![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোটামুটি সবকিছুতেই কাঁচা,লেখালেখি আর বিভিন্ন কিছু বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটির মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়।পড়ালেখা বাদে আপাতত সবকিছু নিয়েই নিজের উপর যথেষ্ট খুশি আছি! আমার ফেসবুক লিঙ্ক : https://www.facebook.com/fahad.zahed.7
ইতালির ভেনিস শহরকে চিনে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে,আর এই ভেনিস শহরের কথা মাথায় আসলেই সবার প্রথমেই চোখের মধ্যে ভেসে উঠে স্বচ্ছ নীল জলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু সব বিল্ডিং আর তার মাঝ দিয়ে ছুটে চলা বিভিন্ন আকারের নৌকা।তবে,এই সুন্দর ভেনিস শহরের মাঝেই এমন কিছু সত্য লুকানো আছে,যেগুলো শুনলে সত্যিই গা শিউরে উঠে!
কথিত আছে,ভেনিস শহরে সূর্য ডোবার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় অশরীরীদের চলাচল...এর পেছনে অবশ্য সুদীর্ঘ একটা ইতিহাস আছে।Poveglia বা "The island of no return"সম্পর্কে বলার আগে একেবারে শুরুর সেই ইতিহাস থেকেই আগানো যাক!
খুব সম্ভবত সতেরোশ' শতকের মাঝামাঝি সময়েই ইউরোপে প্লেগ মহামারী আকার ধারণ করেছিলো,আর সেই কারণেই ইতালি সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে মারা যাচ্ছিলো অনেক অনেক মানুষ!তো,একসময় রোগের প্রকোপ এতোই বেড়ে গেছিলো যে সেই সময়ের ইতালির ভেনিসের শাসকগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে,যে'ই এই প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে তাকেই খুঁজে বের করে মেরে ফেলা হবে।এরপর থেকেই যারা এই প্লেগে আক্রান্ত হত,তাদের সবাইকে একসাথে ধরে বেঁধে গণকবর দেয়া হতো,কিংবা ধরুণ, কোনো একটা পরিবারের সবাই প্লেগে আক্রান্ত,তখন তাদের চতুঃপার্শ্বে দেয়াল তুলে দেয়া হতো কিংবা সবাইকে একসাথে জেলখানায় নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হতো।মোটকথা,কোনো প্রকার মানবিকতারই অস্তিত্ব ছিলো না সেখানে...
যেহেতু,সেই সময়ে প্লেগের কোনো প্রতিকারক তখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি,তাই এই প্লেগ যাকেই স্পর্শ করেছে তাকেই মরতে হয়েছে,কিংবা শাসকগোষ্ঠীর হাতে অমানবিকভাবে খুন হতে হয়েছে....তো,এক পর্যায়ে এমন হয়েছে,ইতালিতে এত বেশি পরিমাণে মানুষ মারা যাচ্ছিলো যে আর কোথাও কোনো জায়গাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না!
তখন,ইতালিয়ান শাসকগোষ্ঠীরা চিন্তা করে বের করে যে,যারাই এরপর থেকে প্লেগে আক্রান্ত হবে,তাদেরকেই পভেলিয়া দ্বীপে ছেড়ে দিয়ে আসা হবে।
পভেলিয়া(Poveglia) ভেনিস থেকে মোটামুটি পাঁচ মাইল দূরের ছোটখাটো(প্রায় ২-৩ বর্গকিলোমিটার) একটা দ্বীপ....যারা প্লেগে আক্রান্ত তাদের সবাইকেই এরপর থেকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে এই পভেলিয়া দ্বীপে ফেলে আসা হতো,যেখান থেকে আসার কোনোরকম ব্যবস্থাই তখন ছিলো না।যেহেতু তাঁরা সবাই এমনিতেই অসুস্থ ছিলো,তারউপর ৫ মাইল সাঁতরে আসা তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না...এইভাবেই এই দ্বীপটাতে সেই প্লেগ আক্রান্ত মানুষগুলা ধুঁকতে ধুঁকতে পঁচে গলে পড়ে থাকতোযেহেতু তাদের ভাগ্যে কিছুই জুটতো না।এই কারণেই এই আইল্যান্ডটাকে বলা হয় "আইল্যান্ড অফ নো রিটার্ন" কিংবা "রিটার্ন অফ নো আইল্যান্ড"....
