নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দিগন্তের শেষ বলে কিছু নেই।

দিগন্তপথ

চেতনা, চিন্তা এবং বোধ প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা অর্থ আছে। আমাদের উচিত এই পৃথক অর্থ গুলোকে পৃথক করে বোঝা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কে উপভোগ করা বুদ্ধিমানের কাজ। আমি নস্টালজিক নই, নই ধর্মীও বোধে অন্ধ। আমি সবার সাথে পথ চলতে চাওয়া এক পথিক।

দিগন্তপথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণতন্ত্র ও পতাকা

০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯

" স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক"-শহীদ নুর হোসেনের বুকে-পিঠে যখন এই লেখাটির শেষ আঁচড় পরেছিল তখন সে কি ভেবেছিল? আবু সাঈস যখন বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বুলেটের সামনে তখন সে কি ভেবেছিল? একটা বুলেটের বিনিময়ে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে? না'কি একটি জীবনের বিনিময়ে? ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মৃতের সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। * তবে দা ডেইলি ষ্টারে প্রকাশিত একটি লেখা থেকে জানা যায়, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে প্রায় *৩৭০ জন জীবন দিয়েছিলো, পংগু ও গুম হয়েছিল অসংখ্য মানুষ। হরতাল-অবরোধে দেশের জাতীয় সম্পদ ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান যাই হোক না কেনো একটা প্রশ্ন মনের মাঝে বারবার ঘুরপাক খায়। গণতন্ত্রের বিনিময় কি বুলেট না'কি জীবন? একটি জীবন্ত বুলেট একটি জীবনকে কেড়ে নেয়। তাহলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই কি গণতন্ত্রের জন্ম? বারবার কেনো গণতন্ত্রকে অর্জন করতে হয়? কেনো একটি জাতির ইতিহাসে সে আজীবন স্থান পায় না? গণতন্ত্র কি কোনো শিশুর হাত থেকে বেখায়ালে ফসকে পড়ে যাওয়া ছোট্ট খেলনা পুতুল, যেটা কুড়িয়ে নিতে শিশুটিকে মরিয়া হয়ে উঠতে হয়? নাকি ক্ষমতার লোলুপতায় দুমড়ে মুচড়ে আস্তাকুঁড়েতে ফেলা রাখা এক অস্তিত্বের নামই "গণতন্ত্র"?
১৯৯০ থেকে ২০২৪। ৩৪ বছর পরে গণতন্ত্র কে মুক্ত করতে অনেক বেশী রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। এবার কি এই গণতন্ত্র হাত থেকে ফস্কে গিয়েছিলো, না'কি লুট করা হয়েছিল, তা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে এটুকু বলা যায় অর্থনৈতিক মুক্তি, রাষ্ট্রীয় সম্মৃদ্ধি বা আইনের শাসন, সবকিছুর গোড়া কিন্তু এক জায়গায়। তা হলো "গণতন্ত্র"। আমার ছোটো জ্ঞ্যানে মনে হয় গণতন্ত্র একটা জাতির জন্য প্রজেক্টের মতো। একটা প্রজেক্ট নির্মানের ক্ষেত্রে অর্থ, জনবল, ভৌগোলিক অবস্থান সহ অনেক কিছু দরকার যেমন আছে তেমন এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গেলে শুধু মুখের বুলিই যথেষ্ট কার্যকরী তাও নয়। এটার জন্য প্রয়োজন দক্ষ, নিঃস্বার্থ, বিবেকবান, পক্ষপাতহীন, সচেতন ও বলিষ্ঠ নেত্তৃত্ত্ব এবং ত্যাগী জনসম্পদ সহ আরও অনেক কিছু।
যদি এই উপাদানগুলোর সঠিক ব্যাবহার না হয় তাহলে ফলস্বরূপ পাওয়া যাবে একটা নির্ভরশীলতা বর্জিত সমাজ ব্যাবস্থা, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক গতি, কল্পনাপ্রসূত শিক্ষা ব্যাবস্থা, পরনির্ভরশীল পররাষ্ট্রনীতি, আমলাতান্ত্রিক ও বাঁধাগ্রস্ত সেবা প্রতিষ্ঠান, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন কাঠামো এবং সংকুচিত শাসনব্যবস্থা ও আইনের প্রয়োগ।
