![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাই মিথ্যার নাশ, চাই সত্যের উন্মেষ, চাই শান্তির পৃথিবী
যে জাতি জলজ্যান্ত অন্যায়কে অস্বীকার করতে শিখে গেছে সেই জাতি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে কী করে? আর রাষ্ট্র পরিচালনা? শিক্ষার্জনের জন্য শিয়ালের কাছে কুমির ছানা দেয়ার মতো । তাইতো দেখে আসছে সবাই । সবার চোখে তা দৃশ্যমান হলে কী হবে? বোধোদয় সেই চায়ের কাঁপে ঝড় অথবা ফেসবুকে তোলপাড়, বড়জোর কয়েকটা প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নিয়ে টিএসসির সামনে আন্দোলন পর্যন্ত । যদিও আন্দোলনকারীদের তুলনায় মিডিয়ার ক্যামেরার সংখ্যাটাই বেশি । কেনোনা এটা ব্রিটিশদের কর্তৃক পরীক্ষিত, জাতিগতভাবে আমরা এতোটাই নিমকহারাম আর বুর্জোয়া প্রকৃতির যে নিজের আখের গোছানোর জন্য সমগ্র স্বাধীন বাংলাকে একরকম জোর করেই ব্রিটিশদের বিলেতি পকেটে ঢুকিয়ে দিকে কুন্ঠাবোধ করিনা । আর সে কারণেই আজকের এই আধুনিকোত্তর যুগে গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারীদের কাছে সাধারণ মানবসেবার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের দলীয় স্লোগান বা ব্যানার মিডিয়ার বদৌলতে জনসম্মুখে প্রদর্শণ করার । আমরা আজ কতটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছি সেই চিন্তায় হয়তো একাত্তর কিংবা বায়ান্নের শহীদেরা হতভম্ব ।
ভাবার কোনো ফুরসুরতই নেই, আজ যে নারীটির ক্ষতি হয়েছে সেই নারীটিই আমার মা, আমার বোন, আমার স্ত্রী; আজ যে ভাইটি গুম, খুনের শিকার, সেই ভাইটিই আমার বাবা, আমার ভাই । নির্বোধ জাতিটির কানে ঢুকিয়ে দিলেও পরের দিন স্কুল-কলেজগামী ছাত্রী কিংবা শিক্ষিকার সাথে এমন আচরণ করবে, সেই কথা অবলা নারী কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেনা, অভিযোগ? সে তো বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর অপেক্ষায় কাঠখড় পোড়ানোর বিষয় ।
মানুষকে মেরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন ভালো কথা । আগে নিজেকে, নিজের মা-বাবা-ভাই-বোন আত্মীয়স্বজনকে পুড়িয়ে মেরে তা মিডিয়াতে প্রকাশ করেন । এতে করে আপনার ও আপনার পরিবারের আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । হয়তো এই কোরবানি নবী ইবরাহিম আঃ ও ইসমাঈল সাঃ এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে । অন্যকে মেরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সার্থকতা নেই, তা গৌরবের বিষয়ও না । আমার কথা শুনে রাগ উঠলেও কিছু করার নেই ।
বুদ্ধিজীবি নামক দেশের অভিভাবকদের চালচলন আর কথাবার্তা দেখলে মনে হয় তাদেরকে ভাড়া করে আনায় হয়েছে হুহু করে কান্না করার জন্য, আলগা চেতনা দেখার জন্য, পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতাগুলো দখল করার জন্য । এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী লোকগুলো লেবাসধারী ধূর্তবাজ ধর্মীয় নেতার চাইতে কম নয় । গায়ে দামি খদ্দের একটা চাঁদর, পাঞ্জাবী, সজারুর কাঁটার