![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাই মিথ্যার নাশ, চাই সত্যের উন্মেষ, চাই শান্তির পৃথিবী
দুদিন ধরে মিডিয়াতে সবচেয়ে যে ঘটনাটি প্রাধান্য পেয়েছে ও বৃহৎ পরিসরে লাইভ টেলিকাস্ট করা হয়েছে, যার কারণে বাংলাদেশের মানুষ দোয়া-কান্না-আর্তনাদ-চিন্তা-নিদ্রাহীন রাত কী করেনি, মিডিয়া অবশেষে জানালো সেই ছোট্ট শিশু জিয়াদ আর বেঁচে নেই । জিয়াদ বেঁচে নেই এটা শোনার পর কিছুক্ষণ আগেও যে মানুষগুলো জিয়াদের জন্য কান্নাকাটি করেছে তারাই এখন জিয়াদ নিয়ে ততোটা উদ্বিগ্ন নয়, হতাশাও নয় । ভাবছেন তাহলে নিশ্চয় অধিক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে? না সেটাও না । তবে হ্যা, মানুষগুলো পাথর হয়ে গিয়েছে । তবে শোকে নয়, প্রতারণায় । কার সাথে কে প্রতারণা করেছে এটাও মানুষ ঠিক করে জানেনা । তারা জানে শুধু তারা বৃহৎ পরিসরেই প্রতারিত হয়েছে, তাদের আবেগ নিয়ে প্রতারণা করেছে কোনো একটা মহল । কেনো করেছে সেটাও তারা জানেনা । তারা জানে শুধু এ প্রতারণার কারণেই মন থেকে জাতীয়গত ব্যাপারে বিশেষ করে মিডিয়া আর রাজনীতিতে একদিকে যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গিয়েছে, তেমনি মিডিয়াকর্মী ও রুই-বোয়াল-রাঘবমার্কা নেতাদের প্রতি পাবলিক সেন্টিমেন্টও ততোটাই কমে গিয়েছে, যতোটুকুন থাকার কারণে তার সুযোগ নিয়ে এই দুটো শ্রেণী প্রতারণার জাল বুনেছিলো ।
গতকালের মা-খালাা-আন্টিরা যে কারণে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছিলো, তাদের মুখে আজ ভ্যাবাচেকার ছাপ ! গতকালের ভাইবোনদের যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে পোষ্টের উপর পোষ্ট, কমেন্টের উপর কমেন্টের ঝড় উঠেছিলো তাদের কীবোর্ড আজ থমকে দাঁড়িয়েছে । সব হারানোর শেষে তারা কেউ মিডিয়াকে যা তা বলে গালি দিচ্ছেন, কেউ আবার সরকারকে গালি দিচ্ছেন কেউবা বলছেন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এটা আঠারো দলের সাজানো নাটক ।
আমি আজ বুঝতে চাইনা এ নাটকের রচয়িতা কে, অভিনেতা কে, প্রযোজক কে, উদ্দেশ্য কী । সবার মতো আমিও জানতে চাই, আমাদের সহজ সরল আবেগ নিয়ে এমন প্রতারণা আমাদের সাথে না করলে কি চলতোনা? আপনাদের চ্যানেলে বেশি টিউনিং না হলে কী না খেয়ে মরে যেতেন? আপনাদের সাইটে ক্লিক কম পড়লে কী খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? আপনাদের পত্রিকার অতিরিক্ত কাটতি না হলে এমন কি ক্ষতিটা হতো যতোটা হয়েছে এদেশের কোটি কোটি সহজ সরল মানুষের? আজ মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে? জাতীয় এই অবিশ্বাসতা কি একটা জাতির জন্য মঙ্গলকর?
"শাহজাদপুরের একটা ছোট পাইপে একটা শিশু পড়ে গিয়েছে, এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি !" মিডিয়ামহল, ঘটনা উত্তপ্ত হওয়ার আগে এরকমটিই ছিলো আপনাদের করা শিরোনাম । আর আমরা সাধারণ মানুষ সহজ সরলভাবে বিশ্বাস করেছিলোম আপনাদের কথা । তাইতো ভিতর থেকে আমাদের আবেগ-কান্না চেপে রাখতে পারিনি । কলকলিয়ে অশ্রু নির্গমন হয়েছে দুচোখে, ঘুম আসেনি রাতে । আপনারা আমাদের সহজসরল বিশ্বাস নিয়ে আরেকটু খেলতে চাইলেন । ব্যবস্থা করলেন লাইভ টেলিকাস্টের । দর্শকের চেয়ে আপনাদের উপচে পড়া ভিড়ে বুঝায় যাচ্ছিলোনা পাইপের প্রস্থ কতটুকুন । হয়তো আপনারা বুঝতে দিতেও চাচ্ছিলেন না । জননীরা যখন দোয়া করতে করতে জায়নামায ভিজিয়ে ফেললেন তারপর আপনাদেরই কেউ রিপোর্ট করলো যেখানে জিয়াদ/জিহাদ নামের শিশুটি পড়েছে তার প্রস্থ এতোটাই কম যে, সেখানে খুব ছোট শিশু অনায়াসে পড়তে পারেনা । অথচ আপনারাই বলেছিলেন জিয়াদের কাছে খাবার পৌছানো হয়েছে, লাইট পৌছানো হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি । আর এসব কথায় ট্র্যাজিডি উপন্যাসের কাহিনীটা আরো জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলো ।
রাত অবধি চেষ্টা করেও ফায়ার সার্ভিস এ বুয়েটের একদল গবেষক জিয়াদ নামের কাউকেই পেলোনা সেই পাইপে । অবশেষে জিয়াদকে পাওয়া গেলো খবরের কাগজে, অনলাইন নিউজ সাইটে, চ্যানেলের পর্দায় । জানিনা আপনার কেমনে কোত্থেকে জিয়াদকে মৃত অবস্থায় পেলেন ! আর জানার চেষ্টাও করছিনা । করছিনা একারণে যেহেতু জিয়াদকে ঐ পাইপে পাওয়া যায়নি সেহেতু সুস্থ বিবেকবান মানুষের আর আগ্রহ থাকার কারণও থাকতে পারেনা । হয়তো আপনারা জিয়াদকে খবরের কাগেজে মুড়িয়ে রেখে কিংবা নিউজ সাইটে কিংবা ভিডিও আর্কাইভে হাইড করে রেখেছিলেন !
