নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পর্ক—শিক্ষক ও শিক্ষার্থী

১৮ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

প্রাচীনকালে গুরুর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত শিষ্যরা। গুরুর মুখনিঃসৃত বাক্য অক্ষরে অক্ষরে পালন করত শিষ্যরা। গুরুর কথার অন্যথা কখনো ভাবতে পারত না তারা।শিষ্যদের কাছে গুরু ছিলেন সাক্ষাৎ দেবতা।সে যুগ এখন আর নেই।শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের ধরন ধারণ পালটে গেছে অনেক খানি, সময়ের প্রয়োজনে।এখনকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমপর্কটি কেমন?

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কথাতেই আমরা দেখতে পাই শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভংগি--‘’আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমরা যখন আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পাই, তারা তখন অনেক বড় হয়ে গেছে, তাদের চরিত্রর মূল কাঠামোটি দাঁড়িয়ে গেছে। তারা আমাদের দেখে খানিকটা ভয়, খানিকটা সন্দেহের চোখে। যদি আমরা ঠিকভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি তখন হয়তো খানিকটা শ্রদ্ধা করে, কিন্তু তাদের ভালবাসাটুকু আমরা কখনো পাই না।‘’

শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীই নয়, যেকোন পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে ইদানিং যেন এক ধরনের টানা পোড়ন দেখা যায়। যেকোন সম্পর্কেরই একটি প্রধান ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরের প্রতি প্রত্যাশা।প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির যোগফল মিলে গেলেই সম্পর্কটি হয় সহজ সুন্দর।চলুন, প্রথমেই আমরা জেনে নেই, শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন।একজন শিক্ষক প্রত্যশা করেন, তার শিক্ষার্থী যেন জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফল হয়।শিক্ষার্থীর ভালো ফলাফল শিক্ষককে গর্বিত করে।শিক্ষার্থী শিক্ষকের প্রতি আচরনে বিনয়ী হবে, এমনটাই তারা আশা করেন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা চায় শিক্ষকের একটু খানি মনোযোগ, স্নেহ, ভালবাসা, সৌহার্দ্য। তারা চায় শিক্ষক ভালভাবে ক্লাসে পড়াবেন।শিক্ষকের কঠোর মনোভাব তাদের মনে ভীতি তৈরি করে।শিক্ষকের প্রতি তারা আস্থা রাখতে চায়।আরেক ধরনের শিক্ষার্থী চায় শিক্ষক পরীক্ষার সময় সহজ প্রশ্ন করবেন ও খাতায় বেশি বেশি নাম্বার দেবেন।কিন্তু নানাবিধ কারণে কোন পক্ষই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করে আজকাল শিক্ষার্থীরা সালামও দেয় না, কোন ভ্রুক্ষেপই করতে চায় না। এর পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে। শিক্ষকের নিজের ভাবমূর্তি যদি শিক্ষার্থীদের কাছে নেতিবাচক হয়ে থাকে তবে তার পক্ষে সেই শিক্ষককে মন থেকে শ্রদ্ধা করা সম্ভব নয়। আবার শিক্ষার্থীর পারিবারিক নৈতিকতার শিক্ষার অভাব থেকেও তারা অনেক সময় না বুঝে এমন আচরণ করে থাকে না।



বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাতে অনেক গড়বড়। একজন শিক্ষককে অনেকগুলো ক্লাস করতে হয়, অনেক খাতাও দেখতে হয়। শিক্ষকের ব্যবস্তার কারণে ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের সমস্যাগুলোর জন্য পরামর্শ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না।ফলে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সহজ সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবার সুযোগটাও হয়ে যায় সীমিত।অন্যদিকে অনেক শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য করে থাকেন। এসব কারণেও শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গাটা নষ্ট হচ্ছে।

এক সময় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সামান্য অপরাধে নানা রকম শারিরীক শাস্তি দিয়ে থাকতেন।শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের যমের মত ভয় পেত। এখন শারিরীক মানসিক শাস্তি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু শাস্তি না দিয়েই কিভাবে শিক্ষার্থীদের আচরণের কাংখিত পরিবর্তন করা যায় তার জন্য শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কটি সহজ ও সুন্দর না হয়ে কিছু ক্ষেত্রে যেন একটা ইঁদুর-বিড়াল খেলার মত হয়ে গেছে।

