে ফোন দেবে তার অবস্থাও নেই, ফোনে টাকা নেই।
একটা ফার্মেসি খোলা পেয়ে তাতে গিয়ে বসলো, সেখানে হাত পায়ের কাটা ছেড়ায় ব্যান্ডেজ করলো আর ইঞ্জেকশন পুশ করা হল, কিন্তু পায়ের এই অবস্থার কি হবে ! সে সেই দোকান থেকে ঈশানের নাম্বারে কল দেয়, রাত বাজে তখন ১.৩০ টা, ঈশানের খবর নেই, কিন্তু পায়ের যা অবস্থা সে একা ফিরতেও পারবে না। পা ফুলে গেছে, ব্যথাও করছে, কোন মতে সেখানে রাত কাটিয়ে ভোরে ঈশানকে আবার ফোন দেয়।
ঈশান ঘণ্টা খানেক এর মধ্যেই চলে আসে। অপুরা ফোর্থ ইয়ারে উঠেছে মাস খানেক হয়েছে আর ওদিকে ঈশানের পড়া শেষ, সে দেশের বাইরে চলে যাবে ।
ঈশান হাসপাতালে নিয়ে যায়, পায়ের হাড়ে ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে, পায়ে প্লাস্টার করা হয়। অপু এতক্ষণ বেশ নরম সুরে কথা বললেও এবার চেচিয়ে ওঠে...
- ওই আমার পেট লোহা দিয়ে বানানো নাকি, খিদা লাগে না?
- কেন তোর শ্বশুর মশাই চৌধুরী সাহেব তোরে খাওয়ায় নাই?
- আমার খিদা লাগছে, খাওয়া ম্যানেজ কর
- আগে ভর্তির ঝামেলা মিটাই, তারপর
- মানে কি? আমি বাসায় যামু না?
- তোরে বাসায় কে নেয়? তোরে এই হাসপাতালে ফেলে রাখমু কিছু দিন
অপু চুপ হয়ে যায়, ভালো করেই জানে তর্ক করে কোন লাভ হবে না, এই ছেলেটা একবার যা বলবে তাই করবে, মাঝে মাঝে ইচ্ছা অপুর ইচ্ছা হয় মুরগীর গলার মত ঈশানের গলা চেপে ধরতে।
সব ঝামেলা মিটিয়ে দুই বন্ধু একসাথে খেতে বসে, তখন সব জেনে নেয় ঈশান। অপুর বাসায় ফোন করে ঈশান। ১২টার দিকে অপুর মা আসে। ছেলের এই অবস্থা কিভাবে হয়েছে জানতে চায় ঈশানের কাছে।
ঈশান ভুজুং ভাজুং দিয়ে পার করে দেয়। ঈশান চলে যায় বলে বিকালে আবার আসবো।
রুপন্তিকেও খবর দেয়া হয়েছিল, রুপন্তি বিকালের দিকে আসে।
- কি হে ডাক্তার সাহেব, এই দশা কেন? কেউ মেরেছে বুঝি?
- চৌধুরী মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, চৌধুরীর বাসার আশ পাশ তো পুরা ডাস্টবিন
- তুমি পাইছো কি? আমার বাবা কি ক্ষতি করছে তোমার? আমার বাবার সাথে চৌধুরী আসে কই থেকে?
- চৌধুরীদের মত বিশাল এক গোঁফ তোমার বাবার......
অপুকে আর কথা বলতে না দিয়ে হাতে থাকা ফুল গুলো দিয়ে অপুর উপর হামলা চালায়।
তুমি আজকের দিনটাই মাটি করে দিছ, একসাথে রিকশায় করে ঘুরতাম না উনি ঠ্যাং আকাশে তুলে দিয়ে বিছানায় আরাম করছে। আরও গোটা চারেক বাড়ি বসিয়ে বলে, কে যেতে বলছিল তোমাকে?
এমন সময় ঈশান রুমে আসে। বলে “
- ভালো করে পিটান, আমিতো আর কাল থেকে ওরে পিটাতে পারবো না, আমার ভাগের গুলোও আপনাকে করতে হবে”
- কেন ভাই কই যাবেন?
- এই ছাগল বলে নাই?
