নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্লান্ত আমি! জীর্ণ এ মৃতপ্রায় সত্বাকে জিইয়ে রাখতে রাখতে ক্লান্ত আমি!

অন্তহীন অরণ্য

অতি তুচ্ছ, সাধারণ একজন মানুষ।

অন্তহীন অরণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোরস্থানে আতঙ্ক

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২২

আজিমপুর কবরস্থান। সময় রাত দুটো বেজে পয়তাল্লিশ। কালো চাদরে ঢাকা একটি মূর্তি খুব সাবধানে পা ফেলে এগোচ্ছে । চাদরের আড়াল থেকে বের হয়ে থাকা টকটকে চোখজোড়া খুব সতর্কভাবে কিছু একটা খুঁজছে।




"নেই! কোন গার্ড নেই আশেপাশে।" - আপনমনে বলে উঠে মূর্তিটা। বলেই তার মনে হয় মধ্যরাতে নির্জন এই গোরস্থানে তার ফিসফিসানিটাই কানে খুব লাগছে। সে একটু ভয় পেল, তার উপস্থিতি কেউ টের পেল কিনা এই ভেবে। ধীর পায়ে এগোতে থাকে মূর্তিটা। খুব কাছেই সে একদম আনকোরা একটি নতুন কবর দেখতে পায়। চাঁদের আলোয় কবরের সদ্য খোড়া মাটিগুলো চকচক করছে। মূর্তিটার চোখ তা দেখে চকচক করে উঠে। তার এই আনন্দ দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে মাঝরাতে একটা বিশাল গোরস্থানের মাঝে একা দাঁড়িয়ে আছে। সে কি কোন মানুষ!!
কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মুখ থেকে চাদরটা সরিয়ে ফেলে সে। তার মুখে একটা বিচ্ছিরি হাসি ফুটে ওঠে। তার সে হাসিতে বের হয়ে যাওয়া দাঁতগুলো চাঁদের আলোয় ঝিলিক দিয়ে উঠে।
#
"আজিমপুর গোরস্থান থেকে আবারও লাশ গায়েব....."
পত্রিকায় শিরোনাম পড়েই আতকে উঠে তন্ময়। তার মনে হল তার জীবদ্দশায় সে এইরকম শকিং কোন নিউজ পড়েনি।
-"মানুষের জীবনের না হয় নিরাপত্তা নাই, ঘরের ভেতর এসে খুন করে যাচ্ছে! কিন্তু একটা লাশ হয়ে যাবার পরেও নিস্তার পাচ্ছেনা। বুঝতে পারছিস তুই খালিদ?"
তন্ময় এবং খালিদ দুই বন্ধু। খুব বেশি পুরনো বন্ধু নয়, তবে কলেজ লাইফ থেকেই তার একসাথে আছে। এখন দুজনেই একসাথে দেশের প্রথম সারির একটি প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ছে।
-"হুম। ডেঞ্জারাস ব্যাপার। একবার দুবার হলে বিষয়টা মানা যেত। অনেকদিন যাবত একই ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন বসে বসে আঙ্গুল চুষছে! কাজ কী এদের?", বিরক্ত হয়ে জবাব দিল খালিদ।
-"আর গার্ডদেরই বা কাজ কী? নাইট ডিউটিতে এসে কেউ ঘুমোয়? লাশ চুরি করে নিয়ে যায় এরা কোন খোঁজ পায়না! আমার তো মনে হয় গার্ডরাও এদের সাথে জড়িত।"
-"হুম হতে পারে। তুই যা বলছিস তাকে একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায়না।"
-"এক কাজ করলে কেমন হয়?"
-"কী?"
-"আমরা একদিন ওখানে গেলে কেমন হয়?একটা রাত যদি কাটাই?"
-"তুই কি পাগল হয়েছিস তন্ময়? গোরস্থানে রাত কাটাব? তাও আবার চোর ধরতে? যাদের কিনা কেউই ধরতে পারছে না? শুধু চোরই বা বলছি কেন, অন্য কিছুরও তো ব্যাপার থাকতে পারে!", আমতা আমতা করে বলল খালিদ।
-"অন্য কিছু মানে কী খালিদ? তুই কি বলতে চাচ্ছিস ভূত-প্রেত?"
