নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম,আমি সোশ্যাল ইনভার্স বলছি। নাম শুনে হয়ত বুঝে যাবার কথা আমি ইন্ট্রোভার্ট টাইপ মানুষ। তবে গর্তবাসী নই অবশ্যই। ঘুরাঘুরি ভালো লাগে, লিখালিখি ভালো লাগে। একটু পাগলাটে স্বভাবের। পৃথিবী ঘুরে দেখার স্বপ্নে আমি বিভোর

সোশ্যাল ইনভার্স

কিচ্ছু বুঝি না, পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখার স্বপ্নে আমি বিভোর

সোশ্যাল ইনভার্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরার ইন্সেকটোফোবিয়া

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৭

নন্দিত ঔপন্যাসিক পিথাগোরাসকে একবার তার ভক্তরা জিজ্ঞেস করেছিল, "গুরুজী! ধরেন আপনি সদ্য বিবাহ করেছেন। আপনার স্ত্রী হঠাত একদিন আপনার উপর রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আপনার তখন কেমন লাগবে?"

পিথাগোরাস খানিকক্ষন চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেন। তারপর গম্ভীর মুখে জবাব দিলেন, "আরে পাগলা! সদ্য বিবাহিতদের জন্য বউ বিহীন জীবন তো লবনবিহীন তরকারীর মত রে!! " ;)



পিথাগোরাসের এই অমর বানীখানা আজকে আমার খুব বেশি মনে পড়ছে। মনে পড়াটা অবশ্য খুব স্বাভাবিক। মনে পড়ার মূল কারণ ইরার অনুপস্থিতি.....

ইরা আমার স্ত্রীর নাম। আমাদের বিয়ে হয়েছে মাস দুয়েক হবে। এরেঞ্জড ম্যারেজ।
এই দুইটা মাস মোটামুটি ঝামেলামুক্ত ভাবেই কেটেছে।
ঝামেলামুক্ত বলতে হাঁটি হাঁটি পায়ে প্রেম পিরীতি, অল্পসল্প খুনসুটি, মিষ্টিমধুর ঝগড়া আর একটু আধটু উড়োউড়ি। দিন কাটছিল ভালোই :)
.
গন্ডগোলটা বেধেছে আজকে সকালে।
গন্ডগোল মানে ছোটখাট ঝগড়া। সেই নিয়ে ওর রাগারাগি। তারপর ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া....
কোথায় গেছে সেটাও বলে যায়নি। আমি পড়েছি মহা মুশকিলে। এই ধরনের পরিস্থিতির সাথে আমি পরিচিত নই। কি করা উচিৎ সেটাও বুঝছি না। কাউকে এটা বলতেও পারছি না। লজ্জা লাগছে।
.
ওদের বাসায় ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়া যায় কিন্তু জিনিসটা চরম বোকামি হবে। কোনভাবে যদি কেউ জেনে যায় যে ইরা বাসা থেকে ঝগড়া করে চলে গেছে তাহলে ছোটখাট কেলেংকারী হয়ে যাবে। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে আসছে....
আমি কি করব কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ পায়চারি করছি আর মনে মনে দুয়া করছি, মাবুদ তুমি সবকিছু স্বাভাবিক করে দাও! স্বাভাবিক করে দাও মাবুদ!!
...




...
বিপদ যখন আসে তখন সবাই মজা নেওয়া শুরু করে। শুধু মানুষ না পশুপাখি এমনকি পোকামাকড়ও মজা নেয়।
ইরার জন্য দুশ্চিন্তায় মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে। বিছানায় শুতে যাব তখন দেখি বিছানায় একটা তেলাপোকা!!
আরেকটু ভালোমত তাকিয়ে দেখি, একটা না, আসলে দুইটা!!
ফাজিল তেলাপোকা তার গার্লফ্রেন্ড (কিংবা বউ) নিয়ে এসেছে আমার বিছানায়। আমার রুমকে সম্ভবত তারা লিটনের ফ্লাট হিসেবে ব্যবহার করছে X((

