নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত
ফুটপাত দিয়ে চলতে চলতে কানে ভেসে আসে টুকরো টুকরো কথা, ‘’মাইয়া আবার বাপ-মায়েরে মারে কেমনে?’’ অফিসে কাজের অবসরে কলিগদের সাথে বসার একটু সুযোগ হলে শুনি, ‘’আপনি কি মনে করেন একদিনেই সে এমন হয়ে গেছে?’’ চিন্তিত আরেক কলিগ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, ‘’কী যে করি আমার ছেলেটাকে নিয়ে!’’
পত্র পত্রিকা, টিভির টকশো, স্কুলের অভিভাবক ছাউনির আড্ডা, চায়ের দোকান, ফেসবুকের স্ট্যাটাস... যেখানেই কান রাখবেন শুনতে পাবেন ভেসে আসা শব্দগুলো...ঐশী, ইয়াবা, বাবা-মায়ের সচেতনতা, দুর্নীতি...। পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী হত্যা এবং হত্যাকাণ্ডে সন্তান ঐশীর জড়িত থাকার খবরটি সাম্প্রতিক সময়ে একটি আলোচিত বিষয়। সবার নজর হঠাৎ করে এদিকেই ফোকাস হয়ে গেছে। রাতারাতি সবাই যেন বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন হয়ে উঠছেন। শুধু নিজের সন্তানই নয়, সন্তানের বন্ধু বান্ধব নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন।
আমাদের দেশের বাবা-মায়েদের মধ্যে গুড প্যারেন্টিং নিয়ে ধারণা প্রায় নেই বললেই চলে। এমন কি শিক্ষিত সচেতন, মূল্যবোধ সম্পন্ন বাবা-মায়েদের মধ্যেও এ সংক্রান্ত সচেতনতা দেখা যায় না। আমাদের দেশের বাবা-মায়েরা আগে সন্তান জন্ম দেন, তারপরে সন্তান লালন পালন করতে করতে প্যারেন্টিং শেখেন। শৈশবে নিজেরা যে পদ্ধতিতে বাবা-মায়ের কাছে লালিত পালিত হয়েছিলেন, সে পদ্ধতিই নিজের সন্তানের উপর প্রয়োগ করেন। সন্তান ঠিক মত খাচ্ছে কি না, পরীক্ষায় এ প্লাস পাবে কি না, কোন কোচিং-এ পড়ালে ভাল হবে এসব নিয়ে বাবা-মায়েরা যতটা মাথা ঘামান, সন্তানের শারীরিক- মানসিক বিকাশ ঠিক মত হচ্ছে কি না তা নিয়ে ততটা সচেতন নন। সেদিক দিয়ে আমি বলবো এই বাবা-মায়েরা সন্তান লালন –পালনে অপরিপক্ক। তারা যে শুধু অপরিপক্ক তা-ই নয়, অপরিনামদর্শীও বটে। দুই-তিন পুরুষ পূর্বের পরিবার পদ্ধতি, জীবন যাপন পদ্ধতি, ধ্যান ধারণা, প্রযুক্তির ব্যবহার, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি কোন কিছুর সাথেই বর্তমান সময়ের তেমন মিল নেই। সব কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে, আর সে পরিবর্তন গ্রহণ করে তার সাথে আমরা নিজেদের মানিয়েও নিচ্ছি। শুধু পরিবর্তন হচ্ছে না, আমাদের সন্তান লালন পালন পদ্ধতির ক্ষেত্রে। অবশ্য এ নিয়ে আগ্রহী ব্যক্তির জন্যও নেই আরো জানার সুযোগ। সন্তানকে নিয়ে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে পরে সাইক্রিয়াস্টিসের কাছে দৌঁড়ানোই শেষ ভরসা।
সুযোগ পেলেই ঐশীর বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে আমি যখনই জানতে চেয়েছি, সবাই যে বলে, তোমাদের প্রজন্মটা উচ্ছন্নে গিয়েছে, তোমরা নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রজন্ম। কথাটা কি সত্য? ওরা একবাক্যে স্বীকার করেছে, ‘’হ্যাঁ, সত্য। আমরা উচ্ছন্নে যাওয়া, নষ্ট প্রজন্ম।‘’ কিন্তু কী এমন জিনিস যা ওদের ‘’নষ্ট’’ করে দিচ্ছে? জানতে চেয়েছি ওদের কাছেই। ওদের উত্তর –নতুন প্রযুক্তি, মোবাইল, ফেসবুকের ব্যবহার। আমি মানতে পারি ণই ওদের জবাব। নতুন প্রযুক্তি তো ওদের আরো আধুনিক করবে! নতুন নতুন তথ্য, জ্ঞানে ওদের তো পরিপূর্ণ হয়ে উঠার কথা! আর আমাদের উচিত ওদের সমীহ করে চলা! তবে ওরা কেন নিজেরাই নিজেদের ‘’নষ্ট’’ বলে স্বীকার করে নিচ্ছে? কিসের চর্চা তবে ওরা করছে? এর জন্য আসলে দায়ী কারা? সেই অপরিপক্ক ও অপরিনামদর্শী বাবা-মায়েরা? নাকি এই সমাজ ব্যবস্থা?
