নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশীথনিদ্রা

ইমরান-উল-ইসলাম

“একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার উড়ার আকাশ; আজ আমি পেয়েছি আমার ছোট্ট বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি । কিন্তু আমার আকাশও রইল ।“ _ রবি ঠাকুর

ইমরান-উল-ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কড়চা

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩০

এঁর আগেও এমন হয়েছে । শারীরিক অসুস্থতাই যে এঁর জন্য একমাত্র দায়ী এমন নয় । এঁর আগেও বহু অস্থির রাত্রি যাপন করেছি বিষাদের দুষর চাঁদর গাঁয়ে জড়িয়ে । কল্পনায় হারিয়ে ফেলেছি কত চিরচেনা পথঘাট । অচেনা সব ব্যস্ত মানুষের ছুটে চলার মাঝে মিশে যেতাম সম্পূর্ণ অভিন্ন একজন হয়ে ।

তবুও আমি হেসেছি । প্রান খুলে স্বস্থির নিঃশ্বাস নিয়েছি । গেয়ে উঠেছি কতবার “আরেকবার যেতে চাই রিমঝিম-ঝিম সুদূর পুর, অবাক রোদে ভেজা স্তব্ধ দুপুর............।।“

গত কয়েকদিনের টানা জ্বর আর হাপছাড়া গরমে বিষিয়ে উঠেছি অনেকটা । খুব ভোঁর সকালে ঘুম থেকে উঠে যথাসময়ে অফিসে যাবার মত সুবোধ বালক আমি কোন কালেই ছিলাম না । কোন কালেই ছিলাম না বললে মিথ্যে বলা হবে । চাকরির প্রথম তিন মাস পুরাই নয়টা পাঁচটার গণ্ডিতে বেবাচেকা খাওয়া আদর্শ চাকর ছিলাম । ধীরে ধীরে মুখোশ উন্মোচিত হল আমার । আর নামের সাথে দুই শব্দ বিশিষ্ট একটি বিশেষণ যুক্ত হল । “লেট কামার ইমরান” । বন্ধুবান্দব কাউকে কিচ্ছুটি বলি নাই । বললে সব ধরে বসবে, মামা অফিসে নতুন উপাধি পাইছো, পার্টি কই ?

ঘুম থেকে উঠতে আজও লেট হয়ে গেছে । তারাতারি করে গোসল করে, নাকে-মুখে কিছু খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম । রাস্তায় বেড়িয়েই বোঝতে পারলাম, মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে । আরও আগে বেরোনো উচিৎ ছিল । আজ তো কম করে হলেও ১ ঘণ্টা লেট হয়ে যাবে । কি আর করা । অনেক কষ্টে একটা লোকাল বাসে ঝুলে পড়লাম । বাসে অন্য আট-দশটা দিনের চেয়ে একটু বেশিই ভিড় । কিছুতেই সোজা হয়ে দাড়াতে পারছিলাম না । গায়ের চারপাশ্বে লেপ্তে থাকা মানুষের ঘামের বিশ্রী ঘন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার । কেউ কোন পাত্তাই দিচ্ছে না আমায় । শার্ট-প্যান্ট আর চকচকে সু পড়ে যে একটা ভাব নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়েছিলাম, পুরাই ফ্ল্যাট হয়ে গেলাম । নাহ এবাবে আর কদ্দিন ।

বাসটা বসুন্ধরা গেট আসতেই পুরু বাসটা অর্ধেক খালি হয়ে গেল । আমি তো পুরাই বসকাইয়া গেলাম । যাক সামনের দিকের বাম পাঁশে একটা ভাল সিট পেলাম বসার জন্য । শার্ট-প্যান্টের ইন ঠিক করে একটু ভাব নিয়েই বসলাম । কুড়িল আসতেই আমার পাঁশের সিটটি খালি হয়ে যায় । বাসস্টপ থেকে বিশ-বাইশ বছরের এক তরুণী আমার বাসে উঠে । আমার পাঁশের সিটটি আরামদায়ক ও রোঁদমুক্ত হওয়ায় এখানে বসে পড়ে সে । আমি একটু নড়েচড়ে জায়গা করে দিলাম । কোন কথা বলছি না আমরা । আমি একটু লক্ষ্য করে দেখলাম মেয়েটার মাঝে কোন অনাখাঙ্কিত দাম্ভিকতা নেই । যা পাঁশে বসা মানুষটাকে অস্বস্থিতে ফেলতে পারে । ইচ্ছে করছিল তাকে কিছু জিগ্যেস করি । কিন্তু সাহস করে উঠতে পারছিলাম না । মনে মনে অনেক কিছু গুছিয়ে নিলাম, বলব বলে । বাস চলছে । জসিম উদ্দিন পার হয়ে আজমপুর চলে এসেছে । সেদিখে আমার কোন খেয়ালই নেই । দ্বিধা-দন্দের বেড়াজালে আঁটকে থাকা আমি কিছুটি জিগ্যেস করার আগেই ও নেমে গেল পরের ষ্টেশনে । চারপাশ থাকিয়ে যা দেখলাম তাতে চোখ কপালে তো নাই মাঝ মাথা বরাবর চলে এসেছে । তাড়াতাড়ি নেমে উল্টো পথে অফিসের দিখে ছুটলাম । অফিসে ঢুকার পর থেকে লক্ষ্য করছি, সবাই কেমন আড় চোখে থাকাচ্ছে । ঘটনা কি ? অফিসের সবচেয়ে মজার মানুষ জাকির ভাই বললেন, ‘জি এম স্যার আপনাকে স্মরণ করেছিলেন । তাড়াতাড়ি স্যারের রুমে চলে যান ।‘

