নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত
একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্লে গ্রাউন্ডে তিন চারটি কিশোরী মেয়ে ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় খেলছিল। এমন সময়ে সিভিল পোশাকের একটি কিশোর ছেলে এসে তাদের উদ্দেশ্য করে ডাক দিল, ‘’হেই ডুডস ’’ মেয়েগুলো তাকে দেখে বিষ্ময়ে চিৎকার করে উঠে। তারপর খেলা ফেলে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরল ছেলেটিকে, ‘’হেই, আফটা’ আ লং টাইম’’ ‘’ওঔ, ইয়ু’ভ চেঞ্জড, বিকাম টলা’’’ মেয়েগুলো ঘুরে ফিরে দেখে ছেলেটিকে। খুশিতে কলকল করছে ওরা।
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে এ দৃশ্যটা দেখে একটু অস্বস্তিবোধ করে ওদের শিক্ষক ফারজানা। ছেলেটিকে দূর দেখেও ঠিকই চিনতে পারলো। আগে এই স্কুলেরই শিক্ষার্থী ছিল। বছর তিনেক আগে দেশের বাইরে চলে যায়। এখন হয়ত দেশে এসেছে, তাই পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে হয়েছে। অনেকদিন পরে পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে মেয়েগুলো ভীষণ উচ্ছ্বসিত, বার বার জড়িয়ে ধরছে। ফারজানার নিজের কৈশোরের কথা মনে পড়ে যায়। সে সময়ের সাথে এখনকার ছেলে মেয়েদের কত পার্থক্য। কত সহজেই না ওরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছে। ফারজানার ভাবনায় ছেদ পড়ে সিঁড়ির মুখে প্রিন্সিপ্যালের সাথে দেখা হলে।
--গুড মর্নিং।
--গুড মর্নিং, ফা’জানা। লুক এট দোজ স্টুডেন্টস। দ্যাট বয়, আই কান রিমেমবা’, ঔজ আওয়া’ স্টুডেন্ট।
--ইয়াহ, হি ঔজ।
--লুক, হাউ ফ্রেইন্ডলি দে আর দে টাচ ইচ আদা’, হাগ ইচ আদা’। ইটস রিয়ালি আ ভেরি নাইস রিলেইশান।
--ইয়াহ। --স্মিত হেসে ফারজানা মুখে শুধু এটুকুই বলে। আর মনে মনে বলে , ‘’তুমি তো এসব বলবেই। তুমি তো আর এই দেশী না’’ প্রিন্সিপ্যাল মিষ্টি হেসে চলে গেলে ফারজানা হঠাৎ একটু লজ্জাবোধ করতে থাকে, ‘’ছি, ছি। আমি কি ড্যাব ড্যাব করে ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম? প্রিন্সিপ্যাল না জানি কী ভাবলেন আমাকে। এতদিন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে জব করেও কনজারভেটিভই রয়ে গেলাম।‘’
ইংরেজি মাধ্যমে পড়া উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের কথাবার্তা, পোশাক, আচার-আচরণ দেখে মনে হবে ওরা যেন এদেশের কেউ নয়। নিজেরা নিজেদের মধ্যে আলাদা একটা সংস্কৃতির বলয় তৈরি করে নিয়েছে ওরা। এর বাইরে অন্য কারো সাথে তারা ঠিক খাপ খাইয়ে চলতে পারে না। নিজের গণ্ডির বাইরের লোকদের ব্যাপারে খানিকটা উন্নাসিক মনোভাবও তাদের মধ্যে দেখা যায়। তাদের হৈহুল্লুড় আড্ডাবাজির ধরন ধারণও যেন ভিন্ন। আবার অন্যরাও নিজের সংস্কৃতির সাথে মেলাতে না পেরে তাদেরকে নিজের বলে ঠিক মেনে নিতে পারে না। তারা আবার ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েদের ভাষা, আচার আচরণ নিয়ে প্রচুর কৌতুকও করে থাকে। এভাবে এই শ্রেনিগুলোর মাঝে তৈরি হয় বড় একটি শুন্যতা।
বেশিরভাগ ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলার অনুমতি থাকে না। শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলার জন্যই এ নিয়ম। সন্তানের ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অনেক পরিবারে বাবা মা বাসাতেও ইংরেজিতে কথা বলে থাকেন। এতে করে সন্তানটি যে একেবারেই বাংলা শিখছে না তাতে তারা তেমন একটা চিন্তিত নন। বরং অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের বাংলা না জেনে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকাটাই বাবা-মায়ের অহংকারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার ইংরেজি মাধ্যমে পড়া অনেক শিক্ষার্থী ‘’না বাংলা না ইংরেজি’’ জগাখিচুড়ি ভাষা ব্যবহার করে থাকে। তারা কোন ভাষাই ভালমত রপ্ত করতে পারে নি, তবুও এমন মিশ্র ভাষা কিছুটা হলেও তাদের আভিজাত্য প্রকাশ করে থাকে।
