প্রথম আকাশ ভ্রমণ! অসাধারণ অনুভূতি!

২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ১:৪৫

জীবনে প্রথম আকাশ ভ্রমণ! এক অসাধারণ অনূভূতি! ২৪শে মে দেশের মধ্যেই জীবনে প্রথম আকাশ ভ্রমণ করলাম। হঠাৎ অফারটি এল। ২৩শে মে এক সাংবাদিক বন্ধু ফোনে জানালেন পরদিন যশোরে একটি অনুষ্ঠানে বেড়াতে যেতে হবে। যাত্রা হবে আকাশ পথে। আমাদের পরিবারে আমি এবং মা ছাড়া সবারই দীর্ঘ বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিদেশ প্রবাসী বারার বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতায় আমি মাঝে মধ্যে ঈর্ষান্বিত হই। তিন মামা, চার চাচা, ছোট ভাইটিও লাখ খানেক মাইল আকাশ পথ বিমানে চড়েছে। কেবল আমিই শূন্য, শূন্যতায়। ফলে অফিসের পরদিনের জন্য প্রয়োজনীয় দুইটি বিশেষ রিপোর্ট লিখে ঘুমোতে গেলাম রাত সাড়ে চারটায়। ভোরে ঘুম থেকে ওঠেই ছুটলাম ফার্মগেট। সেখান থেকে তিন সাংবাদিক বনধু সোজা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বন্দরে। অভ্যন্তরীন টার্মিনালে আধঘন্টা অপেক্ষার পর হাতে পেলাম কাঙ্খিত বোডিং পাস। সকাল সাড়ে নয়টায় জীবনে প্রথম বিমানে (ইউনাইডেট এয়ারওয়েজের এয়ারবাস) চড়লাম। বিমানের ডানপাশের নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসতেই এয়ার হোস্টেস কোরআনের আয়াত পড়লেন। তারপর যথারীতি সম্বোধন। প্রতিটি সিটের ওপর দিয়ে ধোয়ার মত এয়ারকুলারের শীতল ধোয়াশা বেরুচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমান উড়াল দিল আকাশে। রানওয়ে থেকে আকাশে উড়াল দেয়ার মুহুর্তটি অসাধারণ! তারপর বিমানটি বার কয়েক হাল্কা ঝাকুনি দিয়ে, কাত হয়ে ডানে মোড় নিতে শুরু করল। আমি নিচে তাকিয়ে গুলশান-বারিধারার বাড়ি আর রাস্তা আর রাস্তার গাড়িগুলো দেখতে থাকলাম অবাক বিশ্ময়ে। সাড়ে নয় হাজার ফিট উপরদিয়ে উড়ন্ত বিমানটি একটু পরেই মেঘের ভেলায় ঢুকে পড়ল। নীচে তখন আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নিচের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আরেকটি আকাশ। হঠাৎ বিমানটি একটি ঝাকুনি দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে এয়ার হোস্টেস সুপ্তী মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিলেন- দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। তিনি সবাইকে সিট বেল্ট বেধে নিতে ও আল্লার নাম স্মরন করার পরামর্শ দিলেন। অথচ বিমানে চড়ার সময় আকাশ ছিল অনেকটাই রৌদ্রকরোজ্জ্বল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এয়ারহোস্টেস- ট্রলিতে করে যাত্রীদের স্নাক্স বিতরণ শুরু করলেন। প্রতিটি সারির মধ্যখানে ট্রলি থামিয়ে তিনি কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলেন- স্নাক্স প্লিজ। তার উচ্চারণটা আমার কানে অনেকটা সেক্স প্লিজ হয়ে বাজছিল। বিষয়টি নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে দুষ্টামী করতেই সে রেগে ওঠল। তখনও ভয়ে সে দোয়া-দরুদ পড়ছিল। তবে কৃত্রিম হাসির সুপ্তি সত্যিই আকর্ষনীয়। যশোর পৌছার ৭-৮ মিনিট আগে থেকে প্লেন অনেক নিচ দিলে চলছিল। ফলে নিচের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে আমি তার সৌন্দর্য্য উপভোগে ডুবে গিয়েছিলাম। আধঘন্টার মধ্যেই আমরা যশোর বিমানবন্দরে ল্যান্ড করলাম। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় ফেরার জন্য ফের ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি বিমানে চড়লাম। এবার আমরা চারজন। তবে যশোরের একজন এমপিকে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ আমাদের নির্দিষ্ট সিট অদল-বদল করে। এতে আমরা চারজনকে তিনজায়গায় বসতে হয়। তবে আখেরে আমারই লাভ হয়। এবারও আমি ডানদিকে জানলার পাশের সিটে বসার সুযোগ পাই। আর আমার পাশের সিটে একজন তরুনী। বিমান ছাড়ার কিছুক্ষন পরই পরিচয় হল। তিনি বিলাত প্রবাসী। দেশে বেড়াতে এসেছিলেন। ঢাকা ফিরে কয়েকদিন বেড়িয়ে বিলাত ফিরবেন। তিনি পরিচয় জেনে দেশের রাজনীতি নিয়ে বিশেষ করে বিলাত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে তারতম্য তুলে ধরা শুরু করলেন আমার কাছে। আমিও হা-হু করলাম। নিজের অভিমত জানালাম। তবে এবার আবহাওয়া ছিল- চমৎকার। পুরো পথই আমি নিচের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখায় ডুবে ছিলাম ওই তরুনির সঙ্গে আলাপের ভেতরেও। বিশেষ করে আকাশ থেকে পদ্মা নদীর দৃশ্যটি অসাধারণ। ফিরতি পথের এয়ারহোস্টেস ওয়ার্দার মুখে কৃত্রিম হাসি না থাকলেও স্বাভাবিক চেহারার তাকেও ভাল লাগল। তবে ফেরার পথে বিরক্তিকর ছিল- বিমানের ভেতরের ভ্যাপসা গরম। এবার সিটের ওপর এয়ারকুলার থেকে শীতল ধোয়া বেরুতে দেখলাম না। দেখলাম অনেকেই হাতের পত্রিকা দিয়ে বাতাস করছেন। বিমান ল্যান্ড করার পর পড়লাম এক অদ্ভুত সমস্যায়। আমার সিটবেল্ট কোনভাবেই খুলতে পারছিলাম না। পরে সহযোগীতা চাইতেই তরুনিটি আমাকে বিপদ থেকে মুক্ত করলেন।

৪৬ টি +৮/-০