![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১। এক সময় কমিউনিস্ট পার্টির মূখপত্র সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক মতিউর রহমান উক্ত পত্রিকায় ‘ধণিক শ্রেণির লুটপাটের কাহিনী’ নামে একটি ধারাবাহিক লেখায় সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীকালে আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি একজন প্রাগ্রসর সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার প্রথম জীবনের আদর্শ আর পরবর্তী জীবনের বাস্তবতায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। একসময় যিনি ‘ধণিক শ্রেণির লুটপাটের কাহিনী’ লিখে একজন বস'বাদী ও সাম্যবাদী হওয়ার স্বপ্ন দেখান, পরবর্তীকালে তিনি নিজেকে ভোগবাদী ও পুঁজিবাদী ধারার একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রেণিসংগ্রামের দীক্ষা থেকে নিজের শ্রেণিচরিত্রের পরিবর্তন সাধন করে যাদেরকে এদেশে নব্যবুর্জোয়া রূপ পরিগ্রহ করতে দেখা যায়, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের অবস'ান তাদের মধ্যে শীর্ষে।
২। মতিউর রহমান ব্যবসায়ী নয়, তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদক এবং দীর্ঘদিন পত্রিকায় চাকুরি করাই তার পেশা। কিন' তিনি বর্তমানে যে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, সেটির সাথে তার বাস্তব ‘ইনকামের’ কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকেই জানেন যে, ৬/৯ ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকায় একটি বহুতল ভবনের মালিক তিনি। তার একাধিক গাড়ি ও একাধিক ড্রাইভার রয়েছে। গাড়ি চালনা ও ড্রাইভারদের বেতন বাবদ যে খরচ হয়, তার সাংবাদিকতার চাকুরির আয় থেকে তা নির্বাহ করা দুঃসাধ্য। বর্তমানে অবশ্য আলিশান বাড়িটি থেকে ভাড়া আসে এবং তা দিয়ে অর্থব্যয়ের কাজটি সংকুলান হয়। কিন' বাড়িটি তৈরি করার খরচ এবং তৈরির আগের চলাফেরার খরচ তিনি কোথায় পেলেন, তা কেউ ভেবে দেখেছেন কিনা জানি না। ভাবলে অনেক কিছুই বের হয়ে আসবে।
৩। বিশ্বস্ত সূত্রমতে, প্রথম আলো পত্রিকা প্রকাশ করার প্রথম দু’তিন বছর তিনি প্রতিমাসে একবার নয়াদিল্লিতে যেতেন। নয়াদিল্লিস' একটি গোয়েন্দা সংস'ার সদর দফতরে তার সখ্যত্ব ছিলো এবং আছে। সে কারণে তিনি অনেক কিছুই পরওয়া করেন না। যারা প্রো ইন্ডিয়ান বলে পরিচিতি, মতিউর রহমান তাদেরকেও হিসেবে ধরেন না। কারণ তিনি তো ইন্ডিয়ার আরও গভীরে প্রবিষ্ট হয়ে আছেন। ট্রান্সকমে তিনি চাকুরি করে যতটুকু অর্থ উপার্জন করেন, ছদ্মবেশে অন্য ধরণের দালালি করে তার লাভ তদাপেক্ষা বেশি।
৪। মতিউর রহমান নামের যে মানুষটি সমাজে বড় বড় কথা বলে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে প্রচারে সচেষ্ট, তারই ‘ভালোমানুষগিরি’ রূপের অন্তরালে একটি ‘নগ্নচরিত্র’ রয়েছে। বিগত নব্বইয়ের দশকে তিনি যখন ভোরের কাগজের সম্পাদক ছিলেন, তখন তার ‘নগ্নরূপ’ নিয়ে ভারতীয় একটি সাময়িকীতে একটি ছবি প্রকাশের পর বাংলাদেশে তা দেখে অনেকেরই ‘ভ্রুকুঞ্চিত’ হয়েছে। সে-সময় ভারতীয় ‘দেশ’ সাময়িকীতে নগ্নদেহে মদ্যপ অবস'ায় মতিউর রহমানের ছবি প্রকাশিত হয়।
৫। ধর্মীয় বিষয়ে মতিউর রহমান সবসময়ই বিরাগ। তার নামটি ‘মুসলিম নাম’ হলেও কার্যত তিনি একজন ‘পাকা কমিউনিস্ট’ বিধায় ইসলামে বিশ্বাসী নন। তার সম্পাদিত প্রথম আলো পত্রিকায় বিভিন্ন সময় তিনি তার ব্যক্তিচরিত্রের প্রমাণ রেখেছেন। বাংলাদেশে সবগুলো পত্রিকায় শুক্রবারে ইসলাম ধর্মের উপর আলাদা বিভাগ প্রকাশিত হলেও প্রথম আলোতে তা দেখা যায় না। ইতোপূর্বে প্রথম আলোতে প্রতি সোমবারে ‘আলপিন’ নামে একটি সাপ্তাহিক কার্টূন ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। এতে মহানবী (স.) ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটাক্ষ করে কার্টূন তিনি প্রকাশ করলে তাতে ব্যাপক জনঅসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিলো। নিরুপায় হয়ে তখন মতিউর রহমান বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব উবায়দুল হকের হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে জনরোষ থেকে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করেন।
৬। বাংলাদেশে বোদ্ধা সমাজের সবাই অবগত আছেন যে, ওয়ান-ইলেভেনের নেপথ্যনায়কদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া পরপর দেশ শাসন করেছেন - এ বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তৃতীয় শক্তির উত্থানের পক্ষে অবস'ান গ্রহণ করেন এবং ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাকে উসকে দেন। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস'া ধ্বংস করে হলেও, দু’নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য ‘মাইনাস টু’ তত্ত্ব নিয়ে তারা দু’ বছরেরও অধিক কাল কাজ করেন। জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদের সম্পাদিত বহুল প্রচারিত পত্রিকা দু’টিতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালান। কিন' জনগণ তাদের ‘মাইনাস টু’ মতটি গ্রহণ না করায় শেষ পর্যন্ত ওয়ান-ইলেভেনের উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস'া ফিরিয়ে দিয়ে নিজেরা দেশ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।
