নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের পথ সংস্কৃতি

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫



১। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না

‘’ দেশটা উচ্ছ্বনে যাচ্ছে। আজ দেখি এক বয়স্ক মহিলা ব্যাংক থেকে বের হবার পর দুই ছিনতাইকারী তার ব্যাগ ধরে টান দিলো। মহিলা, হয়তো তার অনেক কষ্টের জমানো টাকা, শক্ত করে ব্যাগটা ধরে রইলেন। রাস্তার কেউ এগিয়ে এলো না!



আমার এইসব সহ্য হয়না, আমি আধুনিক নাগরিক। আমি দৌড়ে গেলাম, দিলাম লাথি, নিলাম ব্যাগ। এরপর দিলাম আরো জোরে দৌড়।‘’

ওয়াসিম সোবহান চৌধুরী ফেসবুকে তার এই স্ট্যাটাসটি দিয়ে আবার নিচে লিখে দিলেন ‘’Please note: This is a satire post; not to be taken seriously.’’

এই নগরীতে পথ চলতে ফিরতে মানুষ নানা রকম বিপদে পড়ে। কেউ ছিনতাইকারীর খপ্পড়ে পড়ে, কেউ হয়ত দূর্ঘটনায় আহত হয়, কেউ হয়ত রাস্তা চিনতে পারছে না, কোন নারী হয়ত ঈভ টিজিং-এর শিকার হচ্ছেন এমনি সব বিপদ। কিন্তু কার বিপদে কে এগিয়ে আসে?পথে নামলে সবারই থাকে অনেক তাড়া। এর মধ্যে কারো বিপদে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেই আবার নতুন কোন বিপদে জড়াতে চান না।কথা হল বি এ এফ শাহীন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাওয়াদ আল রাজের সাথে। জাওয়াদ বলল, ‘’বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের কথা আমরা ভুলে যাই নি।পুলিশের সামনেই এধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে প্রতিনিয়ত। পুলিশেরাই এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। সেখানে আমরা সাধারণ, নিরস্ত্র মানুষ কিভাবে এমন ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারি? এতে আমাদের নিজেদের জীবনেরও ঝুঁকি থাকে।‘’

প্রসংগত স্মরণ করা যায় হজরত আলী নামের একজন সাহসী যুবকের কথা।২০১২ সালে মিরপুর এলাকায় তিনজন নারীকে ছিনতানকারীর হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিহত হন।বেঁচে যায় ঐ তিনিও নারী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন হজরত আলী। তার মৃত্যুতে তার পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। কিন্তু যে তিনজন নারীকে তিনি রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন, তাদের কোন হদিস-ই পাওয়া যায় নি।এমন কি তারা হজরত আলীর কোন খোঁজখবরও নেয় নি। পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হজরত আলীর সাহসিকতার খবর অনেকবার প্রকাশিত হলেও আজ আমরা তাকে ভুলে গেছি।

অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেই কেমন বিপদে পড়েছিলেন সে অভিজ্ঞতার কথাই বললেন মিরপুরের বাসিন্দা মিনহাজুল ইসলাম।কয়েক বছর আগে, একদিন তিনি দেখলেন রেডিসন হোটেলের কাছেই রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় একজন ব্যক্তি আহত হয়েছে।অথচ চারপাশের কেউই ঐ ব্যক্তিতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নি। তখন তিনি নিজেই ঐ ব্যক্তিকে নিয়ে একটি সি এন জি ভাড়া করে দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা দিলেন।মিনহাজুল চাইছিলেন সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল সিএমএইচে ঐ আহত ব্যক্তিতে নিয়ে যেতে। কান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে যাবার সময় চেকপোস্টে তাকে নানারকম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমন কি তাকে বলা হয়, ঐ আহত ব্যক্তিকে নিয়ে আগে পুলিশের কাছে যেতে, তারপর হাসপাতালে চিকিৎসা হবে।এমনি নানা ঝামেলায় পরে ঐ আহত ব্যক্তিকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় নি।উলটো পরোপকার করতে গিয়ে মিনহাজুলকে পোহাতে হয়েছে হাংগামা।

