নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরবেশ১

দরবেশ১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৪

১। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে আমাদের সমাজে একটি শ্রেণির মধ্যে যথেষ্ট মাথাব্যথা রয়েছে বলে মনে হয়। অনাবাশ্যভাবে যে-কোন বিষয়ে তারা সেনাবাহিনীকে টেনে এনে বিষোদগারে অভ্যস্ত। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে বিশাল অবদান রয়েছে, একচোখা নীতির কারণে ওই শ্রেণীর মানুষের কাছে তা কদাচিত আলোচিত হতে দেখা যায় না। গত ১৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে আদিবাসী ফোরাম নামক একটি সংগঠন আরও ৭টি সংগঠনকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। উক্ত সংগঠনগুলো হচ্ছে- আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআই), অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইন সমিতি (বেলা), নিজেরা করি এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। তারা সেনাবাহিনীর স্থাপনা নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন যে, সেনাবাহিনীর স্থাপনা নতুন নির্মাণ করা হলে নাকি প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস হবে। সেনাবাহিনীর ‘পরিধি ক্রমেই বাড়ছে’ বলে তাদের মাথাব্যথার কারণ। এটাকে ‘অন্যায়’ বলে আখ্যায়িত করে সরকারের প্রতি লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, যদি এসব অন্যায়ের কোনো প্রতিকার করতে না পারেন, তা হলে দেশের ভার নেওয়ার নৈতিক অধিকার আপনাদের নেই।’’ (সূত্র ঃ প্রথম আলো, ১৪ নভেম্বর ২০১৪)।
২। ভাবলে অবাক লাগে যে, উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে যারা বক্তব্য রেখেছেন, তাদের অধিকাংশই সমাজের গুণী-জ্ঞানী বলে পরিচিত মুখ। কিন' তারা যে ‘তত্ত্ব’টি জনগণকে ‘গেলাতে’ চাইছেন, সে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে মনে হবে যে, আসলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য থেকেই এমন একটি অপতৎপরতায় মাঠে নেমেছেন। এ ধরনের অপতৎপরতার পেছনে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৩। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যশ ও খ্যাতি দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে তাদের অবদানও সর্বাধিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। একই সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জন্য সুনাম, আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রণকৌশল এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিক থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের পরই সেনাবাহিনীর অবস'ান। সেনাবাহিনীর এতবড় অর্জন যারা চায় না এমন কিছু দেশ রয়েছে, তারা বাংলাদেশে কিছু এজেন্ট তৈরি করে তাদের মাধ্যমে মাঝে মাঝে সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। আলোচ্য সাংবাদিক সম্মেলন সেই অপপ্রয়াসেরই একটি অংশ বলে প্রতীয়মান হয়।
৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে যেমন সেনাবাহিনীর বিশাল অবদান রয়েছে, তেমনি দেশগঠনে ও দৈব-দুর্বিপাকে সেনাবাহিনীকে সবসময় জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। যখনই কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যায়, তখন সেখানে সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসে। কোথাও বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কিংবা ভবন ধসের ঘটনা ঘটলে সর্বাগ্রে আমরা সেনাবাহিনীকে পাশে পাই। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এপর্যন্ত যে কয়েকটি রাস্তাঘাট, সেতু-পুল, ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে, সবগুলোই যথাসময়ে ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। যে কারণে দেশের সর্বশেষ পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের প্রাক্কালে সেনাবাহিনীকেই কাজটির তত্ত্ববধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর উপসি'তি থাকলে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকেনা- এ বিশ্বাস থেকেই অনেক ক্ষেত্রে অনেক কাজে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়। সেনাবাহিনীও জনস্বার্থে সরকারকে যে-কোনো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এতে দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠীর কাছে সেনাবাহিনীর চক্ষুশূল হয়ে পড়ে।