আমি প্রশ্ন করতে চাই সেই সব বাবা-মায়েদের কাছে, যারা তাদের অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগ সহ পিসি/ল্যাপটপ তুলে দিচ্ছেন তাদের কাছে। তারা কি কখনো এসব ব্যবহারের যে আদব কায়দা ও নৈতিকতা রয়েছে সেসব সম্পর্কে সন্তানদের সচেতন করেছেন? আমার তো মনে হয় বাবা-মায়েরা নিজেরাও এসব সম্পর্কে সচেতন নন। যে কোন ব্যক্তিরই টেলিফোন, মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারের আদব কায়দা ও নৈতিকতা সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে। যখন তখন ইচ্ছেমত কাউকে কল যেমন করা যাবে না, তেমনি মোবাইলের অতি ব্যবহার মস্তিষ্কের কেমন ক্ষতি করে সে সম্পর্কে সন্তানদের বুঝিয়ে বলতে হবে। গভীর রাত জেগে মোবাইলে কথা বলা বা নেট ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে আপনি আপনার সন্তানকেই একটা এসাইনমেন্ট তৈরি করতে দিন। এসাইনমেন্ট লিখতে গিয়ে সে নিজেই সচেতন হতে পারবে। অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে চ্যাটিং করতে চাইলে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কি ধরনের বিপদ হতে পারে সে সম্পর্কেও তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের বিজ্ঞাপনে রাত জেগে কথা বলা, বেশি বেশি কথা বলাকে উৎসাহিত করে। এমন কি প্রেম-ভালবাসাকে পণ্য করেও এমন সব আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তৈরি করে, যাতে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা একজন প্রেমিক/প্রেমিকা না থাকার কারণে নিঃসংগতায় ভুগতে থাকে। ফলে তারা মোবাইলে বা অনলাইনে বন্ধু খুঁজতে থাকে। তার উপর পর্নোগ্রাফের সহজলভ্যতাও এদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অল্প বয়সেই এরা বিকৃত রুচি নিয়ে বড় হচ্ছে। এর দায়ভার বাবা-মা ও এই সমাজকেই নিতে হবে।
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? এতদিন আমরা অন্ধ সেজে থাকলেও, ঐশী মেয়েটি হঠাৎ যেন আমাদের চোখ খুলে দিল। এবার আমাদের অন্ধত্ব ঘুঁচুক। এইসব নিয়ে কিছুদিন খুব আলোচনা করে আবার যেন আমরা ঘুমিয়ে না পড়ি। শুধু নিজের সন্তানটিই নয়, অপরকের সন্তানকে নিয়েও ভাবুন। অন্য ছেলে মেয়েদের সাথে মিশে আপনার সন্তানটি বখে যাবে ভেবে তাকে খেলতে না দিয়ে ঘরে আটকে রাখবেন না। বরং আপনি আপনার সন্তানের বন্ধুদেরকেও আপনার বাসায় আসতে দিন, তাদেরকে চিনুন, জানুন। সন্তানের বন্ধু-বান্ধবের বাবা-মায়ের সাথেও যোগাযোগ তৈরি করুন। আর যারা নিজের সন্তানটিকে মাদক, পর্নোগ্রাফি, অসৎ সংগ থেকে দূরে রাখতে পেরেছেন বলে নিজেকে সফল বাবা-মা ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, তাদেরকে বলছি, আপনার পাশের বাড়ির আরেকটি সন্তান যে আপনারই ভাষায় ‘’নষ্ট’’ হয়ে গেছে বলে বিষোদগার করছেন, তার জন্য আপনি কি একটুও দায়ী নন? এ সমাজের প্রতি আপনার ন্যূনতম দায়িত্বটা পালন করে তারপর যতখুশি অন্যের সন্তানদের ‘’নষ্ট’’ বলে গালাগালি করুন।
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
এইযেদুনিয়া বলেছেন: শুধু উচ্চবিত্তের ঘরেই দেখা যাবে সেটা কী করে নিশ্চিত হলেন? আপনার চারপাশে নিম্নবিত্তের সন্তানদের দেখেছেন? শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যবস্তা থাকাটাই আমাদের কাল হল।
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৪
বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: হুম। ঠিক কথা।
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৯
এইযেদুনিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