আমি বরাবরই নৈতিকতা মেনে চলার চেষ্টা করি। তেলাপোকা জুটির এ অনৈতিক কর্মকান্ডে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। দিন দিন সমাজ থেকে নৈতিক মূল্যবোধ উঠে যাচ্ছে। ব্যাপারটা আসলেই হতাশাজনক।
একবার ভাবলাম তেলাপোকা দুইটাকে থাপড়ায়ে জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিই।
আবার মনে হল হয়ত স্বামী তেলাপোকাটার অবস্থা আমার মতই। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে স্ত্রীর সান্নিধ্য পেয়েছে। চরম আবেগঘন মূহুর্ত।
এ আবেগঘন মূহুর্তে আমার হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং ওরা ওদের মত থাকুক।
আমি আমার মত বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লাম।
.
ইরার কথা খুব বেশিই মনে পড়ছে। ওর হালকা ইনসেক্টোফোবিয়া টাইপের আছে। পোকামাকড় দেখলে ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দেয়। একেবারে ছোট বাচ্চাদের মত।
বিছানায় তেলাপোকা দেখলে নিশ্চয় ও বাচ্চাদের মত লাফালাফি শুরু করত। আর আমি মুগ্ধ হয়ে ওর বাচ্চামি দেখতাম। আহ! কতই না ভালো হত।
পিথাগোরাস সাহেব ঠিকই বলেছেন। বউবিহীন জীবন আসলেই লবনবিহীন তরকারীর মত......একেবারেই পানশে :)







রাত তিনটার দিকে আমার ফোন বেজে উঠল। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ফোনের শব্দে ধড়মড়িয়ে উঠে দেখি ইরার ফোন!! ধরতেই কাঁপা কাঁপা গলায় ইরা বলল,
.
- "কোথায় তুমি?"
.
- "আমি তো বাসায়। তুমি কোথায়!! তোমার টেনশনে তো মারা গেছিলাম!"
.
- " এইই! আমি একটা ঝামেলায় পড়েছি। রুমে অনেক তেলাপোকা উড়ছে। আমি বাথরুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছি। ভয় লাগছে!!! "
.
- "বলো কি? আমার রুমেও তো দুইটা তেলাপোকা ডিস্টার্ব করতে এসেছিল !! "
.
- " আমি অত বুঝি না। তুমি তাড়াতাড়ি এসে তেলাপোকা তাড়াই দিয়ে যাও! "
.
- " তুমি আছ কোথায়?? "
.
- " একটা হোটেলে উঠেছি। তোমার মত গর্দভের সাথে বাস করার চেয়ে এখানে থাকা অনেক বেটার" -_-
.
- "তো থাকো একা ওখানে। আমাকে ডাকছ ক্যানো?? :/
.
-" দেখ! ঢং করতে হবে না। এসে তেলাপোকা তাড়াই দিয়ে চলে যাও। তোমাকে থাকতে বলি নাই! " :/
.
-" হে হে হে। এবার বুঝ ঠেলা! " :D
.
- "তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো। আমি টয়লেটে ঢুকে বসে আছি। দেরী করলে মারা যাব!!!!"
.
-" আচ্ছা, দেখছি দেখছি। তুমি কোন হোটেলে আছ বলো......






রাত তিনটা পঁচিশে বাইক নিয়ে হোটেল ড্যাফোডিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ফাকা রাস্তায় পাগলের মত স্পিডে টান দিলাম। বাতাসের ঝাপটায় চুল উড়ছে। নিজেকে হিরো হিরো মনে হচ্ছে। তেলাপোকা নামক ভিলেনের হাত থেকে নায়িকাকে বাঁচাতে হবে। তাতে যদি জীবন যায় তো যাক। ভিলেনের হাত থেকে নায়িকাকে বাঁচাতে গিয়ে কতশত সুপারহিরো প্রাণ দিয়ে দিল। আমি আবার কোন ছাড়?!!!....
.
পাদটীকা-১ : গুটিবাজ তেলাপোকাকে ধন্যবাদ। গুটিবাজির মাধ্যমে সে নায়ক কে নায়িকার পাশে নিয়ে আনতে পেরেছে। এর চেয়ে বড় ব্যাপার কি হতে পারে??
.
পাদটীকা-২ : নায়ক তেলাপোকার হাত থেকে নায়িকাকে উদ্ধার করতে পেরেছিল। বিনিময়ে নায়িকা নায়ক কে হতাশ করেনি। বলেছিল,
" ঢং করতে হবে না। আজকে রাতে এখানেই থেকে যাও।"
.
সেই রাতে আকাশে মেঘ ছিল না। তারপরেও অতি অদ্ভুত কারনে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছিল। সেই বৃষ্টির সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না। সেই বৃষ্টির সৌন্দর্য অতুলনীয়,অদ্ভুত, অপরূপ! :)
...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: নন্দিত ঔপন্যাসিক পিথাগোরাস

এপিক ব্রো, রিয়েল এপিক! সেই লেভেলের মজা পেলাম!

উফ!! গল্পটা জোস হয়েছে। আপনি ব্লগ মাতাবেন প্রিডিক্ট করে গেলাম!

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৫

সোশ্যাল ইনভার্স বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.