আরেক ধরনের অভিজ্ঞতা জানা গেল ফয়সাল মাহমুদের কাছ থেকে।পথে অপরিচিত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি নিজেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন।শুধু ফয়সাল একাই নয়। ফয়সালের চাচাও একবার প্রতারকচক্রের হাতে পড়েছিলেন পথে অপরিচিত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে গিয়ে।পথে কাউকে সাহায্য করতে গিয়ে এমনিভাবেই নানা রকম বিপদ ও জান-মালের ক্ষতির আশংকা থেকেই সচেতন ব্যক্তিরা এখন সহজে আর কাউকে সাহায্য করতে চায় না। মানুষে মানুষে পারস্পরিক বিশ্বাসও নষ্ট হয়ে গিয়েছে অনেক খানি।

কিছুদিন আগেই মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর চমৎকার ইনসপায়ারিং একটি ভিডিও ইউটিউবে অনেকবার শেয়ার হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পার্থ স্টেশনে একজন যাত্রীর পা ট্রেন ও প্লাটফর্মের মাঝে আটকে যায়।তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে পুরো স্টেশনের সব যাত্রী।সবাই মিলে গোটা ট্রেনটিকে ঠেলে উপরে উঠিয়ে দিলেন তারা। আর এভাবেই রক্ষা পেল ঐ আটকে যাওয়া যাত্রী।



২। পথের দূর্ঘটনার জন্য দায়ী আপনিও…

পাবলিক বাসগুলোর ড্রাইভারেরা কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতেই থাকে।বাসের যাত্রীরা তাদের যতই হেডফোন খুলে রাখার অনুরোধ করুক না কেন, তারা সেসব কানেই তুলতে চায় না।নিজেদের ইচ্ছে মত বাসে বাসে প্রতিযোগিতা করে ভাংগাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে থাকে।ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কাও করে না।অনেক বাসের যেমন ফিটনেসের লাইসেন্স নেই, তেমনি ড্রাইভারদেরও নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স।মাত্র ১৪/১৫ বছরের কিশোরেরা বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে হয়ে উঠে ড্রাইভার।এসব কারণে পথে দূর্ঘটনাও যেন নিত্যদিনের সংগী।



দূর্ঘটনার জন্য পথচারীরাও অনেক সময় দায়ী হয়ে থাকেন।ভাল মত দেখে শুনে রাস্তা পার না হওয়া, কোন গাড়ি আসতে দেখলেও গাড়ির সামনে গিয়ে রাস্তা পার হওয়া, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করা, ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা ইত্যাদি কারণেও পথে প্রচুর দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। আর এমন দূর্ঘটনা ঘটলে কেউ পথচারীর দোষ দেখে না, সবাই তেড়ে আসে পথের সব গাড়ি ভেংগে ফেলার জন্য।এ প্রসংগে বললেন মঈনুল হক, ‘’একটি চলন্ত গাড়ি যখন তখন ইচ্ছে হলেই ব্রেক কষে থামিয়ে দেওয়া যায় না। রাস্তা পার হবার সময় যারা হাত দেখিয়ে গাড়ি স্লো করতে বলেন তারা হয়ত এসব জানেন না।একটি গাড়ি চলে যেতে মাত্র ৩/৪ সেকেন্ড সময় লাগে। অথচ রাস্তা পার হবার জন্য মানুষ এইটুকু সময়ও অপেক্ষা করতে চায় না। তারা পারলে চলন্ত গাড়ির উপর দিয়ে রাস্তা পার হয়। ‘’ মঈনুল হকের একদম উলটো কথা বললেন পথচারী মেহেদি আল হাসান, ‘’জেব্রা ক্রসিং-এর সামনেও দেখুন গাড়িগুলো কেমন স্পিডে চলছে।এমন অবস্থায় মানুষ রাস্তা পার হবে কী করে?’’

৩।যখন ধরা পড়ে পটেকমার!

পথে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে মানুষের জটলা। এই জটলার ভেতরে সবাই মিলে একজনকে মারছে।একে তাকে জিজ্ঞেস করে হয়ত জানতে পারবেন, পকেটমার ধরা পড়েছে। কিংবা কাউকে হয়ত ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে।সেই সন্দেহ থেকেই ধর, ধর, মার, মার রব তুলে গণপিটুনির মহোৎসবে মেতে উঠে পথের মানুষ।কখনো কখনো এমন গণপিটুনিতে মৃত্যুও হয়ে থাকে অপরাধী ব্যক্তির।।এপ্রসংগে কথা হল টংগী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী আফজালের সাথে।আফজাল মনে করে, ‘’এইসব অপরাধীদের পুলিশের হাতে তুলে দিলেও কাজ হবে না।কারণ পুলিশেরা অপরাধীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেয়।এজন্যই মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।‘’ অথচ এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াটাও কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইন ভংগ করা। আবার অনেক সময় শুধুমাত্র সন্দেহের বশে এমন গণপিটুনিতে প্রাণ হারায় নিরপরাধ মানুষও।তাই পথে কোন পকেটমার, ছিনতাইকারী বা ছেলেধরা সন্দেহে কেউ ধরা পড়লে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই ঐসব অপরাধীদের আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।

