নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । আগে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতাম আর এখন জেগে জেগেই দেখি

স্বপ্নাতুর পুরব

চাই মিথ্যার নাশ, চাই সত্যের উন্মেষ, চাই শান্তির পৃথিবী

স্বপ্নাতুর পুরব › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোকা তুই চুপ করে থাকিস !

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৪০

ছোটবেলায় যখন বালু দিয়ে ঘর বানিয়ে খেলছিলাম,
চৌধুরী বাড়ির সমবয়সী জাম্বো ছেলেটা এসে বালুর ঘরটা ভেঙ্গে দিলো । আমি রাগে গড়গড় করছিলাম । ছোটো খাটো ঝগড়া শুরু করে দিলাম ।
মা, তুমি রান্নাঘর থেকে এসে আমাকেই চড় মেরে অপক্ক গালটা লাল করে দিয়েছিলে ।
রাতে ব্যাথায় ঘুম আসছিলোনা । তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে, যেখানে চড় মেরেছিলে সেখানে চুমু দিয়ে বলেছিলে, খুব লেগেছে খোকা?
আমি ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আগে জাম্বোইতো আমার ঘর ভেঙ্গে দিয়েছিলো!


চিত্র: মায়ের প্রতি খোকার অভিযোগ

তুমি বলেছিলে মা, আমি জানিতো আমার খোকা মোটেই ওরকম নয় । কিন্তু কী করবি খোকা ! ওর বাবা যে এলাকার মাথা । তাছাড়া ঋণ. . .

জানো মা, আমার ছোট মাথায় সেদিন এতোকিছু ঢুকেনি । শুধু বুঝেছিলাম, দোষতো আমার ছিলোনা ।

প্রাইমারিতে যখন পড়তাম, কয়েকটা ছেলে মিলে আমাকে মেরে নাক থেকে রক্ত বের করে ফেলেছিলো । আমার দোষ ছিলো, তারা আমার পরীক্ষার খাতাটা জোর করে নিয়েছিলো আর আমি স্যারকে বলে দিয়েছিলাম বলে !
মা তখন তুমি বলেছিলে, ওদের সাথে লাগিস না খোকা, চুপ করে থাকবি !

যখন আমি ফুটবল খেলতে গেলাম পাশের গ্রামের ছেলেদের সাথে, ওরা আমাকে আচ্ছা মতো পিটিয়েছে । কারণ আমি ফাউল করিনি, অথচ ওরা সবাই বলেছে তুই ফাউল করেছিস ! আমি শুধু সত্যটা বলতে গিয়েই. . .
এবার মা তুমি বললে, ওদের সাথে খেলতে যাস কেনো? যা মার খা গে!
আমি এবার আর বললাম না, মা আমি তো সত্যিই ফাউল করিনি!

শহরের কলেজে ভর্তি হলাম । আমি গাঁয়ের ছেলে । শহরের সহপাঠীরা আমাকে দাম তো দিতোই না, বরং এড়িয়ে চলতো, ভাব নিতো । একদিন কলেজ গেটে ঢুকতে গিয়ে একজনের পা খিঁচে ফেলেছিলাম না দেখে । সঙ্গে সঙ্গে সরিও বলেছিলাম । কিন্তু সেই একক্লাস জুনিয়র ছেলেটা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার ছাত্ররাজনীতি দলের বড়ভাইদের সাথে অনেক চড় থাপ্পর মেরেছিলো । সে বলেছিলো আমি নাকি ইচ্ছে করে খেঁচে দিয়েছিলাম । আর ক্ষুর দেখিয়ে এটাও বলেছিলো, কাউকে বললে এরপরে. . .
মা, তখন আমি মেসে এসে অনেক কেঁদেছিলাম । তবু কিভাবে জানি জেনে গেলে! মোবাইলেই বলেছিলে, খোকা, ওদের সাথে লাগতে যাস কেনো । নিচ মুখে কলেজে যাবি আর নিচমুখে মেসে ফিরবি । আর খোকা তুই চুপ করে থাকিস ! কাউকে কিছু বলিস না ।

ভার্সিটি ভর্তি হলাম । রাতে বড়ো ভাইগুলো ডেকে আচ্ছা মতো আমাকে নিয়ে মজা করলো । আর আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করেছিলো, যাতে আমার আত্মসম্মানবোধ মাটিতে মিশে যায় । অশ্লীলতা-অন্যায় কোনোটাই বাদ যায় নি, ঐ রাতে আমার সাথে করেনি । একসময় তারা ছেড়ে দিলো । রুমে এসে মনে হলো আমি এখন ধর্ষিত ! জানো মা, অনেক কেঁদেছিলাম । তারা রুমে এসে ধর্ষিতকে চা বিস্কিট এনে দিয়ে বলেছিলো, আরে বোকা ছেলে, আমরা তো মজা করলাম । আমি গভীর রাতে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকেই বলেছিলাম, ধর্ষণতো মজারই জিনিস!
মাগো, এ কথাটা তোমাকে বলা গেলোনা । এটা বলার কথাও না । তবু বুঝতে পেরেছিলাম । তুমি যেনো আমার কানে কানে বলছিলে, খোকা তুই চুপ করে থাকিস !


