নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি। সন্ধ্যাবেলার চামেলি গো, সকালবেলার মল্লিকা আমায় চেন কি।’

এনামুলহক ভূঁইয়া

ফাল্গুন প্রাতের উতলা গো, চৈত্র রাতের উদাসী

এনামুলহক ভূঁইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ইলিয়াস আলী ও বদরেরা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:০৬



সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন ইলিয়াস আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে ডাকসাইটে ছাত্রনেতা ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া রাজনীতির পাঠ তিনি কর্মজীবনে সফলভাবে প্রয়োগ করেন। অর্জন করেন প্রভূত সম্পত্তি ও প্রতিপত্তি। নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। আমরা উনার অর্জনকে সম্মান করি।

বদরদের তেমন কোন পরিচয় নেই বা থাকলেও তা তেমন কোন তাৎপর্য বহন করেনা। যশোরের কোন এক অঁজ পাড়া গায়ে জন্ম নেয়া বদর একজন বাস চালক। এই ছাড়া তার পরিচয় একজন বাঙ্গালী ও বাংলাদেশী নাগরিক।



আর তাঁর ছেড়া মুবারক আলী, সহকারী অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ডার্কমেটার বিশ্ববিদ্যালয়। স্বভাবে কিঞ্চিৎ পাগলাটে ও হরবোলা এক মানব সন্তান।



মুবারক আলী ৩য় বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছেন। এমন সময়ে তার ছাত্রী মারিয়া জিজ্ঞেসিল, ‘স্যার, রবিবারে আমাদের মৌখিক পরীক্ষা হবে কি?’ মুবারক আলী উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘হবেনা কেন!’ মারিয়া, ‘শুনেছি রবিবারে হরতাল।’ মুবারক আলী উত্তেজিত। চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন। মারিয়া রীতিমত ভয় পেয়ে গেল। তবে সে জানে যত গর্জে তত বর্ষে না। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। মুবারক আলীদের কথা কেবল ছাত্র-ছাত্রীরাই শুনে। বাকীদের সময় নাই। ছাত্র-ছাত্রীদের উপায় নাই।



মুবারক আলী বলা শুরু করলে আর থামেনা। মুবারক আলীদের পেটের ক্ষিধা মুখের কথা বন্ধ করতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। হরবোলা মুবারক আলী শুরু করল, ‘শুন, একজন ইলিয়াস আলীকে আমরা সম্মান করি।’ একজন প্রাক্তন ছাত্রনেতাকে আমরা সম্মান করি। আমরা সম্মান করি একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্যকে। সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করি একজন ইলিয়াস আলী ও তার পরিবার পরিজন ও আত্নীয়-স্বজনের জন্য। ইলিয়াস আলী ফিরে আসুক তার সন্তানের মাঝে, তার শুভাকাংখীদের মাঝে ও সর্বোপরি আমাদের মাঝে। আমরা যেমনী গুম বুঝিনা, তেমনী বুঝিনা অন্তর্ধান। এতসব কঠিন বাংলা বুঝিনা ও বুঝতে চাইনা। তবে এইটুকুন বুঝি, একজন ইলিয়াস আলী হারিয়ে যেতে পারেনা। এই দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা।



ইলিয়াস আলী কোন ইস্যু হতে পারেনা। তাঁকে পুঁজি করে কোন অপরাজনীতি আশা করিনা। দোহাই আপনাদের। ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করবেন না। লক্ষ লক্ষ এইচ এসসি পরীক্ষার্থী, তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, পড়া-পড়শি, আত্নীয়-স্বজন, পরিজন ও প্রিয়জন হরতাল চায় না। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা হরতাল চায় না। তাদের চার পাশের পরিজনেরাও হরতাল চায় না। ব্যবসায়ীরা হরতাল চায় না। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানী গুলো হরতাল চায় না। কৃষক, শ্রমিক, মুঁঠে, মজদুর, কুলি, কামার, কুমার, তাঁতী, জেল, নাপিত কেউই হরতাল চায় না। তাহলে হরতাল চায় কারা?



