![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাই মিথ্যার নাশ, চাই সত্যের উন্মেষ, চাই শান্তির পৃথিবী
মানবতা, তরুণ প্রজন্ম ও ধর্মবিশ্বাসঃ নতুন করে ভাবতে হবে
একটা সময় ছিলো যখন মুমূর্ষু রোগীর জন্য এক ব্যাগ রক্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিলো । রোগী ধনকুবের বা ঐ জাতীয় কেউ হলে টেলিভিশন - রেডিও তে রক্ত চেয়ে বার বার বিজ্ঞাপন দেয়া হতো । তখন তো ব্লাড ডোনার খুঁজে পাওয়া মানে অমাবশ্যায় চাঁদ ! এমনও হয়েছিলো রক্তের অভাবে শেষ পর্যন্ত রোগী মারাই গিয়েছিলো । সে তুলনায় অাজকের দিনে কাঙ্খিত রক্ত খুঁজে পাওয়া মোটেই দুষ্কর না । ফেসবুকে বা ব্লগে রক্ত চেয়ে একটা পোষ্ট দিলেই কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় যে, ক্লিনিক বা হাসপাতালের যে বেডে রোগী শুইয়ে অাছে সেখানে বেশ কয়েকজন ব্লাড ডোনার ভিড় করছেন । এতো গেলো রক্তের ব্যাপারে ! বর্তমান প্রজন্মে সারা বাংলাদেশে অজস্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে, যেগুলো নিঃস্বার্থভাবে পথশিশু, দরিদ্র শীতার্ত, দুরারোগ্য ব্যাধিতে অাক্রান্ত মেধাবী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন অসহায়, অার্তপীড়িত মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্নভাবে । সত্যিকার অর্থেই এই নিঃস্বার্থ মানবসেবীদের মহৎ কাজগুলো দেখলে কেমনে জানি অহংকারে বুকটা ফুলে উঠে । অামাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা কতটা সচেতন হয়েছে, কতটা কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে অাসতে পেরেছে ! মানুষ মানুষের জীবন নিয়ে ভাবছে, এর চাইতে সুখকর খবর অার কী হতে পারে ! তবে তিক্ত হলেও সত্য এই যে, এই মানবসেবীদের সিংহ ভাগই অধ্যয়নরত তরুণ শ্রেণিটি, কেউ স্কুল - কলেজে পড়াশুনা করছে কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ে । দেশের সব তরুণ শিক্ষার্থীই যে এই মানবসেবামূলক কাজ করছে তা কিন্তু না, গুটি কয়েকজন, জড়বাদী - প্রতিযোগী মনোভাবী - কর্পোরেট সিস্টেম যাদের মন থেকে মানবতার মতো মহৎ একটা গুণকে এখন পর্যন্ত মুছে ফেলতে সক্ষম হয় নি । অার বাদ বাকি সবাই যে যাকে নিয়েই ব্যস্ত । মহাব্যস্ত ।
পথশিশুদের পাশে নিঃস্বার্থ মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একঝাঁক তরুণ যুবসমাজ
বলছিলাম বর্তমান প্রজন্মের একটা শ্রেণীর মানবসেবাপরায়ণতার কথা । এখন প্রশ্ন হলো - অামরা যারা এই কাজগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের জন্য এটাই কি যথেষ্ট? অামাদের কি অার কিছুই করার নেই? অামরা এতটুকুন করে কি সত্যিই মানবতা ও শান্তির কেতন উড়াতে পেরেছি বা পারবো? অামাদের লক্ষ্য কি এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ? যদি উত্তর হয় হ্যা-সূচক, তবে বুঝতে হবে অামরা নিঃস্বার্থভাবে বুঝে শুনে মানবতার কল্যাণে সাহায্যের দুহাত বাড়িয়ে দিইনি । অামাদের অবশ্যই স্বার্থ অাছে । কারণ, নিঃস্বার্থ তো তারাই, যারা অবদমিত হয় না, যারা যথেষ্ট'র অজুহাত দেখায় না, যারা স্থির হয় না, যারা মানুষের জীবন নিয়ে, মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মূল সমস্যার গোড়ায় গিয়ে সমাধানের জন্য অাপ্রাণ চেষ্টা করেন, বিপ্লব করেন । নিঃস্বার্থ তো তারাই যারা সম্মান - মর্যাদার তোয়াক্কা করেন না, যারা হালনাগাদ ফ্যাশন - সামাজিক স্ট্যাটাসের কথা ভেবে ব্লাড ডােনেট করেন না, মানুষ মানবতাবাদী বলবে এই সীলমোহর পাওয়ার প্রত্যাশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শীতার্তদের জন্য গরম কাপড় যোগার করেন না ।
রাষ্ট্রের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অান্দোলনে নেমেছিলো নকশাল বা মাওবাদীরা । একই উদ্দেশ্যে জন্ম নিয়েছিলো তালেবান । কিন্তু তারা কতটুকুন সফল অাজ তা সবারই জানা