মতো গোঁফ, সাদা ঝাঁকড়া চুল আর নামের আগে পিছে কয়েকটা টাইটেল নিয়ে চেতনার পসরা নিয়ে বসে আছে । সাদ্দুসাই-ফরিশি-মাওলানা-পুরোহিতরা যেমন পুঁজি হিসেবে ধর্মের কেত্তন গেয়ে বেড়ায়, তেমনি এই ধূর্তবাজ বুদ্ধিজীবিগুলো শান্তির ফেরিওয়ালা হয়ে গণতন্ত্র ও চেতনার হরেক রকম পসরা বিক্রি করে বিশ্বস্ত ও অবিশ্বস্ত ক্রেতার নিকট । ফলে কী হচ্ছে? প্রজন্মের একটা অংশের কাছে সায়েন্স ফিকশন বই হাত ধরিয়ে দিয়ে লাভের যা হচ্ছে তা হলো-দেশের সন্তান বিদেশে গিয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-বিজ্ঞানী যা হওয়ার হচ্ছে-দেশে ফিরে মানবসেবা করছে কয়জন? প্রজন্মের আরেকটা অংশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমগ্র গিলিয়ে দিয়েও লাভের যা হচ্ছে তা হলো-মারামারি, হানাহানি আর দলীয় বিদ্বেষে ভরপুর রাজনীতি-ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালি গড়ার পরিবর্তে জাতীয় বিভাজনে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ । বলছিনা সায়েন্স ফিকশন বই পড়া বা মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবুলি বুকে ধারণ করা খারাপ, বরং যথেষ্ট ভালো এবং রাষ্ট্রীয় কল্যাণের অন্যতম প্রগতিশীল দিক । কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে । এক বুদ্ধিজীবি শ্রেণি, এক শিক্ষকসমাজ একটা প্রজন্মকে এটা বোঝায় যে, বিজ্ঞানই জীবন কিংবা প্রোগ্রামিং-ই জীবন, আরেক শিক্ষকসমাজ বোঝায় ধর্মই জীবন, আরেক শিক্ষকসমাজ বলে রসায়নই জীবন কিংবা ডাক্তারই জীবন, আরেক বুদ্ধিমহল বলে রাজনীতিই জীবন কিংবা প্রশাসনই জীবন, আর আমাদের মনমস্তিষ্কে তো বদ্ধমূল হয়েই আছে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলই জীবন- জীবনের অন্যদিকগুলো জীবনই না, জীবনের অংশ হলেও ততোটা গুরুত্বপূর্ণ না । এতে করে একটা প্রজন্ম একটি নির্দিষ্ট বিষয়েই সারাজীবন বুঁদ হয়ে থাকছে । জীবনে যে আরো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থাকতে পারে সেটা চিন্তায় করতে পারেনা । অথচ আমাদের এই যান্ত্রিক, আত্মাহীন, প্রগতিহীন জীবন স্থবির ছাড়া কিছুই নয় । যন্ত্র সভ্যতা আনেনি, সভ্যতা এনেছে মানুষ । আর মানুষ যখন যন্ত্র হয়ে যাবে তার দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব না । যেমনটি পরিবর্তন হচ্ছেনা আমাদের প্রচলিত দুর্নীতি, সহিংস-বিদ্বেষমূলক মানুষ মারার রাজনীতি, অন্যায়-অপকর্ম, জুলুম-নির্যাতনমূলক সমাজব্যবস্থা থেকে শান্তির কোনো জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার ।
মানুষগুলো আজ একেকটা যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে । স্থায়ী কোনো প্রভাবই ফেলছেনা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো । এই দেখুন না- দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো যখন রাজনীতির উপহার পেট্রোলবোমায় ঝলসে যাচ্ছে, বার্ণ ইউনিটে দগ্ধ মানুষ ও তাদের আত্মীয়স্বজনগুলো আহাজারি করছে, কাঁদছে তখন সারাবাংলাদেশ কাঁদলো, আমরাও কাঁদলাম । আবার যখন