![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১৫ কীভাবে দ্রুত কাটছে টের পাচ্ছি না, অথচ গত একটি সপ্তাহ যেন আমার কাটছিল না। বুধবার থেকেই দিন গুনছিলাম ২ নভেম্বর অর্থাৎ সোমবারের জন্য। অন্যরকম এক অনুভূতি-উত্তেজনা বিরাজ করছিল আমার মধ্যে। কারণ ক্রিকেট বিশ্বের দুই জীবন্ত কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার ও শেন ওয়ার্নের সাক্ষাতকার নেবো। ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এটি আরো বড় বিষয়।
সোমবার এলো, কিন্তু হাতছাড়া হলো সাক্ষাতকার নেওয়ার সুযোগ। কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত পাল্টে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করলেন। জানালেন, সাক্ষাতকারের সুযোগ আর থাকছে না। তবে আমন্ত্রিত সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। তাই বলে উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না। এর কারণ একটাই, মার্কিন মুল্লুকে বসে শচীন ও শেন ওয়ার্নের মুখোমুখি হচ্ছি-এই আমি।
সাক্ষাতকারের সুযোগ পাই বা না পাই এই দুই কিংবদন্তীকে কাছে থেকে দেখার সুযোগটি আমাকে যিনি করে দিয়েছেন তিনি আমার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ। গত ২৫ বছর ধরে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাকি বাঙালীর সম্পাদক। নিউইয়র্কে এটি আমার প্রধান কর্মস্থল।
সাংবাদিক সম্মেলনটির ভেন্যু ছিল বিশ্বের রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ারের ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলের ১৬ তলায়। সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়। আধঘণ্টা আগেই হাজির হলাম হোটেলে। কিন্তু ব্যর্থ হলাম সঠিক স্থান খুঁজে পেতে। আমার সম্পাদক কৌশিক আহমেদের সঙ্গেও দেখা হলো। তিনি ইতিমধ্যে ১৬ তলা ঘুরে এসেছেন। কিন্তু সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনের কোনো আলামত খুঁজে পাননি। পওে দুজন মিলে একবার চারতলা আবার একবার পাঁচতলা কওে হোটেলের ব্যস্ত রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি সামনের একটি ইলেকট্রনিক বোর্ড দেখিয়ে বললেন, সব নির্দেশনা ওখানে দেওয়া আছে। কিন্তু সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনের কোনো কিছুই উল্লেখ নেই। হঠাৎ পাশ দিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক সাংবাদিক মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। কানে ভেসে এলো, তিনিও সম্ভবত কাউকে জিজ্ঞেস করছেন একই বিষয়ে। পেছন থেকে তাকে থামালাম, তার কাছে জানতে চাইলাম ভেন্যুটা কোথায়? বললেন, ১৬ তলায় নয়, চারতলায় হবে সাংবাদিক সম্মেলন। যাই হোক, আমরা একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনের ভেন্যুতে গেলাম। ভেতরে ঢুকেই দেখি একেবারেই সীমিত আসন। সেখানে আগে থেকে বসা নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানার দুই সাংবাদিক নির্বাহী সম্পাদক জাভেদ খসরু এবং বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান। দুজনই ঢাকার একসময়ের ক্রীড়া সাংবাদিক। তাদেও মধ্যে জাভেদ খসরু আমার সরাসরি সহকর্মী ছিলেন। অনেক বছর ধরে নিউইয়র্কে থিতু হয়েছেন এ দুজন। তাদের ঠিক সামনের সারিতেই বসা সাপ্তাহিক ঠিকানার অন্যতম কর্ণধার এবং বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ সাঈদ-উর-রব। প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে ৫-৬ জন ভারতীয় ও পাকিস্তানী সাংবাদিক।
সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হবার কথা বিকাল সাড়ে ৫টায়। শেষ হবার কথা সাড়ে ৬টায়। কিন্তু ঘড়ির কাটা ৬টার ঘর ছুঁই-ছুঁই। দুপুরের লাঞ্চও সারতে পারিনি। খিদায় পেট চো-চো করছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি শুধু খাবার পানি রাখা। অগত্যা তা-ই পান করলাম। শচীন ও শেন ওয়ার্নেরও দেখা নেই। ভারতীয় দু-একজন সাংবাদিকের মৃদু উচ্চবাচ্য শুরু করলেন। তা দেখে আয়োজকদের একজন এসে কিছু নিয়মকানুনের ‘নছিহত’ করে গেলেন। আয়োজন নিয়ে দু-এক কথা বলার পর সাংবাদিক সম্মেলনের একটা গাইড লাইনও দিলেন। তিনি এও বললেন, সাংবাদিক সম্মেলনে কোনো অটোগ্রাফ চাওয়া যাবে না। ছবিও তোলা যাবে না। সেলফিতো একেবারেই না। তবে শেষে একটা গ্রুপ ছবি তোলা যেতে পারে। এ ঘোষণায় সবার আগে মন খারাপ করলেন সাঈদ-উর-রব। কারণ তিনি দুটো ক্রিকেট বল এনেছেন অটোগ্রাফ নেবেন বলে। অগ্যতা তিনি চুপ করে রইলেন। একজন ক্রীড়াবিদ হিসাবে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ তার।
শচীন টেন্ডুলকার ও শেন ওয়ার্ন আসছেন তা টের পেলাম সবার নড়েচড়ে বসা দেখেই। ঠিক ৬টা ৮ মিনিটে সাংবাদিক সম্মেলনের কক্ষে ঢুকলেন শচীন টেন্ডুলকার ও শেন ওয়ার্ন। প্রথমে শচীন, পরে শেন ওয়ার্ন। এরপর তারা মঞ্চে গিয়ে বসলেন। দুজন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুটা হলো প্রশ্ন দিয়ে। বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মধ্যে প্রথম প্রশ্ন করলেন কৌশিক আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে দুই বিশ্বসেরার মন্তব্য জানতে চাইলেন। প্রথমে শচীন এবং পরে শেনওয়ার্ন বললেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত উজ্জল। সেখানে কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় আছে, যাদের মধ্যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনেক ভাল করেছে, বললেন।
সাপ্তাহিক ঠিকানার মিজানুর রহমান অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর বাতিল প্রসঙ্গে শেন ওয়ার্নের মন্তব্য জানতে চাইলেন। শচীনের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, বাংলাদেশে তার সুখের স্মৃতি কী?। প্রথমে শেনওয়ার্ন উত্তর দিলেন। বললেন, ‘একজন ক্রিকেটার হিসাবে আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়া টিমের বাংলাদেশ সফর বাতিল লজ্জার। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম সফরের জন্য ওয়ান্ডারফুল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার কথা। আমি বোর্ডকে বলেছি নিরাপত্তার বিষয়টি হচ্ছে ‘সিলি’ বিষয়। আমি আশা প্রকাশ করছি আগামীতে অস্ট্রেলিয়া টিম বাংলাদেশে যাবে।’
আর শচীন টেন্ডুলকার ঢাকায় তার সুখের স্মৃতি জানাতে গিয়ে বললেন, ‘২০১১ সালের বিশ্বকাপের কথা। আমরা খেলার একদিন আগে ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছিলাম। পরদিন আমাদের ম্যাচ। অনুশীলনের সময় আমরা স্টেডিয়ামের বাইরে প্রচন্ড আওয়াজ শুনছিলাম। জানতে চাইলাম কি হচ্ছে বাইরে? আমরা ড্রেসিং রুমে চলে এলাম। আমাদের জানালো হলো ৪০ থেকে ৫০ হাজার ভক্ত আমাদের দেখার জন্য স্টেডিয়ামে এসেছে। কিন্তু তারা ঢুকতে পারেনি। খেলার দিনও বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন ছিলো অফুরন্ত। বাংলাদেশের মানুষের এই ভালবাসা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না।’
