নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের পাঠশালা

সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...

ফাহমিদুল হক

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াই। ফিকশন ও নন-ফিকশন দুই ধরনের লেখাই লিখি। গল্প লিখি, প্রবন্ধ লিখি, অনুবাদ করি। 'যোগাযোগ' নামের একটি একাডেমিক পত্রিকা সম্পাদনা করি। আপাতত চলচ্চিত্র-অধ্যয়ন এলাকায় উচ্চতর গবেষণা করছি।

ফাহমিদুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সতত জনম; মূল: মৃণাল সেন

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৩৯

[এই অনুবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায়। পোস্টটি দিয়েছিলাম সামহোয়ারে রেজিস্ট্রেশনের পরপরই। অনেকের চোখেই এটা পড়েনি বলে অনুমান করি। তাই এই পুনঃপোস্ট।]



ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে ২০০৪ সালের শেষভাগে। দিল্লিস্থ স্টেলার পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৩১০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির নাম 'অলওয়েজ বিইং বর্ন'। ইংরেজি থেকে অনূদিত নির্বাচিত অংশটিতে মৃণাল সেন দেশভাগ, কলকাতা গমন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে নিজের পুরনো বাড়ি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা, কবি জসীমউদ্দীনের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাকার বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।

...



আমার পিতা-মাতা কখনোই ভাবেননি তাদের প্রিয় স্বদেশ ছাড়তে হবে। কিন্তু নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিল এবং পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলো। পরিস্থিতির ফেরে বাধ্য হয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে দেশত্যাগ করবেন। জলের দরে সব বিক্রি করে দিয়ে তারা সপরিবারে কলকাতায় উপস্থিত হলেন, 'উদ্বাস্তু' পরিচয়ে। বাড়ি ছাড়ার পূর্বে যিনি আমাদের সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন তার কাছে বাবা ছোট্ট একটা অনুরোধ করেন: 'আপনাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে না ... কিন্তু চেষ্টা করে দেখবেন ... যদি সম্ভব হয় ... পুকুরের পাশে যে-ছোট্ট স্মৃতিস্তম্ভটি আছে, তা যেন রক্ষা পায়।'



স্মৃতিস্তম্ভটি হলো আমাদের ছোট বোন রেবার। সে পাঁচ বছর বয়সে মারা যায়। সে পা পিছলে পুকুরে পড়ে যায় এবং ডুবে মারা যায়।



রেবা আমাদের সব ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল। সাত ভাই ও পাঁচ বোনের বিরাট পরিবারে সে বড়ো হচ্ছিল। আমি ভাইদের মধ্যে ষষ্ঠ ছিলাম এবং রেবা বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল। আর সে ছিল সবচাইতে আদরের, প্রতিবেশীরাও তাকে খুব ভালবাসতো। যতদূর মনে পড়ে সেই দুর্ভাগা দিনটি ছিল এক ছুটির দিন, আমরা সবাই দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। রেবা ঘাটে গিয়েছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে ঘাটটি চমৎকার ছিল -- কয়েকটি ধাপ পুকুরের পানিতে নেমে গেছে; পানির কয়েক ইঞ্চি ওপরে ধাপের সঙ্গে বাঁশনির্মিত একটি মাচা -- পুকুরের এক-চতুর্থাংশ অঞ্চল মাচাটি অতিক্রম করে গেছে। আমরা সবাই বাঁশের মাচা ধরে হাঁটতে পছন্দ করতাম। হাঁটার সময়ে দুপাশে পানিকে অতিক্রম করে যেতাম, কখনো পানিতে পা ডুবিয়ে মাচায় বসতাম। রেবাও তাই করতো। আর সে মাচার একেবারে সামনের প্রান্তে বসে গুনগুন করে গান গাইতে পছন্দ করতো। কিন্তু সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল কেউ জানে না, কারণ কেউ সেখানে ছিল না। আমরা সবাই পরে ধরে নিই মাচার একেবারে সামনে গিয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে সে বসেছিল এবং হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে আমরা তাকে অনেকণ ধরে দেখছিলাম না, প্রতিবেশীদের বাড়িতে তাকে খোঁজা হলো এবং পাওয়া গেলনা; অবশেষে মেজদা, আমার সাঁতারু দাদা, পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন -- অল্পক্ষণের মধ্যেই তাকে উদ্ধার করলেন, মৃত অবস্থায়। পানির নিচেই তার মৃত্যু হয়েছিল।



