নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মতে, নিজের সম্পর্কে বলা অনেক কঠিন একটা কাজ। তাই কঠিন এই কাজটা না হয় অসম্পূর্ণ থেকে থাক।।।

ফাহিম জামান ।।

।।।

ফাহিম জামান ।। › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেরো বছর বয়সে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছায় বাবার কাছ থেকে ষোল টাকা নিয়ে যে ছেলে ঘর ছেড়েছিল তিনি আজ আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজউদ্দিনের।।

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭



তেরো বছর বয়সে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছায় বাবার কাছ থেকে ষোল টাকা নিয়ে যে ছেলে ঘর ছেড়েছিল তার প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্টরি ছিয়াত্তর বছর পর বিক্রি হল ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায়

বিদেশ নয়, দেশের কথা। ফরেনার নয়, বলছিলাম, আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজউদ্দিনের কথা। জাপান টোব্যাকো কোম্পানির এই বিনিয়োগ এ যাবৎকালের মধ্যে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে একক বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ।

বণিকবার্তা ইত্তেফাকসহ বেশ কিছু পত্রিকা ও ব্লগে শেখ আকিজউদ্দিনের জবানীতে তার জীবন সংগ্রামে বর্ননা আছে, আগেও পড়া ছিল, আজ আবারও আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। নিচে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হল-

বাবার কাছ থেকে মাত্র ১৬ টাকা নিয়ে বাড়ি ছাড়ি। গন্তব্য কাছাকাছি মহানগর কলকাতা। সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিলাম শিয়ালদহ রেলস্টেশনে। সারাদিন ঘুরিফিরি, কাজের সন্ধান করি আর রাত হলে স্টেশনের এক কোণে কাগজ বিছিয়ে শুয়ে পড়ি। সারাদিনের খাবার ছয় পয়সার ছাতুÑ এর বেশি খরচ করার সুযোগও ছিল না। কারণ টাকা দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল, কিন্তু উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

এর মধ্যে স্থানীয় জাকারিয়া হোটেলের মালিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। সহৃদয় এই ভদ্রলোক আমাকে তাঁর হোটেলের এক পাশে আশ্রয় দেন। আমিও চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসার চিন্তা করতে থাকি। কিন্তু পুঁজির অভাবে তাও সম্ভব হচ্ছিল না।

অনেক ভেবে-চিন্তে কমলা লেবু বিক্রির ব্যবসা শুরু করলাম। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। পাইকারি দরে কমলা লেবু কিনে হাওড়া ব্রিজের আশেপাশে ফেরি করে খুচরা বিক্রি করি। এজন্য পুলিশকে দুই টাকা ঘুষও দিতে হতো!

এর মধ্যে আরেকটা সুবিধাজনক ব্যবসার সন্ধান পেয়ে যাইÑ ভ্রাম্যমান মুদির দোকান। সমস্যা হলো, অন্য দোকানদাররা ছোট ছোট মজার হিন্দি ছড়া কেটে পণ্য বিক্রি করতো। আর আমি একদমই হিন্দি জানতাম না। বাধ্য হয়ে ব্যবসার প্রয়োজনে হিন্দি শিখতে শুরু করলাম। অল্পদিনে বেশ রপ্তও হয়ে গেল।

মুদির ব্যবসা যখন বেশ জমজমাট, তখন ঘটলো আরেক বিপদ। হঠাৎ একদিন পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেল। বিচারে তিন দিনের জেল ও জরিমানা হলো। সেটা ছিল আমার জীবন-সংগ্রামের উপর বড় রকমের আঘাত। জেল থেকে বের হয়ে এসে রাগে অভিমানে কোনোকিছু বিবেচনা না করে পুরো দোকানটি বিক্রি করে দিলাম!

আবার সেই অনিশ্চিত যাত্রা; তবে খুব বেশি দিন নয়। পরিচয় হলো এক পেশোয়ারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাঁর হাত ধরে পাড়ি জমালাম পেশোয়ারে। দোকান বিক্রির টাকাগুলো হাতে ছিল; তাই দিয়ে আবার ফলের ব্যবসা শুরু করলাম। ব্যবসার স্বার্থে পশতু ভাষা রপ্ত করে নিলাম। এভাবেই কেটে গেল আরো দুই বছর।

তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকাল। মোটামুটি ১০ হাজার টাকা পুঁজি হলে বাবা-মায়ের কাছে থাকবো বলে বাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু সুখ বেশি দিন কপালে সইলো না। অল্প দিনের ব্যবধানে বাবা-মা দু’জনেই মারা গেলেন। তখন আমি সবে ১৯ বছরের তরুণ।