না জানি কি আছে কপালে । এটা সেটা নানা কিছু ভেবে ভেবে স্যারের রুমে গেলাম।

_ May I come in sir?

___ Yes. Come.

___ স্যার আমায় ডেকেছিলেন ?

___ হম । কাল তুমি বাড়ী চলে যাও । আমার গাড়িতে করে যাবে । একদিন ছুটি কাঠিয়ে এসো । ঠিক আছে ?

পুরাই টাস্কি খাইয়া গেলাম । কয় কি ? হাতপাখা চাওয়ার আগেই এয়ার কন্ডিশন হাজির ! বিষয়ডা ঠিক বোধগম্য হইল না আমার । ওকে স্যার, বলে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম । আমি তো মহা খুশী । কাল বাড়ী যাব । পরশু শুক্রবার । এঁর পর আবার একদিনের ছুটি । ভাবতেই সুড়সুড়ি লাগছে গাঁয়ে । বেশ ফুরফুরা মেজাজে অফিস করে বাসার উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম । আর বাসায় ফোন করে দিলাম, কাল আসছি ।

এখন মনটা বেশ ভাল । বরাবরের মতো রাস্তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুন্দরীদের দিকে নজর না দিয়ে চারপাশের প্রাকৃতিক সুন্দর্যের দিকে মনযোগ দিলাম । চিরচেনা শহরটাকে আজ দেখছি একটু অন্যরকম ভাবে । দূরের ফ্লাট বাসার জানালার ধারে জ্বলজ্বল করে জলে উঠা টুকরো টুকরো আলোকগুচ্ছকে মনে হচ্ছে একেকটা সপ্নের কৌটা । লাল নীল সোনালী হলুদ-রাঙ্গা সপ্নগুলো একটার পর একটা হারিয়ে ফেলছি আমি । মনে হচ্ছে বহু দুর হতে দূরান্তে হারিয়ে যাচ্ছি আমি । কোন এক ছিটকে পরা গ্রহের পিছু পিছু । আমার ক্লান্তিহীন নির্বাক পথচলা । সমস্ত শরীরটা কেমন জানি হালকা লাগছে । মনে হচ্ছে আমি, আমার শরীর সম্পূর্ণ দুইটি আলাদা স্বত্বা । একটি থেকে অন্যটি সম্পূর্ণ স্বাধীন । আমি যেখানে খুশী অবাধ বিচরন করছি । দেহটা পড়ে আছে বাসের পিছনের দিকের তেল চিটচিটে একটি সঙ্কীর্ণ সিটে ।

শাহাজাদপুর ! শাহাজাদপুর চিৎকার শুনে আমার ধ্যান ভাঙ্গে । তাড়াহুড়া করে নেমে পড়ি ।

বাস থেকে নেমে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম, জি এম স্যারের মিসকল উঠে আছে । মানে, স্যার ফোন করেছিল । আমি বোঝতে পাড়ি নি । তাড়াতাড়ি একটা নিরিবিলি যায়গায় গিয়ে স্যারকে ফোন দিলাম ।

ফোন ধরেই স্যার বললেন, “কাল তোমার যাওয়া হচ্ছে না । সেই জন্যই ফোন করেছিলাম । গুড নাইট ।“

আমিতো পুরাই থ............ মেরে গেলাম ।

সপ্নভাঙ্গা আমি আরও একটা ভাঙ্গা থালা নিয়ে প্রতিদিনের মতো বাসায় ফিরলাম ।



ইমরান-উল-ইসলাম

২/১০/২০১৩ ইং, ঢাকা ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১

আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: পইড়া আমিও পুরাই থ............ :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.