![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিচ্ছু বুঝি না, পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখার স্বপ্নে আমি বিভোর
আমি আজকাল মীরা নামের একটা মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। অনেকটা হন্য হয়েই খুঁজে বেড়াচ্ছি। মেয়েটাকে খুঁজে পেলে একটা কথা বলতাম। কথাটা বলা আমার জন্য বিশেষ জরুরী। কিন্তু সমস্যা হলো, মেয়েটার ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য আমার জানা নাই। ফোন নম্বর, ঠিকানা কিছুই জানি না। মোটামুটি অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানোর মত অবস্থা। তারপরও ক্ষীণ আশা নিয়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছি। এত সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র আমি নই।
মীরার সাথে কিভাবে পরিচয় সেটা একটু বলি...
রাজশাহী থেকে ঢাকা যাব। প্রথম জব ইন্টারভিউ দিতে...
মনে অন্যরকম শিহরণ আর নার্ভাসনেস কাজ করছে।
ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে নার্ভাসনেস কাজ করবে এটা স্বাভাবিক। তবে আমার ক্ষেত্রে একটু বেশি কাজ করছে কারণ আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। কি বলতে যেয়ে কি বলে ফেলি। তালগোল পাকিয়ে ফেলি।
বিশাল চিন্তার বিষয়!
তার উপর শীতের রাতে ট্রেন জার্নি। শীতও পড়েছে উরাধুরা লেভেলের। ঠান্ডা আর টেনশনে আমি রীতিমত কাঁপছি। মনে হাজারো দুশ্চিন্তা ঘুরছে।
দুশ্চিন্তা মুক্তির জন্য একটা ওষুধ খেয়েছি। ক্লোনাজেপাম পয়েন্ট ফাইভ মিলিগ্রাম। এতে দুশ্চিন্তা কমবে, রিল্যাক্স মুড আসবে, ফলশ্রুতিতে ভালো ঘুম হবে।
ইন্টারভিউ এর আগের রাতে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 'ইন্টারভিউ এর আগের রাতে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা' বিষয়ক একটা লেখা পড়েছিলাম। ওই লেখা অনুযায়ী পরিমিত ঘুম ছাড়া যারা ইন্টারভিউ দিতে যায়, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যার্থ হয়। অতএব ঘুমাতে আমাকে হবেই। আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া করছি, "ঘুম দাও মাবুদ। মাবুদ আমাকে ঘুম দিয়ে দাও.."
বেশিক্ষন ঘুমের চেষ্টা করতে পারলাম না। নারীকন্ঠের আওয়াজে চেষ্টায় বিঘ্ন ঘটল,
- " এক্সকিউজ মি, একটু সরে বসবেন প্লিজ। এই সিটটা সম্ভবত আমার! "
আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে একগাদা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রেনের কামরার মৃদু আলোয় দেখে অষ্টাদশী বলে মনে হল। মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
আমি কি বলব কিছু বুঝলাম না। চুপচাপ একটু সরে জায়গা করে দিলাম। মেয়েটা ধপাস করে বসে পড়ল।
আমার ভয় করতে লাগল। কিসের ভয় নিজেও জানি না।
অজানা আতংকে গলা শুকিয়ে গেল। বুক ধড়ফড় করতে লাগল। ব্যাগ থেকে পানি বের করে খেলাম। পানি খেতে গিয়ে বিষম খেলাম। মুখ থেকে পানি ছিটকে বেরিয়ে শার্টের গলার অংশ টা ভিজিয়ে দিল। পুরাই লুলায়িত অবস্থা।
ছেলেদের লুলায়িত অবস্থা দেখে মেয়েরা চুপ থাকে না। তারা হাসে। খিলখিলিয়ে হাসে.......
নাহয় মুখ টিপে হাসে।
এই মেয়ে কোনটাই করল না। আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়ে সম্পূর্ন নির্বিকার থাকল। তারপর ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ঘাটাঘাটি শুরু করল। যেন আশেপাশে কিছুই ঘটছে না। যেন সে ট্রেনে বসে নেই। নিজের রুমে শুয়ে পা দুলিয়ে দুলিয়ে মোবাইল টিপছে!!!!
