নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি।
মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিষয় আমাকে খুব ভাবীয়ে তোলে । অনেক সময় অনেক স্মার্ট মানুষের মুখে রক্ষণশীল কথাবার্তা শুনে বিচলিত হয়ে যাই । হুমায়ুন আজাদ, বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ,আলচিত সমালচিত ভাষাবিজ্ঞানী অসাধারন মনমানসিকতার মানুষ ।ব্যাক্তিগতভাবে আমার অত্যান্ত শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ ।আজকে এই দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক বিকাশের পেছনে লাগার জন্য ড. হুমায়ুন আজাদ একজন কারণও বটে । হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে লিখতে বসে তার লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার কয়েকটি লাইন লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে ।তার রচিত "সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" এই কবিতার বইটির কথা নিশ্চয়ই কারও অবিদিত
'আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মতো থাকবে না তোমার,
যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো নেই উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত
শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত ভেঙ্গে তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে ধরবে আমার হাত ,
তখন তোমার মনে হবে শহর আর বিংশ শতাব্দির জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে
একটি নিলিমা-ছোয়া মৃণালের শীর্ষে তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ পবিত্র অজর । '
এককথায় অসাধারন ।যখন কোন জায়গায় তাঁকে নিয়ে কথা ওঠে প্রায় তাঁকে নাস্তিক ,লুচ্ছা,চরিত্রহিন এসব কথা গুলো বন্যার মতো মনের কর্ণকুহরে ধাক্কা মেরে যায় ।আমার প্রিয় ব্যাক্তি হিসেবে কথাগুলো কানে আসার সাথে সাথে মেজাজ সামলে রাখা কষ্টকর হয়ে যায় আমার জন্য ।
গত কয়েকদিন আগের কথা বলি। আমার এক বন্ধুবর ক্লাসে স্যার যখন বুক রেফারেন্স দিচ্ছেন,'রবিন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও সমাজচিন্তা '-হুমায়ুন আজাদ। সেই বন্ধুবর হুমায়ুন আজাদ নাম শুনার সাথে সাথে পেছন থেকে বলে উঠলো, 'শ্যালা লুচ্ছা'।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েও যার মুখের ভাষা এমন তাকে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না তখন আমার মেজাজ চড়ে ১০০ পর্যন্ত টেম্পারেচার ওঠে গেছে। আমিও তখন বল্লাম,'তোর মুরদ থাকলে একজন হুমায়ুন আজাদ হই দেখা'!!!!!!!!!! সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও বিশ্বাস করুন তখন আমি হাসার মুডে ছিলাম না ।
ঘটনা ওখানেই শেষ। তবে ক্লাস থেকে বেরোনোর পর আমি মনে মনে ভাবছিলাম,'শ্যালা নিজে কম তো। সর্বক্ষণ এই মাইয়া ওই মাইয়ার পেছনে লোপার এর মতন ঘুরে বেড়ায়। মুখের যে ভাষা আমার মুখের ভাষাই খারাপ করে দিলো !!!!!!!!'
তখন থেকেই ভাবছি এমন একজন ব্যাক্তিকে নিয়ে তারা এই মন্তব্য করছে যিনি কিনা এমন একজন ভাষাবিজ্ঞানী যা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়। আমার তার লিখা বেশ কিছু text পড়ার সুযোগ হয়েছে। তার রচিত আলোচিত সমালোচিত "নারী" আমাদের কোর্স একাডেমীক বই। তার অনুবাদিত "দ্যা সেকেন্ড সেক্স" বাংলায় "দ্বিতীয় লিঙ্গ ' আমাদের একই কোর্সের বই।
আমি তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে একদমই আগ্রহী নই। একজন মানুষ ব্যাক্তিগত জীবনে কি,তার চরিত্র কেমন ছিল এসব দিয়ে লেখককে বিচার করতে পছন্দ করি না ,একজন লেখকের সৃষ্টি দিয়ে স্রস্টা টাকে বিচার করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমি হুমায়ুন আজাদ কে পছন্দ করি বলেই আমি নাস্তিক হয়ে যাইনি বা তার বই পড়ে বাংলাদেশে অনেক মানুষ নাস্তিক হয়ে গেছে তার কোনও নমুনা আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
তাঁকে অনেককেই খারাপ খারাপ গালি দিতে শুনেছি। একজন মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভাল চিনে তার একান্ত আপন জন ,তার স্ত্রি/স্বামী /প্রেমিকা/প্রেমিক,তার সন্তান ,তার বাবা-মা। কেউকি আজ পর্যন্ত হুমায়ুন আজাদ এর স্ত্রিকে নিজের স্বামীকে চরিত্রহিন বলে আখ্যায়িত করতে শুনেছে অথবা তার সন্তানদের ?!!!!! আর তার বই গুলো নিয়ে যারা সমালচনা করে তাদের কয়জনই বা তার বই পড়েছে। বাংলাদেশে 'গ্রাব্রিয়াল গ্রসিয়া মারকেজ' এর অনুবাদ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়না 'নারী ' পড়লেই যেন সব নাস্তিক আর চরিত্রহীন হয়ে যায়। লজ্জা আর কাকে বলে!!!!!!! তাই নাহয় মেনে নিলাম তাঁর 'নারী', 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' এগুলো খারাপ বই পড়লে খারাপ হই যাবার সম্ভাবনা আছে। তাহলে তার রচিত 'লাল নীল দীপাবলি ',ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ','রবিন্দ্র প্রবন্ধ /রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা',ধর্ম্যানুভুতির উপকথা ও অন্যান্য','নিঃসঙ্গ শেরপা',পার্বত্য চট্টগ্রামঃসবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা ','কতো নদী সরবরে ' সহ অসংখ্য সৃষ্টির অবদান কি ফেলে দেওয়ার মতো ?!!!!!