শুধু ভাষাই নয়, পোশাক, সংস্কৃতি, ধ্যানধারণার দিক থেকেও এ ছেলেমেয়েরা যথেষ্ঠ আলাদা। বিদেশী কারিকুলামে পাঠ্যপুস্তক পড়ার কারণে নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে এরা এক রকম অন্ধই থেকে যায়। নিজের দেশ সম্পর্কে তাই খুব একটা আগ্রহও এদের মধ্যে প্রায় জন্ম নেয় না। বাবা-মায়েরাও চান সন্তানটির সুন্দর ভবিষ্যত যেন বাংলাদেশে থেকে নষ্ট না হয়। কোন উন্নত দেশে যেন তারা তাদের শিকড় গেঁথে নিতে পারে।
তবে সব পরিবারের ইংরেজি মাধ্যমে পড়া সন্তানের মধ্যেই যে এমনটা দেখা যায় তা নয়। নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে সন্তানদের নিয়মিত সচেতন করে দেন এমন অনেক বাবা-মা রয়েছেন। সন্তান ইংরেজি বা বাংলা যে মাধ্যমেই পড়ুক না কেন, তাদের নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:২২
এইযেদুনিয়া বলেছেন: জড়িয়ে ধরাটাকে আমি খারাপ কিছু বলছি না। সত্যিই তাদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকে। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হতে পারে, সেটা বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীও করতে পারে।
২| ১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৫
কালবৈশাখী ঝড় বলেছেন: বাঙ্গালী পরিচয় দিতেই ওরা লজ্জা পায়
৩| ১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৯
একাকী বালক বলেছেন: কালবৈশাখী ঝড় বলেছেন: বাঙ্গালী পরিচয় দিতেই ওরা লজ্জা পায়
>>> মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ট্রিপিক্যাল বাঙালীর মত ডায়লগ একটা ছেড়ে দিলেন। প্রচুর বন্ধু বান্ধবী পাইছি মাস্টারমাইন্ড, ম্যপেললিফে পড়া বনেদী বড়লোক পরিবারের। কাউকে দেখি নাই বাঙালী পরিচয়ে লজ্জা পাইতে। বরং যাদের দেখছি ঘুষখোর বা ব্যবসায়ী পরিবারের তারাই লাজ্জা পায়। কিছু আছে ইংরেজী মাধ্যমে ঢুকছেই পড়ে। ফট কইরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হইছে।
১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৩
এইযেদুনিয়া বলেছেন: কেউ কেউ নিজেকে বিদেশী ভাবতে ভালবাসে। আবার অনেকেই নিজেকে বাংগালী পরিচয়েই দেখতে চায়।
৪| ১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০২
খাটাস বলেছেন: বাবা-মায়েরাও চান সন্তানটির সুন্দর ভবিষ্যত যেন বাংলাদেশে থেকে নষ্ট না হয়। কোন উন্নত দেশে যেন তারা তাদের শিকড় গেঁথে নিতে পারে।
সত্যি কথা। সাধারণত পারিবারিক সচেতনতার অভাবে এক জন মানুষ অন্য সংস্কৃতি তে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে যায়, ভুলে যায় নিজের সংস্কৃতি । পরিবারের শিক্ষা মজবুত হলে নতুন সংস্কৃতি শিখবে , কিন্তু নিজের সংস্কৃতি না শিখে বা অবজ্ঞা করে নয়। এদের অনেকেই দেশের ভাল কাজে অবদান রাখবে, অনেকে নিজের জন্য অন্য দেশে যাবে। এমনিতেই দেশে মানুষ বারতেছে, কিছু উড়ে গেলে ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি। আবার যারা অন্য সংস্কৃতি তে ছোট থেকে খুব বেশি প্রভাবিত তারা অন্যান্য দের কে ও প্রভাবিত করবে। তাই দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। যদি ও এই দুষ্ট গরু তৈরির পেছনে দায়ী কিছু বাঙালি নামের কলঙ্ক বেকুব পরিবার।
৫| ১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪২
এইযেদুনিয়া বলেছেন: Dhonnobad @khatas
৬| ১৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৬
কালবৈশাখী ঝড় বলেছেন: বাঙ্গালীত্ব কে কতখানি ধারণ করে সে অনুসারেই তার মাপকাঠি নির্নয় করে.। এখন প্রশ্ন হল প্রচলিত শিক্ষার বিপরীতে ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষা কতটুকু জরুরী ? আমার মতে প্রচলিত শিক্ষা আরও সার্বজনীন করা গেলে এই বৈষম্যমূলক ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষা নিষ্প্রয়োজন। পুজিবাদের আগ্রাসনে এদেশেও এখন শিক্ষা একটি লাভজনক ব্যবসা।
৭| ১৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
এইযেদুনিয়া বলেছেন: Kal bOIshakhi: agree
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৫
একাকী বালক বলেছেন: ইংরেজি মাধ্যমে পড়া এক কিশোরী আর এক কিশোরকে জড়ায় ধরতে পারে। কারণ প্লেগ্রুপ বা তারও ছোট থেকে একসাথে পড়া এরা নিজেদের আসলেই বন্ধু ভাবে। আমি নিজে বাংলা মাধ্যমে পড়ছি। আমি দেখছি ছেলে মেয়ের মধ্যে আমরা বন্ধুত্ব কখনও ভাবতেই পারি না। বিশেষ করে যারা শুধু বয়েজ স্কুলে পড়া।