অনেক সীমাবদ্ধতার পরেও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে।শিক্ষার্থীদের সাফল্য নিজের সন্তানের সাফল্যের মতই গর্বিত করে তোলে একজন শিক্ষককে।একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষকই নন, একজন মেন্টরও বটে।শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেই একজন শিক্ষার্থীর জানার পরিধি বেড়ে যায় অনেক গুণ।শুধু শিক্ষার্থীই যে সব সময় শেখে তা-ই নয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত অনেক কিছু নতুন করে জানতে পারেন শিক্ষক।শিক্ষা সফর, পিকনিক, স্পোর্টস, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহজ সম্পর্ক তৈরি হবার সুযোগ হয়।নবীন শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে একজন শিক্ষক থাকেন সব সময় আপডেটেড। আর শিক্ষকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার্থীরাও জীবন সম্পর্কে নিতে পারে আগে ভাগেই সঠিক সিদ্ধান্ত। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে শিক্ষকের ফেসবুকের বন্ধু তালিকাতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ভীড়।শিক্ষকের স্ট্যাটাসে লাইক, কমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীরাও তাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানিয়ে দেয় সহজেই।প্রিয় শিক্ষকের ক্লাস মিস করার দিনগুলো নিয়ে এখনো তাদের মধ্যে আফসোসের সীমা থাকে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০

স্রাবনের রাত বলেছেন: আদর্শ শিক্ষক নামক জিনিষ টা আমাদের পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে । এখন যারা শিক্ষকতা নামক , যে পেশাটার সাথে জড়িত তারা শিক্ষা দানের চেয়ে , শিক্ষা বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী ।

আর সাথে সাথে ছাত্রদের চাহিদাও পরিবর্তন হয়ে গেছে, কি ভাবে ভাল ফল করতে হবে এটা নিয়ে সবাই ব্যস্ত ।

২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫

এইযেদুনিয়া বলেছেন: সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে। কী করবেন?

২| ১৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯

রায়ান ঋদ্ধ বলেছেন: এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দোষটা অনেক বেশী বলব। কলেজ লেভেলের শিক্ষকরা যতটা আন্তরিক ভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে মেশেন সেখানে শিক্ষার্থীরা তার আন্তরিকতা সুযোগে অনেক সময় অনেক অপমানজনক আচরণ করে বসে। একটা দ্বন্দ্ব আছেই এই সম্পর্কে। বানিজ্জিক ভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্যও সম্পর্কের অবনমন। কিন্তু একজন শিক্ষকের বেতনের কথা ভাবুন, সে বেতনে কিভাবে সে পরিবার সামলিয়ে উপযুক্ত শিক্ষিত করবে শিক্ষার্থীদের? এর দ্বায় ভার আমি দেব শিক্ষা পদ্ধতির। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিটা এমন ভাবে তৈরি যাতে শিক্ষককে মেন্টর হতে দেয় না, শিক্ষক শুধু একটি কাজে নিজুক্ত ব্যাক্তি হয়ে থেকে যান। শিক্ষার্থীর যেমন শিক্ষা নেওয়ার স্বাধীনতা নাই, শিক্ষকেরও তেমনি নেই নিজের মত করে শিক্ষা দেওয়ার।

যদি শিক্ষকদের বলা হত আপনারা নিজেদের মত করে শিক্ষা দেন আর তার পর সেভাবে মূল্যায়ন করেন, তাহলে মনে হয় না শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এই বিভেদ থাকতো। আর যদি শিক্ষার্থীরা নিজ ইচ্ছা ও কৌতূহল অনুযায়ী শিক্ষার বিষয় বেছে নিয়ে তার উপর পড়ালেখা করতো তবেই প্রকৃত শিক্ষানুরাগী বাঁ শিক্ষিত মানুষ হয়ে উঠতে পারতো।

গাঁদা গাঁদা বই দিয়ে গাধা বানানোর থেকে স্বতঃস্ফূর্ত শিক্ষা পরিবেশ দিয়ে সুশিক্ষিত বানানো কি উত্তম না?

২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬

এইযেদুনিয়া বলেছেন: সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.