৫। ‘আদিবাসী ফোরাম’ নামে যে সংগঠনটি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য ৮টি সংগঠনের ব্যানারে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে, সেই ফোরামের নেতা-কর্মীদের অজানা থাকার কথা নয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অবদান কত বেশি। পাশ্চদপদ একটি উপজাতি জনগোষ্ঠীকে সভ্যতার আলোকে আলোকিত করার জন্য একমাত্র সেনাবাহিনী এতকাল যাবত যে শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছে, ‘আদিবাসী ফোরাম’ একটিবারও সেসবের মূল্যায়ন করেনি। আজকে উপজাতিরা বাংলাদেশের মূলস্রোতধারায় চলে এসে সর্বক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার সে সুযোগ পাচ্ছে তার পেছনে সেনাবাহিনীর অবদান কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
৬। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারের ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। সেনাবাহিনীর ব্যবস'াপনায় একটি প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইএসটি’র মতো একটি প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ঢাকা সেনানিবাসে একটি মেডিকেল কলেজ এবং দেশের অন্যান্য সেনানিবাসে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যাডেট কলেজগুলোর শিক্ষার মান সম্পর্কে কাউকে বোঝাবার প্রয়োজন হয় না। এসব ক্যাডেট কলেজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি প্রতিবন্ধী কিংবা অটিজম শ্রেণিভুক্ত ছেলে-মেয়েদের সমাজে অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মত শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করার জন্য সেনাবাহিনী এক বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। যারা সেনাবাহিনীর এ ধরনের জাতিগঠনমূলক কাজগুলোর বিরোধিতা করে এগুলোকে ‘অন্যায় কাজে’র শ্রেণিভুক্ত করতে চান, তারা যে সাধারণ মানুষের ভালো চান না, তা বলাই বাহুল্য। সে কারণে তারা সেনাবাহিনীর কাজের পরিধি বাড়লে অখুশি হন।
৭। দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যেই সব দেশে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। যারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সংরক্ষণ চান না, কিংবা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের কাছে বিকিয়ে দিতে চান, তারাই কেবল শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করতে পারেন।
৮। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে, তুলনামূলকভাবে টিকে থাকার মতো সামরিক শক্তি অর্জনের বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সেরকম ভারসাম্যমূলক সামরিক শক্তিতে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। এজন্যে যা যা দরকার সবই করতে হবে। অর্থের প্রয়োজন হলে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে, ভূমির প্রয়োজন হলে ভূমি বরাদ্দ দিতে হবে। কিন' যখন এ বিষয়গুলো সামনে আসে, তখনও যারা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে এগিয়ে আসেন, তারা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোক নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে উক্ত শ্রেণির লোকদেরকে সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধির পক্ষে বাজেট বরাদ্দের বিরোধিতা করে কলম ধারণ করতে দেখা যায়। বড় গলায় উচ্চরণ করতে শোনা যায় যে, আমাদের দেশে সেনাবাহিনীর দরকার নেই। আবার কেউ বলেন নিয়মিত সেনাবাহিনীরই দরকার নেই। তাদের একথার অর্থ হলো, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তা হলে, তারা কি করে স্বাধীনতার পক্ষ হতে পারেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
৯। স্পষ্টত আমাদের চারিদিকে ছদ্মবেশি শত্রুরা বিরাজমান। জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস'ানকে পরিম্লান করতে সেনাবাহিনীর গায়ে কিছু একটা দুর্গন্ধ লাগাবার মানসে দেশের ভিতরে ও বাইরে ছদ্মবেশি শত্রুরা নানা প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। যে-কোনভাবে সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান গতিশীলতাকে খর্ব করার জন্য তাদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। আদিবাসী ফোরামের সাথে যে ৮টি সংগঠন সাংবাদিক সম্মেলন করেছে, তারা যে দেশের ভালো চান না সে ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই। যে-নামেই হোক, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রের বীজ বপণ করেছেন তারা। তাদের এ বীজ অংকুরেই বিনষ্ট করা না গেলে দেশের জন্য তা বিরাট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেনাবাহিনীকে এ ধরনের অপতৎপরতা থেকে সতর্ক থাকা আবশ্যক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.