যাক, জিয়াদ নিয়ে আমারও আর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করছিনা । কারণ আপনারাই নিউজ দাতা, আপনারাই উদ্ধারকর্তা । এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই খুশির খবর । কোটি কোটি টাকা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন পুষে সরকার বরাবরই বোকামির পরিচয় দিচ্ছেন ।
হে মহৎ মিডিয়া কর্মী, কোন কারণে আপনারা জিয়াদের ঘটনাটা এতোটা হাইলাইটস করলেন? অথচ বাংলাদেশের পরতে পরতে প্রতিদিন জিয়াদের চেয়েও অসংখ্য শিশু কেউ ডাস্টবিনে কুকুরের সাথে লড়াই করে মরছে, কেউ চোরাকারবারীর হাতে পড়ে অজানা দেশে হারিয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ শিশুশ্রমে মারা যাচ্ছে কলকারখানায়-গৃহকর্তীর বাসায়-গ্যারেজে, কত জিয়াদকে গলা টিপে মেরে ফেলছে নরপশুরা, কেউ কেউ ডায়রিয়া-কলেরায়-নিউমোনিয়ায় মরছে সুচিকিৎসার অভাবে । বাংলাদেশের হাজারও শিশু আছে যারা জানেনা তাদের মা-বাবা কে, যারা জানেনা লেখাপড়া কাকে বলে? কই আপনারাতো এসব ক্ষেত্রে লাইভ টেলিকাস্টের ব্যবস্থা করেন না ! হাইলাইটস করে একযোগে শত শত চ্যানেলে আপডেট নিউজ করেন না ! তাহলে কেবলামাত্র বিতর্কিত জিয়াদ চরিত্রটির অবতারণার উদ্দেশ্য কী? আপনাদের স্বার্থান্বেষীর পরিচয় দেয় না কি?
পলিটিক্সের পলি ট্রিকসে পড়েই হোক আর ফ্ল্যাটবাড়ি গড়ার উদ্দেশ্যেই হোক, আপনাদের পক্ষপাতিতা একসময় আপনাদের বিপদই ডেকে আনবে । কিভাবে আনবে তা জানার জন্য আর ক'টা দিন সবুর করুন । ইতোমধ্যেই হয়তো দেখেছেন কিভাবে মিডিয়াকর্মীদের পিটানো হয়েছে । জননীতি আর রাজনীতির চিপায় পড়ে আপনারা একসময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বেন ।
মিডিয়া যদি এভাবে অন্ধ ও ভুলে ভরা খবরটা হাইলাইটস না করতো, যিয়াদ নামের ঐ শিশুটাকে শেষ পর্যন্ত অন্যখানে পাওয়া গেলেও অন্ততপক্ষে জীবিত পাওয়া যেতো ।
এর পরও হয়তো বাংলাদেশ শিক্ষা নিবেনা । আমরা আবারো কাঁদবো আগামীতে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য কোন জিয়াদ চরিত্রটির জন্য ।
নিজেকে বলছি, এখন থেকে আবেগ কন্ট্রোলে রাখো । যেকেউ এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে । মিডিয়া যা বলে বলুক, বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে ব্যাপারটা উপলব্ধির চেষ্টা করো । আর একটা জিয়াদের জন্য না, দৃষ্টিভঙ্গি হোক বাংলার আপামর শিশুর দিকে, যারা আমাদের ভুলে প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে জিয়াদ চরিত্রটির মতো । হয়তো আমাদের আশেপাশেই আছে এক একটা জিয়াদ চরিত্র, নিজের সন্তান অথবা পথশিশু অথবা অন্য কোন শিশু । আবেগ মাখা সমালোচনা নয়, উৎসাহ নয়, উদগ্রীব নয়, মানবতা আর সচেতনতা বৃদ্ধি পাক আমাদের মাঝে ।
বিঃদ্রঃ জিহাদ না জিয়াদ হবে তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দেহে আছি । তাই আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।
©somewhere in net ltd.