রেবার মৃত্যুর খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সবাই দেখতে আসে, কারণ সবাই তাকে ভালবাসতো। কলকাতা থেকে আমাদের সবচেয়ে বড়ো ভাই শৈলেশদা আসলেন। তার সঙ্গে এলেন তার প্রিয় বন্ধু জসীমউদ্দীন। জসীমদার কাছে রেবা ছিল অনেক কিছু। জসীমদা আমাদের কারো কাছ থেকে একটা-দুটো কথা শুনলেন এবং সময় নষ্ট না করে ঘাতক-ঘাটের কাছে গেলেন। তাকে চা খেতে বলা হলো, তিনি রাজি হলেন না। দুপুরে তাকে খেতে দেয়া হলো, সামান্যই খেলেন। খুব সামান্য। বিকেলে তিনি আমার মাকে ডাকলেন। মা ঘাটের কাছে গেলেন এবং মাকে জড়িয়ে ধরে জসীমদা শিশুর মতো কেঁদে উঠলেন। তারা কিছুণ নীরব রইলেন এবং এরপর জসীমদা মাকে রেবার একটি অজানা কথা জানালেন। রেবার এরকম অনেক গোপন কথা ছিল যা কেবল জসীমদাই জানতেন। তিনি এক মাস আগে জসীমদাকে বলা রেবার একটি অজানা কথা মাকে জানালেন। তিনি জানালেন, রেবা তাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল যে একবার তাকে সারারাত জাগার সুযোগ দিতে হবে এবং দেখতে দিতে হবে রাতের বেলা কীভাবে ফুল ফোটে।



অনেক পরে মা রেবা-সম্পর্কিত এইসব বিবিধ ঘটনা আমাদের শুনিয়েছিলেন।



জসীমদার যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়েন, তখন থেকেই তার মধ্যে একটা কবি-ভাব ছিল। বয়সকালে তিনি বিখ্যাত কবি হয়ে ওঠেন এবং রবীন্দ্রনাথও আমাদের জসীমউদ্দীনকে অনেক মূল্য দিতেন। তার অনেকগুলো কাসিক কাব্যোপন্যাসের মধ্যে নকশী কাঁথার মাঠ অবলম্বনে স¤প্রতি কলকাতায় একটি উঁচুমানের কাব্যনাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। তার সব কবিতা ও গান পল্লীর মাটি থেকে উৎসারিত হয়েছে।



সেইদিন সূর্যাস্তের পরে জসীমদা ঘাট থেকে ফিরে আসেন এবং আমাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। আমাদের বাসা থেকে চার-পাঁচ মাইল দূরে গোবিন্দপুর গ্রামের পিতৃনিবাসে যাবার পূর্বে তিনি মার হাতে ঘাটে বসে থাকা অবস্থায় লিখিত দীর্ঘ একটি কবিতা দিয়ে যান। তিনি মাকে বলে যান সেটা কিছুতেই তিনি যেন প্রকাশ না করেন, কখনোই নয়। এটা কেবল তার কাছেই থাকবে। কবিতাটি ছিল রেবাকে নিয়ে।



১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মা কবিতাটি তার নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। এটা একটি খামে এতোবছর ধরে রতি ছিল। এমনকি যখন তিনি বাবার সঙ্গে দেশত্যাগ করছেন, তখনও তিনি সেটা সঙ্গে নিতে ভোলেননি। তার দাহের সঙ্গে সঙ্গে কবিতাটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।