-"মমমম.. হতেও তো পারে। তাছাড়া আমার মনে হয় যারা এই কাজ করছে তাদের হাত অনেক লম্বা। আমরা গিয়ে শুধু শুধু বিপদে পড়তে যাব কেন?"
-"তুই মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে ভূত-প্রেত বিশ্বাস করিস?তোকে নিয়ে যে কি করি!"
-"আমাকে নিয়ে তোর কিছুই করতে হবে। আমরা হচ্ছি আমজনতা, আমাদের এইসব বিষয়ে নাক না গলানোই ভালো।"
-"তবুও বিষয়টা নিয়ে আমি নাক না গলিয়ে পারছিনা। আমার মনে হয় আমাদের গিয়ে গার্ডের সাথে কথা বলে দেখা উচিত। দেখি ওই ব্যাটা কী বলে। তাছাড়া উনার সাথে থাকলে বিষয়টা আরো সহজ হয়ে যাবে।"
-"আর ওই ব্যাটা যদি নিজেই এতে জড়িত থাকে তাহলে?"
-"আরে বোকা, এটা জানার জন্য হলেও আমাদের সেখানে যেতেই হবে।"
-"তুই যে কবে এসব পাগলামি ছাড়বি!", বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালিদ।
-"কখনোই না। তুই তো জানিস রহস্য জিনিসটার প্রতি আমার আগ্রহ কেমন!", হেসে উঠল তন্ময়।
#
ফজল মিয়া অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। তারই দোষে এখন হয়তো তাকে চাকরী হারাতে হবে। গোরস্থানের গার্ডের চাকরীটা সে এক হোমরাচোমরা গোছের লোক ধরে পেয়েছিল। সে বেশ আনন্দিতই ছিল এমন একটা চাকরী পেয়ে। ভেবেছিল, গোরস্থানে লাশ চুরি করতে আসে এমন পাগলও আছে দুনিয়ায়!
এতদিন সে অতি আনন্দের সহিত নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো কিছুদিন আগেই, যখন থেকে লাশ চুরি হওয়া শুরু হল। প্রথমে বিষয়টা তেমন আমলে নেয়নি। ভেবেছে লাশ চুরি হয়েছে হোক, একদিনেরই তো ব্যাপার। কে আসবে নিত্য লাশ চুরি করতে? এরজন্য তো আর আরামের ঘুম বিসর্জন দিলে চলে না!
কিন্তু বিষয়টা যখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল তখন আর ফজল মিয়া মনে মনে স্থির থাকতে পারল না। তার জন্য এখন এটা রীতিমত জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেহাৎ বড় সাহেবে চাকরী পাইয়ে দিয়েছেন! নাহলে এতদিনে তার চাকরী চলে যেত, জেলের ঘানিও টানতে হত কি না কে জানে!
এতকিছুর পরও সে রাত জাগতে পারছেনা। সারারাত ঘুমিয়ে দিনের বেলা বাড়ি এসে তার নিজের মাথার চুল ছেঁড়ার উপক্রম হয়!


#
ক্যাম্পাসে এসেই তন্ময়ের চক্ষু চড়কগাছ। রাফি আর খালিদ আড্ডা দিচ্ছে মালিহার সাথে। অথচ সে খালিদকে বলেছিল আসার পথে নিজের গাড়িতে তুলে নেবে। খালিদের বাসার সামনে এসে ওকে ফোনে না পেলে বাসায় গিয়ে দেখে তালাবন্ধ!
অগত্যা নিজেই চলে এসেছে ক্যাম্পাসে। এসে দেখে এই অবস্থা।
-"তোকে না বললাম বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো? ফোন ধরছিলি না কেন?", তন্ময়ের উত্তেজিত কন্ঠস্বর।
-"আর বলিস না দোস্ত, রাফি জোর করে নিয়ে এলো। এত করে বললাম তন্ময় আসবে!"
-"সেটা ফোন ধরে বলা যেত না?"
-"ফোন তো সাইলেন্ট ছিল!"
