নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নুসরাতের ব্লগ

আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি।

নুসরাত জাহান ডায়না

আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি।

নুসরাত জাহান ডায়না › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্কিমের নায়িকারা - ১ : কৃষ্ণকান্তের উইল।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৪

এ উপন্যাসের অন্যতম আলোচিত চরিত্র এবং বাংলা সাহিত্যের এক অমর চরিত্র হচ্ছে রোহিনী।

উপন্যাসের শুরুতেই রোহিনীকে আমরা পাই একজন বাল্য বিধবা রূপে। অসাধারণ সুন্দরী, সর্ব কাজে পটু, তার কিছু দোষও তুলে ধরা হয় উপন্যাসে এভাবে যে,

দোষ সে কালা পেড়ে ধুতি পরিত, হাতে চুড়ি পরিত, পানও বুঝি খাইত।

প্রথমেই সে কৃষ্ণকান্তের সঙ্গে প্রতারণা করে হরলাল কে বিয়ে করার জন্য। যদিও এখানে রোহিনীর সাথে হরলালকেও দোষী করা যায়। হরলাল ও রোহিনীর সাথে প্রতারণা করে। তাই বলে যে, ''আমি যাই হই--কৃষ্ণকান্ত রায়ের পুত্র, সে চুরি করিয়াছে তাহাকে কখনো গৃহিনী করিতে পারিব না।''



তারপরই সে প্রেমে পড়ল কৃষ্ণকান্ত রায়ের ভাতুষ্পু্ত্র গোবিন্দলালের। বঙ্কিমের ভাষায়, ''তুমি বসন্তের কোকিল। প্রাণ ভরিয়া ডাক, তাহাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার প্রতি আনুরোধ সময় বুঝিয়া ডাকিবে।''



এখানে এসে আসলেই রোহিনীর মত মেয়ের উপর দয়া হয়। প্রেমে পড়লে সোনা খাঁটি হয়-- এমতেই রোহিনী গোবিন্দলালের জন্য নিজের করা দোষ স্বীকার করে। গোবিন্দলালও তার প্রতি করুণাবশত তাকে মুক্ত করতে চায় কৃষ্ণকান্তের শাস্তি থেকে। তখনই রোহিনী গোবিন্দকে নিজের ভাল লাগার কথা বলে ফেলে। লেখক এখানে গোবিন্দলাল এবং রোহিনীর প্রেমকে অনেকটা পবিত্র রূপে উপস্থাপন করে। যার কারণে দেখা যায় , রোহিনী গোবিন্দকে পাবে না জেনে আত্নহত্যা করতে যায়। আর তাতেই গোবিন্দলাল রোহিনীর প্রেমে পড়ে যায়।



রোহিনীর কূটিলতার অন্যতম উদাহরণ যখন সে ভ্রমরের (গোবিন্দলালের স্ত্রী) ভুল ভাঙাতে না গিয়ে বরং তার বেদনা আরো বাড়িয়ে দিতে যায়। তার ভাষায়,

'' লোকে যতটা বলে ততটা নহে। লোকে বলে, আমি সাত হাজার টাকার গহনা পাইয়াছি। মোটে তিন হাজার টাকার গ হনা আর এই শাড়ি খানা (ধার করা) পাইয়াছি।''

এভাবেই সে ভ্রমরের মনোবেদনা শতগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গেল।



রোহিনীর কূটিলতার চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় যখন সে তারেকেশ্বরে হত্যা দিতে যাবার নাম করে যশোর গিয়ে গোবিন্দ লালের সাথে থাকতে শুরু করে। রোহিনীর কূটিলতা েবং অদম্য সাহসের জন্য বারে বারে সে ভুল গুলো করছিল। এমনই ভুল আবার করল যখন সে নিশাকরকে পছন্দ করতে শুরু করল।তার ভাষায়,



'' --- আ মরি! কি চোখ! এ কোথা থেকে এল? হলুদ গাঁয়ের লোকত নয়- সেখানকার সবাইকে চিনি। ওর সাথে দুইটি কথা কইতে পাই না? ক্ষতি কি- ''



এভাবেই সে নিজেকে আবার ভুলের পথে নিয়ে গেল। সে বিশ্বাসঘাতিনী না হলেও মনের সততা সম্ভ্রম চলে গিয়েছিল।

হাতে নাতে গোবিন্দলালের কাছে যখন সে ধরা পরে গিয়েছিল তখন গোবিন্দলালা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে,

'' কেমন মরিতে পারিবে?'' রোহিনী পারিল না। কেন না যখন সে বরূণীর জলে ডুবে মরতে গিয়েছিল তখন সে গোবিন্দলালকে ভালবেসেছিল এবং না পাওয়ার আশংখ্যায় মরতে গিয়েছিল। এখন পারেনি কারণ সে গোবিন্দলালকে পেয়েছে এবং সেসাথে অন্য একজনকেও মনে ধরেছে। রোহিনীরা সাধারণত এ ধরণেরই হয়ে থাকে।