সুদীর্ঘ সময় পরে, ১৯৯০ সালে, দেশত্যাগের ৪৭ বছর পার হয়ে যাবার পরে সেই ছোট শহরের সেই বাড়ির সামনে আমি আর আমার স্ত্রী দাঁড়াই। এটি এখন এক স্বাধীন রাষ্ট্র, নাম বাংলাদেশ। এ হলো সেই বাড়ি যেখানে আমি আমার শৈশব এবং বেড়ে ওঠার কাল কাটিয়েছি। ৪৭ বছরে মালিকবদল হয়েছে, কিন্তু মাত্র একবার। যে-ব্যক্তিটি আমার বাবার কাছ থেকে বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি কিনেছিলেন, নতুন ক্রেতার কাছে বিক্রির সময়ে তিনি বাবাকে দেয়া সেই ‘প্রতিজ্ঞা’র কথাটি জানাতে ভোলেননি। তিনি করাচি চলে যাবার পূর্বে নতুন ক্রেতাকে পুকুরপাড়ের সেই স্মৃতিস্তম্ভটি রা করার কথা বলে যান। এই ৪৭ বছরে, আশ্চর্য, আমি একবারও আমার দূর অতীতের কথা মনে করিনি। এটা কি এজন্য যে এই দীর্ঘ সময়ে আমি দেশবিভাগের সামান্যতম যন্ত্রণাও অনুভব করিনি। তাই যদি হয়, তবে এখন কেন? গত ১৫ বছরে ঢাকায় আমি এতোবার এসেছি, আমন্ত্রণ পেয়ে, কেন কোনোবারই আমার এখানে আসতে ইচ্ছে করেনি। কেন এসময়ে আমি প্রায় আধা ডজন বার আমার নিজস্ব শহরে যাবার আমন্ত্রণ উপো করেছি? ঢাকা থেকে ফরিদপুর গিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসা তো যেতই! এতোদিন পরে, ৪৭ বছর পরে কেন এসেছি? সত্যি বলতে, আমার কোনো উত্তর জানা ছিল না।



আমার শৈশবে এবং বেড়ে ওঠার কালে ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাওয়াটা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হলেও প্রায় সারাদিন লেগে যেত। সবসময়ই নদীপথে যেতে হতো, নারায়নগঞ্জ থেকে এমু বা অস্ট্রিচ বা ওরকম নামের কোনো দোতলা জাহাজে চড়ে দুরন্ত পদ্মা নদী দিয়ে আমাদের অভিযাত্রা করতে হতো। মাঝে দুমদিম নামের ছোট একটি ফেরিতে উঠতে হতো, দুপাশে পাট ও ধানতে ফেলে একটি সরু খাল দিয়ে আমাদের শহর ফরিদপুরে যেতাম। এখন যাতায়াত-ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে যন্ত্রচালিত যানে করে, পদ্মায় ফেরি পার হয়ে, ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘণ্টায় ফরিদপুরে যাওয়া যায়।



এবারে, ১৯৯০ সালে, আমি ও আমার স্ত্রী ঢাকায় পৌঁছার পরেই ঠিক করলাম ফরিদপুরে যাবো, কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো বিশেষ কারণই ছিল না। আমরা ঢাকায় এসেছি তিন দিনের জন্য, একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র-উৎসবে যোগ দিতে। আমরা ঠিক করলাম চতুর্থ দিনে ফরিদপুরে যাত্রা করবো। আমাদের সঙ্গে ছিল আমার তরুণ ক্যামেরাম্যান শশী আনন্দ, যার পিতা-মাতা ভারতে এসেছিলেন রাওয়লাপিন্ডি থেকে। তারা দেশভাগের বছরেই এসেছিলেন। তারা যখন কলকাতায় আসেন, তখন তারা উদ্বাস্তু ছিলেন, কিন্তু শশী তো তা নয়। সে তো ভারতে জন্মেছে, কলকাতায়। সে যখন বড়ো হয়েছে তার পিতা-মাতা তাদের নিজেদের শহর সম্পর্কে অনেক গল্প করেছেন। রাওয়ালাপিন্ডিতে না গেলেও, শশী পূর্বাংশে আমার শহর কেমন, তা দেখার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।



সেই ভ্রমণের কথা ভোলা যায় না। আমরা তিনজন ‘বিদেশী’Ñ আমি, আমার স্ত্রী গীতা সেন এবং শশী। আর আমাদের সঙ্গে গাইড হিসেবে আছেন আমার বন্ধু আবুল খায়ের। তিনি বড়োই মজার মানুষ।



শহরের যত কাছাকাছি আসছিলাম, আমাকে উৎকণ্ঠিত দেখাচ্ছিল।

কী হয়েছে? আমার গাইড জিজ্ঞেস করলেন।

খালটা তো সামনেই, আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম, আর তাকে চমকে দেবার জন্য বললাম, কাঠের ব্রিজটা!