এই লম্বা পথটা অবশ্যই মসৃন নয়। যথেষ্ট বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার এই দীর্ঘমেয়াদী কালে আসবে অনেক বাঁধা-বিগ্রহ। আসবে অনেক দীর্ঘশ্বাস। সবার চোখে ভালো সেজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তবে যিনি এই নেত্তৃত্তে থাকবেন তাকে অবশ্যই একটা স্কোর কার্ডকে সামনে রেখে ব্যালেন্সিং মেথডে আগাতে হবে। যেমন ধরুন আমরা একটা ১২ দাগের রুলার বা স্কেল কে যদি একটা স্থিতিশীলতার মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করি, তাহলে ৬ হবে এর ভারকেন্দ্র। ভারকেন্দ্রের বামের দাগগুলো হবে যথেষ্ট শক্তিশালী উপাদানে সম্মৃদ্ধ। আর ডান পাশের দাগগুলো হবে নমনীয়তায় পরিপূর্ণ। এই রুলারের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এর পরিচালককে দুই পাশেই অবস্থা অনুযায়ী তার পদক্ষেপ ফেলতে হবে। শান্তিকামী এবং অগ্রগামী জনতার এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, চাওয়া মাত্র একটি দেশের সংস্কার কাজ শেষ হয়ে যাবে। রূপান্তরিত, পরিমার্জিত এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠনে সময় এবং সাম্য এই দুইটার সমান্তরাল রেখা যেমন প্রয়োজন তদ্রুপ ভোক্তার চাহিদা এবং বিলাসিতার লাগাম টানাও অপরিহার্য।
একথা অনস্বীকার্য যে একটি স্বল্পমেয়াদী প্রকল্প কখনও দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য অর্জন করতে পারে না। প্রকল্পের খুটিনাটি ভুল ত্রুটির চুল চেরা বিশ্লেষণ করতে না পারলে এই গণতন্ত্র নামের প্রকল্প অল্পতেই ভেস্তে যেতে পারে বা যাবার সম্ভবনাই বেশী।
জনপ্রতিনিধি নিয়োগের যে আদিম প্রবৃত্তি বা চিরাচরিত নিয়ম তার সংস্কারও এই প্রকল্পের আওতাধীন। কারন গণতন্ত্রের যে চর্চা বা তার জন্য যে কৃষ্টি বা সংস্কৃতি প্রয়োজন তার সঠিক বা পরিবর্তিত গঠন প্রক্রিয়াই পারে সেই চর্চাকে সুদূরপ্রসারী একটা রূপ দিতে।
পক্ষপাতহীন নির্বাচন ব্যাবস্থা এবং জনস্বার্থের জন্য বোধগম্য, বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী কাঠামোই পারে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ তথা জাতি উপহার দিতে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটা মুষ্টিমেয় শ্রেণীর জন্য নির্বাচন নয়, বরং আপামর জনসাধারণের জন্য নির্বাচন, এই নীতি আইনগত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।
আজ বিকালে বিমানবন্দরের সামনে দিয়ে আসার সময় প্রবেশপথে দেখলাম জাতীয় পতাকা তার মাথা উঁচু করে হাওয়ায় উড়ছে। হটাৎ মনে হলো অনেকদিন এভাবে পতাকা উড়তে দেখি নি। আজ দেখে শুধু এটাই মনে হলো এটা স্বাধীন দেশের পতাকা।
এই পতাকা আমার! আমাদের সকলের!

*এটা একটা মৌলিক লেখা। শুধুমাত্র ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পরিসংখ্যানটুকু ডিসেম্বর ৬, ২০২১ সালে The Daily Star এ প্রকাশিত "৯০ এর আন্দোলনের ৩ দশক: ফিরে দেখা (লেখক: ড. মঞ্জুরে খোদা)" লেখা থেকে থেকে নেয়া। লিংকটি নিচে দেয়া হলো:

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:২৮

কামাল১৮ বলেছেন: তালেবানি শাসন ঝাকিয়ে বসছে।সব মুর্তি ভাঙ্গা শেষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.