রাফি হচ্ছে তন্ময় এবং খালিদের ক্লাসমেট। ছেলেটা কিঞ্চিত অদ্ভুত স্বভাবের। ওকে তন্ময়ের বিশেষ পছন্দ নয়।
এর পেছনে কারণও রয়েছে। একদিন তন্ময় তার নতুন কেনা বডিস্প্রে খুঁজে পাচ্ছিলো না। বাড়িতে তন্ময় বাদে কেবল খালিদ এবং রাফি ছিল। খালিদ যেহেতু তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই সন্দেহের আঙ্গুলটা রাফির দিকেই যায়। তন্ময় লজ্জায় রাফিকে কিছু বলেনি। আর সে জানে রাফির বাবা-মা কেউ নেই। শুনেছে রাফি এতিমখানায় বড় হয়েছে। আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভালো না। রাফি কীভাবে এইরকম একটা প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ চালায় সেটাও একটা রহস্য। এইসব সাত-পাঁচ ভেবে রাফিকে কিছু বলতে তার মন সায় দেয়নি। তবে রাফিকে এরপর থেকে সে তার বাড়িতে এলাউ করেনি।
আর মালিহা তন্ময়ের গার্লফ্রেন্ড। ক্যাম্পাসেই তাদের পরিচয়। খালিদের সাথেও ভালো বন্ধুত্ব মালিহার। আড্ডাতেই তারা লাশ গায়েব হওয়ার টপিক নিয়ে আলোচনা করে। তন্ময় তার আগ্রহ ও প্ল্যানের কথা সবাইকে জানায়। ঠিক হয় সেদিন রাতেই তারা আজিমপুর গোরস্থানে যাবে বিষয়টা খতিয়ে দেখতে। তাদের সাথে যোগ হয় রাফিও। প্রথমে অসম্মতি জানালেও শেষমেশ রাজি হয় রাফি। আর শুধুমাত্র খালিদের ইচ্ছায় রাফিকে সাথে নিতে রাজি হয় তন্ময়।
সেইদিন আড্ডা শেষে বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে সবাই যার যার মত বাড়ি চলে যায়। তন্ময়ের মনটা খচখচ করতে থাকে। তারা কোন ভুল করছে না তো?!


#
রাত ১২টা। আজিমপুর কবরস্থান। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। তিন বন্ধু তন্ময়, খালিদ এবং রাফি এসেছে এক অজানা আতঙ্কের জট খুলতে। এমনিতে রাত ১২টার পর বিনা কারণে গোরস্থানে প্রবেশ নিষেধ এবং লাশ চুরির ঘটনার পর পাহাড়া আরও জোরদার করা হয়েছে। তবে তন্ময়ের বাবার সুপারিশে তারা এখানে ঢোকার অনুমতি পেয়েছে। তন্ময়ের বাবার উঁচু শ্রেণীর হোমরাচোমরাদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে।
তিনবন্ধু নিঃশব্দে এগোতে থাকে। শীতের রাত হওয়ায় হুহু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। এই মুহূর্তে এটাই একমাত্র দুঃশ্চিন্তার কারণ। কিছুদূর এগোতেই তারা এক লোককে দেখতে পায়। তিনজনেরই নিঃশ্বাস প্রায় থেমে গিয়েছিল। লোকটার হাতে টর্চ দেখে তিনজনই প্রায় একসাথে বলে উঠল,
-"গার্ড.....!", বলেই তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।
গার্ডের সাথে কথা বলে তেমন কিছু জানা গেল না। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন তিনি রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে তাকে খুব চিন্তিত মনে হল।
পরের দুই ঘন্টায় তেমন কিছুই ঘটলো না। ওরা সবাই প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এর পরপরই ঘটতে শুরু করলো ঘটনা। ডানদিক থেকে কিছু মানুষের পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। সবারই একসাথে কান খাড়া হয়ে গেল।
তন্ময় ফিসফিস করে বলল, "শুনতে পাচ্ছিস? কেউ এদিকে আসছে!"