আবুল খায়ের বললেন, কাঠের ব্রিজটা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। খানিক পরেই আপনি সেখানে একটি কংক্রিটের ব্রিজ দেখবেন, ব্রিজটার বয়স পনেরো বছর।



আমরা ব্রিজটি অতিক্রম করার পর সোজা চললাম এবং একটি লেনে বাঁক নিলাম। সবকিছুই পরিচ্ছন্ন, সম্ভ্রান্ত, শ্রদ্ধেয় দেখাচ্ছিল। এই এলাকাটা আমাদের সময়ে অপরিচ্ছন্ন ও নিষিদ্ধ ছিল। আমাদের গাড়িটি একটি বাড়ির সামনে থামলো। আমরা নামলাম।



অভ্যর্থনা ও ভুরিভোজনের পরে আমরা খানিকটা বিশ্রাম নিলাম। এরপর আমরা 'অতীত' অনুসন্ধানে বের হলাম। পায়ে হেঁটে।



স্মৃতির পাতা থেকে সবকিছু একের পর একের হুড়োহুড়ি করে আসতে থাকলো। প্রায় একশ বা তারও বেশি স্থানীয় মানুষ আমাদের পেছন পেছন আসছিল। তারা আমাকে চিনেছে, দুই-তিনজন করে তারা জড়ো হতে থাকলো এবং বাড়িটি খুঁজতে খুঁজতে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। আমি তখন উত্তেজিত, কারণ প্রতি পদেক্ষেপ একধরনের অনিশ্চয়তা আমাকে গ্রাস করছিল। স্মৃতি আর বাস্তবের মধ্যে কতটুকু মিল পাওয়া যাবে? আমি স্থানীয় লোকজনকে কোনো কথা বলতে দিতে চাচ্ছিলাম না, আমি নিজেই সবকিছু খুঁজে নিতে চাইছিলাম। সেটা একটা অভিজ্ঞতা ছিল যা আমি কখনোই ভুলবো না। এবং আমি আমার বাড়ি আবিষ্কার করলাম, একাই। ৪৭ বছর পর!



আমি যখন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, আমার সামনে তখন কিছু লোক এলোমেলা দাঁড়িয়ে। কেউই কথা বলছিল নাÑ আমাদের সঙ্গেও না, তারা নিজেরাও না। সেই নীরবতা ছিল আবেগসঞ্চারী।



গীতা আমাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো, সবকিছু চিনতে পারছো? লোকগুলোকে?



আমি মাথা নাড়লাম। গীতা আমাকে স্পর্শ করলো, আলতোভাবে। আমার কাঁদতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু কাঁদলাম না।



কেউ একজন পেছন থেকে এগিয়ে এলো। সে বললো আমার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনিই আমার বাড়ির নতুন মালিক। ঐ মুহূর্তে সাধারণ গৃহবধূদের মতো দেখতে মাঝবয়েসী এক মহিলা এক গোছা ফুল আমার স্ত্রীকে দিয়ে হাসিমুখে বললেন, আপনি আপনার শ্বশুরবাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন।

গীতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

মহিলা এরপর আমাকে বললেন, আসুন, পুকুরপাড়ের স্মৃতিস্তম্ভ দেখবেন।

আমি হতবাক। গীতাও, সে আমার কাছ থেকে আমার বোনটি সম্পর্কে সবকিছুই শুনেছিল।

গৃহবধূটি আবার বললেন, আপনার বোন রেবার স্মৃতিস্তম্ভ।

গীতা আর আমি পরস্পরে দিকে তাকাই। আমার গলা বাস্পরুদ্ধ হয়ে ওঠে।

আসুন না! তিনি আবার বললেন।



হঠাৎ আমার জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর কথা মনে পড়ে। আততায়ীর হাতে নিহত হবার পূর্বে তার যে অনুভূতি হয়েছিল তা আমি অনুমান করতে চেষ্টা করলাম। মহাত্মা যদি এখানে থাকতেন!



যদি আমি গর্বের সঙ্গে আমার বাবাকে বলতে পারতাম যে তার ছোট্ট রেবার ছোট্ট স্মৃতিস্তম্ভটি কী মমতার সঙ্গে রা করা হয়েছে! রা করেছেন তারাই, যারা তার সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন। মালিকানার হাতবদল হলেও স্মৃতিস্তম্ভের কিছু হয়নি। পুকুরপাড়ে ছুটে যাই।



আমি যদি আমার মাকে বলতে পারতাম যে তার মৃদুভাষীয় মেয়েটি এখনও ঘাতক-ঘাটের পাশে আছে, যে-ঘাটে জসীমদা সারাদিন কাটিয়ে একটি দীর্ঘ কবিতা লিখেছিলেন।