অপুর দিকে তাকিয়ে বলে কিরে? অপু সে সব ভুলে খেয়ে ফেলছে বুঝতে আর বাকি নেই,
আসলে কাল সকাল ৬.২০ এর ফ্লাইটে আমি সুইডেন চলে যাচ্ছি। এই শেষ দেখা বলতে পারেন আপনাদের সাথে।
অপু ঈশানকে উদ্দেশ্য করে
- ওই তুই আমারে আগে বলিস নাই কেন?
- গালি কি এখন দিমু না পরে দিমু?
- না থাক, পরেই দিস
কিছুক্ষন ওদের মধ্যে কথা হয়, খানিক বাদে রুপন্তি চলে যায়। খানিক বাদে ঈশান উঠে দাড়ায় দোস্ত এবার আসি রে, যেতে হবে। ভালো থাকিস, বলে ঈশান ঘুরে দাড়াতেই হাতে হ্যাঁচকা টান পরে।
অপু এতক্ষণ শুয়ে ছিল, একটু উঠে বসে... ধরা গলায় বলতে শুরু করে...
- তুই চলে যাবি? না গেলে হয় না?
- কি বাচ্চাদের মত করছিস?
- তুই কি আর ফিরবি না? কথা বল... আমার দিকে তাকা... আমাকে তোর মনে পরবে না?
অপুর চোখ জলে ছল ছল করছে, ঈশান পাশে বসতেই ঈশানের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে...
বাচ্চাদের মত কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে থাকে “তুই চলে গেলে কে আমাকে এভাবে দেখবে? কে আমাকে গালি দিবে? কে এভাবে রাত বিরাতে আমার কাছে ছুটে আসবে? তুই আর কোনদিন ফিরবি না আমার কাছে” ঈশান ও কাঁদছে...
অপুর থেকে বিদায় নিয়ে ঈশান চলে যায়।
কদিন পর অপু বাসায় চলে আসে, রাতে ছাদে এসে বসে থাকে। চিলেকোঠায় বসে আড্ডা দেয়া, ঈশানের গিটারের টু টাং শব্দ, ছাদে খোলা আকাশের নিচে ঘুমানো, তারা গোনা দিনগুলো হারিয়ে গেছে। নিজের অজান্তেই ঈশানকে মনে করে কাঁদে।
সময় পেরিয়ে যেতে থাকে, অপু আর রুপন্তি শেষ বর্ষে পড়ছে, একবছর ইন্টার্নি তারপর ই তারা ডাক্তার হয়ে বের হবে। রুপন্তির বাসায় ছেলে দেখা শুরু হয়ে যায়। অপু বাসা থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু রুপন্তির বাবা রাজি হন না, অনেক বুঝানোর পর সে রাজি হয়। ঠিক পরের ঈদে তাদের বিয়ে হবে।
বিয়ের আর মাস চারেক বাকি হঠাৎ ই রুপন্তির বাবা বেকে বসেন, মেয়কে অপুর সাথে বিয়ে দেবে না, রুপন্তির এক আত্মীয়ের কান পড়ায় এমন হয়। সে বলে রুপন্তির জন্যে আরও ভালো ছেলে পাওয়া যাবে। সব ঘটনা ঈশানকে জানায় অপু।
ঈশান বলে, তুই টেনশন করিস না, দরকার পড়লে চৌধুরীর মেয়রে ভাগিয়ে নিয়ে আসবো। অপু বলে কিন্তু ও এভাবে আসবে না। ফাইনাল ইয়ার শেষ করে ইন্টার্নি না দিয়েই অপু দেশের বাইরে চলে আসে। ভিসা ম্যানেজ করে দেয় ঈশান। দুই বন্ধু একসাথেই থাকে এখন।
অপু যে রুপন্তির বাবাকে চৌধুরী বলতো ভুল বলতো না, যেমন বাবা তেমনি মেয়ে। রুপন্তি অপুকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না, রুপন্তি তার মাকে দিয়ে অনেক বোঝায়। কোনদিন একটু খারাপ ব্যবহার করেনি তার বাবার সাথে। ভালবাসা দিয়ে আসলে সব ই জয় করা সম্ভব। কতদিন একটা মানুষ একটা আকুতি ফিরিয়ে রাখতে পারে। রুপন্তির বাবা অবশেষে রাজি হন। কিন্তু বছর একটি পেরিয়ে গেছে। রুপন্তির ইন্টার্নি শেষ। বিয়ের কথা ঠিক হয়ে যায় এবার। রোজার ঈদের পরের দিন বিয়ে হবে।
কাল ঈশান আর অপু দেশে ফিরবে, দু ফ্রেন্ড দুই চেয়ারে বসে গল্প করছে। অপুর ঘুম আসছে না, কিন্তু ঈশানের চোখ মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। ঈশান লাথি মেরে অপুরে ফেলে দিয়ে খাটে গিয়ে শুরু পরে...
