নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত
খুব সকালে পথে বের হলেই আপনার চোখে পড়বে নানা রকম প্রিন্টের সেলোয়ার কামিজ পরা নারীর দল বেঁধে খুব দ্রুত হেঁটে চলছে।প্রায় সবাই ওরনা দিয়ে মাথাটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করে।নানা রকম পুরুষ তাদের উত্তক্ত্য করে। তাই বাড়তি নিরাপত্তার জন্য মাথায় কাপড় দিয়ে রাখে ওরা।না বলে দিলেও আপনি ঠিকই বুঝতে পারছেন ওরা গার্মেন্টসের শ্রমিক। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ওদের কারণেই সচল থাকে। কিন্তু কেমন ওদের নিজেদের জীবন চাকা?
কথা হল কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সাথে।তাদের কেউ মাসুদা, কেউ আকলিমা, কেউ মদিনা । তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর বলে একেকজন দাবি করলেও অপুষ্ট শরীরটা দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি আরো কম। অল্প বয়সে বিয়ে করে, সন্তানের মা হয়ে, বড় পরিবার চালাতে চালাতে মাত্র ২০/২৫ বছরেই লাবণ্য হারিয়ে ফেলেছে। এই যেমন মাসুদার কথাই ধরা যাক। বয়স কত জানতে চাইলে বলল, ১৮ এর উপরে। যদিও দেখে মনে হচ্ছিল আরো কম।স্বামী-সন্তান, ভাই বোন, শ্বশুর শাশুড়ি সবাইকে নিয়ে তার সংসার।গার্মেন্টসে বেশিদিন হয় নি চাকরি করছে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মে দিবসের কথা কিছু জানে নাকি।মে দিবসের কথা শুনে মাসুদা অবাক হয়ে যায়। এমন কোন কিছুর কথা সে শোনে নি কখনো।টিভি দেখে কিনা জানতে চাইলে বলল, টিভি দেখার নেশা তার নেই। কিছু দিন আগে বেতন বাড়ানোর জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের কোন খবরই সে জানে না। মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতন পায় মাসুদা।
কথা বলে দেখা গেল বেশির ভাগ শ্রমিকই মে দিবস সম্পর্কে জানে না।কেউ কেউ মে দিবসে গার্মেন্টস বন্ধ থাকে, সেদিন তাদের ছুটির দিন বলে জানালেও কেন ছুটি থাকে তা বলতে পারলো না।এমন কি ৯ বছর ধরে গার্মেন্টসে ফ্লোর মোছার কাজ করে যাচ্ছেন যে শ্রমিক সেও মে দিবসের নাম শুনে অবাক হয়ে রইল কিছুক্ষণ।তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হল ১ মে তার গার্মেন্টস ছুটি থাকে কিনা, তখন যেন সে কিছু একটা বুঝে নিল। তারপর বলল, ‘’ঐ দিন তো ছুটি দিতেই হইবো।‘’
--কেন ছুটি দিতে হবে?
--দিতে হয়।
--৮ ঘণ্টার বেশি কি কাজ করতে হয় আপনাকে?
--আমরা তো ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করি না।
কথা হল আরো কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সাথে।তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম, কিছুদিন আগে শ্রমিকেরা নিজেদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছিল সে সম্পর্কে কিছু জানে কি না।দেখলাম এমন আন্দোলন নিয়ে তারা অনেকেই কিছু জানে না।এসব আন্দোলন নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা আছে বলেও মনে হলো না।নিজেরা যে বেতন পায় তাতেই তারা খুশি।নিজের কাজ নিয়েও অভিযোগ দেখা গেল না তাদের মাঝে। শ্রমিকদের এমন পজিটিভ আচরণ দেখে ভালই লাগলো।কে কেমন বেতন পায়, জানতে চাইলে বলল, একেকজনের একেক রকম গ্রেড। এখানে কেউ চাকরিতে নতুন আবার কেউ অনেক পুরোনো।কারো অভিজ্ঞতা নেই, আবার কারো ভালো অভিজ্ঞতা আছে। এসবের ভিত্তিতেই বেতন দেওয়া হয়। তাই সবার বেতন এক রকম নয়।
এতক্ষণ এতজনের সাথে কথা বলেও যখন, মে দিবস সম্পর্কে জানে এমন কাউকে পাচ্ছিলাম না দেখে হতাশ হচ্ছিলাম, ঠিক তখনই দেখা হয়ে গেল গার্মেন্টস শ্রমিক মদিনার সাথে। মে দিবস সম্পর্কে জানে কিনা জানতে চাইলে বেশ স্মার্টলি উত্তর দিল, ‘’হ্যাঁ জানি। ঐ দিন তো আমাদের শ্রমিক দিবস।‘’ ২৫ বছর বয়সী মদিনা গার্মেন্টসের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে ১০ বছর ধরে । কাজের জায়গা বা সুবিধা নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই । কিছু দিন আগে দেশের নানা গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা তাদের বেতন বাড়ানোর যে দাবি তুলেছিল, সে খবরও তার জানা আছে। কিন্তু তাদেরকে কোন আন্দোলনে যেতে হয় নি। কারণ তাদের গার্মেন্টসে সব কিছু ঠিকমতই দেওয়া হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিকেরা মে দিবস সম্পর্কে সচেতন না হলেও কাজের ক্ষেত্রে তাদের পেশাদার মনোভাবটি প্রশংসা করার মত।
(লেখাটি সাপ্তাহিক ২০০০, ২মে, ২০১৪-এ প্রকাশিত হয়েছে)
©somewhere in net ltd.