নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহস্যের ডেরায় আপনাকে স্বাগতম....

ফাহাদ বিন জাহেদ

মোটামুটি সবকিছুতেই কাঁচা,লেখালেখি আর বিভিন্ন কিছু বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটির মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়।পড়ালেখা বাদে আপাতত সবকিছু নিয়েই নিজের উপর যথেষ্ট খুশি আছি! আমার ফেসবুক লিঙ্ক : https://www.facebook.com/fahad.zahed.7

ফাহাদ বিন জাহেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যানিবালিজমের ইতিহাস

১২ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৯

এই পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত জাতিগোষ্ঠী এসেছে,ক্যানিবালিজম এর চর্চা দেখা গেছে প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীর মাঝেই।মেক্সিকান এজটেক উপজাতি থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ডীয় মাউরি উপজাতি,সবার মধ্যেই দেখা গেছে এই ক্যানিবালিজম।ক্যানিবালিজমের ইতিহাসটার বয়স কম করে হলেও  এক লাখ বছর!এক লাখ বছর বলার কারণটা হলো,১৯৯৯ সালের একটা সায়েন্স আর্টিকেলে ফরাসী প্রত্নতত্ত্ববিদরা উল্লেখ করেছিলেন যে,ফ্রান্সের Moula-Guercy গুহায় প্রায় এক লক্ষ বছর আগের ছয়জন Neanderthal অর্থাৎ প্রাকমানবের স্কাল খুঁজে পাওয়া যায়,যারা তাদের স্বজাতীয়  ক্যানিবালদের স্বীকার হয়েছিলো।গবেষণা করে জানা যায়,তাদের জিহ্বা,ঊরু কেটে ফেলা হয়েছিলো আর মাথার খুলি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছিলো।
এদিকে স্প্যানিশ প্রত্নতাত্ত্বিকরাও একইভাবে স্পেনের এল সিদরোন নামের এক গুহায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর আগের ১২জন মেম্বারের এক Neanderthal ফ্যামিলির সবাইকেই ক্যানিবালিজমের স্বীকার হওয়ার তত্ত্ব উল্লেখ করেন...চল্লিশ হাজার বছর আগে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পূর্বে এই প্রাকমানবেরা হরহামেশাই তাদের স্বজাতিদের হত্যা করে তাদের মাংস খেতো।

ইতিহাসটা আরেকটু ঘাটার আগে ক্যানিবালিজম ব্যাপারে একটু বলতে চাই...
Cannibalism বা নরমাংসভোগ শব্দটার উৎপত্তি মূলত Lesser Antilles বা ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের Carib Island এর উপজাতিদের থেকে।১৯শতকের দিকে কমতে থাকা ক্যানিবালিজম বর্তমান সময়ের ট্রপিক্যাল আফ্রিকা, পাপুয়া নিউগিনি ও সলোমান আইল্যান্ডের অনেক অঞ্চলেই দেখা যায়।একসময় তো মেলানেশিয়ার অনেক অংশেই বসতো ফ্ল্যাশ মার্কেট! ফিজিকে একসময় বলা হতো "Cannibal Isles"...বর্তমান ইন্ডিয়ার আগোরীরাও তাদের ক্যানিবাল হিসেবে দাবি করে।যাই হোক,ক্যানিবালিজমকে মোটা দাগে কয়েকটা ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
*Exo-Cannibalism
*Endo-Cannibalism
*Survival Cannibalism
*necro Cannibalism
*homicidal Cannibalism

এক্সোক্যানিবালিজম বলতে মূলত বোঝায় স্বজাতির বাইরের মানুষদের মাংস ভোগ করা।এজটেক উপজাতিদের মধ্যেই মূলত সবচাইতে বেশি দেখতে পাওয়া গেছিলো এক্সোক্যানিবালিজম এর চর্চা।তারা বিশ্বাস করতো যে,যুদ্ধবন্দী যোদ্ধাদের মাংস ভক্ষণ মানেই দেবতার আশীর্বাদ লাভ! তাছাড়া এরা এই যুদ্ধবন্দীদের উপর নানান রকমের রিচুয়াল পালন করতো।এসময় এজটেকরা উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে বন্দীদের মাংস সকলে মিলে ভক্ষণ করতো।পাপুয়া নিউগিনির মিয়ামিন উপজাতির মধ্যেও পাওয়া গেছিলো এক্সোক্যানিবালিজমের চর্চা।এরা বিশ্বাস করতো যে,আশপাশের অঞ্চলের উপর যদি নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে হয়,তাহলে আশপাশের মানুষদের খেয়ে ফেলার চেয়ে ভালো কোন উপায় নেই! এর পরপরই এরা আশপাশের মানুষদের ধরে এনে আগুনে পুড়িয়ে তাদের মাংস খাওয়া শুরু করে।ফলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে থাকে আশপাশের অঞ্চলের ওইসব উপজাতি...

