দুষিত রক্তের দোষ ছাড়ানোর উপায় কি?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৩

ছোটখাটো একটা উদাহরন দিই। লিফটের সামনে লম্বা লাইন। লাইনের মাথা বড়ো হচ্ছে তো হচ্ছেই। লিফট কিছুক্ষণের জন্যে সাধারন সার্ভিস দিচ্ছেনা। কারন তথাকথিত ভিআইপি কাওকে এইমুহুর্তে সার্ভিস দিতে ব্যস্ত লিফটের কেয়ারটেকার বা লিফটম্যান। দেখা যাবে আসলে কেওকেটা তো দুরে থাকুক, মোটামুটি পরিচিত কেওও না। এমন দৃশ্য আপনার অফিসেরই প্রাত্যহিক কোনো দৃশ্য হতে পারে।



কেতাদুরস্ত:পোষাক দেখে কিংবা পূর্ব পরিচয়সূত্রে লিফটম্যানের হৃদয় বিগলিত শ্রদ্ধা ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে। সে হাত আগলে বাধা দিবে, তার অতিথির সাথে আর একজনকেও উঠতে দিবেনা। আশা, যদি স্যার খুশি হয়ে কিছু দেন! তার এই বদান্যতা কেও তাকে শিখিয়ে দেয়নি। এটা তার রক্তে! দুষিত রক্তের দোষ।



এমন দোষ প্রতিটি স্তরে, উঁচু-নিচু সর্বমহলে দৃশ্যমান! ভিআইপি' কেও হলেও বিষয়টা ক্ষমা করে দেয়া যায়না। কারন জনসেবক পর্যায়ের পদে কাওকে জনসমস্যা তৈরি করে সুবিধা হাছিলের সুযোগ দেয়া ঠিকনা। তার চেয়ে বড় কথা, ভিআইপরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের আচরন হয়তো ঠিক করে দেননা। দেন তার অধীনস্ত: চাটুকারের দল।



মন্ত্রী, উপদেষ্টা, কিংবা এজাতীয় ভিআইপদের গমন-আগমনের তাই-ই এতো ঘটা। আধঘন্টা আগে থেকে ট্রাফিক জ্যাম তৈরি করে যারপরনাই ভোগান্তি এসব দুষিত রক্তের চামুচদের কল্যাণেই। ‍শুধু ট্রাফিকযানযট না, জাতীয় জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ভিআইপদের জন্যে ছেড়ে দিতে, হবে, হাটতে থাকলে দাড়িয়ে পড়তে হবে, দাড়িয়ে থাকলে বসে পড়তে হবে, বসে থাকলে শুয়ে পড়তে হবে টাইপের যেসব সমস্যা, এগুলোর জন্যে দুষিত রক্তের শুয়োররাই দায়ী। এদের জন্যেই দোষ-নিন্দা গিয়ে পড়ে ভিআইপদের ঘাড়ে!



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারকে এসব কুকুরেরা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে, সেটা ভাবতেই দু:খ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু, এদেরকেই চাটুকারের দল বলতেন।



এ প্রসংগে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে, যদিও তার সত্যাসত্য জানিনা। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে একবার তার শৈশবের দোস্ত এলো তার বাসভবনে। উপরে মিটিংয়ে ছিলেন নেতা। নিচে আগন্তুক, দাড়োয়ানকে বলছে মুজীবুইরা কৈ? হের লগে দেহা করুম।



গার্ড তাকে চিনতে না পেরে ওপরে গেলো। পরিচয় পেশ করলো নেতার কাছে। বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, ছেলে বেলার কতো বন্ধুই তো ছিলো! হয়তো ঠেকায় পড়ে এসছে। ঠিক আছে, এই ৫০০ টাকা তাকে দিয়ে বলো, আমি একটু ব্যস্ত।



দাড়োয়ান নিচে এসে টাকা দিলো। কিন্তু ওই লোক বিদায় হবার পাত্র নয়, দেখা সে করবেই। এবার নেমে এলেন জাতির জনক। চিনতে পারলেন। বুকে জড়িয়ে ধরলেন বন্ধুকে। তার বন্ধু অভিমানী গলায় বললো, এতো বছর পর তর কাছে কি ২০০ ট্যাকার জনন্যি আয়েছি?



বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, কিছুক্ষণ, নিচে আসতে আসতে ৫০০ টাকা হয়ে গেলো ২০০ টাকা! তাই তো দেশের এই অবস্থা।

৯ টি +৫/-০