![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আজ বড় অসহায়! দিন দিন আমার দেহ শীর্ণ হতে হতে বিলীন হওয়ার অবস্থা।এখন আমাকে চলতে হয় চরম সন্তর্পনে। সামান্য বাধা পেলেই থেমে যেতে হয়। নিজের পরিচয় দিতেও মাঝে মাঝে শংকা বোধ করি। ভাবি আমাকে চিনতে পারবে তো!! তবুও সকল শংকা, লজ্জা আর ভয়কে উপেক্ষা করে দিতে হয় আমার পরিচয় : আমি উত্তরবঙ্গের অন্যতম নদী করাতোয়া। নাম শুনে অনেকে হাসে; অনেকে আবার সমবেদনায় বলে, আহা! দেখো কি করুণ দশা!! একটা সময় ছিল আমার অনন্ত যৌবনা রূপ সকলকে মুগ্ধ করতো। আমার প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিত কত শত নৌকা। দিনভর সাদা বক, পানকৌরি আর বুনো হাঁসের দল কতই না জলকেলি করতো! মাছের ঝাঁকের উদ্যাম ছুটোছুটি তে আর জেলেদের নিরন্তর প্রচেষ্টার প্রাপ্তি দেখে মন ভরে যেত। কিন্তু সুখ আর দুঃখ পর্যায়ক্রমে আসে। আমার জীবনেও তেমনি ঘোর অমানিষা নামলো। সেটা প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। পানিউন্নয়ন বোর্ডের একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত আমার প্রবাহকে স্থবির করে দিল। বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য জলকপাট নির্মিত হলো গেবিন্দগঞ্জের খলসীতে। প্রথম প্রথম নাব্যতা ঠিক থাকায় তেমন কিছু মালুম না হলেও অল্প কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম যে স্রোতের তোড় কমে যাওয়ায় বৃষ্টির ধারার সাথে আসা পলিগুলোকে ঠিক সরিয়ে নিতে পারছিনা। ফলে সেগুলো তলায় জমে গিয়ে আমার গভীরতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবশ্য একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল যেখানে জলকপাট নির্মানই আমার এহেন দশার অন্যতম ও একমাত্র কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল এবং বিষয়টি বিবেচনার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলাপ্রশাসনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহনের সুপারিশও করেছিল তারা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ তো দুরের কথা বিষয়টি নিয়ে কারও কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মালুমই হলো না। আর আমি দিন দিন হারালাম আমার ধারণ ক্ষমতা, প্রবাহ, সৌন্দর্য সব!!! আজ আমিই বর্ষাকালেও আমার আকার দেখে চমকে উঠি!! নিজেকে সত্যিই চিনতে কষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই যখন লোকে বলে আরে এটা আবার নদী নাকি; এর থেকে আমার নলকুপের ড্রেনেই বেশি পানি আছে। চিৎকার করে তখন বলতে ইচ্ছে হয় তোমরাই তো এর কারণ!!! তোমাদের অপরিকল্পিত বাস্তবায়ন আর উদাসীনতাই তো এর জন্য দায়ী!!! হায়!! তোমাদের কবে বোধদয় হবে । আর ততদিনে হয়তো চিরকালের মত আমার অস্তিত্ব হারিয়ে মৃত নদীর তালিকায় স্থান করে নিব।
©somewhere in net ltd.