বঙ্কিম এ চরিত্রটিকে খল বা কূটিল চরিত্র হিসেবে রূপায়িত করেছেন এক ধরণের সহানুভূতি নিয়ে। সে কূটিল কিন্তু সেই কূটিলতার পেছনের কারন গুলো ও দেখিয়েছেন অত্যন্ত সূচারূভাবে আর সুন্দরভাবে। যার কারণে রোহিনীকে ঘৃনা করতে চাইলেও ঘৃনা করা যায় না। এখানেই বঙ্কিমের কৃতিত্ব।



এই উপন্যাসের অন্যান্য নারী চরিত্রের মধ্যে আরেকটি নারী চরিত্র ভ্রমর। উপম্যাস ব্যাপী তার বিস্তার। তার কারণেই রোহিনীকে সংজ্ঞায়িত করা গেছে কূটিল হিসেবে। বঙ্কিম সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন চরিত্রকে অঙ্কিত করেন ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে। কিন্তু দুটি চরিত্রের দুর্লতম দিক গোবিন্দলালের কাছে এসে একাকার হয়ে গেছে।

ভ্রমর:

উপন্যাসের এই চরিত্রটি গোবিন্দলালের স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত স হজ সরল গৃহবধূ যার কাছে স্বামীই সব। তার মতে স্বামীকে অবিশ্বাস করতে নেই, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই স্বামীকে অনুসরণ করা স্ত্রীলোকের ধর্ম।

তার সরলতার একটা উদাহরণ, যখন রোহিনীকে চুরির দায়ে বন্দী করল কৃষ্ণকান্ত, তা শুনে গোবিন্দলাল বলল যে, সে বিশ্বাস করে না রোহিনী চুরি করতে পারে। তখন ভোমরা ও বলল সেও বিশ্বাস করে না। তখন গোবিন্দলাল জিজ্ঞেস করল, কেন? তখন ভোমরা উত্তর করল না। কারণ তার বিশ্বাস গোবিন্দলালের বিশ্বাস বলে।

ভ্রমর কোনদিন বিশ্বাস করে নি যে গোবিন্দলাল রোহিনীকে ভালবাসতে পারে। এটা টার চিন্তারই বাইরে। ভ্রমর গোবিন্দলালকে বিশ্বাস করত বলেই যখন গোবিন্দলাল বন্দরখালী গেল চাকরাণী স হ প্রত্যেকের এক এক কথা শুনে সত্যি জেনেও বিশ্বাস করতে চায়নি। বরং যারা বলেছে তাদের উপর ক্ষেপে যেত। ভ্রমর কাঁদতে কাঁদতে ভাবত ,

'' হে সন্দেহ ভঞ্জন !! হে প্রাণাধিক!! তুমে আমার সন্দেহ তুমি আমার বিশ্বাস !! আজ কাহাকে জিজ্ঞেসা করিব? আমার কি সন্দেহ হয়? ...''

এভাবেই সে নিজেকেই প্রবোধ দিয়েছে। এখানেই বঙ্কিমের বড় কৃতিত্ব। নারী মনের কথা তিনি অতি স হজেই ব্যাখ্যা করেছেন।

গোবিন্দ যখন ভ্রমরকে কোন দোষ ছাড়া ত্যাগ করে যাচ্ছিল তখনো সে কিছু বলতে পারেনি। কারন সে এত আঘাত পেয়েছিল সে সে মূর্ছিতই হয়ে পড়ল। এইখানেই রোহিনীর সাথে তার বৈপরিত্য। রোহিনী হলে এখানে সে অনেক ধরণের কৌশল খাটাত।

গোবিন্দলালকে শেষ পর্যন্ত ভ্রমরের কাছে ফিরতে হল। এভারে বঙ্কিম ভ্রমরকে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেন বলছেন সত্যেরই জয় হয় শেষ পর্যন্ত। ভ্রমর সরলটার গুণে যেমন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র তেমনই রোহিনীও কূটিলতা বা কৌশলতার গুণে প্রধানা হয়ে উঠলেন। তবে তাঁদের কোন চরিত্রকেই ফেলা যায় না। ভ্রমরের সরলতার পরিণতি দেখে যেমন দু্ঃখ হয় তেমনই রোহিনীর কূটিল রূপ দেখে ঘৃণা হয়না।

সেকালের সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে দু'টি চরিত্রই স্বয়ংসম|পূর্ণ দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। বঙ্কিম বলেছেন এভাবে,

'' যখন প্রসাদপুরে গোবিন্দলাল রোহিনীর সংগীত স্রোতে ভাসমান, তখই ভ্রমর তাহার চিত্তে প্রবল প্রতাপযুক্তঅধিশ্বরী-ভ্রমর অন্তরে রোহিনী বাইরে। তখন ভ্রমর অপ্রাপণীয়, রোহিনী অত্যাজ্যা, - তবুও ভ্রমর অন্তরে, রোহিনী বাইরে। তাই রোহিনী অত শীঘ্রই মরিল।''

