নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রান্তিক জন

মন চাই কৈতর হয়ে উড়ি আমি আসমানে আজ অথবা মাছ হয়ে সাতার কাটি জলের গহীনে।

প্রান্তিক জন

চিন্হ মোর নাই বা রইল কোনো ।

প্রান্তিক জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথিকার কথকতা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০১

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৯-১৯৬১) হঠাৎ করেই যেন দুমড়ে-মুচড়ে দিলেন উপন্যাসের জগৎ। তিনি দেখালেন, কাজের অল্প কথা বেশি কথার চেয়ে দামি। আর যে কথায় মিশে আছে অনুভূতি, তার চেয়ে শক্তিশালী ভাষা বোধ হয় আর নেই কিছু। মহৎ ভাব স্বল্প পরিসরে কি করে বলা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তাঁর রচনাসমগ্র। যদিও তাঁর উপন্যাস শৈলী আয়ত্বের প্রচেষ্টা আজকাল আর দেখা যায না। তা বোধ হয় অকর্মের চেয়ে অসম্ভব কর্ম বলেই।



অবশ্য হেমিংওয়ের উপন্যাসের আলোচনা করতে গেলে অনেক ছোটগল্পের ক্ষুদ্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তবুও তা কেন উপন্যাস নয়, এবং ছোটগল্পের মান বাঁচাতে বলতে হচ্ছে বড়গল্প- সে আলোচনা আমরা এখানে করব না। আমরা বিষয়গুলো টেনে আনছি- কি করে কথনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাচ্ছে, সেটা দেখানোর জন্য। যদিও আহামরি সব উপন্যাস লেখা হচ্ছে এখনও এবং বড়গল্পগুলো জন্ম নিচ্ছে অকাল গর্ভপাতের মতো।



মহাকাব্যের দিন শেষ বলে রবীন্দ্রনাথের (১৮৬১-১৯৪১) সর্বগামী প্রতিভা সে পথে পা ফেলেনি। কারণ তত দিনে কাব্য জাতীয় থেকে দৈশিক, সামাজিক থেকে ব্যক্তিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। সেই রকম দৈনিক পত্রিকার খড়কুটো ভরা উপন্যাসের দিনও যদি সংকুচিত হয়ে আসে, কিছু নেই আশ্চর্য হওয়ার তাতে।কিন্তু প্রেক্ষাপট পাল্টে যা্চ্ছে। তার সাথে ডিগবাজি খাচ্ছে অনেক কিছুই। ছোটগল্পের জয়জয়কার সাম্প্রতিক সময়ে হলেও, এর যাত্রার ইতিহাস মানবেতিহাসের মতোই প্রাচীন। বলা চলে মানুষ যেদিন গল্প বলা শিখল, তারা শুরু করেছিল ছোটগল্প দিয়েই। যদিও এর উৎপত্তি এবং আজকের পরিণতির ইতিহাসের পার্থক্য সুবিস্তর।



ছোটগল্প এবং উপন্যাসের পার্থক্য করা যায় বহু দিক দিয়ে। যদিও তাদের ক্ষুদ্রত্ব এবং বিস্তার মূলত গল্প বা কাহিনীকে অবলম্বন করেই। কিন্তু মানব জীবনে এমন কিছু ঘটনাতীত ঘটনা আছে, যাকে উপন্যাস বা ছোটগল্পের আঙ্গিকে সাজানো যায় না। খোঁজ করলে তার হদিস হয়তো পাওয়া যাবে গল্পের ভিতরেই, কিন্তু জীবনের সব অনুভূতিরই কি গল্প বিনির্মাণ করা যায় ! এসব অনুভূতির হয়েতো ঘটনাতীত ঘটনা বা গল্প নাম দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাহিত্যের রাজপ্রাসাদে তার একটি দরবারী নাম আছে- কথিকা। সাহিত্যের ইতিহাসে কথিকার বিকাশ ছোটগল্পের ইতিহাসের মতো আজো মাঝ পথে রয়ে গেছে। এর বিকাশের গতিও অনেকটা স্তিমিত। যেমন ছোটগল্পের পরিণতি একদিন থমকে ছিল উপন্যাসের দাপুটে রাজত্বের সীমান্তে।



