![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি শিখছি এবং শেখার জন্যই লিখছি।
১.
সকাল নামক বস্তু টি খুব ই কষ্টকর, ইচ্ছে হয় ছুটে পালাতে থাকি, অনেকটা ভূত দেখে পালানোর মতো, অবশ্য সেটা আরও কষ্টকর। যতই হোক সব বাধা পেরিয়ে আজকেও আমাকে উঠতে হল ঘুম থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কলেজ নামক একটি জীবনের শুরুর উদ্দেশ্যে।
তারাতারি রেডি হয়ে নে ১১ টা বাজে, ওপাশ থেকে, উঠতে না উঠতেই শুরু হয়ে গেল। উপায় না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিজের বিছানা রুম ত্যাগ করে খাওয়ার টেবিলে এসে পরলাম। কিন্তু খাওয়ার টেবিলে বসতে না বসতেই শুরু হয়ে গেল আব্বুর আমার পিছনে টাকা খরচের হিসেব। কেন যানি না, মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর বড়দের দিন কাটে এই টাকার হিসেব করতে করতেই, অন্তত কারো কাছে তা মনে না হলেও আমার কাছে তাই মনে হয়, আর এর জন্যই তাদের কারো মাথা চুল থাকে না এবং ৩৬০ ডিগ্রি তে তাদের বিশালাকার টাক সুদর্শিত হয়। মানুষিক অবস্থা ভালো ছিল না এমনি তার উপর এসব শুনলে স্বয়ং দেবতা জিউস ও এসব সহ্য করত না, হয়ত ভাসিয়ে দিত সব এক ঝর দিয়ে। আপাতত আমি তাদের হিসেবের ঝর কাটিয়ে শেষ করে কলেজ এর দিক এ অগ্রসর হলাম, কলেজ যেতে কেন জানিনা মনে হল আজকাল বড্ড একা লাগে, তবে একদা শুনেছিলাম বয়স বাড়লে বন্ধুর সংখ্যা কমতে থাকে। তখনই ওমর ছেলেটি পিছ থেকে ডাক দিল, ছেলেটির সাথে পরিচয় খুব কম সময়ে তাও আমরা ভালো বন্ধু হয়েছি সময়ের তুলনায় অনেক দ্রুত। ছেলেটির মাঝে এক অবাক করা গুন হল সে খুবই মাথা গরম করতে পারে তবুও সে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারে। ছেলেটা সুদর্শন তাই মাঝে মাঝে আমার পাশে হাটলে মেয়েরা যেভাবে ওর দিকে তাকায় যেন মনে হয় আমি রাবন আর ও রামায়ন আর মেয়ে গুলো সব সূর্পনখা। আদনান তোর কি খবর আজকাল তোরে দেখাই যায় না, বলে উঠল ওমর। অবশ্য দুই দিন আগেও কিন্তু আমাদের দেখা হয়েছে, কথা টা বললাম না চেপে গেলাম। দুনিয়াতে যাই হোক কথা কম বলাতেই সর্ব সুখ রয়েছে, সর্ব সুখ কে কেউ আবার স্বর্গ সুখ বলেও ব্যাখ্যা করে। বই কিনেছিস কিছু? ওমরের খোটা মূলক প্রশ্ন। ইসলামিক জগতে দারিয়ে তুমি আমাকে কুরআান শরীফ কেনার কথা না বলে বই কীভাবে কিনতে বল? আমাদের মসজিদ এ যাওয়া দরকার। এ সবই আমার এসএসসি পরীক্ষা এর পর দেয়া চিল্লা এর ফলাফল। ওমর ও এ সম্পর্কে আমার সাথে মজা করতো, যেমন চিল্লা দিলে নাকি কোন মেয়ের দিকে তাকানো যায় না তারপর দারি নাকি কাটা যায় না। কিন্তু আমি দিব্যি সবই করতে পারতেসি। কেউ যদি আমাকে নাস্তিক বলে গালি দেয় আমি রাগ করব না কারন সে যে ধর্মের দোহাই দিয়েই বলুক না কেন আমি দেখাতে পারব সে সেই ধর্মের চোখেই আস্তিক না।
২.
