নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম মোঃ জাহিদুল ইসলাম দুরন্ত, আজকের জন্য বাচতে শিখি। তেমন কিছু বলার নেই,তবে স্বপ্নদেখতে ভালবাসি| তাইদিবানিশি স্বপ্ন দেখি!!!কারো নেগেটিভ মন্তব্যে তেমনগুরুত্বদেই না! সবসময় পজেটিভচিন্তাভাবনা করতে ভালবাসি|||বুকভরা আশা নিয়ে বেঁচে আছি!নি

দুরন্ত বালক ১১

নতুন ব্লগার

দুরন্ত বালক ১১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নাম : "অভিশাপ্ত ভালোবাসা”

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৬


আজ মনটা ভীষণ খারাপ । আমার জীবনের সব থেকে কাছের বন্ধু জাহিদ হাঁসপাতালে , ডাক্তার বলে দিছে বেশি হলে আর ২৪ ঘণ্টা টিকবে, লাফ-সাপোট খুলে ফেলছে, আইসিইউ থেকে বের করে ফেলছে । আত্মীয়-সজন সবাই শেষ বারের মতো দেখা যাচ্ছে। আজ বুঝতে পারতেছি কষ্ট কি জিনিষ। সামনে জাহিদ জীবনের কিছু শেষ নিশ্বাস নিচ্ছে, তার বড় ভাই নিচ্ছুপ হয়ে দাড়িয়ে দুই চোখে ভরা জল নিয়ে, চাচী একটু পর পর চিৎকার করে কান্না করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেছে। আর চাচার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আমরা বন্ধুরা কিছু করতে পারতেছি না। সবাই হতভম্ব নিচ্ছুপ ভাবতেছি আল্লাহ্‌ কি খেলা। আমি বার বার সে দিনের কথা ভাবছি সে দিন জাহিদের চুপ থেকে ঠোটের কনে হাঁসির রহস্য টা বুঝিনি সেদিন।
দুই মাস আগে আমার জাহিদ এর সাথে দেখা, আমি আরিফ , জাহিদ আমি একসাথে স্কুলে পড়তাম, ওর জীবন হাজারো কাহানীতে ভরা আর রহস্যময়, দেখে মনে হয় বাচ্চা ছেলে কিছু বুঝে না, কোথায় বলতে জানে না, কিন্তু ও যে কি এটা ওর ভালো বন্দু ছাড়া কেও জানে না, ওর কথা বলতে গেলে হাঁসি পায়, এতো কথা বলতে পারে, ও থাকলে সবাই চুপ কারণ কেও কে কথা বলার সুযোগ দেয় না, পোট পোট করতে থাকে, আর জ্ঞান দেয়। অবশ্য অনেকে উপকার পায়ছে অনেকই ওর কথা মতো চলে।