হঠাৎ করে আমার চোখের সামনে ঝিলিক দিয়ে ওঠে অনেক দিনের হারিয়ে যাওয়া ছেলের মায়ের বুকে আলিঙ্গনাবদ্ধ হবার দৃশ্যটি। ঘটনাটি ছিল মা ও জসীমদার শেষ সাাতের। মায়ের মৃত্যুর তিন বছর আগেকার কথা। সম্ভবত জসীমদা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন।



সেটা ছিল এক স্মরণীয় মুহূর্ত। জসীমদা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ডি.লিট. উপাধি পেলেন। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে, কিন্তু তিনি কলকাতায় থেকে গেলেন। তিনি অনেকবার আমাকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু আমি কলকাতার বাইরে ছিলাম। আমি ফিরে এলে তাকে ফোন করলাম। তিনি আমাকে দ্রুত তার বন্ধুর বাড়িতে যেতে বললেন, যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন এবং 'মা'র কাছে নিয়ে যেতে বললেন। মা তখন আমার তৃতীয় ভাই গণেশ-এর সঙ্গে শহরের দক্ষিণাংশে নাকতলায় অবস্থান করছিলেন। মা তখন খুব অসুস্থ, শয্যাগত, হৃদরোগী। আমি ফোনে জসীমদার কথা বললাম এবং আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়ির দরোজায় উপস্থিত হলাম। যেইমাত্র গাড়িটি তার ইঞ্জিনের গর্জনের মাধ্যমে বাড়ির সামনে থামলো, আমরা শুনলাম মা ডাকছেন, জ-সী-ম।

ম-া-া। জসীমদা সাড়া দেন।



জসীমদা সময় ব্যয় না করে গাড়ি থেকে দৌড়ে বেরুলেন। চকিতের মধ্যে দু-জনকে বাড়ির উঠোনে দেখলাম। তারা আলিঙ্গনাবদ্ধ, মা ও ছেলে। তারা বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলেন।



ধীরে ধীরে আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম এবং বারান্দায় বসলাম। আমি তাদের খানিক দূর থেকে দেখছিলাম -- তাদের এই মিলন আমাকে আবেগাপ্লুত করে তোলে।



আমার একজনের কথা মনে হলো। ঋত্বিকের চেহারা মনে পড়লো -- ঋত্বিক ঘটক, যে দেশবিভাগের ঘটনাগুলো নিয়ে খুবই তাড়িত ছিল! সারাজীবন ধরে! তার কথায়, তার ছবিতে দেশবিভাগ আর দেশবিভাগ।



'সময় বদলেছে এবং আমিও বদলেছি,' দেশবিভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে আমার বাবা বলেছিলেন। আমার বাবা এটা বলেছিলেন আমাকে এবং আমার বন্ধুদের -- সলিল (চৌধুরী), ঋত্বিক (ঘটক), তাপস (সেন), কলিম (শরাফী) এবং সব বন্ধুর প্রিয়তম বন্ধু নৃপেনকে (গঙ্গোপাধ্যায়)। বাবা খুব সাহসী ছিলেন, নিজেকে কখনোই উদ্বাস্তু ভাবতেন না এবং ঋত্বিকের মতো দেশভাগের যন্ত্রণায়ও ভুগতেন না।



ছবির লিঙ্ক: http://www.mrinalsen.org/

মন্তব্য ৪৮ টি রেটিং +১৭/-০

মন্তব্য (৪৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:০২

সূর্য বলেছেন: অসাধারন কিছু অংশ আপনি অনুবাদ করে দিয়েছেন ফাহমিদ! যদিও অনুভুতিগুলো মৃণাল সেনের একান্তই নিজস্ব কিন্তু ব্যক্তির সীমানা ছাড়িয়ে তা আমাদেরকেও আপ্লুত করে।
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:১৫

ফাহমিদুল হক বলেছেন: বইটার ঐ অংশটাই মনে হয়েছে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক হবে। তাই অনুবাদ করতে প্ররোচিত হই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:০০

মুকুল বলেছেন: ধন্যবাদ

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:২৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনাকেও

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:০২

দিগন্ত বলেছেন: অসাধারণ লেখা। পড়ে চোখে জল আসার মত ... তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:১৬

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আসলেই, খুব টাচি। তার ইংরেজিটাও খুব চমৎকার।