ক্রিকেটীয় উন্মাদনায় সারাবাংলাদেশ আনন্দ করছে তখন আমরাও আনন্দ করছি । ঠিক এসময়টাতে আমরা ভুলে গিয়েছি ঝলসে যাওয়া মানুষগুলোর কথা, যারা রাজনীতির বলি হয়ে সংসার-পরিজনকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছে । এককথায় আমরা রোবটের মতো নির্দিষ্ট যান্ত্রিক ইন্দ্রিয়াধীন হয়ে গিয়েছি । কাঁদতে হয় কাঁদি, হাসতে হয় হাসি, নাচতে হয় নাচি । কিন্তু স্থায়ী কোনো প্রভাবই ফেলেনা আমাদের চিন্তাচেতনায়-বিবেকে । ফলে প্রোগ্রামিং-এর লুপিং-এর মতো বারবার সমস্যাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে, সমাধান আর হচ্ছেনা । বাংলা নববর্ষে যে ঘৃণ্য ঘটনাটি ঘটে গেলো এটা নিয়ে লাফালাফি করেও কোনো লাভ নেই, দেখা যাবে কিছুদিন পর নতুন কোনো ঘটনায় এটা কালের স্রোতে ভেসে গেছে কিংবা আরেকটা লোমহর্ষক ঘটনায় এটা চাপা পড়ে গিয়েছে ।
‘হচ্ছে- হোক- হতে দাও’ এই মনোভাব একদিনেই গড়ে উঠেনি । ধীরে ধীরে অগ্রজ প্রজন্মের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর আত্মকেন্দ্রিকতাই উপহার দিয়ে গেছে এমন একটা প্রজন্ম, যারা মনে করে আমি এম,বি,এ পাস করে ভালো একটা কোম্পানির ম্যানেজার হতে পারলেই দেশের উন্নতি হলো আর দুর্নীতি? সেটা দুদকের দেখার বিষয় । এরকম প্রতিটা পেশাজীবীরই মনোভাব । অথচ ক্ষতির বেলায় সবাই ক্ষতিগ্রস্থ । আজ অন্যের বোনকে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি করছেন আপনি, আগামীকাল আপনার বোন, আপনার মা, আপনার স্ত্রী, আপনার মেয়ে সেই পরিস্থিতির শিকার হবেনা তার কি নিশ্চয়তা? আপনি সেই অপকর্ম করলেও হবে না করলেও হবে । হাতগুটিয়ে বসে থাকাটাই হবে আপনার আমার অন্যায় । আর পেশাদার ধূর্তবাজ বুদ্ধিজীবির উপর নির্ভরতা নয়, নির্ভরতা নয় কোনো রাজনৈতিক দলের উপর, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে । যে যেখানে আছি সেখান থেকেই শুরু করি অন্যায়ের প্রতিবাদ । ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দল-মত নির্বিশেষে শুধু শান্তির লক্ষ্যে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই । আমাদের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য-বৈষম্যগুলো বাদ দিয়ে আসুন আমরা এক হই পরবর্তী সুন্দর একটা প্রজন্ম গড়ার, যে প্রজন্ম মহাকাশ নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি চিন্তা করবে দেশের, দেশের পাড়া-মহল্লা, আপামর মানুষের, চিন্তা করবে আত্মিক উন্নতির ।
দেশ কারো একার নয়, চেতনা কারো উত্তরাধিকার নয়, মুক্তিযুদ্ধ কারো ব্যক্তিগত অর্জন নয়, ধর্ম-প্রগতি কোনো গোত্র বা দলের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, আমরা প্রত্যেকে সেই সম-দাবিদার, আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে সেই সমাধিকার । আমাদের দেশকে নিয়ে আমাদেরকেই ভাবতে হবে ।
১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
স্বপ্নাতুর পুরব বলেছেন: ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৩:১২
সাজ্জাদ দীপ্ত বলেছেন: ভালো লিখেছেন!