গার্ড ফজল মিয়াকে ডাকতে যাবে এমন সময় তারা দেখে সে ঘুমিয়ে পড়েছে।
খালিদ বললো "তোরা থাক, আমি সিকিউরিটি খবর দিচ্ছি। নড়বি না এখান থেকে একদম!", বলেই সে পেছন দিকে হাঁটা দিল।
সময়টা ঘোরের মধ্যে কাটতে থাকল তন্ময় এবং রাফির। তারা খালিদের অপেক্ষা করতে থাকল। সিকিউরিটি না আসা পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছেনা। ওদিকেও কিছু একটা হচ্ছে। নিজেরা সাহস দেখানোও এখন বোকামি। একটু এদিক সেদিক হলেই বিপদ ঘটতে পারে।
কতক্ষণ হয়েছে বলতে পারবেনা। হঠাৎ তন্ময় মাথার পেছনে ভারী কিছুর আঘাত অনুভব করল। প্রচন্ড ব্যথায় কুকড়ে উঠল সে। টাল সামলাতে না পেরে মুখ দিয়ে অস্ফুট একটা শব্দ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
#
মতিউর রহমান সাহেবকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। তার কাজে এতদিন কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। প্রশাসনও তার হাতের মুঠোয়। সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষ সে। টাকা দিয়ে সে সব করতে পারে। তবে কয়েকটা ছোঁকড়া তাকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিল। তাদের মাথার উপরে শক্ত ছাদ আছে বলেই এতদূর এগোতে পেরেছে। তবে তাদেরকে সে উচিত শিক্ষা দিবে। এতক্ষণে বোধহয় কাজ হয়েও গিয়েছে। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে ফোনে সে কোথায় আসতে হবে বললেও ওপাশ থেকে কোন সাড়া পায়নি । সে ভাবল পকেটেই হয়ত কোনভাবে ফোন রিসিভ হয়ে গেছে। আর যে কাজ করছে সে এই ঠিকানা খুব ভালো করেই জানে। সব ঠিক থাকলে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের চলে আসার কথা।
#
তন্ময়ের যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে নিজেকে একটি অপরিচিত কক্ষে আবিষ্কার করল। মাথার উপরে ১০০ ওয়াটের উজ্জ্বল বালব জ্বলছে। তার সামনে যে বসে আছে তাকে সে চেনে। ডঃ মতিউর! সে যে প্রতিষ্ঠানে পড়ে সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। তার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।
গল্প-উপন্যাসে যেরকম পড়েছে সেরকম কিছুই হচ্ছে এখানে। এরপর কি ঘটবে তাও সে অনুমান করতে পারছে। তাকে খুন করে পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়া হবে। হয়তো লাশও গুম করে ফেলা হবে।
-"অনেক সাহস হয়েছে তোমার তাই না?"
-"স্যার আপনি? আমি ভাবতেও পারছিনা আপনার মত লোক এমন ঘৃণ্য একটা অপরাধের সাথে জড়িত!"
মতিউর রহমান উচ্চস্বরে হো হো করে হেসে উঠল। তন্ময়ের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
-"এরপর কী হবে ভাবতে পারছো তো তন্ময়?", মতিউরের মুখে কাঠিন্য ফুটে উঠল।
-"আমাকে খুন করা হবে! তবে আপনি পার পাবেন না! খালিদ আপনাকে রেহাই দেবে না। ও ঠিকই আপনাকে ধরিয়ে দেবে।"
-"কার কথা বললে? খালিদ? হাহাহাহা!"
-"হাসছেন কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না?"
হঠাৎই আড়াল থেকে বেড়িয়ে এল একটা মূর্তি। মূর্তিটা কাছে এগিয়ে আসছে। আবছাভাবে তাকে দেখতে পাচ্ছে তন্ময়। মূর্তিটা আলোর সামনে এসে দাঁড়াতেই তন্ময় ভূত দেখার মত চমকে উঠল।
-"খালিদ!"
