নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহাফের সেইফ হাউজ

সাহাফ

I am a very simple person.

সাহাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফতোয়া ছিল ফতোয়া থাকব

২৫ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৯:৩২

মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন



একটা মামুলি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি রহম আলী একজন খুবই সাধারণ মানুষ। গতরখাটা মজদুর। তবুও স্বপ্ন দেখে তার ছেলেটা লেখাপড়া করে একদিন বড় হবে। ছেলে রমজান গরিবের সন্তান হলেও মেধা-বুদ্ধিতে হাজারে একজন। স্কুলের শিক্ষক আর চারপাশের হিতৈষীদের আন্তরিকতায় তাকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়নি মাঝপথে। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির পাঁচিল পেরিয়ে বিদেশী সংস্থার অনুকূলে সে এক সময় পৌঁছে যায় পৃথিবীর অন্যতম একটি ধনী রাষ্ট্রে। পেছনে গর্বে স্বপ্নে আশায় বুক বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে তার গরিব বাবা এবং গরিব বাংলাদেশ। ক্ষুধার্ত স্বপ্নবঞ্চিত রমজানকে যেই ধনী দেশ প্রবলভাবে টানে। সেখানকার চঞ্চল-জীবন জীবনের উদার স্টাইল তাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে তার কাছে মনে হতে থাকে কত ছোট্ট কত সংকীর্ণ আমার দেশ ও তার সভ্যতা। জীবনের বাঁকে বাঁকে আদবকায়দা রীতিনীতি বিধিনিষেধ। সে আরো ভেতরে ঢুকে দেখে কী অসীম স্বাধীনতা এখনকার জীবনে। আর এই স্বাধীনতাটা যেন জীবনে মরণে কোনোখানেই আহত না হয় তার জন্যে তারা নিজের পরিচয়ে বাবার নামটা পর্যন্ত লেখে না। অনেকে আবার জানেও না- তার সুনির্দিষ্ট কোনো বাবা ছিল কিংবা আছে কি না। কেউ কেউ তো আবার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে রাগে চোখ পাকায়। থরে থরে বিষয়টা তার কাছেও অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এবং সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমার পরিচয় থেকেও ‘বাবা’ বাদ। মাতা থাকুক। মাতা কোনো চাপের বিষয় নয়।

এক সময় দেশে ফিরে আসে রমজান। সঙ্গে বিদেশী বউ। ওঠে শহরের অভিজাত পাড়ায়। বাবা সংবাদ শোনে ছুটে যান ছেলের কাছে। রমজান সোজাসাপটা জানিয়ে দেয় দেখ বাবা! তোমাদের এই গরিব দেশের বাবা কালচার আমার একদম পছন্দ নয়। আর আমার ধনী দেশের শিক্ষিত বউও তোমাদের ওই বাবা-টাবা বুঝে না। ওসবকে ওরা ভীষণ বোঝা মনে করে। আমিও তাই ওটা ফেলে দিয়েছি। তুমি আর আমাকে ছেলে টেলে বলো না। ওসব যুগের সেকেলে কথা-বার্তা ভালো লাগে না।

বাবা রহম আলী গরিব হলেও পেশী এবং সম্মানবোধ দুটোই চাঙ্গা। ‘ভালো লাগে না’ বলতেই ‘তোর ভালো না লাগার কি অধিকার আছেরে হারামজাদা’ বলে কষে মারলেন এক আদি পিতৃচড়। চেঁচিয়ে ওঠল বিদেশিনী। গর্জনে উন্মাদপ্রায় রহম আলীও। বিদেশিনীর মধুর চিৎকারে ছুটে আসে ওপর তলার লোকগুলো বলতে লাগল কী এমন বলেছে যে, ওভাবে মারতে হবে। কেউ কেউ বলল এই জন্যেই তো আমরা পেছনে পড়ে আছি। আর রহম আলীর গর্জন শোনে পথ থেকে যারা ওঠে এসছিল ঘটনা শোনে তারা অবাক। কারণ বাবাকে যারা অস্বীকার করে তাদের কী ভাষায় গাল দিতে হয় সেই ভাষা তাদের পূর্বপুরুষরা শোনায়নি। বয়সে যে লোকটা পূর্ণ সাদা সেই অবশেষে রহম আলীর হাত চেপে ধরল। বলল তুমি কি ওর কথায় বাবা হয়েছ যে ও বললে বাবা আর না করলে না। চলো আমার সঙ্গে। এবার কথা খুঁজে পেল সবাই। বলল হ্যাঁ তাই তো! চল, চল। ওই হারামজাদাদেরকে এখানেই থাকতে দাও।

প্রশ্ন, রহম আলী কি অযৌক্তিক কিছু বলেছেন? আর চড়টা?

দুই.

