![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বিচার প্রশাসনের জন্য অতীব জরুরি। প্রসংগত বলে রাখি আমার এখানে এমন অনেক বন্ধু আছে যারা ল ব্যাকগ্রাউন্ড এর নয় তাদের জন্য এই লাইনটুকু, বার বলতে এডভোকেট দের বুঝায় আর বেঞ্চ বলতে বিচারক বা জজদেরকে বুঝায়। আমার পুর্ববর্তী আরেকটা লেখায় আমি রম্যভাবে জজ আর আইনজীবিদের মধ্যকার সম্পর্ক ও আলাপচারীতার কথা উল্লেখ করেছি, তাতে অনেক জজ মহোদয়েরা আমার উপরে রেগে আছেন কেননা আমি একজন আইনজীবি যদিও আমি নিজের পেশা নিয়েও অনেক মজা করেছি। বিষয়টা যদিও মজা করার জন্য লেখা তারপরও এই বিষয়টা অনেকেই সিরিয়াসলি নিয়েছেন কারন লেখক একজন আইনজীবি। আমার লেখাটা রম্য হলেও বিচারক এবং আইনজীবিদের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তব অবস্থা মোটেও এর চেয়ে বেশী ভালনা। আইনজীবি এবং বিচারকদের ভীতরে কথোপকথনের সময় উভয় পক্ষই একটা স্নায়ুচাপ অনুভব করে থাকেন, এই কারনে বিচারকরা মাঝেমধ্যেই আইনজিবিদের ধমক দিয়ে কথা বলেন। আইনজিবিরা যেহেতু আদেশের জন্য বিচারকদের মুখাপেক্ষী তাই মক্কেল ও পেশার কথা চিন্তা করে মুখ বুজে সহ্য করেন এই সব বকাঝকা। যদিও একজন আইনজিবি একজন কোর্ট অফিসার এবং একজন বিচারক শুধুই প্রিসাইডিং অফিসার দুজনেরই পদমর্যাদা একই, কাজেই একজনের আরেকজনের প্রতি অশ্রদ্বা নিজের প্রতি নিজেরই অশ্রদ্বার সামিল।
সম্প্রতি আমারই একটা পোস্টের প্রেক্ষিতে কমেন্ট করতে গিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য দেখা যায়। একজন আইনজিবি প্রতিনিধি হিসাবে আরেকজন বিচারকদের প্রতিনিধি হিসাবে বিতর্কে জড়িয়ে যান, যার প্রেক্ষিতে আমার আজকের লেখাটি যা ১৯৮৮ সালের "বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য অনুসরনীয় নীতিমালা" এর আলোকে:
Criminal Rules and Orders ( Practice and Procedure of Subordinate Courts) 2009 এর Rule- 667 এ নিম্ন আদালতের বিচারকদের Code of Conduct মানার বাধ্যবাধকতা তৈরী করা হয় এবং সাথে সাথে অত্র " ১৯৮৮ সালের বিচারকদের জন্য অনুসরনীয় নীতিমালা" গুলুকে Code of Conduct হিসাবে Appendix- II এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কি আছে এই নীতিমালায়? এইখানে ১৭ টি নীতি বর্নীত হয়। আমরা কথায় কথায় বিচারকদের পৃথিবীতে সৃস্টিকর্তার প্রতিনিধি হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকি। এই কথাটার ভিত্তি কি? আসলে এই বিষয়টি কোথাও লেখা আছে কিনা? Code of Conduct এর Rule - 17 এ যা আছে তার দুইটা লাইন তুলে দিলাম " তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা' লার প্রতিনিধিরুপে এই কঠিন দায়িত্ব পালন করিতেছেন। সুতরাং ভুলত্রুটি ও অবহেলার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত না হইলে তাহাকে মহান আল্লাহ তা'লার কাছে জবাবদিহি করিতে হইবে"
Rule- 4 এ বলা হয়েছে " একজন বিচারককে কেবলমাত্র দায়িত্ব পরিচালনার ক্ষেত্রেই নয় বরং ব্যাক্তিগত জীবনেও সত্যনিষ্ঠ ও আদর্শবান হইতে হইবে"
আইনজিবিদের সংগে আচরন সম্পর্কিত Rule- 7 হুবহু তুলে ধরলাম " বিচারকগন অবশ্যই আইনজিবিগনের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যাবহার করিবেন এবং তাঁহাদের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন যাহাতে বিচারপ্রার্থী জনগন, আইনজিবি, সাক্ষী প্রভৃতি ব্যাক্তিগনের সহিত সদ্ব্যবহার করেন সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখিবেন"।
এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা, আপনাদের সাথে শুধু একটা ঘটনা শেয়ার করব: আগামি ৩১ শে ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এ এফ এম আলী আসগর এর বিচারপতি হিসাবে শেষদিন হলেও উনি মুলত অবসরে গিয়েছেন ১৫ ই ডিসেম্বরে, বলে রাখা ভাল উনি একসময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজিবি সমিতির সেক্রেটারি ছিলেন। ওনার বিদায় অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেদিন ওনার অনেকগুলু বিনয়সুচক কথার থেকে একটা লাইন তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য, " যেদিন আমি বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলাম, সেদিন থেকে একটা বিষয় মাথায় ছিল আমি আইনজিবিদের সাথে সেই আচরনই করবো যেটা তারা একজন বিচারপতির কাছ থেকে আশা করে"।
উনি কিন্তু সত্য বলেছেন।
©somewhere in net ltd.