জানিনা কোন কারণে হঠাৎ মেয়েটিকে ভালো লাগতে শুরু করলো । একা একাই তাকে নিয়ে লীক-অলীক স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম । আমার ঐ ভালোলাগা পর্যন্তই, মুখ ফুটে বলা আর গেলোনা । বলার আগেই বড় ভাইদের কাছ থেকে রেড এলার্ম এসেছে । তাই আর বলা হলোনা । বরাবরের মতো চুপ করেই ছিলাম ।

সেদিন উদ্ভ্রান্ত হয়ে রাস্তা ধরে হাটছিলাম । ব্যস্ত রাস্তাটা আজ একেবারে ফাঁকা । হরতালতো তাই । হঠাৎ কোত্থেকে যেনো একটা মিছিল এলো । অনিচ্ছাসত্ত্বেও কী করে যেন মিছিলে ঢুকে গেলাম । মিছিলের স্লোগানটাই জানলাম না । পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেলো । তুমি থানায় এসে আমাকে বন্দী অবস্থায় বলেছিলে, “খোকা, তোকে না কতবার বলেছি, কোন ভেজালে জড়াবিনা, কেউ কিছু বললে চুপ করে থাকবি !”
মাগো, আমি সেদিনও চুপ করে ছিলাম । তোমাকে কী করে বুঝাবো !

অফিস করে বাড়ি ফিরছিলাম । রাস্তায় দেখলাম বখাটেরা আমার বুবুকে ঘিরে উত্যক্ত করছে । আমাকে দেখে বুবু ভাইয়া, ভাইয়া বলে জোরে জোরে কাঁদছিলো । আমি দৌড়ে তার পাশে গেলাম । আমাকে দেখে বখাটেরা মোটেও পালালোনা, বরং পিশাচের মতো দাঁত বের করে হাসছিলো । আমি নম্রভাবে তাদের বললাম, বুঝালাম । কিন্তু তাদের অবস্থান অনড় আর খুব বাজে বাজে গালি দিচ্ছিল । বুবুর গায়ে হাত দিতে শুরু করলো । ঠিক থাকতে পারিনি । দু ঘাঁ বসিয়ে দিলাম । এরপর থেকে আর কিছু মনে নেই ।

আচ্ছা মা, আমাকে ঘিরে সবাই চোখমুখ ফুলিয়ে কাঁদছে কেনো? চারদিকে এতো আগরবাতির সুবাস কেনো? বুবু কোথায়? তাকে যে দেখছিনা ! কার মুখে যেনো শুনলাম, আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরেই ঐ পিশাচেরা দৌড়ে চলে গিয়েছিলো । যাক, বুবুর কোনো ক্ষতি হয়নি । তবে আমি যেনো তখন বুবুর চিৎকার শুনতে পেয়েছিলাম, ভাইয়ারে, একি হয়ে গেলো !
একি, বুবু আমার পাশে এসে কাঁদছে কেনো? বুবু, তোমার কিছু হয়নিতো? আচ্ছা তোমরা সবাই কী ! আমি এতোক্ষণ ধরে এতো প্রশ্ন করছি, কিছু বলছোনা কেনো? নাকি আমার কথা শুনছোনা?

বাড়িতে অনেক লোকের সমাগম । মসজিদের এমামকেও দেখা যাচ্ছে । ব্যাপার কি! আমি অনেকক্ষণ যাবৎ শুযে আছি । একটু উঠতে চেষ্টা করলাম । পারছিনা । মনে হয় লেগে গিয়েছে অথবা অবশ হয়ে গেছে শরীরটা । অনেক চেষ্টা করেও পারলামনা । একটু পর দেখি সবাই আমাকে লাশের খাটের উপর উঠালো । আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে । আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে সবাই ?

আমি চিৎকার করতে চেয়েও করলাম না । কানে ভেসে আসছিলো মায়ের আর্তনাদ । অথচ মনে হচ্ছিলো মা যেনো বলছে, ”খোকা, তোকে নিয়ে যে যেখানেই যাক, তুই চুপ করে থাকিস !”


চিত্র: এটাই বোধহয় সেই ছুড়ি যার আঘাতে আমি লুটিয়ে পড়েছিলাম


হ্যা, মা । আমি চুপ করেই আছি । আর প্রতিবাদ করবোনা । প্রতিবাদ করতে নেই । কী লাভ প্রতিবাদ করে !

জানো মা? যেদিন থেকে আমাকে আব্বু আর চাচ্চুরা মিলে মাটির ভিতর ঘর করে দিলো, সেদিন থেকে বেশ সুখেই আছি । এখানে কোনকিছুর জন্য প্রতিবাদ করতে হয় না । এখানেও আমার একটা বুবু আছে । এখানকার মানুষগুলো কেউ পিশাচ না । এখানে অনেক সুখ । তবে মাঝেমাঝে বুকের বামপাশটায় ব্যাথা করে । পরে জানতে পারলাম, যেদিন প্রথম মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম সেদিন ঐ পিশাচেরা নাকি বুকে অনেকগুলো ছুড়ি মেরেছিলো ।

যাক সে সব কথা । তুমি কেমন আছো মা?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.