নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্লান্ত আমি! জীর্ণ এ মৃতপ্রায় সত্বাকে জিইয়ে রাখতে রাখতে ক্লান্ত আমি!

অন্তহীন অরণ্য

অতি তুচ্ছ, সাধারণ একজন মানুষ।

অন্তহীন অরণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কল্পনার লীলাবতী

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৮

চশমাটা বিছানার পাশে রেখে বালিশে হেলান দিলাম। হাতে হুমায়ুন আহমেদের "লীলাবতী "। বই পড়তে পড়তে একসময় হঠাৎ মনে হলো আমি বোধহয় আমার বাসায় নেই। আর যেখানটাতে বসে আছি সেটা আমার বিছানা না। পেছনে হেলান দিতেই ভারসাম্য হারিয়ে ফেললাম। আরেকটু হলেই পড়ে যাচ্ছিলাম ঘাসের উপর।




"ঘাস!!"
ঘাস কোথা থেকে এলো!!
.
এসব ভাবতে ভাবতেই খিলখিল একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। কেউ যেন আমায় দেখে মজা পেয়েছে। উঠে বসতেই চোখ পড়লো ফিরোজা রঙের শাড়ি পড়া সুন্দরী এক মেয়ের দিকে। মেয়েটি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কাজল দেয়া বড় চোখগুলোর দিকে তখন আমার দৃষ্টি আটকে গেছে।
মেয়েটার দাঁতগুলোও ঝিকঝিক করছে। আমি ভাবলাম এই মেয়ের সাথে আলাপ করে জেনে নিতে হবে সে কোন টুথপেস্ট ইউজ করে।
মেয়েটা চুপ করে তাকিয়ে থাকল এরপর বেশ কিছুক্ষণ। আমিও বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অথচ মেয়েটির সাথে কথা বলতে আমি ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলাম।
.
মেয়েটিই প্রথম নীরবতা ভাঙলো - "আপনি এখানে কি করছেন!! "
আমি মেয়েটির প্রশ্ন শুনে প্রথমে খানিকটা হকচকিয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলাম - "দেখতেই তো পাচ্ছেন বসে আছি। তাহলে প্রশ্ন করছেন কেনো? "
মেয়েটি আবারো সশব্দে হেসে উঠলো। আমি চমকে উঠলাম। আমার হঠাৎ মনে হতে লাগলো এই মেয়েকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।
আমি বললাম - "আপনি কে?আর এখানে কি করছেন? "
এবার মেয়েটি অবাক হওয়ার ভান করলো। আমি সেটা ধরতে পারলাম। সে বিস্ময়ভরা কন্ঠে বললো - "কি করছি মানে? দেখতেই তো পাচ্ছেন দাঁড়িয়ে আছি!! "
বলেই মেয়েটি হাসতে শুরু করলো। আমার মনে হতে থাকলো মেয়েটি হয়তো অকারণেই হাসছে।
.
আমি প্রশ্ন করলাম - "কিন্তু আপনি কে সেটাতো বললেন না। "
মেয়েটি যেন জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। সে বললো - "আমি আপনার কল্পনা! "
আমি বললাম - "কিন্তু আমি তো আপনাকে কখনো কল্পনা করিনি। আমার সব কল্পনা তো অনন্যাকে নিয়ে। "
মেয়েটি ঝটপট বলে উঠল -"অনন্যা হচ্ছে আপনার বাস্তবতা। আমি শুধুই কল্পনা। "
আমি বললাম - "কই! আমার তো আপনার কথা মনে পড়ছেনা। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে আপনাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি!!
ঘটনাটা কি বলুন তো! "
মেয়েটি হেসে জবাব দিলো - "আপনার বাস্তবতার মাঝেই আমি লুকিয়ে ছিলাম। আমাকে চিনতে পারলেন না? "
-"কোন বাস্তবতার কথা বলছেন বলুন তো?"
-"যে অনন্যাকে ঘিরে আপনার কল্পনা আর বাস্তবতা মিলেমিশে এক হয়েছে সেইখান থেকেই আমার সৃষ্টি হয়েছে। " -মেয়েটি আবার হাসলো।
-"মানে?"
-"বুঝতে পারলেন না?ধরুন আপনি অনন্যাকে যেমন করে চাইলেন সে তেমন হলো না। যার ফলে আপনার মনে একটা অন্য মেয়ের প্রতিচ্ছবি থেকেই গেলো যার মত করে আপনি অনন্যাকে দেখতে চেয়েছেন। সেই অন্য মেয়ের প্রতিচ্ছবিটিই আমি। যাকে আপনি সবসময় চেয়েছেন। "
- "কিন্তু আমি তো আপনাকে চাইনি। আমি তো অনন্যাকে চেয়েছি। অনন্যা কোথায়!! "
-" অনন্যাকে কেন খুঁজছেন? অনন্যা তো নেই। আপনি তো অনন্যাকে ভালোবাসেন না। আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন। এইতো আমি, আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে। " -মেয়েটি একটি ক্রুর হাসি নিয়ে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমার ভীষণ ভয় করতে থাকলো। আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম -
"আপনি অনন্যাকে কোথায় রেখেছেন? অনন্যাকে এনে দিন আমার কাছে!
আর আপনি ভুল করছেন। আমি অনন্যাকেই ভালোবাসি। আপনাকে না। "
-"অনন্যা!!তাকে তো আমি খুন করেছি। আপনি তো তাই চেয়েছিলেন। "
-"আপনি মিথ্যে বলছেন! আমি কেন চাইবো অনন্যা খুন হোক? "
-"আপনি চেয়েছেন। কারণ আপনি দিনের পর দিন অনন্যার ভেতর আমাকে দেখতে চেয়েছেন। চেয়েছেন অনন্যার ভেতর নতুন একটা স্বত্ত্বাকে জন্ম দিতে। আপনি সফল হয়েছেন। কংগ্রাচুলেশন্স। আমিই সেই নতুন স্বত্ত্বা। "
.
হঠাৎই আমার নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো।
- " এ আমি কি করেছি!! আমার জন্য অনন্যা খুন হয়েছে!!"
আমি আর ভাবতে পারলাম না। মেয়েটার গগনবিদারী হাসি আমার মাথার ভেতরটাকে যন্ত্রণাময় করে তুলছিলো।
.
কলিংবেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো। দরজা খুলে দেখি অনন্যা দাঁড়িয়ে। আমি অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। অনন্যাও কিছু না বলে আমার বেষ্টনীতে আবদ্ধ হলো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৫

কালীদাস বলেছেন: এই টাইপের স্বপ্নগুলো মাঝে মাঝে খুব ভয় পাইয়ে দেয়। বাস্তবে ফিরে আসাটা টের পেতেও সময় লাগে।
ভাল :)

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৮

কালীদাস বলেছেন: লীলাবতি কোন বইটা? ব্রিটিশ বা পাকিস্তান পিরিয়ডের কোন বড়সড় জমিদারের মেয়ে লীলাবতী যে ছুটিতে বাপকে দেখতে যেয়ে চিরতরে আটকা পড়ে? ঐটা নাকি? ভুলে গেছি :(

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৮

অন্তহীন অরণ্য বলেছেন: সম্ভবত। আমার নিজেরও ঠিক মনে পড়ছে না। গল্পটা বেশ অনেকদিন আগে লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.