খালিদের ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা দেখা গেল।
-"খুব লেগেছে না রে বন্ধু? বারিটা বেশি জোরে হয়ে গেছে!", বলেই খালিদ হাসতে শুরু করল। তার হাসির শব্দে কক্ষের ভেতরটা ভারী হয়ে উঠল।
#
ফজল মিয়ার ঘুম ভাঙতেই সে ধড়ফড় করে উঠে বসল। নিজেকে আবারও গালমন্দ করতে লাগল। উঠে বসে পাশে তাকাতেই দেখে তিন বন্ধুর একজন মাটিতে পড়ে আছে। তার মনে হতে থাকে ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটে গেছে। তার চোখে পানি দিতে জ্ঞান ফিরে আসে। রাফি তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। হঠাৎই ধারেকাছে কোথাও থেকে ফোন বেজে উঠে। রাফি দেখতে পায় সেটা খালিদের ফোন। ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে ভারী গলার একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
-"কাজ হয়ে গেছে তো? দেরী না করে আমার ২১/এ হাতিরপুল পুরনো ফ্ল্যাট এ চলে এসো। গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি!"
ফোন রেখে দিল। রাফির আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। সে রীতিমত আকাশ থেকে পড়ল। সে ফোন বের করে দ্রুত তন্ময়ের বাবাকে ফোন করে সব জানালো।
#
-"আমি তোকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম। ভালো একটা মানুষ ভেবেছিলাম। তুই এমন একটা কাজ করতে পারিস তা আমি চিন্তাও করতে পারিনি।", তন্ময় চিৎকার করে কথাগুলো বলল।
-"এই কাজটা আমাকে আমার পড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য করতে হয়েছে। স্যারের হয়ে কাজ করি বলেই বিনে পয়সায় মেডিকেলে পড়তে পারছি। সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। আমার বিদেশে কোন আংকেলই থাকেনা যে আমাকে টাকা পাঠাবে। আমি মিথ্যে বলেছিলাম।"
-"তোর টাকার দরকার আমাকে বলতি, আমি তোকে টাকা দিতাম।"
-"কলেজ লাইফে আমি তোর দয়ায় পড়েছি। তোর দয়া নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাইনি। তাই স্যারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে এই কাজে এসেছি। তোর অনেক টাকা। টাকা আছে বলে তুই মালিহার ভালোবাসা পেয়েছিস। আমি মালিহাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ও তোকে ভালোবাসে কারণ তোর টাকা আছে,আমার নেই। আমার অনেক টাকার দরকার, অনেক!", এক নিঃশ্বাসে বলে গেল খালিদ।
তন্ময় আর ভাবতে পারছেনা। আজ সে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তা তার কল্পনায়ও ছিল না।
মতিউর রহমান তাদের এই আলাপে তেমন মজা খুঁজে পাচ্ছেনা। সে অধৈর্য হয়ে বলল,
-"খালিদ, কাজ সেরে ফেলো। সময় নষ্ট করে লাভ নেই। পথের কাঁটা দূর করো।", ভয়ানক হয়ে উঠল মতিউর এর চেহারা।
খালিদ ধারালো একটা ছুরি বের করতেই তা ১০০ ওয়াট বালবের আলোতে ঝিক করে উঠল। তন্ময়ের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা ভয়ের স্রোত নেমে গেল। খালিদ ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে। তার চেহারায় ভয়ানক হাসি ফুটে ওঠেছে।
#
তিনদিন পর।
তন্ময় , মালিহা এবং রাফি বসে আড্ডা দিচ্ছে। তন্ময় এবং রাফি তাদের ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা মালিহাকে শেয়ার করছে। সেদিন রাফি সময়মত তন্ময়ের বাবাকে খবর না দিলে বড় অঘটন ঘটে যেত। তন্ময়ের বাবা এবং রাফি পুলিশ নিয়ে গিয়ে হাতেনাতে ডঃ মতিউর এবং খালিদকে ধরিয়ে দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে এসেছে এই চক্রের সাথে জড়িয়ে থাকা সবার নাম। তারা লাশ চুরি করে তার প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহ আলাদা করে কীভাবে বিদেশে পাচার করে সে তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। অপরাধীরা শাস্তি পাবে এখন।
রাফি এখন তাদের ভালো বন্ধু। জানা গেল রাফির পড়াশোনার খরচ চালায় সে যে এতিমখানায় বড় হয়েছে সেই এতিমখানার মালিক।
রাফিকে এখন আর অপছন্দ করার কোন কারণ নেই। রাফি না থাকলে আজ হয়তো সে বেঁচেই থাকতো না।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.