![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি শিখছি এবং শেখার জন্যই লিখছি।
উড়িও না বাতাসে চুল,
হয়ত বা করে ফেলবো ভুল,
জীবন জুরে এ শিহরন
নিয়ে কেটে যাবে আমার এ মন।
১.
"তোরা সব মাকাল ফল, এতদিন চলে গেল তবু আমার জন্যে একটা মেয়ে খুজে দিতে পারলি না?"
"দেখ তুহিন আজকাল বাজারে মেয়েদের অনেক চাহিদা আছে।" কথাটা আমার কানে বাজলো। "বাজরে মেয়ের চাহিদা মানে? মেয়েরা কি পন্য নাকি? আর পন্য না হলেও তোরা কেন আমাকে বাজারের মেয়ে এনে দিবি?" আমার চোখ মুখ লাল মিশ্রিত মুখমন্ডল নিয়ে প্রশ্ন।" আরে না ব্যাপারটা তেমন না আমরা আর কি কথার কথা বলছিলাম।" আমার বন্ধুদের মধ্যে আমিই একমাত্র যে সকল প্রকার জাতীয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও চায়ের দোকানে চা খেয়ে আর বাসায় বই পড়ে কাটিয়ে দেই। আমার জীবনে তাই চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি বলতে কিছু নেই, এ দিনটাও প্রতিদিনের মত সাধারন একটি দিন। কিন্তু ওদের ক্ষেত্রে ভিন্ন, আর পাচঁ দিন পর ই সেই তাদের কাঙ্খিত দিন, ভালোবাসা দিবস।
"দোস্ত এবার তোর পরিকল্পনা কি?" আমাকে রিফাত এসে প্রশ্ন করলো। "চিন্তা করলাম ধানমন্ডি ৩২ এর পথ ধরে হাটবো এবং সে জায়গায় একটা আদমশুমারি করবো প্রেম জুগলদের সংখ্যা নিয়ে।" "ওহ জোস দোস্ত আইডিয়াটা মন্দ নয়", রাফির উত্তর। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট ছেলেটি রাফি, জীবনে কোনদিন ওকে আমি সিঙ্গেল দেখেছি কিনা সন্দেহ, আমার মনে হয় রাফির মত ছেলের জন্যই আমি আজও সিঙ্গেল। আর এর জন্য রাফির সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা একটু বেশি ভাল। মানে আমি কৃতজ্ঞ যে সিঙ্গেল থাকার মত কঠিন কাজ টা আমি অনায়াসে করতে পারছি শুধু রাফির জন্যে। মানুষ বলে আমি নাকি অদ্ভুৎ, আমার কাছে অদ্ভুৎ শব্দের ব্যাখ্যা টা ঠিক অন্যরকম অনেকটা+ভূত এর শব্দযোগেই হয়ত সুগঠিত হয়েছে শব্দটি, কিন্তু ভূত কি আমার মত বা আমি কি ভূতের মত? কই না তো আমি তো কাউকে কামরাই নি বা কারো রক্ত খাইনি যে মানুষ আমাকে ভূতের সাথে তুলনা করে। সেই সেদিন পাশের বাড়ির আন্টি এসে বলছিল, "ভাবি আপনার ছেলেটা অনেক অদ্ভুৎ সারাদিন একা বসে থাকে।"
ইচ্ছে করছিল মুখের উপর বলে দেই "আমি আপনার কোন বংশের কার কি কামরেছিলাম বা কার রক্ত খেয়েছিলাম যে আমাকে অদ্ভুৎ বলেন? বরং নিজের বাসায় যে সংখ্যক অদ্ভুৎ পোকা আছে তা দূর করেন, গত বছর আপনার বাসায় গিয়ে আমার সাত দিনের টাইফয়েড হয়েছিল।"
থাক শেষ পর্যন্ত কথাটা মুখ ফস্কে বেড় হয় না, হলেও বেশ কিছু ক্ষতিও হত না বরং লাভ ই হতো। "কিরে কি ভাবছিস এত? প্রেমে পড়লি নাকি আবার?" আকাশের খোটা মুলক প্রশ্ন। "আসলে ভাবছিলাম কিভাবে তোর মতো কুচিন্তার অধিকারী ছেলেকে লাইনে আনা যায়।" আমি প্রতিদিন এই আকাশ নামক ছেলেটিকে নিয়ম করে ভালোবাসার কুফল সম্পর্কে ধারনা দেই এবং এর ভয়াবহ ফলাফল সম্পর্কে বলি, কেন যানি ও দুশ্চিন্তায় পরে যায় এবং কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। মোট কথা প্রেমের আবেগ এর বাস্তব চিত্র হল আকাশ এবং প্রেম সংক্রান্ত জটিল সমস্যায় সে আমার কাছেই আসে। হটাৎ করে তারেক বলে ওঠে, "দোস্ত আজকে কলেজ এ এমন একটা দেখেছি না, অস্থির। যে দেখবে সেই প্রেমে তো পরবেই একেবারে।" কথা শেষ করার আগেই কাশি দিলাম, স্থান টি বিপদজনক দেখে প্রস্থান করলাম। তারেক কে নিয়মিত একটা লাইন যা শুনে তারেক আমার সাথে কথা কম বলে এবং হয়ত আমাকে দেখতে পারে না, "উত্তলং যৌবং তথাং নষ্টাং চত্ররং" এর মানে ও কি বুজেঝে জানি না তবে কেন যেন বুঝতে পারে ওকেই বলছি। অবশ্য আমার লাইন টি বলতে বেশ ভালোই লাগে।
যথারীতি ভালোবাসা দিবস এসে পরে এবং আমার বন্ধুসকল তাদের যার যার প্রেমিকা নিয়ে ভালোবাসায় মগ্ন হয়, কিন্তু আমার কাছে ওদের ভালোবাসা ঠিক বোধগম্য নয়। আমি বরং বাসায় বসে সকালে ছড়া কাটি,
"১২ মাসে ১ দিন হয় ভালোবাসা,
তবে কেন বাকি দিন হয় কাছে আসা।"
