নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বায়োলজিক্যাল বাবা মা হবার চেয়ে, সৎ বাবা মা হওয়া কঠিন

১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২১

হোমারের ইলিয়ড পড়ছিলাম। সে এক এলাহি কাণ্ড! এতো এতো চরিত্র আর তাদের পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত! আমি তো স্রেফ এর পাঠক, ভাবছিলাম হোমার নিজে কিভাবে এমন একটি মহাকাব্য রচনা করলেন! ট্রয়ের হেলেনকে নিয়ে মহা ধুন্ধুমারকাণ্ড চলছে পুরো বইটা জুড়ে। পড়তে পড়তে পরিচয় হয় সবচেয়ে সুদর্শন যোদ্ধা একিলিস ও তার ল্যাফটেনেন্টদের সাথে। একিলিসের ল্যাফটেনেন্টদের মধ্যে দুজন অর্থাৎ মেনেনথিয়াস ও দুর্ধর্ষ ইউডোরাসের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে একটুচমকে যেতে হলো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভেবেকিছুটা বিস্মিতও হলাম।

মিথ অনুযায়ী, মেনেনথিয়াস ও ইউডোরাস , তারা দুজনেই সৎ পিতার পরিচয়ে লালিত পালিত হয়েছিলো। তারা দুজনই বায়োলজিক্যাল বাবা মায়ের প্রেমের ফসল। কিন্তু সে প্রেম পরিনতি লাভ করে নি। তাদের মায়েদের পরবর্তীকালে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। মেনেনথিয়াস তার সৎ পিতা বোরাস ও ইউডোরাস তার সৎ পিতা ফাইলাসের কাছে লালিত পালিত হতে থাকে। নিজ সন্তানের মতোই আদর স্নেহে তাদেরকে বড় করে তোলেন সেই সব সৎ পিতারা। এমন কি সৎ পিতার পরিচয়েই তারা বড় হয় এবং সামাজিকভাবেও সম্মানজনকঅবস্থানে থাকে। এবং আমরা দেখি যে, একটি শক্তিশালীসেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা দায়িত্বশীল রয়েছে। তাদেরজন্ম পরিচয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। অথচ আমাদের সমাজ হলে এই দুজনের একমাত্র পরিচয় হতো ঘৃণ্য জারজসন্তান। স্থান হতো একেবারে আস্তাকুড়ে। অথচ নিজের জন্মেরউপর একটি শিশুর কোনো হাত নেই। তবে সে কেন অবৈধসন্তান বা জারজ সন্তানের তকমা সারাজীবন বয়ে বেড়াবে? শাস্তি যদি দিতেই হয়, তার দায়িত্বহীন বাবা মাকে দেয়া উচিত। অথচ এই শিশুটিও সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্ভাবনাময় সম্পদ, তাকে কেন হেলাফেলায় জীবন্মৃতের মতো বড় হতে হবে?

জারজ সন্তানের কথা না বাদই দিলাম। খেয়াল করে দেখবেন, বর্তমানে দেশে ডিভোর্সের হার বেড়ে গিয়েছে। ফলে ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানও কিন্তু বাড়ছে। তাদের বাবা মা পরবর্তীকালে আবার বিয়ে করলেও, এই সন্তানগুলো অনেকটা অবহেলায় বেড়ে উঠছে। কেউ তাদের আদরে গ্রহণ করছে না। আমার পরিচিত অনেক নারী রয়েছেন, যাঁরা ডিভোর্সের পরে আবার বিয়ে করেছেন, তাঁদের ২য় স্বামীও অনেক ভালোবেসেই তাঁদেরকে বিয়ে করেছেন, বিয়ের পর তাঁরা সুখী জীবন যাপনওকরছেন। কিন্তু স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানকে গ্রহণ করেন নি। সেই সন্তান হয়তো অন্য কারো আশ্রয়ে বাবা মা বিহীন , অনেকটা অনাথ অবস্থায় বড় হচ্ছে। অনেক শিশুর স্থান হয় এতিমখানায়। এদিকে আবার ঐ শিশুর মা পরবর্তী বিয়েতে নতুন পরিবারে গঠন করে সুখী হলেও, আগের সন্তানটিকেকাছে না পাবার একটি চাপা হাহাকার বহন করে যাচ্ছেনদিনের পর দিন। যেন ‘’ দুই দিকে দুই খণ্ড হয়ে’’ পড়ে থাকা, এ এক নিদারুন শূন্যতা।

আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে, সৎ বাবা-মায়েরা অত্যাচারী হয়ে থাকে। ছোটদের রূপকথা, গল্প, সিনেমাতেও এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। এর যে বাস্তব উদাহরণ নেই, তাও নয়। তসলিমা মুন শেখের আত্মজৈবনিকগ্রন্থ ‘’যদ্দপি আমার গুরু–পতি”তেও সেই নমুনাই দেখতেপাই। সৎ বাবার কাছে অনেক শিশু যৌন নিগ্রহের শিকারওহয়ে থাকে। আসলে বায়োলজিক্যাল বাবা মা হবার চেয়ে সৎ বাবা মা হওয়া সত্যিই কঠিন। একজনকে ভালোবেসে, তার সকল অতীত ইতিহাস মেনে নিয়ে তাকে গ্রহণ করতে পারলেও,তার সন্তানকে যেন গ্রহণ করা যায় না। ‘’লোকে কী বলবে’’ – প্রচলিত এই সামাজিক ভয়ের কারণেও অনেকে সাহস করেন না। আবার অনেকে মনে অজানা হিংসা ও ঘৃণা পোষণ করে থাকেন, নিতান্তই একটি শিশুর প্রতি! এই হলো আমাদের মানসিকতার অবস্থা!

আবার অনেকে স্বামী/স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানকেভালোবেসে নিজ সন্তানের মতোই গ্রহণ করেন। কিন্তু তাতেওকি রক্ষা আছে? শত ভালোবাসলেও হয়তো ঐ সন্তান তাকে কখনো মন থেকে মেনে নিতে পারে না। আবার ‘’লোকে কী বলবে’’—সমাজ তো বসেই আছে নানা রকম বিরূপ মন্তব্য করার জন্য! ঐ সন্তানকে ভালোবাসলেও লোকে বলবে, ‘’সৎ বাবা/মা, নিশ্চয়ই কুমতলব রয়েছে, বেশি আদর করে নষ্ট করছে।‘’ শাসন করলেও লোকে বলবে, ‘’সৎ বাবা/মা, আসলহলে এমন করতে পারতো না।‘’ তাই এ সমাজে সৎ বাবা/মা হওয়া একটা চ্যালেঞ্জ বটে! অথচ সৎ বাবা/মায়ের সাথে শিশুর সুন্দর ও সহজ সম্পর্কে থাকাই কাম্য। আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, এখন দেশে ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানবাড়ছে। অথচ এই সন্তানেরাও পারিবারিক সুন্দর আবহের অধিকার রাখে। কিন্তু সমাজ তাকে সুন্দর পরিবারেরঅভিজ্ঞতা দিতে পারছে না। এই শিশুরা বড় হচ্ছে মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে চাকরি ক্ষেত্রেও তার যোগ্যতার চেয়েও, ব্রোকেন ফ্যামিলি সন্তান এটিকেই বড় করে দেখা হয়। এমন সন্তানদের সকল যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসার পদে তাকে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়। কারণ, তার শৈশব অন্যদের চেয়ে আলাদা। গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল কাজের জন্য সে ফিট নয়, এরকম ভাবা হয়ে থাকে। এমন ভাবনা যে সব সময় অমূলকতা নয়। অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান তাঁর ‘’পরার্থপরতারঅর্থনীতি’’ বইতেও বলেছেন, ‘’ দীর্ঘমেয়াদে ভগ্ন পরিবারে সন্তানদের মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।“ শুধু ক্যারিয়ারই নয়, কোন রোমান্টিকসম্পর্কেও অনেক ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়।

অথচ ইলিয়ডে আমরা দেখি, মেনেনথিয়াস ও ইউডোরাসেরজন্ম পরিচয় নিয়ে ঐ সময়ের সমাজ মাথা ঘামায় নি। তাদেরসৎ পিতা নিজ সন্তানের মতো তাদেরকে লালন পালন করেছে, সুন্দর শৈশব ও পারিবারিক পরিবেশ দিয়েছে। রাষ্ট্রেরসুনাগরিক হিসেবে তাই গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্বশীলতার সাথে তারা কাজ করতে পেরেছে।

সন্তান লালন পালনে আমরা বায়োলজিক্যাল বাবা মাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু তারাও সব সময় বাবা মা হিসেবে আদর্শ হতে পারেন না। প্রসঙ্গত স্কুলে পড়া ভাবসম্প্রসারণের কথা মনে পড়ে,’’জন্মদাতা হওয়া সহজ, পিতা হওয়া কঠিন।‘’ পেরেন্টিং এর কাজটি সত্যিই কঠিন।বায়োলজিক্যাল পেরেন্ট হলেও, সৎ পেরেন্ট হলেও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.