কলেজ লাইফের তিন মাস চলে গেল, কীভাবে যেন সময় খুব তারাতারি চলে যায়। কিভাবে যেন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, হেরে যাচ্ছি জীবনের কাছে, যতই জানছি ততই সব আল্লাহ ভিতী মুছে যাচ্ছে। নিজেকে মানুষ মনে হচ্ছে না আর, মা এর মতে আমি অমানুষ, ওমরের মতে আমি পাগল, মানুষের মতে আমার মানুষিক সমস্যা আছে। কিন্তু অনেক কিছু ঘটে গেল তিন মাসে। তিন মাস তিন দিনের মত করে কেটে গেলেও এই তিন মাসে যেন তিন যুগ এর অভিগ্যতা অর্জন করে ফেলেছি। প্রথম দিন কলেজ যাওয়ার পর একটি মেয়েকে দেখে ভালো লাগে। আসলে যত না মেয়েটিকে ভালো লাগে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে তার চুল গুলোকে, কিন্তু সমস্যা হল আমার ফেসবুক এ চলমান প্রেম কাহিনী। দিন দিন যতই আমি ওই মেয়েটার প্রতি দূর্বল হই ততই যেন আমার ফেসবুক ময় প্রেম ঘোলাটে হতে থাকে।
তুমি আমাকে ভুলে যাচ্ছো আদনান, মন্তব্য আমার প্রেমিকা। যেহেতু মানুষ মাত্রই ভুল সেহেতু মানুষ ভুলে যাবেই, না ভেবেই আমি উত্তর দিয়ে ফেললাম। মেয়েটি তখনও কান্না করছিল, তখন সেই পানিকে আমার কাছে অর্থহীন লবনাক্ত পানি মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন কেন যেন সেই পানিকে নায়াগ্রা এর জলপ্রপাত এর মতই বিষালাকার মনে হচ্ছে।
তারপর থেকে আর কথা হয় নি, আজ সে আরেকজনের প্রেম আর আমার স্বপ্ন। সেদিন এর পর থেকে কলেজ এর সেই ভালো লাগার মেয়েটিকেও আমি খুজে পায় নি, হাজার খুজেও তাকে পাওয়া গেল না কোথাও, মনে হল সে উপন্যাসের শেষ পাতার হারিয়ে যাওয়ার মত আমায় অপূর্ন করে গেছে। আদনান তুই পড়িস না আজকাল কি হয়েছে বলবি আমাকে? পড়ালেখা করে যে এক অসহায় এর সাগরে ভাসে সে, আমার উত্তর। তুই কি পড়ালেখা করতে চাস না? আমার মা এর হাল ছেড়ে দেয়া প্রশ্ন। সবাই পড়ালেখা করতে চায় কিন্তু সবাই তা নিজের মত করে চায়, কথাটা বলার পরে এর মানে আমাকেই ভাবতে হল অনেকক্ষন ধরে। অবশ্য মা এর আগেই আমার সামনে থেকে চলে গেছে তার চোখের কোনে জমাট বাধা পানি নিয়ে, আমি জানি সে কাদবে। কিন্তু যদি এর জন্য কেউ যদি আমাকে দোষ দেয় তাহলে সেটা আমি মানতে রাজি না, কারন চোখের পানি দিয়েছে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা এবং এর নির্গমন সম্পর্কেও আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। ধর্ম সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকায় প্রায়ই আমার মা কাদে। কিন্তু আমি বুঝি না তা তে কান্নার কি আছে, আমি ধর্ম হতে শুনেছি, যা হয় ভালোর জন্য হয়। কিন্তু আমাদের মত স্বল্প চিন্তা ধারার মানুষদের কে তা আমি বুঝাতে পারলাম না। হয়ত বুঝানো যাবে না, আর না বুঝলে তারা এভাবে আমাকে মানুষিক সমস্যা আর অমানুষ বলে যাবে।
৩.
-কে তুমি?
-তেমার না পাওয়ার গল্পের সেই মেয়ে, এত তারাতারি ভুলে গেলে? (বলেই তার হাসি, হাসির শব্দ যত না রহস্যজনক , তার সুন্দর হাসি টা তারচেয়ে বেশি দামি। ইচ্ছে করে, কিনে নেই পুরোটা নিজেকে দান করে, তখনই মনে পরে গেল এই সেই মেয়ে যাকে আমি কলেজে দেখেছিলাম।)
-তুমি আমার ঘরে কিভাবে আসলে? (আমার ঘুম চোখে কথাটা মনে পরলো যে আমি নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম)
-আমার কোথাও যেতে বাধা নেই। আমি মুক্ত পাখিটির মতই পুরোটা জুরে বিচরন করি। বলেই সে হাসা শুরু করলো, সে হাসি হয়ত পৃথিবীর যে কোনো কিছুকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে, না চাইলেও প্রেমে পড়তে হবে তার হাসি, তার চোখ আর তার চুল গুলোর প্রতি। আমি তার কথা শুনে ভয় পেলাম না বরং জানতে ইচ্ছে করল কিভাবে সে এ গুনের অধিকারী হল। অমানুষিক গুন, উত্তরে সে এটিই বলেছিলো। আসলে সে যত না বলে তার চেয়ে বেশিই হাসে, শুধু বেশি না অনেক বেশি। কেন যেন মনে হল তাকে পেতে হবে এবং তাকে পেতে হলে আমার যেভাবেই হোক এ গুন অর্জন করতে হবে। তখনই দেখি সামনে মা দারিয়ে আছে আশ্চর্য চোখে এবং সাথে সাথেই শুনি আজানের প্রতিধ্বনি। কিন্তু সে মেয়েকে আমি আর খুজে পেলাম না রাতে। এত ভোরে তুই উঠেছিস? নামায পড়তে যাবি বাবা? আমার মা এর আশ্চর্য হয়ে যাওয়ার পরবর্তী প্রশ্ন। ও কোথায় গেল? আমার পাল্টা প্রশ্ন। ও কে? কাকে খুজছিস? তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি? পৃথিবীর সব মা মনে হয় কিছু না পারলেও এক ঝাক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে নিজের চিন্তিত হওয়ার ব্যাপারটা প্রকাশ করে, বাবাদের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা ভিন্ন হয়। আজকে সেই মেয়েটির কথা সবার প্রথমে ওমর কে বললাম, ওমর থেকে পুরো কলেজ ছড়িয়ে পরলো আদনান ভূতের সাথে প্রেম করে। দিন টা কাটিয়ে দেয়ার পর ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করব ঠিক তখনই আবার সেই মেয়েটি অস্তিত্ব আসে আমার ঘর জুরে। সাথে সাথে আমার প্রশ্ন, অমানুষিক গুন কিভাবে অর্জন করা যায়?
