![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাম হাতের উপর ভর করে উঠতে চাইলাম কিন্তু অবস্থা যা মনে হচ্ছিল তার চাইতে অনেক বেশি খারাপ। আশেপাশে দেখলাম কেউ নেই। ভালো হয়েছে। সন্ধ্যা নেমে যাবে হয়তো। সময়টা দেখা দরকার। হাতঘড়িটাও নেই। তৃপ্তিকে বলেছিলাম নিয়ে আসতে। আনে নাই। ইচ্ছে করেই। মেয়েটা একদম ওর বাবার মত হয়েছে। এই কেবিনের দেয়ালেও কোন ঘড়ি নেই। কারণটা জানতে বড় ইচ্ছে করছে। এরকম সময়ে অনেক তুচ্ছ জিনিস জানবার আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে একটা জিনিস ভালো, বারান্দা আছে। বড় হাসপাতালগুলার এই একটা সুবিধা, কমপক্ষে মরার সময় ভালো একটা ভিউ পাওয়া যায়। একদিন হয়তো অর্কেস্ট্রার ব্যাবস্থাও করবে। রোগী মরতে যাচ্ছে, মেয়ে- ছেলে- বউ কাঁদছে আর পিছন থেকে একদল বাদক করুন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দেবে। রোগী ফুল স্টপ, মিউজিক বন্ধ।
একরকম পা ছেঁচড়িয়ে বারান্দায় এলাম। জায়গাটা খুব বেশি বড় নয়। তারপরও চলে। জানি আজ রাতই আমার শেষ। তৃপ্তি আমাকে কথাটা বলেছে গত পরশু। কথাগুলো বলবার সময় পাথরের মতন শক্ত করে ছিল মুখটা। পরে বাইরে গিয়ে সারাটা বিকেল কেঁদেছে। অনেক কিছুই মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়। তৃপ্তি আমার রক্তের কেউ না। গত বছর ঠিক এই সময়টাতে আমি একটা বেকার যুবক, এখনও। বাবা- মা আরও তিন বছর আগেই...... ক্লাস এ ফোন আসলো। ধরলাম না। পরে একটা মেসেজ। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। তারপর আবার ক্লাসে মনোযোগ দিলাম। আমি যাই নাই। সবশেষ তাদের হাসি মুখটা দেখেছিলাম। ওইটাই রাখতে চেয়েছিলাম সারাজীবন মনের মাঝে। এর পর থেকে আমার আত্মীয়রা আর কোন যোগাযোগ রাখে নি আমার সাথে। সবাই ভাবে আমি নেশা করি। নেশার জন্য কিডনি বিক্রি করেছি। আমার মত কালপ্রিট তাদের পরিবারে থাকার চেয়ে একটা কুকুর থাকা অনেক ভালো।
এই কিডনিটাই আজ তৃপ্তির শরীরে। বাবার একমাত্র মেয়ে। যখন হাসপাতালে গিয়ে ওর বাবাকে বললাম আমি তার মেয়েকে কিডনি দিতে চাই কিন্তু শর্ত হল কোন পেমেন্ট ছাড়া। ওর বাবা কোন কথা না বলে রাজি হয়ে গেলেন। পরে যখন জানলাম আমিন সাহেব দেশের টপ বিজনেসমেন দের একজন তখন একটু অবাক হয়েছিলাম। এইরকম একটা লোক কিভাবে টিকে আছে এই বাজারে! কেন জানি নিজেকে শেষ করে দেবার একটা ইচ্ছে তিল তিল করে নিজের মাঝে বড় করেছিলাম। বাকি আরেকটাও দিতে চেয়েছিলাম অন্য কোন তৃপ্তিকে। কিন্তু এটা আর টিকতে পারল না। জানার পর ও আর ওর বাবা মিলে অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে বাহিরে নিয়ে যাবার। নতুন জীবন দেবার। কিন্তু আমায় যে মরনের নেশা পেয়ে বসেছে! এরপর থেকে আমার শেষের অপেক্ষার জিবনে ওই মেয়েটা আর ওর বাবা মোটামুটি একটা অংশ হয়ে গেছে। পাগলীটা আমার জন্য এই সিমেস্টার পুরোটা লস দিল। আমিও কিছু বলিনাই। আমি চাই আমার শেষ পর্যন্ত ও আমার সাথে থাকুক। নো পেমেন্ট তো টাকার ছিল, সময়ের না।
রেলিং এর পাশে দুইটা কাক ঝগড়া শুরু করেছে। একটু পর থামছে, আবার শুরু করছে। স্বামী-স্ত্রী হবে মনে হয়! কাকের ঝগড়া দেখতে ভালো লাগছে। সূর্য ডুব দেবে দেবে। আজকের এই সূর্যটাকে খুব ঘটা করে বিদায় জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে। কি জানি মনে হল বাচ্চাদের মত করে হাত নাড়ানো শুরু করলাম। পাশের বিল্ডিং থেকে কয়েকজন আমার দিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
রাতে খিচুড়ি, আলুভাজি আর ডিমভাজা দেয়া হয়েছে। আমার পছন্দের খাবার। হাসপাতালে এইসব পাওয়া যায় না। আমিন সাহেব নিয়ে এসেছেন। বেশ হাসি পাচ্ছে। নিজেকে ফাঁসির আসামী মনে হচ্ছে। খেতে ইচ্ছে করছে না। তৃপ্তিকে দেখতে বড় ইচ্ছে করছে।
আজ পূর্ণিমা ছিল? জানতাম না তো! আমি রেলিং ধরে দাঁড়ালাম।
দরজা খোলার আওয়াজ। তৃপ্তি কেবিনে ঢুকেছে। কি আশ্চর্য রকম সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে! হাল্কা নীল শাড়ি আর খোলা চুলে আজ পূর্ণিমাটাকেও লজ্জায় ফেলে দেবে নিশ্চিত। ধীর পায়ে আমার কাছে এসে দাঁড়াল।
হঠাৎ করেই বলে ফেললাম, আমার বিদায় উদযাপন করতে এসেছ?
- তুমি নিষ্ঠুর হতে পারলে আমার হতে বাধা কোথায়?
আমি কিছু বললাম না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম ওর চোখের দিকে।
আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। চারিদিক ঝাপসা হতে শুরু করেছে। আমি একটিবারের জন্য চাঁদের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত করে হাত নাড়লাম। এরপর হেসে বললাম,আমার হাতটা ধরে রাখ। তৃপ্তি মনে হল তার সর্বশক্তি দিয়ে আমার হাতটা ধরতে চেষ্টা করল। আমি দেখলাম পাথর থেকে ঝরনা নামছে।
রেলিং এর ধারে দুটি কাক এসে বসেছে। ঝগড়া মিটে গেছে দুজনের। পাশেই চেয়ারে বসা একটি নিথর হাত শক্ত করে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে একটি মেয়ে।
১০ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
ফাহাদ জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে !
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮
উদাস কিশোর বলেছেন: বাহ !
দারুণ ।
শুভ কামনা