আরিফ - কি অবস্তা কেমন আছিস ?
জাহিদ - বেঁচে আছি।
আরিফ - এমন ভাবে বললি জেনো কবর থেকে উঠে আসলি।
জাহিদ- হা হা হা, সত্যি বলছিস মনটা তো কবরে-ই পরে আছে বহু দিন ধরে শরীর আর কত দিন থাকবে।
আরিফ - আজাইরা কথা বাদ দে। চল মামার দোকানে যায় চা-বিড়ি খাইতে খাইতে শুনবো তোর কাহিনী।
জাহিদ- আর এ কোন কাহানি নাই, আজ তোর অফিস নাই ?
আরিফ- ছিল কিন্তু যায়নি আর কত ব্যস্ত জীবন ভালো লাগে না।
জাহিদ- সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল আমি পারলাম না।
আরিফ- কেন ? আগের চাকরিটা ছেরে দিছিস আবার? কত আর ছারবি ?
জাহিদ- হা রে, ভালো বেতন ছিল কিন্তু কি করব মন বসে না চাকরি তে।
আরিফ- কেন ?
কি হয়ছে?
আর শরীর এ কি হাল ? সেই হিরো দুরন্ত কই ? মেয়েরা দেখলেই পৈটা যায়তো?
জাহিদ- হা হা হা, হয়ছে থামো। সময়ের সাথে সবই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আরিফ- ভাবী কেমন আছে?
তোরা কি বিয়ে-সাদি করবি না।
জাহিদ- বাদ দে আমার কথা, তোর দুষ্ট পাখি কেমন আছে? তোর ছেলেটা তো মাসাল্লাহ তোর কপি হয়ছে। সেই দিনগুলো আজ মনে পরে কতো রাত-ভর এক সাথে বসে ভাবতাম কি করা যায়। কতো কথা কতো ভাবনা, অবশেষ আমরা জয় হয়েছিলাম।
আরিফ- হা, কতটা সময় একসাথে কাটায়ছি কিন্তু তুই যে আমার বিয়ের পর নিরুদ্দেশ হয়লি আর খুজে পেলাম না।
জাহিদ- আমার স্বপ্ন, হারিয়ে যাবো কোন অ-জানায় বলেছিলাম না তকে , জীবনেতো কোন স্বপ্ন পূরণ হলো না , তাই হারিয়ে গেছিলাম অজানায়, ঐ ছয়টা মাস আর কথা আমি জীবনে কেওকে বলতে পারবো না। খুদা- তৃণা কি ? রাস্তায় গুমহীন ভয়ানক রাত্রি, টাকা ছাড়া জীবনটা কেমন বুঝতে পারি আজ।
আরিফ- ভালো ফিরছিস কেন যা থাক রাস্তায়। আচ্ছা ভাবীর সাথে কি হয়ছিল যে তুই এতো পাগল হয়ে গেছিলি।
জাহিদ- চুপ! একটা হাঁসি দিয়ে বলল চল বাসার দিকে যায় আম্মু খুজবে আমাকে।
আরিফ- চল , তুই জিবনেও আমাকে শেয়ার করবি না জানি। শেষ ঐ দেখায় আর কথা হয়নি।



আমার জাহিদ মেওকে অনেক ভালোবাসে। ভালোবাসার প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারিতে তারা "Best Couple award" জিতে নিয়েছে । বন্ধু-বান্ধব আমরা সবাই অনেক জেলাস করতাম, বলতাম তদের দুইটাকে এতো মানায় আল্লাহ্‌ তদের দুই জনকে দুই জনের জন্যই বানায়ছে। জাহিদ বলতো আমাদের সম্পর্কটা কিভাবে যে হয়ছে এক আল্লাহ্‌ জানে। আমরা সব থেকে বেস্ট , এবং সারাটি জীবন এক সাথে থাকবো যোত ঝড় আসুক আমরা ভাংবো না কোন দিন। প্রথম বছরে কত পাগলামি করে বেরায়ছে এসে আমাদের বলতো , দেখা হয়ছে ১৪৪ বার, এসএমএস হয়ছে ১০ হাজার, কথা হয়ছে ৩০ হাজার মিনিট, মেওতো ছোট্টর সাথে বাজি ধরে রাখছে আমাকে বিয়ে না করতে পারলে ২০ হাজার টাকা দিবে আঙ্গুলের টিপসয় এবং স্বাক্ষর দুইটাই নিছে। আমরা হাসতাম আর প্রতিদিন ওর পাগলামির গল্প শুনতাম আর সারাটা দিন মেও এর কথা ও থালে এটা করতো, এখানে ওরে নিয়ে আসছি ইত্যাদি। তারপর আমরা সবাই ধীরে ধীরে ব্যস্ত হয়ে পরি। অফিসের ফাকে মাঝে মাঝে দেখা হতো কিন্তু আড্ডা দেওার সময় হত না। এর পরের কাহানিটা আর জানিনা আমি।