এন্ডোক্যানিবালিজম বলতে মূলত নিজের গোষ্ঠীর মানুষদের মাংস খাওয়া।যেটার জন্য সুপরিচিত ছিলো এমাজন বেসিনের ওয়ারি জাতি।এরা এদের স্বজাতীয় কোনো মানুষ মারা গেলে তার শরীর কেটে মাংস খেতো।অনেকেই বলে থাকেন,এটা ছিলো মূলত এদের ধর্মীয় আচার ব্যবহারেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ,যেটা ভানুয়াতুর তান্না দ্বীপের উপজাতিদের মধ্যেও দেখা গেছিলো।এটাকে আপনি চাইলে নেক্রোক্যানিবালিজম হিসেবেও ধরে নিতে পারেন।তবে অনেকের মতে,ওয়ারিরা এই মৃত মানুষদের মগজ, মাংস খেতো মুলত তাদের পূর্বসূরিদের বুদ্ধিমত্তাকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করবার চিন্তাধারা থেকে...
আবার আফ্রিকার অনেক গোষ্ঠীর মধ্যেই একটা প্রথা চালু আছে। "Pirates of the Caribbean:Dead Man's Chest" মুভিতে একটা পর্যায়ে জনি ডেপকে ক্যারিবিয়ান একটা দ্বীপের গোষ্ঠীপ্রধান হিসেবে দেখা যায়।একটু পরই দেখা যায় ওই গোষ্ঠীর মানুষরাই তাকে একটা কাঠের ফ্রেমে বেধে আগুনের শিখার উপর ঝুলিয়ে রাখতে...এই কাহিনীটাই মূলত আজও দেখা যায় আফ্রিকার অনেক উপজাতিদের মাঝে,যারা তাদের নিজেদের গোষ্ঠীপ্রধানকে উৎসর্গ করে তাদের মঙ্গলের জন্য!

সারভাইভাল ক্যানিবালিজম হয় মূলত এমন পরিস্থিতিতে যেখানে সার্ভাইভাররা উপায় না পেয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন,আজ একে মরতে হবে,কাল ওকে মরতে হবে।এভাবে হত্যা করা মাধ্যমে তারা ওই মৃত সার্ভাইভারদের শরীরের লিভার,কিডনী,এমনকি মূত্রথলি কেটে মূত্র পান করার মাধ্যমে নিজেদের পানির পিপাসা মেটায়।এই ব্যাপারটা ঘটে মূলত দূর সমুদ্রে আটকা পড়লে।আপনি এই ব্যাপারটা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যদি "In the heart of the sea" মুভিটা দেখে থাকেন...
তবে,১৯৭২ সালে চিলির আন্দিজ পর্বতমালায় একটা প্লেন বিধ্বস্ত হয় যার প্রায় কয়েকজন যাত্রীবাদে মারা গিয়েছিলো বাকি সবাই।কয়েকদিন বাদেই ফুরিয়ে যায় সঙ্গে থাকা খাবার,পানীয়।উপায় না পেয়ে ওই যাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেন,তারা মৃত যাত্রীদের মাংস খাবেন সাহায্য না আসা পর্যন্ত।এভাবে প্রায় সত্তর দিন অতিবাহিত হওয়ার পর এসেছিলো উদ্ধারকর্মীরা।হু,প্রশ্ন থাকতে পারে, সত্তর দিনে তো ওই মরা মানুষগুলোর শরীরের মাংস শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ার কথা? নাহ,সেটা হয় নাই,কারণ
আন্দিজ পর্বতমালা বেশিরভাগ সময়ই তুষারাবৃত থাকে...প্রায় ১৬ জন যাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলো উদ্ধারকর্মীরা,সাথে পাওয়া যায় তাদের সহযাত্রীদের ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ।

হোমিসাইডাল ক্যানিবালিজ মানে হলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানুষের মাংস খাওয়ার জন্য তাকে খুন করা!
এ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়ার জন্য সবচাইতে বেস্ট অপশন হতে পারে পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার জোয়াকিল ক্রোল।জন্ম ১৯৯৩৩সালে জার্মানির হিন্ডেনবার্গে(বর্তমানে পোল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত)...মূলত মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় এভাবে,১৯৭৬সালের ৩জুলাই জার্মানির ডুইসবার্গ এ অস্কাল মুলার নামক এক বাসিন্দার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাটা কাজ না করায় তিনি স্থানীয় কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে, বেরিয়ে আসে ভয়াবহ এক হত্যাকান্ড! অস্কার তার প্রতিবেশীকে জানালে সে জানায়,পানি নিষ্কাশন পাইপ টা নাকি অন্ত্রের নাড়িভুঁড়িতে ভরে গেছে...এর পরপরই পুলিশ আসে ঘটনা তদন্ত করতে।তদন্ত করেই বেরিয়ে আসে,ওই প্রতিবেশী আর কেউ নাহ,জোয়াকিম ক্রোল! অবশ্য এর কয়েকদিন আগেই ওই এলাকার ৪ বছরের  ম্যারিওন কেটার নামের এক বাচ্চা হারিয়ে যায়,পরে ইনভেস্টিগেশন করে জোয়াকিমের বাড়িতে পাওয়া যায় সেঈ মেয়েটার টুকরা টুকরো করা মাংস,চুলায় ফ্রায়িং পেনে পাওয়া যায়, মেয়েটার ভাজা হাত।আর টয়লেটে পাওয়া যায় পেটের নাড়িভুঁড়ি!
অন্য কোনো একদিন বলা যাবে জোয়াকিমের ব্যাপারে।তবে,এটাই মূলত হোমিসাইডাল ক্যানিবালিজম।এডাম ফিশার,জন ডাহমারের মতো বিখ্যাত সব খুনীরাও এইভাবে হত্যাকান্ড চালিয়ে  মৃত মানুষদের শরীরের মাংস খেতো....

তো,এই হলো ক্যানিবালিজমের আদ্যোপান্ত!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.