একটি দুঃস্ত লোকের ঘটনা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৮

মক্কায় একদিন যোহরের সালাতের সময়, একজন লোক সালাতের কাতারে ফাঁকা পূরণ করার জন্য আমকে তার পাশে দাঁড়াতে ডাকলেন। সালাতের পরে আমি আরামের জন্য একটু পিছনে সরে এসে বসলাম। সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল যে লোকটি হারাম শরীফ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে দুঃস্থ লোক। লোকটির হাত তখন তার দুই উরুর উপর ছিল, এবং খুশু সহকারে দুয়াতে মনযোগী ছিল। তাকে খুব মুত্তাক্বী মনে হল।



আমি আমার পকেট থেকে টাকা বের করলাম, যেখানে ১, ৫ ও ১০ রিয়ালের নোটগুলো ভাঁজ করা অবস্থায় ছিল। আমি একটা ৫ রিয়ালের নোট বের করে হাতের মুঠোতে রাখলাম। আমি তখন তার সাথে হাত মিলাতে হাত বাড়িয়ে সামনে গেলাম। তিনিও হাত বাড়িয়ে হাত মিলালেন, কিন্তু যখন আমার হাতের টাকাটা অনুভব করলেন তৎক্ষণাৎ হাতটি সরিয়ে নিলেন এবং বললেন ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’, তিনি দেখলেন না যে সেখানে কত টাকা ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কি এটা নেবেন না?” লোকটি তখন কোন উত্তর না দিয়েই সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তখন আমি বুঝলাম যে তিনি আমার টাকা নেবেন না। তাই আমি টাকাটা আমার পকেটে রেখে দিলাম।



আমি তখন আরো কিছুক্ষণ বসে সুন্নাত সালাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু সেই লোকটি আমাকে কিছু বলার জন্য আমার সালাত শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলেন। সালাত শেষ হলে লোকটি আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি আমাকে কত দিয়েছিলেন?” তাই আমি বললাম, “আমি আপনাকে যা দিয়েছিলাম তা আপনি যেহেতু নেন নি, তাই সেখানে ১ রিয়াল না ১০০ রিয়াল ছিল তা নিয়ে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই।”



লোকটি আবারো বললেন, “আমি আপনাকে আল্লাহর নাম নিয়ে বলছি, আমাকে বলুন আপনি আমাকে কত দিয়েছিলেন?” আমি জবাব দিলাম, “আমাকে আর জিজ্ঞাসা করবেন না, আপনার আর আমার মধ্যে যা ঘটেছে তা শেষ।” তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর কাছে ৫ রিয়াল চেয়েছিলাম, আপনি আমাকে কত দিয়েছিলেন?” আমি বললাম, “আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমি আপনাকে ৫ রিয়ালই দিয়েছিলাম।”



এই কথা শুনে লোকটি কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, “আপনি যখন আমাকে টাকাটা দিচ্ছিলেন তখনো আমি আল্লাহর কাছে ৫ রিয়াল চাইছিলাম।” আমি বললাম, “তাহলে কেন আপনি তা নিলেন না?” তিনি আবারো জবাব দিলেন, “আমি এটা আশা করিনি যে, আমার দুয়া এত তাড়াতাড়ি কবুল হবে। তাই আমি ‘সুবহান আল্লাহ’ বলার জন্য মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম।” (সংগৃহীত)

২ টি +২/-০