দুনিয়াতে যাদের কোনো ধর্ম নেই তাদের সংখ্যা যতোই হোক আমরা ভাগ্যবান আমাদের ধর্ম আছে। আমাদের এরচেও বড় সৌভাগ্য হলো আমাদের ধর্মের ধর্ম আছে। নিজস্ব চিন্তা আদর্শ ও জীবনপদ্ধতি আছে আমাদের ধর্মের। ফলে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই একটা ছকবদ্ধ শৃঙ্খলা আমাদেরকে আগলে রাখে। গতিময় এক ঐত্যিপূর্ণ জীবপথ ধরে আমরা হাঁটছি দেড় হাজার বছর ধরে। আমাদের জীবন চিন্তা ও শৃঙ্খলায় কোথাও অসঙ্গতি ছেদ কিংবা ভাঙ্গন নজরে পড়লেই আমরা ছুটে যাই আমাদের ধর্মের কাছে। ধর্ম আমাদের পরম মমতায় তুলে দেয় পথে। ধরিয়ে দেয় অসস্থিতি কিংবা দুর্গতির উৎস। আমরা গতি পাই আমাদের জীবনে। ছাড়িয়ে যাই পৃথিবীর সকল জাতি ও গোষ্ঠীকে। নরম করে বললে এই যে জীবনের বাঁকে বাঁকে সুমন্ত্রণা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের স্বাধীন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও চিরচঞ্চল গতি ধর্মের এই সুমন্ত্রণাকেই ফতোয়া বলে। শাস্ত্রের ভাষায় বললে কুরআন হাদিস ইজমা কেয়াস নির্ভর জীবনজিজ্ঞাসার সমাধানই ফতোয়া। এ কোনো মানব-রচিত তন্ত্র নয়।

কুরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন ‘আর লোকে তোমার কাছে নারীদের সম্পর্কে ফতোয়া (ব্যবস্থা) জানতে চায়! বলে দাও, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে ফতোয়া (ব্যবস্থা) দিচ্ছেন… সূরা নিসা ৪: ১২৭

এভাবে কুরআন শরিফের এগার স্থানে ফতোয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এও লক্ষ্য করার মত উল্লেখিত আয়াতটিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে ‘আল্লাহু ইউফতিকুম’ আল্লাহই তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন পাক কুরআনে এমন স্পষ্ট বাণী থাকার পরও কি ফতোয়া নিয়ে কোনো মুসলমান প্রশ্ন তুলতে পারে?

পবিত্র ইসলামের ইতিহাস বলে এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাদের হৃদয়ের বাদশাহ আত্মার আত্মীয় প্রিয়তম নবী হযরত মুহাম্মদ সা. ততদিন এই ফতোয়াদান ছিল তাঁর অধিকার ও কর্তব্য। তাঁর বিদায়ের পর তাঁর সম্মানিত সাহাবীগণের মধ্যে অন্তত একশ’ তিরিশজন সাহাবী ফতোয়াদানের মসনদকে অলঙ্কৃত করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তারপর ক্রমাগত সেই সংখ্যা বেড়েছে। এবং নির্দিষ্ট অঙ্কের ভেতর থাকেনি। এই হলো ফতোয়ার মর্ম ও ইতিহাস। যে ফতোয়া আল্লাহ দিয়েছেন, নবী দিয়েছেন, সাহাবীগণ দিয়েছেন প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর কোনো পাজি আইনজীবি বজ্জাত কোনো অধ্যাপক কিংবা পামর কোনো সাংবাদিক যদি বলে ‘ফতোয়া বাদ’ তাহলে কি ফতোয়া বাদ হয়ে যাবে?

বদকপাল মাতাল আইনজীবি গোলাম রব্বানী ২০০১ সালে এমন একটি কলঙ্কিত রায়ই দিয়েছিল হাইকোর্ট থেকে। গর্জে ওঠেছিল মুসলিম বাঙলার সিংহ শার্দুলেরা। পরিণতিটা সবচে’ ভালো মনে থাকবার কথা আওয়ামী লীগের।

হালে বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার শুরু হয়েছে পুরনো বাঁদরামি। এরই মধ্যে মুফতী ফজলুল হক আমিনী সাফ ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন ফতোয়ার বিরোধিতার অর্থ কুরআন হাদিসের বিরোধিতা করা। ফতোয়া অস্বীকার করলে কেউ মুসলমান থাকে না। কোনো সরকার বা আদালত ফতোয়া নিষিদ্ধ করতে পারে না। ফতোয়া নিষিদ্ধ করলে সারা দেশে আগুন জ্বলবে।

আমার দেশ: ২৭,২,১১

ধনীর বাড়ির প্রহরী পোষা কুকুর হিসেবে খ্যাত দুই টাকা দামের একটি পত্রিকায় এই ঘটনাটি নিয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে এই ভাষায় ‘ফতোয়া বাদ হলে ফতোয়াবাজদের ব্যবসা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় ফতোয়াবাজরা আমিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন। আর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ফের চারদলীয় জোটে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে তৎপর হয়েছেন মুফতী আমিনী। রাজনীতির মাঠ গরম করতে আবারও হুংকার দিয়েছেন ফতোয়া আছে এবং থাকবে। কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার অধিকার আদালতের নেই।’

সংবাদজীবি পান্থ! ফতোয়ার বিপরীতে পৃথিবীর কোথাও এক কড়ি ফি নেয়ার রেওয়াজও যে নেই তাও জানা নেই। তোমরা সংবাদজীবি। তাই ভেবেছ যারা ফতোয়া দেন তারাও ফতোয়াজীবি। পত্রিকা ব্যবসা বটে। ধর্ম ব্যবসা নয়। ওই যে গভীর রাতে ধ্যানমগ্ন সাধককে দেখে চোর ভাবে-এই তো আমার অগজ! তোমাদের অবস্থাও তাই। তবে রহম আলী কষে চড় বসিয়ে এবং তোর কি অধিকারের হারামজাদা’ বলে যদি ঠিক কাজটি করে থাকেন আমিনীও মন্দ কিছু বলেননি। অন্তত বাবাকে বাদ দেয়া যাদের পূর্বপুরুষদের চরিত্র নয় তারা স্বীকার করবেন অবশ্যই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.