যে নিঃস্বার্থ মানবসেবাপরায়ণতা তথা মানবতা শান্তির জন্য সমাজে - রাষ্ট্রে বিপ্লবের জোয়ার তুলতে পারে না, সেটা সেই বৃষ্টির ন্যায় যা মরুভূমির উপর সারাদিন রাত ধরে টুপটাপ করে পড়লো কিন্তু মরুভূমি ভিজিয়ে সতেজ তো করতেই পারলো না বরং একটু ভিজতে না ভিজতে সূর্যের মৃদুতাপেও অাবার অাগের অবস্থায় ফিরে গেল । অামাদেরকে বুঝতে হবে অামাদের রাষ্ট্রে, অামাদের সমাজে মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তদান, পথশিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চয়তাকরণ, শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, দুস্থদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণই মৌলিক ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা না (তার মানে এই না যে এসবকে অামি গুরুত্বহীন মনে করছি বা নিরুৎসাহিত করছি বরং অামাদেরকে এসব তো করতেই হবে তবে অারো বৃহৎ পরিসরে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে । এটা নিয়ে পরে বিস্তারিত বলছি) । পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র বিভিন্নধরণের সমস্যা । কোন অপরাধটা কমছে? মানুষহত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, অপহরণ, জুলুম, অবিচার, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সহিংস রাজনীতি, জোরপূর্বক শ্রমব্যবস্থা কোনটাই কমছে না বরং বেড়েই চলেছে । প্রতিদিন অন্যায়ভাবে মানুষ মরছে, নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে । শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর অাগে কি অামাদের উচিত ছিলোনা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো? উচিত ছিলো । কিন্তু অামরা পারছিনা কেনো? অথচ স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা যে সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করছে সেগুলোও কিন্তু এই সমস্যাগুলোর মতো জাতীয় সমস্যা । একজন হতদরিদ্র মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চয়তাকরণ যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব তেমনি একজন মানুষের প্রাণ ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাকরণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব । প্রথমটির অবহেলার কারণে অামরা স্বেচ্ছাসেবকরা সেই দায়িত্বটা অামাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাঁধে নিয়েছি কিন্তু দ্বিতীয়টি নেইনি । কারণ, দ্বিতীয়টির তুলনায় প্রথমটি যথেষ্ট সহজ ও ঝুঁকিহীন । কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে অামাদেরকে এবার বোধহয় দ্বিতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান নিজেদেরকেই করতে হবে, যদিও সেটা কখনোই সম্ভব নয় । কারণ, ব্যক্তিগত বা সংগঠনগতভাবে এখন পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত সহজ সমস্যাগুলোরই সমাধান করতে সবাই হিমশিম খাচ্ছি । দুয়েকটা সান্তব্না ছাড়া কিছুই দিতে পারছিনা । তাছাড়া পূর্ব অভিজ্ঞতায় যা বলে, কিছু মানুষ গোষ্ঠীগত বা দলগত ভাবে দ্বিতীয় সমস্যাটির সমাধান করতে গিয়ে নকশাল অান্দোলন সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, কেউবা পরিণত হয়েছে তালেবানের ন্যায় জঙ্গীতে । কিন্তু ফলাফল ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই জোটেনি । যাইহোক, স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের অবস্থান থেকে মানবতার কল্যাণে যতটুকুন পারছে করে যাচ্ছে । কিন্তু এসবই যেনো বারবার বলে দিচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা নাগরিকের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে ব্যর্থ । অার মিথ্যে সান্ত্বনা নয়, অামাদেরকে দৃষ্টি ফিরাতে হবে কী করে যাবতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান দেয়া যায় ।
অাগামী পর্বে সমাপ্য ।
©somewhere in net ltd.