![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাই মিথ্যার নাশ, চাই সত্যের উন্মেষ, চাই শান্তির পৃথিবী
ছোটবেলা নির্বাচনকে উৎসবই মনে হতো । হোক জাতীয় কিংবা স্থানীয়, আমাদের মতো ছোট ছোট মাথার মানুষগুলোর কাছে নির্বাচনকে ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনার কোনো ঘাটতি ছিলোনা । পাড়ার ছেলেদের সাথে আমরাও নির্বাচনী বিভিন্ন প্রতীক কাগজে এঁকে মিছিল করতাম, স্লোগান গাইতাম । আরেকটু বড় হওয়ার সাথে সাথে বড় মানুষদের সাথে মিছিলেও যেতাম, মিছিল শেষে চা-বিস্কিট-খুরমা জুটতো । মহল্লায় মহল্লায় রাতভর চলতো নির্বাচনী আবেশ, আলাপচারিতা । নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসতো উৎসবটা ততই জমজমাট হতো । নির্বাচনী প্রচারণায় অন্য কোনো প্রসঙ্গ যেনো ঐ সময়ে প্রবেশধিকার হারিয়ে ফেলতো । ঘরের রমণীকুলের কাছেও তখন মুখ্য আলোচ্য বিষয় হতো নির্বাচন- কে জিতবে? কে হারবে?
সেদিন জানতাম না কেনো নির্বাচনকে ঘিরে এতো আয়োজন? এতো বিনিয়োগ? এতো চা-পান খাওয়ানো? ছোট ছিলাম তো, তাই ভাবতাম ঈদ-পূজার মতো এটাও একটা সামাজিক উৎসব । বিশ্লেষণী চিন্তাধারা সেদিন ভুলক্রমেও ধরা দেয়নি, ধরা দেয়ার যৌক্তিকতাও ছিলোনা । জন্মের পরবর্তী শিশুদের কচি জিহ্বা যেকারণে সব কিছুর স্বাদ নিতে মরিয়া হয়ে যায়, ঠিক সে কারণেই হয়তো সবকিছুতেই আনন্দ-উৎসব খুজতো আজকের আমিটা ।
যখন আরেকটু বয়স হলো, ক্ষমতা শব্দটি ভালো করে বুঝলাম । আরো বুঝতে শিখলাম ক্ষমতার সাথে স্বার্থের সম্পর্ক, ক্ষমতা ব্যবহার করে স্বার্থোদ্ধারের কৌশল, পরিচিত হলাম নির্বাচন নামের সম্মানজনক ব্যবসার সাথে । হ্যা, নির্বাচন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্মানজনক একটা ব্যবসা । ব্যবসা বিজ্ঞানের সবকটা শর্তই সে পূরণ করেছে । বাজার প্রতিযোগিতায় জিততে পারলে পুরোটাই লাভ । গ্যারান্টিও আছে । পাক্কা পাঁচ বছর !
'গণতন্ত্র' নামের একটা কোম্পানি আছে । সেই কোম্পানিতে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে 'প্রতিশ্রুতি পূরণ' নামের পণ্য । ভোক্তা হলো 'জনগণ' । প্রান্তিক ভোক্তা যদি ধরতে যাই তাহলে দেখা যাবে তিনি একজন দিনমজুর, যার নুন আনতে পানতা ফুরায় । বিনিময় মুদ্রা একটা 'ব্যালট পেপার' । অন্যান্য বিনিময় মুদ্রার সাথে এই মুদ্রার প্রধাণ পার্থক্য হলো মূল্য নির্ধারণে । নোটের নির্দিষ্ট মূল্য থাকে কিন্তু ব্যালট পেপারের কোনো নির্দিষ্ট মূল্য নেই । কখনো একটা ব্যালট পেপারের মূল্য শূণ্য, কখনোবা কোটি কোটি । নোটের মূল্য আগে থেকেই জানা যায় কিন্তু ব্যালট পেপারের মূল্য বুঝা যায় নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ।
যেহেতু ব্যবসায়ীরা দেখছে অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে এই ব্যবসায় লাভের পরিমাণটা বেশি সেহেতু তাদের কাছে এই ব্যবসাটা দিনে দিনে যথেষ্ট জনপ্রিয় পাচ্ছে । ভোক্তার কাছে এই ব্যবসার উপযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বুর্জোয়া শ্রেণীটির সাথে ব্যবসায়ীর চলছে দফায় দফায় সভা-সিন্ডিকেট-গোপন সলাপরামর্শ । বুর্জোয়ার লাভের ভাগে অতিরিক্ত মেদযুক্ত ভুরি আর ব্যবসায়ীর লাভের পরিমাণটা নাইবা বললাম । মানবতার সেবা করার জন্য এমনি এমনিইতো সে বিড়ি-সিগারেটের মতো চকচকে পাঁচশ টাকার বান্ডেল বিলায়নি ! অবশেষে নির্বাচনের পসরা সাজাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ী, পসরা কিনতে মরিয়া ক্রেতা । এতো অল্পসময়ে এতো বেশি পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে 'গণতন্ত্র কোম্পানি'-কে পর্যন্ত হিমশিম খেতে হচ্ছে !
