নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্লান্ত আমি! জীর্ণ এ মৃতপ্রায় সত্বাকে জিইয়ে রাখতে রাখতে ক্লান্ত আমি!

অন্তহীন অরণ্য

অতি তুচ্ছ, সাধারণ একজন মানুষ।

অন্তহীন অরণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই ছেলেটা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৬

ছেলেটা প্রায়ই আসতো।
জালাল মিয়ার চায়ের দোকানে আড্ডা হত। ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যেত কখনো। ফুটপাত ধরে হাটাহাটি করতাম আমরা। রাত বিরেতে ঘুরে বেড়ানোটাকে রীতিমত অভ্যাসে পরিণত করেছিলাম দুজনে। রাতের বাতাসে কেমন একটা সুখানূভুতি কাজ করত।



বেশ অদ্ভুত ছিল রাশেদ ছেলেটা। অদ্ভুত সব কথা বলত।
এইতো একদিন বলছিল, "জামান তোমার বাসায় কোন গাছ-টাছ নেই? "
"হ্যাঁ আছে তো। কেন?" জবাব দিলাম আমি।
"তুমি কি গাছকে কখনো হাসতে দেখেছো?" রাশেদের কৌতূহলী প্রশ্ন।
এই প্রশ্নে আমি বেশ অবাক হলাম।
সবিস্ময়ে বললাম, "ধুর! এ আবার কেমন কথা! গাছ আবার হাসে নাকি!"
"অবশ্যই হাসে। আমি নিজে দেখেছি।" বলল রাশেদ।
"তাই? সব গাছই বুঝি হাসে?" হাসতে হাসতে বললাম আমি।
"কেবল বড় গাছগুলো হাসে।" জামানের জবাব।
আমি কৌতুকভরে বললাম, "তা গাছেরা কেন হাসে কিছু বলেছে নাকি তোমাকে?" বলেই হো হো করে হেসে উঠলাম।
রাশেদ কপাল কুঁচকে বলল, "বিশ্বাস হচ্ছেনা তোমার?"
"উহু।"
"আচ্ছা গাছ যদি কাঁদতে পারে, হাসতে কেন পারবে না?তাছাড়া জগদীশ বাবু তো প্রমাণ করেই গেছেন যে গাছের জীবন আছে!
জীবন থাকলে আবেগ থাকবে না এ আবার কেমন কথা!" ব্যাখ্যা করল রাশেদ।
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে বললাম, "কোন গাছ যেন কাঁদে?"
"লরেল গাছ।" জবাব দিল রাশেদ।
এরকম আরো অদ্ভুত সব কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম আমি।

.

রাশেদ।
ভালো নামঃ রাশেদ আহমেদ। একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে সাংবাদিকতায় অনার্স পড়ছে। তৃতীয় বর্ষে বোধহয় এবার। বয়সে এক বছরের বড় হলেও বেশ অল্পদিনেই আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম।
জীবন নিয়ে নানা পরামর্শ দিতে রাশেদের জুড়ি ছিল না।
আমাকে প্রায়ই একটা কথা বলত রাশেদ -
"বুঝলে জামান, সবসময় আজকের জন্য বাঁচবে। বুদ্ধিমানরা সবসময় আজকের জন্য বাচোঁ নীতি মেনে চলে।"
"ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দিতে বলছো?"
"অবশ্যই। তুমি আজ বেঁচে আছো তাই আজকের জন্য বাঁচবে। কাল যদি না-ই থাকো তবে এখনই কালকের কথা ভেবে কি লাভ?"

.

