![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথার পিঠে নতুন কথা চাপিয়ে মজা পাই, কথা কে নাকানি চুবানি খাওয়াতেও বেজায় পছন্দ আমার। আত্মবিশ্বাসের ফানুস সহসাই ফেটে যায়, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার নজির নেই বললেই চলে। মানুষ কে আনন্দ দেবার শেষ চেষ্টা করতে পারি.।.।।
প্রিয় বাবা,
জানি এ পত্র তোমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছবে না, কারণ তুমি তো এখন আর আমার বন্ধু নও! আমার বন্ধুদের তালিকা অনেক বড়, এতো বড় তালিকা ঘেঁটে তোমার অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না অথচ জ্ঞান হবার পর তোমাকেই প্রথম বন্ধু বলে জেনেছি। আমি হাসলে তুমিও হেসেছ, আমি কাঁদলে তুমিও কেঁদেছ।
এখন আমি মাঝে মাঝেই কাঁদি বাবা! কেও দেখতে পায় না, এমনকি তুমিও না! মাঝে মাঝে মাথায় ছেলেমানুষি চেপে বসে, আচ্ছা আমার কান্না দেখলে তুমি কি করবে? আমি জানি তুমি হয়তো বলবে, বোকা ছেলে! বড় হয়েছিস না! বড়দের কাঁদতে নেই। দেখিস না আমি এখন কাঁদি না! (আমার ছেলেবেলায় তবে কেন কাঁদতে?)
বাবা, আমি আসলেই বড় হয়েছি। সেই ছোট্ট ছেলেটি নেই আর। আমি এখন তোমার হাত না ধরেই রাস্তা পার হতে পারি, শত শত মাইল পথ দিব্যি একা একা ঘুরে ফিরতে পারি, চাইলে দেশের বাইরেও ঘুরে আসতে পারি! একদম তোমার সাহায্য ছাড়া! আমি যে বড় হয়েছি বাবা, পারবো নাইবা কেন!
বাবা, তোমার কি মনে আছে? চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় ইংলিশ ক্লাসে বানান ভুল করার জন্য নাসির স্যার ডাস্টার দিয়ে পিঠে এমন জোরে মেরেছিলেন যে, পিঠে কালো কালো দাগ হয়ে গিয়েছিল। বাসায় আমার মন খারাপ দেখে, তুমি বারেবার জিজ্ঞেস করলে, কি হয়েছে খোকা?
আমি হাওমাউ করে কেঁদে তোমাকে বলেছিলাম, স্যার মেরে পিঠে দাগ ফেলে দিয়েছেন। তুমি তৎক্ষণাৎ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ছুটে গিয়েছিলে স্কুলে, স্যার কে স্কুলে না পেয়ে শেষে স্যারের বাসায় যেয়ে কি কান্ডটাই না ঘটিয়েছিলে! তারপর থেকে নাসির স্যার আমাকে আর কোন দিন গায়ে হাত তুলেন নাই।
বৃষ্টি আসলেই ভাই বোনেরা তোমার কাছে গান শোনার জন্য আবদার করতাম। তুমি গলা ছেড়ে গান গাইতে, টিনের চালে বৃষ্টির প্রতিটা ফোটার শব্দ কে পাশ কাটিয়ে তোমার সুর চলে যেত অনেক দূর...... বাবা আর একটা! তুমি গাইতে! বাবা আর একটা! তুমি আবারো গাইতে। একসময় বৃষ্টি থামত, তুমি গান থামাতে। তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করতাম, বাবা! বৃষ্টি থামলে তুমি গান থামিয়ে দাও কেন? তুমি শব্দ করে হাসি দিয়ে বলতে, আমার কণ্ঠ তো খারাপ তাই বাসের বাড়ির কেও যেন না শুনতে পাই সেইজন্য এই ব্যবস্থা!!