৬ বছরের বাচ্চা স্কুলে যেতে পারবেনা বলে কান্না করে। ১২ বছরের বালক বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে পারবে না বলে আফসোস করে। ষোড়শী বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে যেতে পারবেনা বলে দূঃখ পায়। ২১ বছরের তরুণী বন্ধুর সাথে হেলভেশিয়ায় যেতে পারবেনা বলে মুড অফ থাকে। মুবারক আলীর সকল রুটিন উল্টা-পাল্টা হয়েছে বলে মাথার তাঁর ছিঁড়ে গেছে। এই সবের কি কোন আবেদন নাই। লাগাতার হরতাল দিলে ইলিয়াস আলী ফিরে আসবে এই গ্যারান্টি দিতে পারলে আমরা ১৮ কোটি মানুষ একসাথে হরতাল করবো।



একজন ইলিয়াস আলীর জন্য ৩ দিন হরতালে ৪ জন বদর নিহত হয়েছে। বদরদের জীবনের কি কোন মূল্য নেই? বদরের সন্তানের বুকে কি বাবার জন্য হাহাকার নেই? বদরের মা ও বউয়ের চোখে কি জল নেই? বদরের অবুঝ সন্তান কি বাবার পানে চেয়ে নেই? দরিদ্র ক্লীষ্ট বদরের সন্তানের কোঠারাগত চোখ পানে চেয়ে আপনাদের কি মায়া হয় না? আপনারা এত নিষ্ঠুর কেন? একজন ইলিয়াস আলী সমান কতজন বদর বলবেন কি? বদরের বউয়ের আহাজারী কি আপনাদের কর্ণকূহরে প্রবেশ করেনা? নাকি গরীবের কান্নায় আর্ট নেই? সংবাদপত্রে ইলিয়াস আলী চার কলাম ৫ ইঞ্চি। বদরেরা এক কলাম এক ইঞ্চি। কিন্তু কবরে সবার সমান জায়গা। টিভির খবরে ইলিয়াস আলী ২০ মিনিট, ৪ বদরেরা সর্বোসাকুল্যে ২ মিনিট। কলামিস্টের কলামে ইলিয়াস আলী লাল কালির, বদরেরা পেন্সিলের দাগ। টক-শোর কোকিল-কোকিলাদের ঠোঁটে বদরদের নাম আসেনা। উনাদের শোতে শুধু টক আছে ঝাল নেই।



আপনারা সাকূল্যে পাঁচলক্ষ হলেও বাকী সব বদর। একদিন বদরেরা জেগে উঠবে। সেদিন আপনারা পালানোর পথ পাবেন না। এই দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে বদরদের অধিকার আছে। প্রতিকণা মাটিতে তাদের ঘাম আছে। মারিয়ারা এখন আপনাদের খেলা বুঝে। তাদের মাঝে ক্ষোভ পুষে উঠছে। তাদের দূর্দশার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের তার চিনেছে। তাদের ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপান্তরিত হতে আর বেশি দেরী নেই। লাল গোলাপের ভালবাসায় আর কাজ হবেনা। মারিয়ারা ঘুমের রাজ্যে আর যাবেনা। মারিয়ারা আর অবলা নয়। মামুনেরাও সাথে আছে। মারিয়ারা জেগে উঠলে পাপিয়াদের খবর আছে। সময় থাকতে মনা হুশিয়ার। যশ থাকতে কীর্তণ শেষ করা ভাল।



ইলিয়াস আলী ফিরে আসুক। বদরেরা স্বর্গবাসী হোক। ইলিয়াস আলী ও বদরের পরিবারের জন্য একবুক ভালবাসা। রবিবারে মারিয়ার মৌখিক পরীক্ষা হোক। মুবারক আলী ছেঁড়া তারে জোড়া লাগুক। ভাইয়ে বোনে রাখি বন্ধ হয়। বোনে বোনে কি আঁচল বন্ধ হতে পারেনা! তাই হোক। তা নাহলে ১৮ কোটি মানুষ আঁচলে আগুন ধরাবে। মনে রাখবেন চোখের জলে আগুন নিবেনা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:৪৬

রমিত বলেছেন: বাবা হরতাল কি?
Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.