আগে জানতাম সরকার থেকে শুরু করে গ্রাম মেম্বার তৈরী করতে নির্বাচন হয় । এস,এস,সি পাশ করার আগমূহুর্ত তাই জেনে আসছি । কিন্তু জানার পরিধিটা বেড়ে গেলে তারপর থেকেই । শুধু একটা ক্ষেত্রে উদহারণ দিই । পরিবহন শ্রমিক নির্বাচনঃ ট্রাক শ্রমিক নির্বাচন, রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক নির্বাচন, অটোরিক্সা শ্রমিক নির্বাচন ইত্যাদি যানবাহন শ্রমিক নির্বাচন । আবার এসব নির্বাচনে পদের নামগুলো গুণে শেষ করা আপনাদের পক্ষে সম্ভব কিনা জানিনা, তবে আমার পক্ষে সম্ভব না । গতকাল রংপুরে একটা নির্বাচন দেখলাম । বাজার সমিতি নির্বাচন । এর আগে এরকম নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য হয়নি । বেশ কয়েকদিন যাবৎ লক্ষ্য করলাম, এই বাজার সমিতি নির্বাচনকে ঘিরে ঐ বাজারের এই কয়েকদিন যে আড়ম্বরতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রচারণা তা বোধহয় জাতীয় নির্বাচনকেও হার মানাবে । এতোটুকুন বাজারে মাত্র কয়েকটা পদের জন্য পদপ্রার্থীর সংখ্যাটা অবশ্যই স্বাভাবিক নয় । অবশ্য বর্তমানে নির্বাচন মানেই পদপ্রার্থীর সংখ্যা পদের চেয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি । কেনো বেশি সেটা আজ কারো অজানা নয় ।
ইদানীং লক্ষ্য করলাম, আমি যে ব্যবসার কথাটা বলছি, সেই ব্যবসার ব্যবসায়ীর সংখ্যাটা ক্রমশই বেড়ে চলেছে । যে হারে বেড়ে চলেছে সে হারে তো প্রান্তিক ভোক্তার সংখ্যা বাড়ছেনা ! অবশ্য এ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ারও কারণ দেখছিনা । প্রান্তিক ভোক্তা বাড়ছেনা তো কী হয়েছে, গৌণ ক্রেতাতো বেড়েই চলেছে । গৌণ ক্রেতা বলতে বুঝাতে চাচ্ছি ঐসব ব্যবসায়ীকে যে নিজেও অন্য ব্যবসায়ীর সাপেক্ষে ক্রেতা । উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর সাপেক্ষে মন্ত্রী ।
নিজেকে যদি প্রান্তিক ভোক্তা শ্রেণীটির পক্ষে নিয়ে যাই, তখন চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারাও যায় না । কারণ আমার যেহেতু কোনো ব্যবসা নাই, কিংবা আমি যেহেতু খুচরা দোকানদারও (রাজনৈতিক দলের সদস্য) না, আমারটা আমাকে চিন্তা করতেই হবে । ইতোমধ্যে দেশের প্রধান দু ব্যবসায়ী যা শুরু করেছে, রীতিমতো যুদ্ধ ! এ যুদ্ধকে যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই এই যুদ্ধ, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই যুদ্ধ সাধারণ জনগণ মানে আমার মতো প্রান্তিক ভোক্তার বিরুদ্ধে । ও, একটা কথাতো বলাই হয়নি ! 'গণতন্ত্র কোম্পানি' খুব একটা সুবিধার না । 'ডিভাইড অ্যান্ড বিজনেস' প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সে বেশি বেশি পণ্য উৎপাদন করে তা যোগান দেয় নীল ব্যবসায়ী আর হলুদ ব্যবসায়ী নামের প্রধান দুটো ব্যবসায়ী শ্রেণীকে, যারা কিনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরস্পরের বিরোধিতা করে যাবে । নিলামে প্রতিযোগিতা না থাকলে নিলাম যেমন জমে উঠেনা, তেমনি বিরোধী দল না থাকলে গনতন্ত্রের বাজার জমে উঠেনা । গণতন্ত্র কোং-এর প্রোপাইটার এটা ভালো করেই জানেন ।
দেশের বর্তমান যা পরিস্থিতি, দেখে তো মনে হচ্ছে প্রান্তিক ভোক্তা অর্থ্যাৎ দিনমজুর শ্রমিক-কুলি-ড্রাইভার যথেষ্ট বিপাকে পড়েছে । হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে কাজে গেলে হয় গাড়ির ভিতর আগুনে পুড়ে ঝলসে মরতে হবে, আর যদি না যায় তাহলে স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে ঘরের ভিতর না খেয়ে মরতে হবে । মরতে তোমাকে হবেই বাপু, হয় বাড়িতে নয় গাড়িতে !
সতর্কীকরণঃ কোনো পণ্য ক্রয় করিবার আগে দেখিয়া লইবেন ইহা কোন কোম্পানির তৈয়ারী । নচেৎ...
লেখক,
ইলিয়াস আহমেদ
১৭.০১.২০১৫ খ্রিঃ
©somewhere in net ltd.