শহিদশানু বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হলো আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়াও ঐশি'রা এমন হয়েছে। এর সাথে আমি একমত নই। দিন যত যাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ততো বৃদ্ধি পাবে। আমি কোন ভাবেই ঐশি সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিকে দোষারুপ করছিনা । বিগত কয়েক দিনের খবরের কাগজ পড়ে ঐশি সম্পর্কে যা জানতে পেরেছি সেটি হলো তাকে তার পরিবারের কেহ বুঝতে চায়নি। যানি ঐশি খারাপ হয়েছে। কিন্তু কেন ? সে পিতা-মাতা হত্যার মত এমন একটি জগন্য কাজ করছে। তার পিছনে মূল কারই হলো পারিবারিক বন্ধনের অভাব। আমরা যারা বর্তমান সমাজে বসবাস করছি তারা সবাই কিন্তু যৌথ পরিবার থেকে সম্পূর্ন আলাদা । বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দাদা-দাদী,ফুফু, কাকাদের তেমন কোন স্থান নেই। যে ছেলে-কে বাবা-মা এত কষ্ট করে মানুষ করে। সেই ছেলেই যদি বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসতে পারে । সেই ক্ষেত্রে এই সমাজ ব্যবস্থা যে,ভংকুর হয়েছে গেছে সে বিষয়টির দিকে অবশ্যই নজর দেয়া উচিত। কাজেই ঐশি আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে একটি বার্তাই প্রদান করছে আর তা হলো ঐশিদেরকে বুঝো এবং পারিবারিক মূল্যবোধ ও যৌথ পরিবারের সম্মান ও বন্ধন অটুট রাখো । না হলে ভবিষ্যতে এই রকম আরো ঐশি তৈরী হবে। আমাদের হাজারো সমস্যা আছে কিন্তু সমাধানও আছে।
-----------ঐশির বর্তমান অবস্থার জন্য ওর পিতা মাতার অজ্ঞতাই বেশী দায়ী । বাবা নাম করা পুলিশ অফিসার ছিলেন । কিন্তু নিজের সন্তান সম্পর্কে কোন খবর রাখতেনা এটাতো কোন ভাবে হতে পারেনা। তিন ছুটছিলেন নিজের বর্তমান সামাজিক অবস্থানের দিকে এবং অর্থের দিকে। তাই নিজের মেয়েকে সামলাতে পারেনি-কাজেই দোষ কাকে দেবেন ?
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১
এইযেদুনিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪
শাহেদ খান বলেছেন: লেখাটা ভাল লাগল, কবি।
('কবি' বলছি কারণ - যদিও অনেকদিন আপনি কবিতা পোস্ট দেন না, তবে আপনার ব্লগের সাথে আমার প্রথম পরিচয় রবার্ট ফ্রস্টের একটা অনুবাদ কবিতা'র মাধ্যমে)
শুভেচ্ছা !
৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৫
এইযেদুনিয়া বলেছেন: Thnx, shahed khan. Kobita, onubad sob kichu amar kach theke paliye geche. Ami oder dhorte parchi na.
৬| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২৩
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
প্রযুক্তির ভালো ও খারাপ দিক আছে, অন্য সব কিছুর মতোই।
খারাপ দিকটা সামলে ভালোটাকে প্রজন্মের প্রিয় করে তোলাটা অভিভাবকদের কাজ।
সন্তান-সন্ততিকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া, পর্যবেক্ষনে রাখা অভিভাবকদের দায়িত্ব।
আর নির্দিষ্ঠ বয়স পর্যন্ত তাদের আর্থিক চাহিদাটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ জরুরী। অঢেল টাকা দেয়া মানে, এটা বাজে খাতে যেতে পারে।
৭| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০২
এইযেদুনিয়া বলেছেন: Hmmm. Shoishob thekei sontander dami dami jama, juta, gori, khelna etc diye oder chahida baba-mayerai bariye den.
Dhonnobad @durjoy
৮| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৬
লুবনা ইয়াসমিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সময়োপযোগী একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
এইযেদুনিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০২
ধৈঞ্চা বলেছেন: এরকম হাজারে ঐশি এখনো আমাদের দেশে উচ্চবৃত্তের ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যাবে। এক ঐশির এই ঘটনায় তারা সাময়িক বিচলিত হলেও তাদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এমনটা আশা করা ঠিক হবে না।