অপু কোমরে হাত বুলাতে বুলাতে বলে---
- তুই লাথি দিলি কেন আমারে?
- আমারে ঘুমাতে দ্যাস না কেন?
- তোর ঘুম আমি ধইরা রাখছি?
- এতক্ষণ বক্তৃতা কে দিল?
অপু কিছু বলতে যাবে তাকে কথা বলতে না দিয়ে ঈশান উঠে বসে বলে...
- ওই বিয়া তুই করতেছিস আমি না, আমারে ঘুমাইতে দে, কাল রাতের ফ্লাইটে যেতে হবে, এখন ঘুমা।
- ধুর শালা, তুই ঘুমা, এত ঘুমাস ক্যামনে? জিবনে প্রথম বিয়ে করতে যাচ্ছি...
এবারো কথা শেষ করতে না দিয়েই ঈশান বলে ওঠে...
- কেন রে? আরেকটা বিয়ে করার সখ আছে নাকি?
- আমারে বাঁশ দেয়া ছাড়া তোর কোন কাজ নাই?
- তা থাকবে না কেন? ঘুমানো আছে, তা আর করতে দিলি কই?
- ঘাড়ে একটা শাঁকচুন্নি তুলে দিছিস, আর তার বাবা একটা চৌধুরী
- তা চৌধুরীর মেয়ে শাঁকচুন্নিরে বিয়ে করার এত সখ কেন? কালকের ফ্লাইট ক্যান্সেল করে দেই?
- ওই না
- তাইলে ঘুমাইতে যা, আমি লাইট নিভাইলাম, লাইট নিভাইলে তোর ভুতেরা এসে তোকে আদর করবে।
অপু ডাক্তারি পড়লে কি হবে, আজও তার ভুতের করে, বিশেষ করে যখন ঈশান খোঁচা দেয়, কারন একটা রাতের কথা বার বার মনে পরে। চুপচাপ লক্ষ্মী ছেলের মত এসে ঈশানের পাশ দিয়ে কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে। বাইরে হালকা তুষার ঝরছিল। ঈশান লাইট নিভিয়ে দিয়েছে এখন তেমন বোঝা যাচ্ছে না। জানালার কাচে বাইরের হালকা আলো পড়ছে, ঘোলাটে হয়ে আছে। ঈশানের দিকে একবার ফিরে আবার ঘুরে জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে।
কাল বাড়ির পথে পা বাড়াবে সে, ঈদে মায়ের হাতের বিরিয়ানি খাবে, চটপটি খাবে। বিয়ের সাজে রুপন্তিকে দেখবে, রুপন্তির হাত ভরা রাঙা মেহেদী। ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে অপু। পরদিন রাতের ফ্লাইটে তারা রওনা হয়... অপু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে... আর তো কিছু সময়ের অপেক্ষা... তার স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে... শালা ঈশান আস্ত একটা কুম্ভ কর্ণ খালি ঘুমায়, কই একটু ওর সাথে প্ল্যান করবে তা না ঘুমাচ্ছে... ইচ্ছে কষে একটা লাথি দিতে... কিন্তু তা সম্ভব না... অপু আবার বাইরের দিকে তাকায়... এই বুঝি যাত্রা শেষ হল... হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অপু আসছে... আসছে তার স্বপ্নগুলো জিতে নিতে...
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪৬
সাদা কলো বলেছেন: এত বড় কেন? দুই পর্বে দিলে ভালা হইত
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫২
রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: বিশাআআআআআআআল গল্প!!!যাক,এতক্ষণে শেষ হইছে