আরিফ- আচ্ছা জাহিদ এর আজ এই অবস্থা কিন্তু জাহিদের মেও কোথায় ? ও কি জানে না? ওরে কেও খবর দেয় নাই।
শোভা- কেন আরিফ তুই জানিস না, তোর বিয়ের আগেতো ওদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছিলো।
আরিফ- কি? জাহিদ আমার কাছে এই কথাটা লুকিয়ে রাখছিল ! কি হয়ছিল ওদের মধ্যে এমন?
শোভা- আমি কিছু জানিনা। আমি শুধু এটুকি জানি।
আরিফ- শিফা, পুলক, মিতু, মুন্নি , রেখা , তোরা কিছু জানিস ?
মিতু- দোস্ত একটু চুপ থাক, পরেতো জানতে পারবি।
মুন্নি- আল্লাহ্‌ কাছে দোয়া কর সবাই।
আরিফ- আমার কিছু ভালো লাগতেছে না, আজ আমার বন্ধুর এই অবস্থা কেন ? আচ্ছা ওর বেস্ট বন্ধু আরা আপু কই ?
পুলক- নুসরাত আরা আপু আসছিল, জাহিদ এর খবর পেয়ে দুই দিন আগে UK থেকে সরাসরি হাসপাতালে এসে কান্না-কাটি, কিছু খায়নি দুই দিন, তাই উনার জামায় মাসুম ভাই এসে সকালে নিয়ে গেছে আসবে আবার।
আরিফ- ওহ। জাহিদ সারা দিন আরা, আরা করতো ওর বেস্ট বন্ধু , তার কাছ থেকে নাকি জীবনে পথচলা, কথা বলা সব কিছু শিখছে , আপুকে আমি দেখিনি কিন্তু যদি কেও জাহিদ এর কাহানি জানে উনি জানবে।
শিফা- হয়তোবা।

রাফি-পারভেজ ভাই এর সাথে ডাক্তার সাহেব কি জানি বলে গেল, রাফি ভাইয়া জাহিদের বড় ভাই।
রাশেদ- ঐ যে নুসরাত আরা আপু আসছে। ভাইয়ার সাথে কি জানি কথা বলতেছে। চল ভিতরে যায়।
আরিফ- না, ভিতরে এতো ভীর করা যাবে না, একজন যা ভাইয়াকে জিজ্ঞাস করে আই কি অবস্থা আর পারলে নুসরাত আরা আপুকে ডাক দিয়ে এদিকে নিয়ে আশিস।
আলামিন- আচ্ছা আমি যায়।
প্রজাপতি- যা। আচ্ছা জাহিদের ইউনিভারসিটির বন্ধুদের খবর দিছিস তোরা।
পুলক- আমি দিছি , শান্ত, ইয়াসিন এর নাম্বার বন্ধ। আর সৈকত লন্ডনে ব্যবসার কাজে গেছে আসতে পারবে না, সুভ্রত আসছিলো পরে আসবে আবার বলল।
আলামিন- ভাইয়া বলল ডাক্তার জাহিদকে বাসায় নিয়ে যেতে বলছে সঙ্গে একজন নার্স যাবে, আর কোন সম্ভবনা নেই।

এই কথা শুনে সবার চোখে পানি এসে পরলো। ভাইয়া সবাইকে বাসায় যায়তে বলল আর জাহিদকে আম্বুলেঞ্চে করে নিয়ে যাবে। জাহিদ এর জ্ঞান নেই ১৮ ঘণ্টা হয়ে গেছে। জ্ঞান ফিরবে কিনা আল্লাহ্‌ জানে।