কথিকার আলঙ্কারিক বয়ান এখনও খুব একটা চোখে পড়ে না। কারণ হিসেবে নির্দেশ করা যায়, কথিকার সাহিত্যিক নিদর্শন খুব একটা বেশি নেই।- বিনির্মানের পিছনে এই কারণটিই মুখ্য। নজরুলের (১৮৯৯-১৯৭৬) ছোটগল্পের আলোচনা করতে গিয়ে আবদুল মান্নান সৈয়দ (১৯৪৩-২০১০) কথিকা সম্পর্কে অবশ্য একটু ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি প্রথমেই কথিকাকে ছোটগল্প থেকে আলাদা করেছেন। এবং বলেছেন, কথিকা হচ্ছে একটি ভাবাবহকেন্দী রচনা। ছোটগল্প এবং কথিকার পার্থক্যের নিদর্শন তিনি নির্দেশ করেছেন, রবীন্দ্রনাথের লিপিকা (১৯২২) গ্রন্থের অনেকগুলো রচনা দিয়ে। নজরুলের অগ্রপথিক সরাসরি পড়েছে কথিকার কাতারে। বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে কথিকাকে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রায়তনের লঘু রচনা; নির্দিষ্ট পরিসরে বর্ণনাত্বক রচনা বা short talk । অনেকে আবার দিনলিপির ভিতরও কথিকার লক্ষণ দেখতে পান। সে হিসেবে এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হতে পারে বিভূতিভূষণের তৃণাঙ্কুর গ্রন্থটি । এবং আলাদা ভাবে তার বৈকালী রচনাটি তো অবশ্যই।



সে যাই হোক, নাটক তার রাজসিক অবস্থানে এখন আর নেই। উপন্যাস টিকে আছে চাতুর্যপূর্ণ কথামালা দিয়ে। যদিও জীবনের একেক দিক ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন একেক প্রকরণের। তারপরও বরমাল্য এখন ছোটগল্পের গলায়ই। কিন্তু সাহিত্যের দরবারে পরবর্তী রাজসিক অবস্থানটা কার, তার একটি ইঙ্গিত এই লেখার উদ্দেশ্য।



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৪

মহিদুল বেস্ট বলেছেন: ভালো লাগলো ++

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২০

মামুন রশিদ বলেছেন: সাহিত্যের দরবারে পরবর্তী রাজসিক অবস্থানটা কার, তার একটি ইঙ্গিত এই লেখার উদ্দেশ্য।

হুম, একমত । আরও কিছু ব্যাপার আছে, যেমন দূরগামিতা । কবিতা এবং ছোটগল্প দূরগামী । আর সবাই চায় তার কর্মটি বেশি দিন টিকে থাকুক । (সৈয়দ শামসুল হক)

চমৎকার আলোচনা ।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

প্রান্তিক জন বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।

৪| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৩৪

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ। +।

৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

প্রান্তিক জন বলেছেন: শরৎ কখনো অন্যমনস্ক হয় না ভাই। লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৫৫

মুহাম্মাদ তাসনীম বলেছেন: আর যে কথায় মিশে আছে অনুভূতি, তার চেয়ে শক্তিশালী ভাষা বোধ হয় আর নেই কিছু।আমি একমত। আসলে এ জাতীয় সাহিত্যই মানুষকে মানুষ বানায় , মানবতা ও শিষ্টতার পথ দেখায়। আজকের সাহিত্যে তা আর নেই।

৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

প্রান্তিক জন বলেছেন: আল মাহমুদ তার সোনালী কাবিন কবিতায় বলেছেন, ছলনা জানি না বলে আর কোন ব্যবসায় শিখিনি.....
কিন্তু আজকের সাহিত্য ছলনা এবং ব্যবসায় - দুটোই খুব ভাল বুঝে। তার চিয়েও বেশি বুঝে ক্ষমতার গোলামী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.