ট্রেনের জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকছে। এই বাতাস চাদর ভেদ করে একেবারে বুকে গিয়ে লাগছে। আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে। জানালাটা লাগিয়ে দেয়া দরকার।
আমি জানালা লাগাতে গেলাম। জানালা লাগাতে গিয়ে হাতের আংগুল জানালার চিপায় আটকে গেল।
প্রচন্ড ব্যাথায় আমি তাল সামলাতে না পারে জোরে একটা চিৎকার দিলাম। তাতে খুব একটা লাভ হলো না। আংগুল চিপায় ভালোমত আটকে গেছে। টেনে বের করা যাচ্ছে না। কি আপদ!
তবে একটা লাভ হল। আমার বিপদে মেয়েটা এগিয়ে আসল। জানালা খুলে দিয়ে আটকে যাওয়া আংগুল মুক্ত করল।
আমি স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম। মেয়েটাকে থ্যাংকস বললাম। তার উত্তরে মেয়েটা যা বলল সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলল,
- "ব্যাথা পেলে এভাবে জোরে চিল্লাতে হয় না। ব্যাথা পেলে নম্রভাবে 'আউচ' বলতে হয়। "
- "মানে কি? আপনি ব্যাথা পেলে চিল্লান না নাকি? "
- "জ্বি না। এভাবে চিল্লাই না। নম্রভাবে আউচ বলি। তাতে ব্যাথা কমে আসে কিছুটা। "
- " তাই নাকি? এ জিনিস কোত্থেকে শিখলেন? "
- "কেউ শিখায় নি। কায়দা করে রপ্ত করেছি। আপনিও চেষ্টা করতে পারেন। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে এ জিনিস নাও খাটতে পারে! "
- "ওহ আচ্ছা। তাহলে তো জিনিসটা ট্রাই করে দেখা দরকার। "
- "জ্বি অবশ্যই ট্রাই করবেন। "
- "কিভাবে ট্রাই করব? "
- "সিম্পল। ব্যাথা পেলে চিল্লাচিল্লি লাফালাফি না করে নম্রভাবে 'আউচ' বলবেন। দেখবেন ব্যাথা কমে গেছে কিছুটা। "
- "কিন্তু আউচ বলার সাথে ব্যাথা কমার সম্পর্ক কি? "
- "আমি নিজেও জানি না। তবে আমার ক্ষেত্রে এ জিনিস খাটে। বাই দ্যা ওয়ে, আমি মীরা..........."
.
পাঠক, কথাবার্তা এভাবেই শুরু হয়েছিল। প্রথমে ভাবলাম মেয়েটার মাথায় বোধহয় কিঞ্চিৎ ছিট আছে। কিন্তু কিছুক্ষন কথা বলে বুঝলাম আমার ধারনা ভুল। মেয়েটা পাগলামি করতে ভালোবাসে।
এরপর কথা হলো আরো। আমি কম কথা বললাম। মেয়েটাই বেশি কথা বলল। কথাবার্তার এক পর্যায়ে একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম। আমি কারো সাথে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। অথচ এই মেয়ের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারছি। নার্ভাস লাগছে না। বরং কেমন জানি স্বস্তি লাগছে! কি অদ্ভুত ব্যাপার!
স্বস্তি লাগার কারণ কি হতে পারে? আমি কিছুটা পাগলাটে টাইপের। মেয়েটার মধ্যেও পাগলামী জিনিসটা আছে। এটাই কি স্বস্তি লাগার কারণ?
পাগলে পাগলে স্বস্তি জাতীয় ব্যাপার??! !