৪। চলতি পথে নারী ও পুরুষের বিড়ম্বনা

বাসে, ফুটপাথে, মার্কেটের ভীড়ে চলতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয় নি, এমন নারী খুঁজেই পাওয়া যাবে না।প্রায়ই দেখা যায় কিছু পুরুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের হাতের কনুই বাড়িয়ে রাখেন ভীড়ের মধ্যে নারীদের শরীরে গুঁতো দেবার জন্য।নারীরাও এখন আর আগের মত এধরনের ঘটনা মুখ বুজে সহ্য করেন না।তারাও সাহসিকতার সাথে কুরুচিপূর্ণ পুরুষদের এমন অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করে থাকেন।অবশ্যই এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ করতে হবে সবারই। এমন প্রতিবাদের সময়েও কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকে। ভীড়ের মাঝে হয়ত প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায় না অথবা ভুলবশত একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে যদি প্রতিবাদ কেউ করে বসে তাহলে পুরো ব্যাপারটিই হয়ে পড়ে ঘোলাটে। এতে যেমন পরবর্তীতে এমন ঘটনায় নারীরা সহজে আর কারো সহানুভূতি/সাহায্য পায় না, তেমনি পুরুষেরাও পড়ে যেতে পারেন অপ্রীতিকর অবস্থায়।

নারীও পুরুষ উভয়েই কিভাবে এমন বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে পারেন এ ব্যাপারে মন্তব্য করলেন হেমন্ত হাসান। হেমন্ত বলেন, ‘’ভীড়ের মধ্যে পুরুষেরা নারীদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চললে এমন সমস্যা সহজেই এড়িয়ে চলতে পারেন।এছাড়াও ভীড়ের মধ্যে নারীদের শরীর স্পর্শ করার সুযোগ নেবার হীন মানসিকতা পুরুষদের ত্যাগ করতে হবে। বরং চলতি পথে নারীদের জন্য স্থান ছেড়ে দিয়ে তাদের প্রতি সম্মান দেখানোই উচিত। এতে নারীরাও স্বস্তিতে পথ চলতে পারবেন।‘’

৫।ধরতে হবে ধৈর্য্য

রাস্তায় জ্যাম বাঁধলে, কেউ ওভারটেক করতে গিয়ে গাড়িতে সংঘর্ষ বাঁধালে, কাউকে স্থান না দিয়ে নিজে আগে যেতে চাইলে, বাসে ভাড়া নিয়ে কন্ডাকটরের সাথে ক্যাঁচাল হলে, রিকশাওয়ালাদের নিজের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলে কানে ভেসে আসে অশ্রাব্য সব গালিগালাজ। কখনো কখনো মারামারিও লেগে যায় পথের মাঝেই।এতে সমস্যা কমে তো না-ই বরং বিরক্তি, রাগ, অসহিষ্ণুতা বাড়তে বাড়তে আরো বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।জীবনের অনেক মূল্যবান সময়ও নষ্ট হয়ে যায়।ছোটশিশু থাকলে তারা এসব ঘটনায় ভয় পেতে পারে। শুধু তা-ই বড়দের দেখে ওরা বাজে গালাগালিও শিখে ফেলে। তাই পথে এমন সমস্যা হলে উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে সবাইকেই। ঝগড়া-মারামারি বা গালাগালি না করে সব থেকে সহজ উপায়ে সমস্যাটির সমাধান খুঁজে নিতে হবে। পথের সব মানুষ যেহেতু একই রকম নয়, তাই সবাই একটি সমস্যার সহজ ও শান্তিপূর্ণ উপায়টি বুঝতে পারে না।আপনি যেভাবে সমস্যাটির সমাধান করতে চাচ্ছেন, তাতে অন্য কেউ সমর্থন দিচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন।যারা আপনাকে সমর্থন দেবে, তাদেরকে নিয়ে সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.