এখানে যদি জেন্ডার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করি , ব্যাখ্যা করাটাই বৃতা হবে। কেননা জেন্ডারের দৃষ্টিকোণ থেকে ভ্রমরকে বলবে যেহেতু গোবিন্দলাল তোমার সাথে প্রতারণা করেছে সেহেতু তার জন্য তোমার সম্পূর্ণ জীবনটা উৎসর্গ করা ঠিক হয়নি। কিন্তু সে সময়ের প্রেক্ষাপটে নারী চরিত্রগুলোর পারিপার্শ্বিক অবস্থান অনুযায়ী বঙ্কিম তাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলে ছিলেন। তখনকার সমাজে নারীদের গণ্ডি বড়ই ছোট ছিল। তখন পতির সাথে সহ মরণে যেতে হত। সেই যেই হোক সকল হিন্দু নারীরই এই বিধান ছিল। যদিও রাম মোহন রায় সতীদাহ প্রথা রোধ করেছিলেন। সুতরাং জেন্ডার বিশ্লেষণের মূল ভিত্তি সময়, অবস্থান , সমাজের গতি প্রকৃতি অনুসারে এটাই ছিল তখনকার জেন্ডার বাস্তবতা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫৪

এটি এএমডি এর নতুন ফিউশন ট্রিনিটি প্রসেসর বলেছেন: ব্লগ এ স্বাগতম,লেখাটি ভাল লাগল ......হ্যাপি ব্লগিং !:#P !:#P !:#P

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫৯

নুসরাত জাহান ডায়না বলেছেন: thanks....!!

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৫

জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব্ বলেছেন: রাজনীতি বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করিয়া আপনি বঙ্কিমের রোহিনী চরিত্র বিশ্লেষন করিয়াছেন উহাই বাহব পাইবার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান করি। আমি সাহিত্যের পাঠকমাত্র, বিশ্লষক নহে। তথাপি আপনার আলোচনা পড়িয়া অনকেকিছুই বুঝিতে পারিলাম।

হ্যাপি ব্লগিং

৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:২৮

রাইসুল সাগর বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। বঙ্কিম চন্দের উপন্যাস এর আলোচনা নিয়ে আমি কিছু বলবো না। তবে বুঝতে পারছি অনেক কিছু।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। আমাদের সামু ব্লগ পরিবারে আপনাকে সু-স্বাগতম। ভালো থাকবেন, আর

আমন্ত্রন রইল আমার ব্লগের বাড়ি
নইলে কিন্তু দিবো আড়ি। :-P

নাহ্‌ থাক আপনি নতুন তাই আপনার সাথে আড়ি দিবনা আপু। শুভকামনা রইল রাশি রাশি

হ্যাপি ব্লগিং।

৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৬

নুসরাত জাহান ডায়না বলেছেন: dhonnobad amake shagotom jananor jonno!!.....onurod korbo amar likhar vul,truti,valo laga,mondo laga guli sorasori janale...jate ami aro valo korar sasta korte pari.....!!!

৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৪৭

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: লেখাটা ভাল লাগল।চালিয়ে যান।হ্যাপি ব্লগিং।

৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৮

কৃষকবাবু বলেছেন: তবুও ভ্রমর অন্তরে, রোহিনী বাইরে। তাই রোহিনী অত শীঘ্রই মরিল।''
শুভকামনা থাকলো,,,,,

৮| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৯

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন: শুভেচ্ছা।

৯| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫৪

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
খুব ভালো লিখসেন
শুভকামনা :) ||

১০| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:১৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন: '' যখন প্রসাদপুরে গোবিন্দলাল রোহিনীর সংগীত স্রোতে ভাসমান, তখই ভ্রমর তাহার চিত্তে প্রবল প্রতাপযুক্তঅধিশ্বরী-ভ্রমর অন্তরে রোহিনী বাইরে। তখন ভ্রমর অপ্রাপণীয়, রোহিনী অত্যাজ্যা, - তবুও ভ্রমর অন্তরে, রোহিনী বাইরে। তাই রোহিনী অত শীঘ্রই মরিল।''

হ্যাপি ব্লগিং।

১১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ২:২৯

সকালবিকাল বলেছেন: কি বলিব বঙ্গ ললনার তরে,
যে চুল বাঁধিতে জানে
রসনা বিলাসি রান্না রাধিতে পারে,
শ্বেত শুভ্র হাসিতে তার
গভীর ধ্যানে মগ্ন তপসির
ধ্যান চ্যুতি ও ঘটে
অসাধ্য তাহার কিছু নাই
জয়তু বঙ্গ ললনা
হ্যাপি ব্লগিং..........

১২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৩

নুসরাত জাহান ডায়না বলেছেন: ki bolibo tahader tore.....kub bashi bhalobashite nai go bondugon...praschitto korte hoy....!!!donnobad sobaike....!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.