সবাই জাহিদের বাসার নিচে দাড়িয়ে রয়েছি, মাসুম ভাই, সাইদ ভাই, দিবা, নিশি, দিনা, সুমি মামা, বিথি মামা, মীম মামা, আর অনেক বন্ধুরা সবাই চলে আসছে, জাহিদকে উপরে নিয়ে গেছে। জাহিদ এর জেঠা জামান সাহেব চার জন লোক পাঠায় দিলো কবরস্তানে কবর খনন করার জন্য। হুজুর আসছে যদি জাহিদের জ্ঞান ফিরে তোওবা করানো হবে, মাদরাসা থেকে চারজন ছেলে আসছে সবাই কোরআন পড়তেছে। নুসরাত আরা আপু ডইং রুমে এসে কান্না করে দিল আর বলতে লাগলো কত বুঝালাম পাগলটাকে বুঝলো না।

আরিফ- আরা আপু কি হয়ছিল জাহিদের ?
নুসরাত আরা- কি আর হবে অবশেষে নিজেকে নিঃশেষ করে ছাড়ল পাগলটা।
আরিফ – আপু জানেন আমাকে কখনো শেয়ার করল না ওর কষ্টটা ।
নুসরাত আরা- ও সুখটা সবার সাথে ভাগ করে, কষ্টটাকে নিজের মধ্যে রেখে দেয় কিছু বলে না, অনেক রাগ করছিলাম তারপর একটু শেয়ার করছিল, জাহিদ যখন ক্লাস ৯ এ পরে তখন থেকে আমার সাথে পরিচয়। খুব ভালো করে চিনি আমি ওকে সবার কথা শুনবে কিন্তু নিজের কথা কেওকে কিছু বলবে না।