ঠিক করলাম, এবারে যা-ই করি, নিজ এলাকায় করবো। কিন্তু কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেই সময়ের বিখ্যাত বিধু বিড়ির মালিক বিধুভূষণ-এর ছেলে আমার বন্ধু। সেই সুবাদে বিড়ি তৈরি করে বিক্রি করার ধারণাটি মাথায় আসে।

১৯৫২ সালে আমি প্রথম বিড়ির ব্যবসা শুরু করি। আরো দুইজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বিড়ি তৈরির কাজে নেমে পড়ি। অল্পদিনের মধ্যে লাভের দেখা পাই। একইসঙ্গে বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশে একটি মুদি দোকান প্রতিষ্ঠা করি।

১৯৫৪-৫৫ সালের দিকে আমার দোকানে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। হঠাৎ এক রাতে আগুন লেগে পুরো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে আমি আবার পথের ফকির হয়ে গেলাম! কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও মনোবল হারাইনি। আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, আবার শূন্য থেকে শুরু করবো, উপরওয়ালা নিশ্চয় সদয় হবেন।

পরিচিতজনদের সহযোগিতায় আমি আবার নতুন দোকান প্রতিষ্ঠা করলাম। সততা, নিষ্ঠা আর একাগ্রতার ফলে আমার ঘুরে দাঁড়াতেও সময় লাগেনি। কিছুদিনের মধ্যেই আমি লাখখানেক টাকার মালিক হয়ে গেলাম।

এবারে শুরু করলাম ধান, পাট, চাল, গুড় আর ডালের ব্যবসা। সবক্ষেত্রেই আমার মূলধন ছিল বিশ্বস্ততা। সবাই নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতো আমাকে ।ষাট-এর দশকে আমি যশোরের সীমান্তবর্তী নাভারন পুরাতন বাজারে চলে আসি।

এ সময় স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোজাহার বিশ্বাস আমাকে বেশ সহযোগিতা করেন। এখানে এসে নতুন করে বিড়ির ব্যবসা শুরু করি; গড়ে ওঠে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি। আস্তে আস্তে অন্যান্য ব্যবসাতেও মনোনিবেশ করি।

একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় আকিজ তামাক ফ্যাক্টরি, আকিজ নেভিগেশন, আকিজ জুট মিল, আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি, আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। পাশাপাশি কিছু সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছি। বর্তমানে প্রায় চল্লিশ হাজারের অধিক কর্মী আমার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।

- শেখ আকিজউদ্দিন

--

উইকি'র তথ্যমতে আকিজ গ্রুপে মোট কোম্পানির সংখ্যা উনত্রিশটি। ২০০৯ সনে আকিজ গ্রুপ ৩৯০ মিলিয়ন ইউরো কর প্রদান করেছে দেশের সর্বোচ্চ করদাতার খেতাব অর্জন করে।

দৈনিক ইত্তেফাকের ২০১৬ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ৫০ হাজার কর্মী আকিজ গ্রুপে কর্মরত ফলে প্রায় তিন লাখ মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা শেখ আকিজউদ্দিন মৃত্যুর আগে করে যেতে পেরেছেন।

তিনি সামান্য ফেরিওয়ালা ছিল, আজ উনার কোম্পানি জাপানের টপ বিজনেসম্যানরা ১.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নিচ্ছে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আকিজ সাহেবের বিজনেস স্ট্রাটিজি নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রীতিমত গবেষণা হওয়া উচিৎ। অথচ মোটিভেশনের জন্য আমরা ভাড়া করে নিয়ে আসি 'আমি সেলেব্রেটি' খ্যাত ইউটিউবারদের।

শেখ আকিজউদ্দিনের মতো মানুষেরা অসামান্য বিপ্লব আমাদের দেশে ঘটিয়ে গেছেন। নীরবেই। (সংগ্রহীত)

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬

বাকপ্রবাস বলেছেন: স্বপ্নের মতো মনে হয়

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩১

ফাহিম জামান ।। বলেছেন: সবই বাস্তব

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯

কলাবাগান১ বলেছেন: এক্সিলেন্ট লাইফ স্টোরি
উন্নত দেশের লোকজন ধুমপান ত্যাগ করছে...বেনিয়ারা তাই উন্নয়নশীল দেশের লোকজন কে ধুমপান কড়ানোর জন্য এভাবেই বাজার সম্প্রসারন করছে....তারা বিড়ি কোম্পানী কিনবে কিন্তু মিল্কভিটার কোম্পানী কিনবে না....