আমরা জানতাম বাবা, তোমার কণ্ঠ মোটেও খারাপ না! সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে সুধায়, বল আমারে তোর কি রে আর কুল কিনারা নাই গাওয়ার শেষে যখন টান দিতে ওঃ পদ্মা নদী রে ......... বিশ্বাস কর বাবা, আমার শরীরের প্রতিটা লোম কাঁটার মত সোজা হয়ে উঠত।
তুমি, বড় ভাইয়ার জন্য প্রথম যেদিন হারমোনিয়াম কিনে এনেছিলে সেদিন সকালেও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কিছু বল নাই। গভীর রাতে সকল ভাইবোন কে ঘুম থেকে ডেকে ডেকে উঠিয়ে তোমাদের (বাবা মায়ের) ঘরে নিয়ে গেলে। বড় ভাই ঘুম কাতুরে। চোখ ডলতে ডলতে বিরক্তি নিয়ে তোমাদের ঘরে যেয়ে বল্ল, এতো রাতে ডাকছ কেন? সকালেই বলতে পারতা! কি হইছে?
ততোক্ষণে আমরা সকলে জেনে গেছি, তুমি ভাইয়ার জন্য হারমোনিয়াম কিনে এনেছ। ভাইয়া হারমোনিয়াম পেয়ে যে কি খুশি হয়েছিল, তা এতোগুলো বছর পরেও আমার স্পষ্ট মনে আছে বাবা! ঐ রাতে আমাকে বুকে জড়িয়ে বলেছিলে, তুমি কি নিবে? কাপাকাপা গলায় বলেছিলাম, বা-ই-সাইকেল!
তুমি চিৎকার করে বলেছিলে, সামনের মাসে তুমি বাইসাইকেল নিবে। খুশি?
আমি খুশিতে তোমার বুকের ভাঁজে মিনিট খানেক মাথা লুকিয়ে রেখেছিলাম। পরের মাসে সকলকে অবাক করে, তুমি বাইসাইকেল কেনার টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলে, এই হচ্ছে তোমার বাজেট! এই টাকার মধ্যে তোমার যেই সাইকেল পছন্দ সেইটা কিনে নিয়ে এসো।
বাড়ির সকলে বল্ল, ও দামাদামি করতে পারবে না! তুমি হুংকার ছেড়ে বলেছিলে, ও শিখবে না! ওকে শিখতে দাও।
বাবা, আমি এখন অনেক কিছুই দামাদামি করতে পারি। তবে তোমার উপরে বড্ড অভিমান হয়, তুমি কেন সুখ দামাদামি করা শিখিয়ে দাও নি। আমি সুখ দামাদামি করে কিনতে চাই। অনেক সুখ!
আজ সকালে যখন ফোন দিলে কয়েকবার তখন ইচ্ছে করে ফোন ধরি নি। ফোন ধরতে ইচ্ছে হয় নি বাবা! ফোন ধরলে তুমি হয়তো বলতে, কেমন আছিস রে বাবা? আমাকে বলতে হত, বেশ ভালো আছি। তুমি ভালো আছ?
কিন্তু আর কতদিন এভাবে চলবে বল? মিথ্যে মিথ্যে খেলতে ইচ্ছে হয় না।
কেবলই শুধু কোন এক শারদীয় সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির পিছনের দিকটায় দাঁড়িয়ে, তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে গলা ছেড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হয়। আর একবার যদি এই সুযোগটা পেতাম!
তুমি কি আমাকে বুকে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে, খোকা কেন এই রক্ত ক্ষরণ?
আমি যদি সব খুলে বলতাম, তখন কি নাসির স্যারের বাসায় যেয়ে স্যারের সাথে যেই কাণ্ডটি করেছিলে সেই একই কান্ড আমার হ্রদয়ের রক্ত পিপাসুর সাথে ঘটাতে?
খুব জানতে ইচ্ছে হয় বাবা!
১৬ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫
চাঁদোয়া বলেছেন: ১ম আর শেষটাতে যদি এক রকম অনুভূতি নিয়ে চলে যাওয়া যেত!
২| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৪২
সোনি সুলতানা বলেছেন: প্রিয় বাবা,
চিঠিটি যখন তোমাকে লিখছি তুমি তখন ক্যানসার নামক ঘাতক ব্যাধিটির সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করে যাচ্ছ। জানিনা কতটুকু যন্ত্রণা তোমার । শুধু এইটুকু বুঝতে পারছি তুমি রোগা হয়ে যাচ্ছ । তোমার ওজন ৭০ থেকে নেমে এসেছে ৫৫ তে। অফিস থেকে প্রতিদিন যখন বিকেলে বাসায় ফিরি বুকের ভীতর এক তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করি। বিশ্বাস করো বাবা, তোমাকে হারানোর কথা ভাবতেও পারিনা । যে তুমি আগলে রেখেছ আমাদের ৩ ভাই বোনকে , পরীক্ষার সময় রাত জেগে বসে থেকেছ পাসে, সামান্য সর্দি জ্বর হলেই আমাদের নিয়ে ছুটে গেছো ডাক্তারের কাছে !! এক অসাধারন মায়ার বাধনে দু হাতে আগলে রেখেছ আমাদের , কখনো কোন কষ্ট পেতেও দাওনি ! আজ সেই তুমি, নরম বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকো । কথা বলতে ও কষ্ট হয় তোমার । আমার ইচ্ছে করে তোমার কণ্ঠনালির ওই ক্যান্সার টা কে টেনে হিঁচড়ে শরীর থেকে আলাদা করে দেই ।
সেদিন তুমি বায়না ধরলে , কিছু খেতে পারছিনা রে , একটা হরলিক্স এনে দিবি ? কি সামান্য আবদার তোমার !! অথচ এই আমি আবদার করে করে তোমার মাথা খারাপ করে ফেলতাম । একটা কোমল হাসি দিয়ে সায় দিতে । সংসার খরচ বাঁচিয়ে কি কষ্ট করেই না আমাদের চাওয়া গুলো পুরন করতে !! রেডিওথেরাপি আর কেমথেরাপি দিয়ে কান্সারের সাথে প্রতিদিন তোমার যুদ্ধ । শরীরে যন্ত্রণার যুদ্ধ নিয়ে তুমি বেঁচে আছো জানি।
আমাদের ৩ ভাইবোন এর চাকুরীর যে সামান্য মাইনে তা দিয়ে ক্যান্সার এর সাথে যুদ্ধ করা খুব কষ্টকর ! নিজেকে অপরাধি মনে হয় । কেন আরো উন্নত চিকিৎসা দেবার খমতা আমার নেই ?? ছোটবেলায় তুমি যখন কোলের ভীতর নিয়ে আমায় ঘুম পারাতে তখন আদরে আমার ঘুম এসে যেতো । তোমার কোল যে আমাদের চির আশ্রয় । এমন আশ্রয় থেকে কে বঞ্চিত হতে চায় বলো?
বাবা, এই লেখাটা লেখার সময় আমি অনেক কেঁদেছি জানো ? ইট কাঠ পাথরের এই যান্ত্রিক শহরে নিজেকে বড় একা আর অসহায় লাগছে ! তুমি তো আমার বুদ্ধি , সংগ্রাম , সাহস !! মাথার উপরে ছায়া !! আমি এই ছায়া থেকে বঞ্চিত হতে চাইনা বাবা !!
প্রিয় বন্ধুরা ! তোমরা আমার বাবার জন্য দোয়া করো !! তিনি যেন আরো কিছুকাল বেঁচে থাকেন
১৬ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২২
চাঁদোয়া বলেছেন: আপনার চিঠি পড়ে, চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই।
টাকা পয়সা জিনিসটার প্রতি কোন কালেই মোহ ছিল না, তবে একবার টের পেয়েছিলাম, জীবনে এই বস্তুটা কত বেশী প্রয়োজনীয়। বাবার হার্টে তিনটা ব্লক ধরা পড়ে ছিল। চিকিৎসকরা বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই দিনই অপারেশন করে রিং বসাতে হবে, কারণ একটা ৯৯% ব্লক হয়ে আছে।
ডাক্তার খুব স্বাভাবিকভাবে বল্লেন, কাউন্টারে ৬লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে আসেন।
এক বেলার মধ্যে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার??
মাথাটা চক্কর মেরে উঠেছিল। কি করবো, কোথায় যাব! দিশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
অবশেষে আত্মীয় স্বজনেরা এগিয়ে এসে সেই যাত্রায় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে রক্ষা।
তারপর থেকে কেবলই মনে হয়, জীবনে এই পরিমান টাকা দরকার যা দিয়ে প্রিয় জনকে শেষ চিকিৎসাটা যেন করা যায়।
আপনার বাবার জন্য, দোয়া থাকলো। মহান আল্লাহ্ অনেক বেশী বিচক্ষণ। তিনি সহজে কারো মন ভাঙ্গেন না।
আশা করছি, আপনার বাবা দীর্ঘায়ু পাবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১০
অন্ধ জনা বলেছেন: স্পর্শকাতর.....। ১ম ভাল লাগা।