আমি সোজাসাপটা মেয়েটাকে বললাম,
- "আপনার কি বয়ফ্রেন্ড আছে? "
- "আপনার কি ধারনা? "
- "সুন্দরী মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকা স্বাভাবিক। "
- "বয়ফ্রেন্ডই থাকতে হবে ক্যানো? আমি তো বিবাহিতা ও হতে পারি!! "
- "জ্বি অবশ্যই। সেটাও হতে পারে। "
- "আমার কথা বাদ দিন। আপনার রিলেশনশিপের অবস্থা বলুন। "
- " আমার রিলেশনশীপের কোন অবস্থা নেই। আমি বোকা মানুষ। বোকা মানুষদের জন্য মেয়েদের ভালোবাসা থাকে না। সহানুভূতি থাকে! "
- "আপনার ধারনা ভুল। আমি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে বোকা ছেলেদের পছন্দ করি। এরা নির্ভেজাল হয়। এরা ভালোবাসতে জানে....... "
এরপর অদ্ভুত কারনেই দুজন চুপ হয়ে গেলাম। আমি মনস্থির করে ফেললাম মেয়েটাকে একটা কথা বলব। যেভাবেই হোক বলতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। মনে মনে কথাটা গুছিয়ে ফেলতে লাগলাম। এ কাজ সহজ না। খুবই জটিল এবং রিস্কি। আমি বিপদ হাতে নিলাম। যা হয় হোক, এসপার ওসপার করেই ছাড়ব। কথাটা বলেই ছাড়ব........
ট্রেন প্রচন্ড গতিতে চলছে। আমি কি বলব গুছিয়ে ফেলেছি। কিন্তু বলতে পারছি না। কারণ মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না।
আমি অপেক্ষায় আছি মেয়েটার ঘুম ভাঙবে কখন। ঘুম ভাঙলেই কথা টা বলে ফেলব।
আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। করতে থাকলাম। অপেক্ষা করতে করতে একসময় নিজেই ঘুমিয়ে পড়লাম......
ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন দেখলাম মেয়েটা পাশে নেই। পাশের সিট খালি। আমি ট্রেন থেকে নেমে অনেকক্ষন খুঁজলাম। তাকে পাওয়া গেল না।
আমার মনে হচ্ছিল আমি অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলেছি। এই মেয়েটাকে আমার সত্যিই দরকার ছিল। অথচ মেয়ের ব্যাপারে সেরকম কিছুই জানি না। খালি জানি, মেয়েটা ব্যাথা পেলে অস্থির হয়ে পড়ে না। খুবই নম্রভাবে 'আউচ' বলে। কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!! কি অদ্ভুত!!!
-------------------/////////////////////-------------------------------
পাদটীকা - ১:
মীরাকে হারিয়ে ফেলার পর অনেকটা ভগ্ন হৃদয়ে ইন্টারভিউ দিতে গেছিলাম। অতি অদ্ভুত কারনে চাকরীটা পেয়ে গেছিলাম।
তবে চাকরী পেলেও মীরাকে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। এখনো খুঁজেই যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস একদিন ওকে খুঁজে পাবই। আমার না বলাটা কথাটা সেদিন বলে ফেলব। পাঠক, আমার জন্য দোয়া করবেন।
.
পাদটীকা - ২ :
সেই রাতে আমি আমার জীবনে দেখা সুন্দরতম দৃশ্যটা দেখেছিলাম। জোছনা রাত। ট্রেন যমুনা সেতু ক্রস করছে। মীরা তখন ঘুমাচ্ছিল। জানালা দিয়ে আসা যমুনার উত্তাল বাতাসে ওর চুল এলোমেলো হয়ে গেছে। চাঁদের আলোয় ঘুমন্ত পরীর মত লাগছে ওকে। আমি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। চাঁদের আলো ঠিকরে পড়েছে যমুনার বুকে। সে আলোয় চিকচিক করছে যমুনার জল। এ দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এ দৃশ্য অপরুপ, অপার্থিব
২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪
সোশ্যাল ইনভার্স বলেছেন: ধন্যা
৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: আপনার লেখার হাত তো দারুন! চালিয়ে যান।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৮
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: ওসাম হৈসে!