রাশেদের এই কথাগুলোর জন্যই ওকে আমি বেশ পছন্দ করতাম। কথাগুলো শুনে আমার নিজেকে বেশ হালকা লাগতো। আমিও ধীরে ধীরে "আজকের জন্য বাঁচো" নীতি মেনে চলা শুরু করি।
আমি অবাক হয়ে উপলব্ধি করতে থাকি আমার জীবনটা অনেক পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। যেই আমি জীবন নিয়ে অনেক হতাশ থাকতাম, আগামীর চিন্তা যেই আমাকে সারাক্ষণ গ্রাস করে রাখত সেই আমি নিজের ভেতরের আমিকে খুঁজে পেলাম। ভেতরের আমিটা কেবল আজকের জন্যই বাঁচতে চাইত। জীবনকে উপভোগ করতে চাইত।
.

বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা। আমি বাজারে যাচ্ছিলাম। পথে রাশেদকে দেখলাম একজন পথশিশুর সাথে বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য আমি কাছে গেলাম।
-"তোর পছন্দের খাবার কী রে?"
-"ইলিশ মাছের সালুন আর ভাত।" রাশেদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিল ছেলেটি।
ছেলেটার নাম আবুল মিয়া। আবুল মিয়ার পরিবারে কেবল তার মা আছেন। বাসা-বাড়িতে কাজ করে। আবুল মিয়া ভিক্ষা করে।
আবুল মিয়াকে নিয়ে তার পছন্দের খাবার ইলিশ মাছের সালুন দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। রাশেদ নিজে এই গুরুদায়িত্ব পালন করে।
সেদিন আবুল মিয়ার উজ্জ্বল মুখখানা দেখে আমি একটা জিনিস উপলব্ধি করেছিলাম। তা হলো অদ্ভুত মানুষগুলোর হৃদয় বুঝি এইরকম অদ্ভুত সুন্দর হয়।
হোটেল থেকে বের হয়ে রাশেদ বলে, "জানো জামান, মানুষকে অপ্রত্যাশিত আনন্দ দেয়ার মাঝে একধরণের অপার্থিব সুখ আছে।"
আমি রাশেদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কেবল মাথা নাড়লাম।
.
আমি তখন থেকে কেবল রাশেদের মত হতে চাইতাম। ভাবতাম ওর মত করে ভাবতে পারলে হয়তো জীবনটাকে আরো বেশি করে উপভোগ করতে পারতাম।
.

সেদিনের পর রাশেদের সাথে আর কথা হয়নি। শেষবার যখন আমাদের দেখা হল তখন আমরা কেউই কোন কথা বলিনি। ও একটা কফিনে শুয়ে ছিল লাশ হয়ে। আর আমি অপলকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল ও কিছু একটা বলতে চায়।
রাশেদ হয়তো বলতে চাচ্ছিল - "আজকের জন্য বাঁচো জামান! কাল হয়তো তোমার জীবনে নাও আসতে পারে।"
আমার কেবল মনে হল, রাশেদ তার কথামতই চলেছে। সে তার কথা রেখেছে বলে "কাল" তার জীবনে আর আসেনি।
রাশেদ আত্মহত্যা করেছিল। কেন করেছিল কেউ বলতে পারেনি।
কে জানে হয়তো প্রচন্ড আশাবাদী মানুষগুলোও ভেতরে ভেতরে অনেক দুর্বল থাকে। এ দুর্বলতা লুকাতেই তারা তাদের অভিমান, কষ্ট চেপে অভিনয় করে যায়!

.

এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।
আমি শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। একটা বাচ্চা মেয়ে এসে বলল, "স্যার ফুল নিবেন? দশ ট্যাকা দাম!"
আমি মেয়েটাকে পাঁচশ টাকার একটা নোট দিয়ে তার সবগুলো ফুল কিনে নিয়ে চলে এলাম।
মেয়েটা অবাক চোখে আমার চলে যাওয়া দেখছিল।
আমি শূণ্য দৃষ্টি নিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৩৭

কানিজ রিনা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ রাসেদরা এই জগতের নয়।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৮

অন্তহীন অরণ্য বলেছেন: বিষয়টা হচ্ছে রাশেদদের জন্য এই জগত নয়!

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৮

বৃত্তের শেষ প্রান্ত বলেছেন: ভালো ছিল

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

অন্তহীন অরণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.