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২

ফাহিম জামান ।। বলেছেন: আজ্ঞে সঠিক কথা কইয়াছেন

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


ইডিয়ট আকিজ উদ্দিনের কারণে কমপক্ষে ১০ কোটী লোক অসুস্হ হয়ে "অকালে মৃত্যবরণ" করেছে; ইডিয়টকে ফাঁসী দেয়ার দরকার।

জাপানীরা এটা কিনেছে ভালো হলো, এখন থেকে ঐগুলোকে বন্ধ করা হবে শিক্ষিত বাংগালীদের দায়িত্ব, জাপানীরা কেনাতে বন্ধ করা সহজ হবে।

পোষ্টে আপনার যে মনন দেখা যাচ্ছে, এতে বুঝা সম্ভব আপনার ভাবনাশক্ত নেই বললেই চলে।

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪

ফাহিম জামান ।। বলেছেন: আমিতো এখানে ধুমপানের পক্ষে বিপক্ষে কথা বলিলি কোন। তাহলে ভাবনাশাক্ত নেই বলাটা জায়েজ হল কি?

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি এই ইডিয়ট আকিজ উদ্দিনকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে দেখেছেন; কারণ, আপনার ভাবনাশক্তি সীমিত

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

ফাহিম জামান ।। বলেছেন: তা হতে পারে

৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৩

রাকু হাসান বলেছেন:








ইচ্ছা পরিশ্রম সততা নিষ্টা থাকলে যে মানুষের স্বপ্ন বৃথা যায় না ,তার জ্বলত্ব প্রমাণ হলো তিনি । ভাল বলেছেন খুব ।

৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: একজন সাহসী আকিজ উদ্দিনকে আমার পক্ষ থেকে অবশ্যই স্যালুট

৭| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: উনারা পেরেছেন, আমরাও একদিন পারব ইনশাআল্লাহ।

৮| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এত পরিশ্রমে অর্জিত এত টাকার সম্পদ ফেলে রেখে সেই তো চলে যেতেই হলো!

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০০

ফাহিম জামান ।। বলেছেন: এটাই প্রকৃতিগত নিয়ম

৯| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯

এ.এস বাশার বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলাম ভাই.......
সেলুট..... শুভকমনা আপনার জন্য...

১০| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম লেখা পড়লে আমার অনেক ভালো লাগে।
মনে শান্তি পাই। ভরসা পাই।

১১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪

অপ্‌সরা বলেছেন: একেই বলে মনোবল, ইচ্ছা ও পরিশ্রম!

১২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

মোঃ মঈনুদ্দিন বলেছেন: নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণার অনুপম দৃষ্টান্ত! যদিও চাঁদ্গাজি সাহেব ক্ষেপে গিয়ে গালমন্দ করেছেন। হ্যাঁ, তিনি বিড়ি বিক্রেতা হতে পারেন তবে তার জীবন কাহিনী সংগ্রামে পরিপূর্ণ। ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

১৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:০১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একজন পরিশ্রমি সফল উদৌক্তার উদাহরণ।

অবশ্যই তিনি যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছন জীবনের প্রতি পদক্ষেপে। তাইতো এ বিশাল অর্জন।
জানা ছিল না। জানানোয় ধন্যবাদ।

১৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:০৬

আলআমিন১২৩ বলেছেন: চাদগাজীর কাজই হলো অন্যের দোষ ধরা।যত্তসব। এগুলি করে তার লেখার প্রতিভার বারোটা বাজাচ্ছেন।

১৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


@আলআমিন১২৩ ,

এই ধরণের আকিজ উদ্দিন ফুদ্দিন আমার লেখার বিষয় নয়, এবং আপনিও কোনদিন লেখায় স্হান পাওয়ার কথা নয়।

১৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

শিখণ্ডী বলেছেন: আকিজ উদ্দিন যখন বিড়ির ব্যবসা শুরু করে তখন সমাজ এতটা সচতন ছিল না; থাকলে ব্যবসা করা কঠিন হত। তবু বলতেই হয় তার সংগ্রামী জীবন সাফল্যে পূর্ণ। আমার পরিচিত একজন(চামড়া ব্যবসায়ী) বলেছিল অন্যদের চেয়ে আকিজ উদ্দিন চামড়া কিনতে বেশি দাম দিত এবং নিজে ঘুরে ঘুরে চামড়া পছন্দ করত। চলাফেরা খুব সাধারণ ছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.