আরিফ- আপু মেও আজ আসলোনা কেন ? ওরে কি জানায়ছে কেও?
নুসরাত আরা- আমি ফোন দিছি ও ওর জামায়ের সাথে ঢাকার বাইরে থাকে, চলে আসবে কিছুক্ষণ এর মধ্যে। জাহিদ মনে হয় এখনো বেঁচে আছে ওরই অপেক্ষায়। পাগলের মতো ভালোবাসতো মেও কে।
আরিফ- মেও বিয়ে করে ফেলছে, জানতামি না।
নুসরাত আরা- এক বছর হয়ে গেছে বিয়ে করছে, ওর জামায় অনেক সম্পদের মালিক, সুখেই আছে মেও। একটা ছেলে হয়ছে নাম জাহিদ রাখছে। জাহিদ আর মেও আর স্বপ্ন ছিল ওদের দুইটা মেয়ে হবে কল্প-কথা।
আরিফ- ওদের সম্পর্কটা শেষ কেন হয়ছিল।
নুসরাত আরা- জাহিদ আমাকে তেমন কিছু বলেনি। একদিন মধ্যরাতে আমাকে ফোন করে। শুধু কান্না করতেছে, আমি বার বার জিজ্ঞাসা করতেছিলাম আমাকে বল কি হয়ছে?
জাহিদ- আমার মেও আজ আমাকে বলে দিছে আমার মতো অযোগ্য মানুষের সাথে তার সম্পর্ক রাখা সম্ভব না।
নুসরাত আরা- বোকা রাগ করে বলছে তাই বলে কি এভাবে কান্না করবি।
জাহিদ- না দোস্ত, ও বুঝে না আমি কতটা ভালোবাসি, আমি ওর পাগল ও এমন কথা কেন বলবে , আমার কত কষ্ট হয় ও জানে না, ও তো আমাকে চিনে তাহলে ইচ্ছা করে আমাকে কষ্ট দিবে। আমার ভালোবাসা, আমার কেরার, ওর কাছে বিরক্ত কর হয়ে গেছে, ও স্বাধীনতা চায়, মুক্তি চায় আমার কাছ থেকে। কিছু দিন ধরে খারাপ ব্যাবহার করে, ফোন দিলে কথা বলে না, কিছু বললে রাগ করে, কি করব আমি। আমিতো ওরে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। আমি ওরে হারায় ফেলার ভয়ে ওর কথা মতোই চলি, একটু রাগ বেশি তাই মানায় চলতে চেষ্টা করি । আগে বাসায় রাগ করলে আমাকে বলত কিন্তু এখন বলে না, কখন ভালো থাকে আর খারাপ থাকে তাই বুঝি না।
নুসরাত আরা- আরে গুমা যা, কাল সব ঠিক হয়ে যাবে সব , ও তরে অনেক ভালোবাসে তাই এমন করে।
জাহিদ- জানিস আমাদের তৃতীয় ১৪ ফেব্রুয়ারীতে মেও এর সাথে বাসায় ফিরার পথে ও আমাকে বলতেছিল সামনের বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে যদি আমরা একসাথে না থাকি। আমি বলছিলাম তাহলে আমি মরে যাবো। তখন মেও আমার হাতটি ধরে বলছিল জাহিদ আমি তোমাকে কনো দিন থকাব না। কিন্তু ও যা বলে তাই হয়, আমার খুব ভয় লাগেরে।
নুসরাত আরা- এতো ভয় এর কিছু নাই। আল্লাহ্‌ চায়লে সারা জীবন এক সাথেই থাকবি।
জাহিদ- দোস্ত দোয়া করিস।
আরিফ- তারপর ?
নুসরাত আরা- তারপর আর একদিন আমি ফোন দিলাম, কথা বলে না, কিরে কথা বললবি না রেখে দিবো। তারপর হাওমাও করে কেদে দিল, কান্না আর থামে না, বললাম মেয়েদের মতো কাদিস না তো, বল কি হয়ছে ?
জাহিদ- মেও আমাকে তার জীবন থেকে দূরে চলে যেতে বলছে, আমার সাথে কোন দিন সুখী হতে পারবে না, আমি তার জন্য অযোগ্য মানুষ, আমার কিছুই নাই।
নুসরাত আরা-কেন এমন বলছে? তুই কি করছিস ?
জাহিদ- কিছু না, সন্ধ্যায় ফোন করছিলাম। বলল-
মেও- জাহিদ আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাগবো না।
জাহিদ- আমি বললাম কি করছি ? রেগে আছ? আব্বু বকা দিছে?
মেও- না কেও কিছু বলেনি। আমার মনে হয় আমাদের দূরে থাকায় ভালো আমি তোমার সাথে সুখী না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
জাহিদ- কি করছি ? এমন কথা বল না, আমি মরে যাবো।
মেও- মরে গেলে যাও আমার কিছু আসে যায় না। দয়া করে আমাকে বিরক্ত করো না।
জাহিদ- কি করছি ? আমার সম্পর্কে কেও কিছু বলছে ? আমি কি ভুল করছি বল?
মেও- দয়া করে কান্না বন্ধ করো। জোর করে ভালোবাসা হয় না। আমি অভিনয় করছি এতদিন। আমি আর পারব না, তোমার কষ্ট নিতে।
জাহিদ- এভাবে বল না। আমি মরে যাবো।
মেও- আর কিছু বলতে চায় না। তুমি আর আমাকে ফোন দিবে না। দিলে আমি ফোন বন্ধ করে দিবো।
জাহিদ- ফোন বন্ধ করো না, আমার কষ্ট হয়, অনেক ভালোবাসি তোমাকে, এতদিন অভিনয় করছো, ঠিক আছে অভিনয় এতটা সত্যি যেহেতু তুমি অভিনয় করে যেও, আমি বাঁচতে চায়। আমাকে এভাবে মেরে ফেল না।
মেও- অনেক হয়ছে। ভাল থাক, বিদায়।
জাহিদ- ফোন বন্ধ করে দিল, হাজারো বার ফোন, এসএমএস দিছি । কোন উত্তর নেয়।
পাঁচ দিন ধরে বড় একটা কাগজে হাতে Sorry লিখে রাস্তায় দারিয়ে থাকি, ও রিক্সা করে যায় আমাকে দেখেও দেখে না। গত দিন থামছিল বলল যা-তা, কান্না করতে করতে রিক্সা থেকে নেমে গেলাম। বার বার একটা প্রশ্নয় করছি আমি কি করছি? বলে আমাকে দেখলেই বিষের মতো লাগে, আমার চেহারা দেখতে চায় না।
নুসরাত আরা- হম, বুঝলাম, কান্না-কাটি বন্ধ কর। যদি ভালোবাসে ফিরে আসবে। আমি কি কথা বলব ওর সাথে।
জাহিদ- না বলা লাগবে না। তরে কিছু বললে, আমি আর কষ্ট পাবো। আমি মনে হয় ওকে বেশি বিরক্ত করি তাই কয়েক দিন চুপ করে থাকি, ওর মনটা একটু ঠিক হক।