এরপর, ১৯০০ শতকের দিকে এসে ইতালিতে বড়সড় এক বিপ্লব ঘটে যায়।চতুর্দিকে উন্নয়ন শুরু হচ্ছে,প্লেগ রোগও তখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।তখন,ভেনিসে অনেক উন্নয়ন শুরু হয়,ক্যাথেড্রাল,দালান তৈরি শুরু হয় চারপাশে।যারা এই ক্যাথেড্রাল,টানেল বানাতো,তারা অনেকেই এইসব ক্যাথেড্রাল, টানেল বানাতে গিয়ে নাকি বিভিন্ন কিছুর শব্দ শুনতে পেত,বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ,কিংবা খুব কাছ দিয়ে হঠাৎ কিছু একটা চলে যাওয়ার ইঙ্গিত পেত।এবং অনেক সময় দেয়ালে এমন কিছু পেইন্টিংসও তৈরী হয়ে যেত,যেখানে কিছুক্ষণ আগেও কোনো পেইন্টিং ছিলোনা।পেইন্টিং গুলো এমন ছিল যে,কেউ কান্না করছে,কেউ খুব অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে, অনেকটা এরকম! মুছে দেয়া হলেও পরে আবার নিজে নিজেই তা তৈরী হয়ে যেত।একারণে অনেক শ্রমিক ভয়ে কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়...ভেনিস সরকার তখন কারণ অনুসন্ধানে তৎপর হয়।কারণ অনুসন্ধানে তারা সেইসব জায়গা থেকে অনেক মানুষের হাড়গোড় খুজে পায়।জানতে পারে যে,১৭০০ শতকে প্লেগ রোগে আক্রান্তদের যেখানে যেখানে গণকবর কিংবা পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো ঠিক সেখানে সেখানেই এরকম অদ্ভুত ব্যাপারগুলো ঘটতো...
তো,যাই হোক,এদিকে ভেনিসের সেই সময়কার মেয়র সিদ্ধান্ত নেয় যে,পভেলিয়া দ্বীপটাকেও আর পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা ঠিক হবে না।তখন,বিস্তর জল্পনাকল্পনা শেষে সেখানে এসাইলাম কিংবা মানসিক হসপিটাল যাই বলিনা কেন,বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।তো,সেই হসপিটালে একজন সার্জন ছিলেন,যিনি আবার এক্সপেরিমেন্ট টাইপের বিষয়গুলোর প্রতি একটু বেশি পরিমাণে আগ্রহী ছিলেন।এই যেমন- লোবোটমি টাইপের ব্যাপারস্যাপার।যাই হোক,একদিন এই সার্জন খুব সম্ভবত হসপিটালের আশপাশেরই কোনো একটা জায়গার মাটি খুঁড়ে একটা লাশ নিয়ে এসে গবেষণা শুরু করেন।মূলত এরপর থেকেই সেখানে অদ্ভুত রকম সব ঘটনা ঘটতে থাকে...মানুষ বিভিন্ন কিছুর শব্দ,গভীর রাতে কারো চিৎকার করে কান্না করার শব্দও শোনা যেত।
সবচে ভয়ংকর ব্যাপারটা ঘটে এর ঠিক কিছুদিন পরেই।একদিন সকালে সেই সার্জনকেই হসপিটালের কর্মচারীরা হসপিটালের পাশেই যে উঁচু টাওয়ারটা রয়েছে,ঠিক তার নিচেই মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে...সার্জন অবশ্য বেশ কয়েকদিন ধরেই বলছিলো যে,তিনি বেশকিছুদিন ধরে খুব ডিস্টার্বেন্স ফিল করছিলেন! অবশ্য অনেক ইনভেস্টিগেশন এর পরও তার মৃত্যুর রহস্য আজও পর্যন্ত কেউ উদঘাটন করতে পারেনি! সার্জন মারা যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় আরো আরো অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে।হাসপাতালের কর্মচারী, রোগী থেকে শুরু করে ডাক্তার নার্স সকলেই অশরীরী কিছুর অস্তিত্ব টের পেতে থাকে....সবচে বেশি ভয়ংকর যে প্লেসটাতে এসবের অস্তিত্ব সবচে বেশি পাওয়া যেত এবং এখনো অবধি পাওয়া যায়, সেটা হলো ওই সার্জনের রুমটাতে,যে রুমে তিনি লাশটা কেটেছিলেন....
এরপর অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে শুরু করলে নার্স,ডাক্তার সকলেই চাকরি ছেড়ে চলে যায়,সাথে রোগীরাও! পুরো দ্বীপটাই আবার এবান্ডোন্ড হয়ে পড়ে and the island is abandoned till today...
আরেকটা বিষয় হলো,এই ভেনিসের উপকূলের দিকে যেসব জেলেরা ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে বের হন,তারা অনেকেই নাকি গভীর রাতে পভেলিয়া দ্বীপের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় যে টাওয়ারটা নিচ থেকে ওই সার্জনের লাশটা পাওয়া গেছিলো,সেই টাওয়ারটার ঘন্টাটা বাজতে শুনেন এবং টাওয়ারটার উপরের একটা ভাঙা জানালা দিয়ে আলো জ্বলতে দেখেন..কিন্তু কথা হলো,যে দ্বীপটাতে মানুষ দিনেই যাওয়ার সাহস পায়না সে দ্বীপে রাতে কিভাবে মানুষ!
তাহলে;
ঘন্টাটা বাজায়ই বা কে?
আর,আলোটা জ্বালায়ই বা কে?
©somewhere in net ltd.