কথা ছিল এক ঘণ্টা চলবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। কিন্তু সে সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হলো যখন পাকিস্তানী এক সাংবাদিক ক্রিকেটকে জড়িয়ে পাক-ভারত রাজনীতির প্রসঙ্গ টানলেন।
পুরো সাংবাদিক সম্মেলনে শচীন টেন্ডুলকার ও শেন ওয়ার্ন ছিলেন দারুণ উৎফুল্ল। এই দুই জীবন্ত কীংবদন্তীতে দেখে পেশাগত শৃঙ্খলার কথা কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম। সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সব সাংবাদিকরা দুজনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। তার আগেই সাঈদ-উর-রব শচীন ও শেন ওয়ার্নের হাতে ক্রিকেটের বল এগিয়ে দিয়ে অটোগ্রাফ চাইলেন। ছবির পর্ব শেষে শেন ওয়ার্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মুচকি হাসলেন তিনি। বললাম, আপনার সঙ্গে একটা সেলফি তুলবো। রাজি হলেন। হাসিটা একটু বাড়িয়ে দিলেন। আমারও সেলফি তোলা শেষ। অন্যদিকে শচীন টেন্ডুলকার ব্যস্ত অটোগ্রাফ দেওয়া আর ছবি তোলায়। তার সঙ্গেও সেলফি তুলতে ভুল করিনি। তবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। প্রযুক্তির জটিলতায় মোবাইলে ভাল ফল আসেনি। তবে কৌশিক আহমেদ ও মিজানুর রহমান আমার কয়েকটা ভাল ছবি তুলেছেন। সব মিলিয়ে দারুন এক সময় কেটেছে আমার।
২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি অনুষ্ঠান কাভার করার সুযোগ হয়েছিল আমার। সেসময় খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। আর প্রায় দেড় বছর পর কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো ক্রিকেট বিশ্বের দুই দিকপাল শচীন টেন্ডুলকার ও শেন ওয়ার্নকে। দুটি অনুভূতিই আমার কাছে সমানে সমান। এখন আরো একটি অনুভূতির অপেক্ষায় দিন গুনছি, তা হলো ৭ নভেম্বর শনিবার বিশ্বের সাবেক সেরা ২৮ জন খেলোয়াড়কে একসঙ্গে মাঠে পাবো। তাদের খেলা দেখারও সুযোগ পাবো আশা করছি।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে বিশ্বের ৮টি টেস্ট নেশন দেশের ২৮ জন সাবেক তারকা অংশ নেবেন তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। এরই অংশ হিসাবে প্রথম ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। শনিবার নিউইয়র্কের কুইন্সের সিটি ফিল্ডে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ২৮ জন খেলোয়াড়কে দুটি দলে ভাগ করে নেতৃত্ব দেবেন শচীন টেন্ডুলকার ও শেন ওয়ার্ন। আর এই আসরের আয়োজক এএসবি কমিউনিকেশন। খেলার টিকেট সর্বনিম্ন ৫০ ডলার এবং সর্বোচ্চ ১৭৫ ডলার।
দুদলে আরো যারা থাকছেন: ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী, ভিএস লক্ষèণ ও অজিত আগারকার, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, মঈন খান, শোয়েব আখতার ও সাকলাইন মোস্তাক, দক্ষিণ আফ্রিকার শেন পলক, জ্যাক ক্যালিস, জন্টি রোডস, অ্যানেল ডোনাল্ড ও ল্যান্ড ক্লুজনার, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, এন্ড্রু সায়মন ও ম্যাক গ্রা, শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে, সাঙ্গাকারা ও মুরালি ধরন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, কুটর্নি ওয়ালশ, এম্ব্রাস ও কার্ল হুপার, ইংল্যান্ডের গ্রাম সোয়ান ও মাইকেল ভন এবং নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভিক্টরি।
©somewhere in net ltd.