জাহিদ মেওকে পাঁচ দিন ফোন দেয়নি কিন্তু ঐ পাঁচ দিনে জাহিদের মেও স্বাধীনতা জগতে চলে গেছে, পাঁচ দিন পর জাহিদ ফোন দেয়ার পর মেও এর উত্তর ছিল এই পাঁচ দিন কি মরে গেছিলা, জাহিদ দেখো আমি সত্যি এই পাঁচ দিন অনেক ভালো ছিলাম। তোমার সাথে আমি সুখী না। তোমি যদি এতোই ভালোবাসো আমাকে তাহলে আমার সুখের কথা ভেবে আমার জীবন থেকে সরে যাও। এর পর অনেক চেষ্টা করেও মেও এর দেখা পায়নি জাহিদ। পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় গুরে বেড়াত, আর ওকে খুজত, আমাকে ফোন দিয়ে বলত যে মেয়েটা এক মিনিট কথা না বললে থাকতে পারত না সে কি ভাবে আমাকে ভুলে গেছে, আমি বিশ্বাস করতে পারি না। এভাবে এক মাস হয়ে গেল, তারপর জাহিদ মেওকে একটা এসএমএস দিল চলো ব্রাক-আপ দিন পালন করি, শুধু তাকে একটি বার দেখার জন্য, তারপর তারা দেখা করে সুন্দর একটা দিন কাটায়। তারপর থেকে জাহিদ খুব একা হয়ে পরে, কথা বলে না কারো সাথে, বোধ্য কক্ষে একা একা বসে কান্না করত। মাঝে মাঝে মেওকে ফোন দিত আর বলত আমি বাঁচতে চায়, ফিরে এসো, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে, তুমি এইসব নেকা কান্না আর অভিনয় বন্ধ করো এবং অনেক কষ্ট-দায়ক কথা শুনাত। জাহিদ কান্না করতে করতে ফোনটা রেখে দিত। আমি অনেক বুঝায়ছি জাহিদকে নতুন করে জীবন শুরু করতে, কিন্তু ও বলত আমি কেওকে ঠকাতে পারবো না। ওকে আমি অনেক বুঝিয়েও পারিনি। তোমার বিয়ের পরত ছয় মাস নিখোঁজ ছিল, থানা-পলিশ করেও খুঁজে পাওা জায়নি। তাই অনেক রাগ করছিলাম। তারপর তেমন কথা হত না অনেক ব্যস্ত হয়ে পরি আমিও, মাদিয়ার স্কুল এবং আমারা সবাই UK তে চলে গেলাম। মাঝে মাঝে কথা হত , দুরন্ত ছেলেটা এতো গম্ভীর ভাবে কথা বলত এবং বলত অনেক ভালো আছি।
আরিফ- আপু আমিও বুঝতে পারিনি কখনো। অনেক বকতাম তাও ঠিক হল না। হাসি মুখেয় থাকতো আর বিভিন্ন উজ্জাপন মূলক দিনগুলাতে কষ্টমাখা একা এসএমএস দিত।
নুসরাত আরা- জানো আরিফ ও কিন্তু আর ছয় মাস আগেয় জানতো ওর “Brain Cancer” হয়ছে,। আমাকে ছয় মাস আগে বলছিল-
জাহিদ- দোস্ত আসবিনা, তকে অনেক মিসস করি, তকে খুব দেখতে ইচ্ছা হয়।
নুসরাত আরা- আমি বলতাম বিয়ে কর, দাওয়াত দিশ এসে পরবো।
জাহিদ- হা হা হা, বিয়ে । কেওকে ঠকাতে পারবো না। এইসব বাদ দে, আল্লাহ্‌ যা চায় তাই হবে।
নুসরাত আরা- ভালো যা ইচ্ছা কর। আমি আর আসবনা।
জাহিদ- রাগ করিস কেন। আসবি না আবার, সামনের ছয় মাসের মধ্যে আসবি বলে দিলাম।
নুসরাত আরা- কেন ছয় মাসের মধ্যে আসবো? আমার ঠেকা পরছে। আমার কথা শুনিশ না, আমি আসবো না।
জাহিদ- হা হা হা আসবি আসবি।

