মুক্তিযুদ্ধ ৭১ নাকি ২০১৩?

০৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৩৫

আমার ছোট বোন আমায় আজ একটা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প লিখে দিতে বললো। আমি হেসে বললাম "আমি কিভাবে লিখবো, আমি কি তখন ছিলাম নাকি?"।



তবে সত্যিকার অর্থে, আমি আসলেই তখন ছিলাম না। তবুও আমায় "যুদ্ধাপরাধী" বলে আখ্যায়িত করেছিলো আমার এক চাচাতো ভাই "রতন ভাই", সেদিন আমার খুব অবাক লেগেছিল যে একজন শিক্ষিত মানুষ কিভাবে এইটা বলতে পারে। তার কথার সাথে আমার কথার না মিললেও সে চাইলেই আমায় এইটা বলে আখ্যায়িত করতে পারে না। যার যার অনুভূতি তার নিজস্ব। আমি "বাংলাদেশ মানেই মুজিব" এই কথার সাথে একমত না, কিন্তু তার মানে এই না যে আমি তাকে শ্রদ্ধা করি না, তার মানে এই না যে আমি তাকে জাতির পিতা ভাবিনা। তার মানে এইনা যে আমি "যুদ্ধাপরাধী", তবে এইটা সত্যি, যুদ্ধ না করেও এখন অনেকে যোদ্ধা হয়েছে, আর অনেকেই হয়েছে রাজাকার। আর ৭১ এ এইটাই ছিল। একদল মুক্তিযোদ্ধা, অন্য দল রাজাকার। আমার এই লেখার মুল বিষয় এইটাই।



আমি আমার বোনের প্রশ্ন শুনে এইগুলাই ভাবছিলাম। আসলে আমি কোন যুদ্ধ নিয়ে লিখবো? ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ? নাকি কথিত ২০১৩ এর মুক্তিযুদ্ধ? কাকে নিয়ে লিখবো? ৭১ এর বঙ্গবন্ধু নাকি ২০১৩ এর কথিত বঙ্গবন্ধু? আমি কাকে রাজাকার বানাবো? ৭১ এর সেই পাকিস্তানী দালালদের? নাকি ২০১৩ এর জামাত শিবির গোষ্ঠীকে? কাকে নিয়ে লিখলে মানুষ বেশি ভালোবাসবে লেখা? ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠ দের? নাকি ২০১৩ এর রাজীব কে? কিছুক্ষণ ভেবে আর ভাবলাম না। ভাবলাম না কি নিয়ে লিখবো, অথবা লিখবো কিনা। কারন আমি যাই লিখবো না কেন, তা একটা গল্প মাত্র, সেখানে কিছু আবেগ আর স্মৃতি জড়ানোর ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। কারন আমি যা জেনেছি, শুনেছি, পড়েছি তার ভিত্তি আর আমার চিন্তা, আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিয়ে লেখা হবে সেটা। যুদ্ধ কখনই গল্পের বস্তু হতে পারে না, তা হতে পারে ঘটনা আর তার প্রকাশ মাত্র। গল্প মানুষ কে ভাবতে সাহায্য করে, কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা মানুষকে শুধু ভাবতে না, দেখতেও সাহায্য করতে হবে। তাই, আমি জানিনা আমি সেটা পারবো কিনা। ২০০৫/৬ এর দিকে একটা লিখেছিলাম। ওটা নাকি আমার বোনের খুব ভালো লেগেছিল। তাই আমায় আরেকটা লিখতে বললো। তবে আমার এখনো মনে হয় আমাদের সেই যুদ্ধ আজো চলছে। ৭১ এ ছিল অন্য একটা দেশের সাথে, আজ সেটা হচ্ছে অন্য একটা গোষ্ঠীর সাথে। আজ হচ্ছে নিজেদের মাঝে। আজো কিছু দেশপ্রেমী আছে, আছে কিছু রাজাকার। আর আছে কিছু মানুষ যারা এই দেশপ্রেমীদের মাথায় তুলে নাচে আর রাজাকারদের পা চাটে। আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে পুরস্কৃত হবার, যখন যার কাছ থেকে পারে। এখনকার সময় শুধু যোদ্ধা বা রাজাকারের আগে একটা নতুন শব্দ যুক্ত হয়, সেটা হলো "নব্য"।



এই পোস্ট লেখার সময় ভাবছিলাম কিছু, ভাবলাম আমি লিখবো আমার বোনের জন্য, তবে সেখানে ৭১ এর যুদ্ধ, আর ২০১৩ এর যুদ্ধ ২ টাই থাকবে। কারন, যুদ্ধ সব সময়ই যুদ্ধ আর তার মানে একদল শত্রু আর একদল মিত্রের বসবাস থাকবে সেখানে। যারা এক আকাশের নিচে থেকে, এক জায়গায় বসবাস করে, একে অপরের বুকে বা মাথায় গুলি করবে। যে মরবে সে অপরের জন্য রাজাকার, আর যে বাঁচবে সে যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু লিখতে হলে আমায় কোনো এক মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলতে হবে, তার আবেগ, স্মৃতি আমায় জানতে হবে, বুঝতে হবে। অপেক্ষা সেই ভালো সময়টার জন্য, যখন সেই যোদ্ধার কাছে যেয়ে কিছু সময়কে সম্পদ বানিয়ে আসতে পারবো আর আমার বোনের জন্য জীবন্ত একটা গল্প বা কাহিনী লিখতে পারবো।



**** যুদ্ধ আর যোদ্ধা কখনো শেষ হয় না। পৃথিবীর শুরু হয়েছিল যুদ্ধ দিয়ে, শেষও হবে যুদ্ধ দিয়ে। আর মাঝের সময়গুলো যুদ্ধ নিয়েই থাকবে। তার মাঝে সত্যের জয়, আর মিথ্যের পরাজয় হবে সবসময়। তবে আমরা সত্য আর মিথ্যেকে আলাদা করতে হয়তো ভুলে যাবো একসময়। ****

০ টি +০/-০