৭। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বিপরীতে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন মতিউর রহমান। তিনি তার অপতৎপরতার হাতিয়ার হিসেবে প্রথম আলো পত্রিকাটি ব্যবহার করছেন। সংবিধানে যাদেরকে ‘সংসদ সদস্য’ বলা হয়েছে, প্রথম আলো পত্রিকায় তাদেরকে ‘সাংসদ’ বলে উল্লেখ করা হয়। অনুরূপভাবে সংবিধানে যাদেরকে ‘উপজাতি’ বলা হয়েছে, প্রথম আলো পত্রিকায় তাদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে উল্লেখ করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের আদিবাসী বাঙ্গালিরাই। উপজাতিদের উসকে দেয়া এবং দেশে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যেই ‘আদিবাসী’ ধারণাটি প্রতিষ্ঠার জন্য মতিউর রহমান ও প্রথম আলো পত্রিকা সংবিধান লংঘন করে প্রতিনিয়ত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। ‘সংসদ সদস্যদেরকে ‘সাংসদ’ না বলার জন্য স্পিকারের রুলিং রয়েছে। আবার অসাংবিধানিক ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করার জন্য সরকারের একাধিক ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ রয়েছে। কিন' প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কোন দিনই এসবের পরোয়া করছেন না। তিনি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেয়ার অপতৎপরতা থেকে কখনো সরে আসেননি।
৮। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্যে মতিউর রহমান অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে তার প্রধান উপজীব্য বিষয় হলো- ‘বাংলাদেশে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী থাকার দরকার নেই’। এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য সাপ্তাহিক একতা পত্রিকায় থাকা অবস'ায় তিনি যে ‘মিশন’ ও ‘ভিশন’ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, আজকের কাগজের সম্পাদকীয় দফতরে থাকা অবস'ায় এবং পরবর্তীতে ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর সম্পাদক হিসেবে তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনীকে ‘কস্ট ইফেকটিভ’ করার প্রস্তাব দিয়ে সেনাবাহিনী সংকুচিত করার পক্ষে কলম ধরেছেন তিনি। অসংখ্য সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে সশস্ত্র বাহিনীর বাজেট কমিয়ে দেয়ার পক্ষে জোরালো মত প্রকাশের চেষ্টা করেছেন মতিউর রহমান। যেহেতু সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ, সেহেতু তিনি শত্রুদেশের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। কোন দেশের ‘প্রতিরক্ষা নীতি’ সে-দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা নীতি প্রকাশ করার জন্য বারবার তিনি বক্তব্য দিয়েছেন এবং কলম ধরেছেন। দেশবিরোধী যে মিশনের প্রতিভূ হিসেবে মতিউর রহমান কাজ করে যাচ্ছেন, সে মিশনে তারই সহযাত্রী হিসেবে কিছু সংগঠনও কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে আদিবাসী ফোরাম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এ এল আরডি), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল্যাস্ট) প্রভৃতি। এসব সংগঠনকে নিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের খবরটিও খুব ফলাও করে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
৯। ‘সেনা স'াপনার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার দাবি’ শীর্ষক উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় তুলে ধরা হয়, “রাজধানীর একটা বড় অংশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের এই পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। আর রাষ্ট্র তাদের এ মনোভাবকে সমর্থন জুগিয়ে চলছে।” অতঃপর সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ‘যদি এসব অন্যায়ের কোনো প্রতিকার করতে না পারেন, তা হলে দেশের ভার নেওয়ার নৈতিক অধিকার আপনাদের নেই” (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ নভেম্বর ২০১৪)। প্রথম আলো, মতিউর রহমান ও তার সমর্থকগোষ্ঠী যে দেশে শক্তিশালী সেনাবাহিনী চান না, সেনাবাহিনীর পরিধি বাড়-ক তা কামনা করেন না এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়নে সরকার যাতে সহযোগিতা না করে সেজন্যে প্রকাশ্যে প্রভাব বিস্তার করতে চান, আলোচ্য বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট হয়েছে।
১০। স্পষ্টত মতিউর রহমানেরা দেশের বিরুদ্ধে ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করছেন, তা ভালোমানুষের বেশ ধরেই করছেন। বাংলাদেশের মাটিতে তিনি ও তার মিশনের লোকদের মূল টার্গেট বাংলাদেশকে সামরিকভাবে শক্তিহীন করা এবং আদর্শিকভাবে দেউলিয়া করে তোলা। এব্যাপারে তারা ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তাদেরকে আর কতটা এগোতে দেয়া ঠিক হবে, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। একই সাথে তাদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা সময়ের দাবি।
©somewhere in net ltd.