![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইভি লীগ। এটা কোন রাজনৈতিক দলের নাম না, এটা হচ্ছে আমেরিকার সবচেয়ে এলিট ৮টা ইউনিভার্সিটির লীগ।
হলিউডের মুভি দেখতে গেলেই মাঝে মধ্যে ‘আইভি লীগ’ কলেজ এর কথাটা শোনা যায়। এই কলেজগুলোর খ্যাতি, প্রভাব এবং চাহিদা এতোই বেশি যে আপনি যদি আইভি লীগ কলেজে পড়েন, তবে ধরে নেয়া হবে যে আপনি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক হোমরা-চোমরাদের কেউ হতে যাচ্ছেন। কারণ, এখানে যারা চান্স পায় তাদের হয় ঈশ্বর-প্রদত্ত মেধা থাকে অথবা, তাদের বাপ-দাদার নাম, ক্ষমতা এবং প্রচুর টাকা-কড়ি থাকে, অথবা দু’টোই। গরীব ঘরের জন্ম হলে ধরে নিতে পারেন যে আপনি এই ভার্সিটিগুলোতে পড়ার সুযোগ পাবেন না। ২০১৩ সালে ফোর্বস পত্রিকার জরিপে দেখা যাচ্ছে এই কলেজগুলোর ৪৬% ফ্রেশম্যান স্টুডেন্ট এসেছে আমেরিকার টপ ৩.৮% ধনী ফ্যামিলি থেকে। এই ফ্যামিলিগুলোর ইনকাম বছরে ২,০০,০০০ (দুই লাখ) মার্কিন ডলার বা তারও বেশি।
আলোচনার সুবিধার্থে প্রথমেই এই আটটা কলেজের নাম জানিয়ে রাখি:
১. হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি (ম্যাসাচুসেটস)
২. ইয়েল ইউনিভার্সিটি (কানেটিকাট)
৩. প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি (নিউজার্সি)
৪. কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি (নিউ ইয়র্ক)
৫. ব্রাউন ইউনিভার্সিটি (রোড আইল্যান্ড)
৬. ডার্টমাউথ কলেজ (নিউ হ্যাম্পশার)
৭. ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া ওরফে ‘পেন’ (পেনসিলভানিয়া)
৮. করনেল ইউনিভার্সিটি (নিউ ইয়র্ক)
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাপে কলেজগুলোর অবস্থান খেয়াল করলে দেখবেন এগুলোর সবই আছে উত্তর-পূর্ব কোণায় সাগরের ধার ঘেঁসে। এর কারণ, এই কলেজগুলোর সাতটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো আমেরিকা স্বাধীন হবার আগে, ব্রিটিশ কলোনিগুলোতে। এই সাতটা কলেজের শুরুর ইতিহাসকে ‘ডি নোভো’ বলা হয়, কারণ, এদের কোন প্যারেন্ট অর্গানাইজেশান ছিলো না। ( de novo অর্থ: নতুন থেকে শুরু করা)।
বুঝতেই পারছেন, এই কলেজগুলো খুবই পুরোনো, আর পুরোনো হলেই ভাব-গাম্ভীর্য বাড়ে। তবে, টাকা-পয়সা, জনপ্রিয়তা যা আছে সেটা এসেছে একটু ভিন্ন জায়গা থেকে এবং অনেক পরে। সেটা হলো ইন্টার-ভার্সিটি অ্যাথলেটিকস টুর্নামেন্ট। হ্যাঁ, এই ভার্সিটিগুলো আজকে যে অবস্থানে তার মূল কারণ হলো খেলা-ধুলা।
ঠিকঠাক বলতে গেলে, ১৯৫৪ সালে ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশান-এর ‘ডিভিশান ওয়ান’ গঠন করার পর থেকে। এই খেলায় স্পন্সর এবং ডোনারদের দেয়া টাকা থেকেই কলেজগুলো দ্রুত প্রতিপত্তি এবং সম্মানে বাড়তে শুরু করে। ‘আইভী লীগ’ কথাটার লীগ শব্দটা এসেছে এই খেলার ডিভিশান থেকেই। ফুটবলে যেমন প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লীগ আছে, তেমন।
তবে এই আইভি শব্দটার ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৮০০ সালের দিকে ঐ ‘ডি নোভো’ ভার্সিটিগুলোতে ‘প্লান্টিং দ্য আইভি’ নামে একটা ট্রাডিশান চালু করা হয়। এই ট্রাডিশানটা হলো নতুন অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার শুরুর দিনে ভার্সিটির দেয়ালের পাশে আইভি লতার গাছ লাগিয়ে ‘ক্লাশ ডে’ পালন করার উতসব।
এই আইভি রোপন উতসব পালন করা ভার্সিটিগুলোকে ১৯৩৩ সালে নিউইয়র্ক ট্রিবিউনের ক্রীড়া সাংবাদিক স্ট্যানলি উডওয়ার্ড একশব্দে বলেন ‘আইভি কলেজেস’। এটাই ঐ কলেজগুলোকে বোঝাতে আইভি শব্দটার প্রথম প্রয়োগ। আর আইভি লীগ কথাটা প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৩৫ সালে ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর পত্রিকায়। সেখান থেকেই আইভি লীগ কথাটা চলে আসছে।
যাহোক, এটা নিশ্চই বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই কলেজগুলো শুধু নামের উপর ভর করে চলে না, এগুলো থেকে যেসব গ্রাজুয়েট বের হয় প্রত্যেক বছর তাদের সবাই পৃথিবীর কোন না কোন জায়গায় অবদান রাখে। আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন প্রিন্সটনের শিক্ষক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ জন প্রেসিডেন্ট কোন না কোন আইভি লীগ কলেজের গ্রাজুয়েট। কোন ভার্সিটি থেকে কত জন নোবেল জিতেছেন সেই লিস্টে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি একেবারে প্রথমে (১৩৩ জন)। দ্বিতীয় স্থানে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি (৯৮ জন)। প্রথম দশের ভেতর ইয়েল আর করনেল আছে। প্রিন্সটন আছে চৌদ্দ নম্বরে।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কি না, এম.আই.টি. এবং ক্যালটেক কিন্তু আইভি লীগ কলেজের কাতারে পড়ে না।
©somewhere in net ltd.