![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার উড়ার আকাশ; আজ আমি পেয়েছি আমার ছোট্ট বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি । কিন্তু আমার আকাশও রইল ।“ _ রবি ঠাকুর
আমার শৈশবটা কেটেছে একটা অজো পারা গাঁয়ে । তখন আমার বয়স ৯ কি ১০ । আমার বড় আপার ছিল পুতুল খেলার খুব শখ। বিভিন্ন রঙের পুতুল সংগ্রহ করা ছিল তার এক প্রকার নেশা । আমি আপার ঐ পুতুল গুলোর জন্য কাপর কেটে বিভিন্ন ডিজাইনের জামা বানিয়ে দিতাম । ঐ সব জামা ভাতের মাড়ে ডুবিয়ে রুদে শুঁকাতে দিতাম । পরে সুন্দর করে ভাজ করে বালিশের নিছে রেখে দিতাম যাতে ভাজ করা শক্ত নতুন জামার মত দেখায় ।
তখন বর্ষাকাল । আপার পুতুলের বিয়ের কথাবার্তা চলছে পাঁশের পাড়ার শিমু আপার পুতুলের সাথে । প্রস্তাবটা প্রথম ওরাই নিয়ে আসে। আপাও রাজি হয়ে যায় । কিন্তু শর্ত একটাই । আমরা হব বরপক্ষ মানে ছেলে পুতুল বিয়ে করাব আমরা । এখানে বলে রাখছি, পুতুল বিয়েতে সবাই বরপক্ষ হতে চাইত । কনেপক্ষ হলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় । বরযাত্রীর খাবার ব্যবস্থা করতে হত, কনের সাথে কাঁপর-চোপর ঘয়না-ঘাটি দিয়ে দিতে হত , এমন কি বরযাত্রী আনা নেওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে হত ।
সব শর্ত মেনে শিমু আপা এই বিয়েতে মত দেয় । আগামী পহেলা আশ্বিন শুক্রবার বাদজুমা বিয়ের দিনতারিখ ধার্য করা হল । শুরু হয় আমাদের প্রস্তুতি । আমার ব্যস্থতা গেল আরও বেড়ে । আম্মার শাড়ীর এক অংশ কেটে ছোট ছোট শাড়ি বানালাম । টুকরা কাঁপর সেলাই করে ব্লাউজ বানালাম । এবার দাওয়াতের পালা । আমার পাড়ার সব বন্ধুদের দাওয়াত দিলাম । এবার নিজের জামা কাঁপর গুছগাছ করতে শুরু করলাম । তখন প্রথম সাস্কিন কাপড়ের শার্ট বের হয়েছিল । আব্বাকে বলে ৫৫০ টাকা দিয়ে একটা সাস্কিন শার্ট কিনে নিয়ে আসি । একমাত্র উদ্দেশ্য বিয়েতে পরব । আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম গুছগাছ প্রায় শেষ ।
হটাত শিমু আপা খবর পাঠাল, এ বিয়ে হবে না । আমিতো প্রায় আকাশ থেকে পড়লাম । এত শখ করে নতুন শার্ট কিনলাম, বন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত দিলাম । এখন কি হবে । আপা’ত শুনে রেগে-মেগে অস্তির । আমাকে বলল, ‘চল, আমার পুতুলের বিয়ে ভেঙ্গে দেয় ! এতবড় সাহস !’ বীরদর্পে গেলাম দুইজন । আমি মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম । কি জানি হয় । শিমু আপার আম্মা আমাদেরকে আগে থেকেই চিনতেন । আমরা ওদের বাড়িতে যাবার সাথে সাথেই শিমু আপার আম্মা আমাদের টেনে বসিয়ে মিষ্টি খেতে দিলেন । আমরাতো কিছুই বুজতে পারছিলাম না । এই সময় হটাত মিষ্টি কিসের ? শিমু আপাকেও দেখলাম খুব খুশি । আপাকে কি জানি বলতে চেয়েছিল । আমি আছি বলে বলতে পারে নি । শেষে জানতে পারলাম শিমু আপার নিজেরই বিয়ে ঠিক হয়েছে, আগামী সপ্তাহে । শুনে আমাদের দুজনেরই মুখ হা হয়ে রইল । আপা মন খারাপ করে বাড়ির দিখে হাঁটছে । আমি আপার পিছে পিছে । মনে মনে ভাবছিলাম, ‘যাক ভালই হয়েছে, সাস্কিন কাপড়ের নতুন শার্টটা আর বৃথায় গেল না । ওঁটা পরে শিমু আপার পুতুলের বিয়েতে না হউক শিমু আপার বিয়েতে’তো যাওয়া যাবে ।‘
©somewhere in net ltd.