তোমার দ্বারা সম্ভব না, মেয়েটির গম্ভির হয়ে দেয়া উত্তর। না না আমি পারব তুমি বল তুমি কিভাবে পেলে? আমার আগ্রহ সূচক প্রশ্ন। আচ্ছা তাহলে শুনো, সে বলা শুরু করলো।
তুমি যে কারনে পারবে না তার একটি কারন হল তুমি মেয়ে না, এ জগৎে মেয়েরাই বিশ্বাসঘাতকতার সৃষ্টি হয়। কি করবে যখন জানবে তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ছেড়ে গেছে, যখন সে তোমাকে হাজার স্বপ্ন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে চলে যাবে। কি করবে যখন জানতে পারবে তোমার বাবা তোমার শারীরিক সম্পর্কের কথা শুনে হার্ট এটাক করে মারা যায়। বলা শেষে সে উপরের দিকে তাকালো এবং বলল, পরিনতি কখনও তোমাকে তোমার মত হতে দিবে না। আচ্ছা এগুলো ঘটলেই কি মানুষ অমানুষিক গুন অর্জন করতে পারে? আমার আগ্রহ চিত্তে প্রশ্ন।
না, অমানুষিক গুন হলো মৃত্যু নেশা, মরে যাবার স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারাই হল অমানুষিক গুন। বলেই সে আবার হাসা শুরু করলো তারপর কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। অস্থির লাগছিলো সারাদিন কি করবো বুঝতে পারছি না, হঠাৎ দেখলাম আমি আক্রমনাত্মক হয়ে যাচ্ছি, আজকে বাবা আর মা এর সাথে বিশাল একটা ঝগড়া হল, কলেজ এ ওমরের সাথে ঝগড়া। রাতে ভাবছিলাম একা তখন মনে হচ্ছিল জীবনের সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তিটি আমি। তখনই আবার তার আগমন। আজকে আসলেই অনেক খারাপ হয়েছে তোমার সাথে, আমাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল। সময়ের অসময় যাচ্ছে তাই অসহায় আমি, নিজেকে নিজেই বোঝানোর চেষ্টা করলাম তার কথার ভ্রুক্ষেপ না করে। আসলে তুমি অসহায় না, অসময়ের সময়ে আমি আত্মা জগৎের হয়েও তোমার পাশে আছি কিন্তু মানুষ্য জগতের কেউ নেই এর কারন তুমি মানুষ্য জগতের জন্য নও। বল সে অমানুষ বলে হাসা শুরু করলো, কেন জানি না সেই হাসি তে মন ভালো হল ইচ্ছে করলো ছেড়ে যাই সব তার পিছু, তার সাথে। কিছু চিন্তা করলাম না আর হঠাৎ উঠে দারালাম। সত্যিই পারবে তুমি আসতে আমার সাথে, আমার জন্যে। কোন কথা না বলে খাটের নিচে রাখা রশি বেড় করে ফ্যানের সাথে বাধলাম। নাহ তুমি পারবে না মনে হচ্ছে, মেয়েটি আবার বলেই গেল। যখন আমি রশিতে নিচে একটা বৃত্তাকার গোল তৈরি করলাম তখন মনে হল পৃথিবীর সব কিছুর মুলে রয়েছে এ বৃত্ত, বৃত্তাকার এ চক্রাকার চক্র তে সবই জটিল। কিন্তু মানুষ বড় সরল কারন কেউ চায় মৃত্যু আর মৃত্যুই কাউকে চেয়ে নেয়। তিন যুগ এর অভিগ্যতার কথা ভাবছিলাম সেই বৃত্তে মাথা ঢুকিয়ে। কিন্তু আসলে এখনও অনেক জানা বাকি অনেক দেখা বাকি, মৃত্যু কাম্য নয়, ফলাফল মৃত্যু হয় না, যেমন আমরা ইনফিনিটি ফলাফল বর্জন করি মাঝে মাঝে, তেমনই বর্জন করা উচিৎ মৃত্যু কে, অসময়ের সময়ে ফলাফল মৃত্যু আসলেও দিনশেষে মেয়েটি ভুল, তবুও কিন্তু সেই আত্মা জগৎের মেয়টি আমাকে দেখে আর তখনও অট্ট হাসি হাসতে থাকে। শেষ না হবার হাসি, বোকা বানানোর হাসি, রহস্যময় অসময়ের সময়ে হাসি।
©somewhere in net ltd.