তখন বুঝিনি জাহিদ আর হাসির রহস্য। আমাকে একবার বললে ওকে আমি বাইরে নিয়ে ডাক্তার দেখাতাম। ইচ্ছা করে বলেনি কেও কে। ওর জীবনের মূল্য সেদিন-ই ফুরিয়ে গেছে যে দিন মেও চলে গেছে ওর জীবন থেকে।

আরিফ- আমি আর শুনতে পারবো না, খুব কান্না পায়। এটা কেমন ভালোবাসা আমি বুঝি না।
নুসরাত আরা- আমিও জানিনা, মেও কেন এমন করলো আজও কেও জানে না কিন্তু জাহিদ সবসময় বলত ও-আমাকে অনেক ভালোবাসে।

জাহিদ এর জ্ঞান ফিরেনি এখনো। চাচী খুব খারাপ অবস্তা, অনেক আদর করত সবাই ওকে। তাও পাগলটা অন্ধকারেয় ছুটলো। ভাবলো না কারো কথা।

শিফা- মেও আসছে, সাথে প্রান্তও আসছে।
সাফায়েত ভিতরের জাহিদ এর ঘর থেকে এসে বলল, মামার জ্ঞান ফিরছে, হুজুর মামাকে তওবা করানোর পর সবাই এক নজর দেখা করে আসেন কিন্তু সামনে কান্না কাটি করবেন না এবং কথা বলবেন না।
আরিফ- আল্লাহ্‌ কেমন খেলা, মেও ঘরে ডুকলো আর জাহিদের জ্ঞান ফিরল।
সবাই জাহিদের সাথে দেখা করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। সবার শেষ এ মেও ডুকলো, জাহিদের পাশে বসে হাতটা ধরলো । জাহিদ মেও কে ফিস ফিস করে কি বলল। মেও কান্না করে ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে গেল।
চাচী জাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেছে, জাহিদের যরে যরে তিনটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিচ্ছুপ হয়ে গেল। কান্নার একা শব্ধ আর সবার চোখে পানি। জাহিদ আর এই জগতে নেই, চলে গেছে আমাদের ছেড়ে।
মেও কেন এমন করছি তা আজও রহস্য হয়ে রয়ে গেল। সে দিনের পর সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত পরল। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস হটাত জাহিদের কথা মনে পরে গেল। অনেক মিসস করি ওকে। দোয়া করি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

মানুষ ভালোবাসা অন্ধ ভাবে ডুবে থাকে , এটা আসলেই ভুল। এমন ভাবে কেওকে ভালোবাসতে নেই যে জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। জাহিদ আর “Brain Cancer” হয়েছিল। এক অভিশপ্ত ভালোবাসার ভাবনা তাকে চিরতরে নিঃশেষ করে দিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.