বাংলাদেশকে আরেকজন হুমায়ন আজাদ পেতে কতো শতাব্দি অপেক্ষা করতে হবে তাও নিশ্চয়তা নেই তার মত আরেকজন জন্ম নিবে কিনা। একজন রবিন্দ্রনাথ জন্মেছিল ২০০বছরের কাছাকাছি হয়, একজন নজরুল একবারেই আসে বারেবারে নয়। অনেকটা অরবিন্দ আদিগার 'হোয়াইট টাইগার' এর মত,তিনি যেমন বলেন ;'হোয়াইট টাইগার ' প্রত্যেক প্রজন্মে একজনই জন্মায়'।মার্ক্স এবং এঙ্গেলস পড়ে যেমন মানুষ ধর্মহীন হইয়ে যায়নি তেমনি সিমন দ্যা বুভয়ার আর মেরি অলস্টনক্রাপ্ট পড়ে নারীবাদী হয়ে যায়নি সবাই। তাই বলছিলাম একজন জ্যা পল সাত্র হতে 'মুরদ' লাগে।
এজন্য প্রয়োজন একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ,দেখার শুভ্রতা।
(চলবে)
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৫
দুরন্ত সাহসী বলেছেন: একজন পরিপুর্ন মানুষ
ধন্যবাদ আপনাকে ওনাকে নিয়ে লেখার জন্য
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫১
এম ই জাভেদ বলেছেন: একজন লেখকের সৃষ্টি দিয়ে স্রস্টা টাকে বিচার করা উচিত বলে আমি মনে করি।
সহমত
৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৪
স্বকীয়তা বলেছেন: আপনার দৃষ্টিভঙ্গী ভাল লাগল। আফসোস যে দেশের বেশীরভাগ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী এমন না। তারা হুমায়ুন আজাদ এর লিখা ১ টা লাইনও পড়েনাই কিন্তু গালী দিয়ে দেয় যে বেটা নাস্তিক, লুইচ্চা। তবে আমি আশাবাদী একদিন হুমায়ুন আজাদ এর মত মানুষকেই লোকে স্মরণ করবে, তারাই যে একটা ইতিবাচক দিকের সূচনা করে গিয়েছেন।
৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৭
বাদল দিনের গান বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
স্যার কে নিয়ে এই রকম একটা লেখার দরকার ছিল। যারা মানুষের কর্মের সম্মান দিতে জানেনা ওইসব সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষের জন্য এই পোষ্ট দাত ভাঙ্গা জবাব সরূপ।
৬| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৮
জেনো বলেছেন: আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
...................
আহা, আমিও তো তাই।
নিজের মতো করে বাঁচবো, এ স্বপ্ন কত জন্মের....।
শুধুই অপেক্ষা...........
ভাল লাগল।
কলার ঝুপড়িতে একজন 'ভবিষ্যৎ আঁকিয়ে' বলেছিল, 'ওর তো কবিতাই হয়না'।
দুপুর পেরিয়েও শেষ হয়নি সে তর্ক। সে নির্ঝর.....
ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ...শুধু উপন্যাস নয়
বরং তার থেকেও বেশি কিছু।
লিখতে থাকুন।
ধন্যবাদ।
৭| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৫
মরু বালক বলেছেন:
.
.
.
.
.
ডঃ শহিদুল্লার পর বাংলার জন্য কেউ ততটুকু করেনি যা তিনি করেছেন,
তবে ডঃ শহীদুল্লার অসাধারন এক ব্যাক্তিগত জীবন ও চরিত্র ছিল . অন্তত কাউকে টাকা দিয়ে হলেও লুচ্চা বলাতে পারবেন না।
এটাই সত্য !!!!!!!!!!!
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৪
মাক্স বলেছেন: চলুক