বিকেল বেলায় বেড়িয়ে পরি ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে সাথে সঙ্গি একটা কলম ও খাতা, আদমশুমারি চলে জুগলদের নিয়ে, কিন্তু ভালোভাবে চালাতে পারি নি, কারন কেন যেনো প্রেমিকেরা স্থির ছিলনা মৌমাছির মত চারদিক ঘুরে বেরাচ্ছিল। "দোস্ত তুই এখানে? কি করছিস? তাও আজকে?" রাফির এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগলো না, "মৌমাছি গুনতে এসেছি।" একটি মাত্র উত্তর দিলাম। ওর তাথাকথিত প্রেমিকা তখন বিরক্ত হয়ে বলল, "চলো একটু বুমার্স এ যাই হাটতে ভালো লাগছে না আর।"
আজকাল প্রেম আমি বুঝি না যে কেমন প্রেম তারা করে। প্রেম বলতে আজকাল যা বুঝি তা যদি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলা যায়, যুগলের হাত ধরে রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া নয়ত কোন লেক পারে ঘুরে বেড়ানো, হাতে একটা আইসক্রিম বা ঝালমুড়ির প্যাকেট। খুবই বিচিত্র, খুবই খরচে প্রেম। আগেরকার প্রেম গুলো সস্তা ছিলো দামে কিন্তু স্বর্নের চেয়েও দামি ছিল মানে। তখন চোখে কথা হত, কাব্যে হত প্রেম। এখন সব হয় ফেসবুকে তাই চোখ দূরে থাক কাব্যের রস ই বোঝার ক্ষমতা থাকে না।
২.
"প্রেমাং নি কু,প্রেমাং সুদরং।
প্রেমাং পবং, প্রেমাং নি অভিপং।"
নিজের মধ্যে উলটপালট ভাষায় বকছিলাম কি নিজেও জানি না, মনে হয় পাগল হয়ে গেছি।
"এই পাগল একটা কবিতা শোনাও না তোমার? আমার জন্য তো কবিতাই লেখো আমাকে নিয়ে ভেবেছো কখনও?"
"আমি পাগল কারন তুমি নেশা,
তুমি প্রেম আর সেটাই আমার পেশা।
তুমি চাদ তাই আমি আধার,
তুমি ছন্দ আর আমি লেখক কবিতার।"
"আচ্ছা তুহিন তুমি কিভাবে পারো এগুলো বানাতে, আমি হলপ করে বলতে পারি এটা তুমি এখন বানিয়েছো। কিভাবে পারো আমাকে একটু শিখাবে?"
"দেখো কবিতা, তোমার নাম কবিতা তুমি আমার ছন্দে, তুমি আমার প্রেম আমার আধার আকাশের চাদ। আমি আর কিছু চাই না, যে নিজে কবিতা তার কবিতা বলা লাগে না, তাকে দেখলেই মনে পরে যায় হাজার ছন্দ।" কবিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, ঠিক হাসলো না হাসার চেষ্টা করল। "সেই কখন থেকেই তোমার মাঝে এক বিষন্ন ভাব দেখতে পাচ্ছি, কিছু কি হয়েছে?" এবার ওর চেহারাটা স্বাভাবিক হল। বলার আগেই আমার মাথার মাঝে অনেক কিছু ঘুরছে, আসলে মেয়েরা এমন কেন আমি বুঝিনা সব মেয়েরাই তার প্রেমিকাকে মনে হয় ঋষী ভাবে। মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলে না অপরদিকে এই আশায় পরে থাকে যে কখন তার প্রেমিক তাকে বুঝবে। ভাবার মাঝেই সে বলল, "সামনে আমাদের এইচ.এস.সি এক্সাম, যদি আমি একটুও খারাপ করি তাহলে তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে না।" আমি আশ্চর্য হলাম, "বিয়ে হবে না মানে তুমি বাসায় আমাদের ব্যাপার জানিয়েছো?" "পাগল নাকি তুমি? আসলে রেসাল্ট খারাপ হলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।" বলেই ও আবার চিন্তিত হয়ে পরল। "এত ভেবো না বেশি ভাবলে বয়স বেড়ে যায়" "কেন আমার বয়স বাড়লে আমাকে আর ভালোবাসবে না?" বুঝলাম না কোন প্রেক্ষিতে ও একথা বলল।
বাসায় চলে আসলাম সেদিন, প্রতি রবিবার আমি আর কবিতা দেখা করি, হিসেব করে আমরা দুই ঘন্টা থাকি এর মধ্যে এক ঘন্টা আমি ওকে কবিতা শুনিয়ে প্রেম করি এবং আর এক ঘন্টা আমরা এর ভবিষ্যত ফলাফল নিয়ে আলোচনা করি। মাথাটা অনেকক্ষন ঝিম ঝিম করছে কয়েক দিন ধরেই করছে, মা সেদিন ডক্তার এর কাছে গিয়েছিল কত গুলো টেস্ট আর চেক আপ করল। আজকে রেজাল্ট দেয়ার কথা সেগুলোর, মা মনে হয় তা নিতেই চলে গেছে। আমি ঘুমিয়ে পরলাম, হঠাৎ শুনি কেউ কাদছে, চিৎকার দিয়ে কাদছে। প্রথমে মনে হল স্বপ্ন দেখছি, পরে বুঝলাম না স্বপ্ন না বাস্তবেই হচ্ছে। মা তার রুমে বসে কাদছিল, আমাকে দেখেই মা আর আমার বোন কান্না থামিয়ে দিল। ভিন্ন গ্রহের এলিয়েন পদার্পণ করলে যেভাবে মানুষ তাকাতো ঠিক সেভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল তারা।
৩.
এত সুন্দর, এত মনোরম চুল আমি আগে কখনও দেখি নি, তখন বসে বসে চুল গুলো নিয়ে হাজারো স্বপ্নের বাসা বুনছিলাম। বুনতেই হয় কবিতা নামের এক মেয়ে আমার সামনে বসেছিল, এরপর থেকে আর ফিসিক্স পড়তে নয়, কবিতার চুলের গন্ধ নিতে আর তার মাঝে প্রতিদিন নতুন করে স্বপ্ন বুনতে ফিসিক্স পড়তে যাওয়া হত। সেই ছেলেটি যে সিঙ্গেল থাকতে চায়, মানুষকে ভালোবাসার কুফল সম্পর্কে বলতো আজ সে নিজেই এক কবিতার প্রেমে পড়েছে। যে নিজেই হাজার কবিতা বানায় তাকে কাবু করে ফেললো এক কবিতা, এরপর কিভাবে কত কি হল তা স্বপ্নের মত করে কেটে গেল, আমার মত ছেলের কপালে কবিতার মত মেয়ে জুটবে তা কখনও ভাবতেও পারি নি বন্ধুদের কে এ ব্যাপারে বলিনি কারন ওরা শুনলেই বলবে, "বামন কি আর হাত বারালেই চাঁদের দেখা পায়?" কিন্তু অসম্ভব ও কিভাবে যেন সম্ভব হয়ে গেল। এখন শুধু দিন গননা করার দিন, আর মাত্র আঠাশ দিন বাকি। "এরপরে?" এরপরে হয়ত কবিতার ছন্দ নিয়ে কবিতার অপেক্ষায় থাকতে হবে। আমার মাথায় টিউমার হয়েছে, ডাক্তার বলেছে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আসলেই আমার বড্ড দেরি হয়ে গেছে, কবিতার সাথে আমার আর কটা দিন আগে দেখা হলেই পারত। তবুও ভালো লাগছে কবিতা এখনও আমার পাশে, অনেক বুঝিয়ে, অনেক খারাপ কথা বলে ওকে দূরে পাঠাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন যেন মেয়েটি যায় না। হয়ত এটি ভালোবাসা, আমার জন্যে কবিতার ভালোবাসা। আমার সব বন্ধু আমার অসুস্থের কথা শুনে এসেছে, দেখেছে একটু সহানুভূতি গিলেছে আমাকে গিলানোর চেষ্টা করেছে এরপর একে একে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চলে গেছে। হাসি পাচ্ছিল অনেক, তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। মনে হল দুনিয়ার সব কিছুর সাথে হয়ত বন্ধু শব্দটিও হারিয়ে যাবে, বন্ধু বলতে বোঝাবে একরাশ সহানুভূতি গেলা আর বিপদের দিনে "দোস্ত আমি আছি" বলে হারিয়ে যাওয়া। তবুও কিছু কবিতা বেচে থাকবে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে, বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসেবে। তাই তো কবিতা পরিবার ছেড়ে আমার মাথার কাছে বসে চোখের পানি ছাড়ে, আমার মাথায় হাত দিয়ে আজও সে অপেক্ষায় থাকে সে দিনটির, স্বপ্ন দেখে আজও। হঠাৎ ঘুম আসে চোখ লেগে যায়, ঘুমের মাঝে ছড়া কাটি,
"ভালোবাসা থাকুক কবিতায়,
জেগে উঠুক সবার চিন্তায়,
চলে যাক সব মিথ্যে খেলা,
কবিতা থেকেই হোক শুরু,
ভালোবাসার পথ চলা।"
©somewhere in net ltd.