৪| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:৪০

নাভদ বলেছেন: অসাধারন ! প্রিয় পোস্ট।

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:৪৮

ফাহমিদুল হক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:৫৩

তারিক টুকু বলেছেন: অনেক দিন পর একটি অসাধারণ পোস্ট পড়লাম।

সোজা প্রিয়তে রাখলাম।

+++++++++++++++++++

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:০৩

ফাহমিদুল হক বলেছেন: অনেক প্লাস দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রিয়তে রাখার জন্যও।

৬| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:০৭

এস্কিমো বলেছেন: অসাধারন লেখা।

ধন্যবাদ চমৎকার লেখার জন্যে।

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১৮

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৭| ১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:০৯

মৈথুনানন্দ বলেছেন: ঝরঝরে অনুবাদ। বড়ো লেখা হয়েও এক টানে অনায়াসে পড়ে ফেলা যায়। এর রহস্য বা গায়কীটা ( লেখার ক্ষেত্রে এর য়্যান্যালগ্যাস কি? ) অবশ্যই শিখতে হবে। তবে একটু অন্য কথা বলি। ভারতীয় তথা বিশ্ব বা যে কোনো চলচিত্র আলোচনায় রায়, ঘটক আর সেনকে এক সাথে উচ্চারণ করাটা একটা নর্মে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি আবার প্রথম দু জনকে এক কাতারে ফেলার পক্ষপাতী, কারণ এরা হলেন creme de la creme, imho. আমার কাছে মৃণাল সেই ব্যান্ডে অবস্থান করেন - যে খানে কি না আডুর গোপালকৃষ্ণনের মতো পরিচালকেরা আছেন। হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে "দিল তো পাগল হায় - একটি নেপালী উপকথা"র ডিলু দর্জেও ঠিক ঐ একই কারণে রে আর ঘটক সাবের কথা বলে!

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১৮

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আমারও তেমনই মত। মৃণাল গ্রেট, তবে একটু বেশি পলিটিক্যালি ভোকাল -- 'মহাপৃথিবী'র কথাই ধরুন। রে ইউনিভার্সাল, পশ্চিমা দর্শন আর এসথেটিকস প্রকটিত তাতে, অপু ট্রিলজির মতো ভারতীয় ছবি করার পরেও। কিন্তু ঘটক পলিটিক্যাল হয়েও ভারতীয়। ঘটকের এপ্রিসিয়েশন দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে হয়। অথচ জীবদ্দশায় তার কোনো গ্রাঁপি নাই। বিশেষত তার ফিল্ম এসথেটিকস একেবারে ভারতীয়, যাত্রার মতো মেলাড্রামাটিক, ;যুক্তি তক্কো গপ্পো'-তে তার প্রমাণ ভালোমতো মজুদ আছে।

জীবিতদের মধ্যে আপনার প্রিয় কে? বুদ্ধদেব, অপর্ণা নাকি বলিউডের কোনো নতুন প্রতিভা।

১৩ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: যেজিনিসটা আমি তেমন করতে চাইনা, সেই জিনিসটা আমাকে বহুৎ করতে হয়। অনুবাদ। করতে করতে ঝরঝরিয়ে ওঠে।

৮| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:০৬

অমলকান্তি বলেছেন:
শৈশব চুরি যাওয়ার মতো বর্বরতা কখনই শোধ হবার নয়।
এ ব্যথা কেউ বুঝবে না,কোনভাবেই সম্ভব না।

আমার বুদ্ধদেব ভাল লাগে।
পুরনোদের মধ্যে ঋত্বিক।

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:১৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: শৈশব চুরি যাওয়ার মতো বর্বরতা কখনই শোধ হবার নয়।

দেশবিভাগ উপমহাদেশের স্থায়ী ক্ষত।

৯| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৫২

রাশেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ফাহমিদ ভাই।

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:২৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনাকেও।

১০| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ২:১৯

মৈথুনানন্দ বলেছেন: হুম! যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। আসলে নিজের ও পারিবারিক স্মৃতি নিয়ে পোস্ট তো দূরের কথা, কমেন্ট করতেই খুব এম্ব্যারেসিন লাগে, হয়তো স্বভাব-লাজুক বলে তাই - যদ্দুর মনে হয় বাবার থেকেই এই দোষটা পেয়েছি।

প্রথমে বুদ্ধদেব দিয়েই শুরু করা যাক! উনি জীবন শুরু করেছিলেন কিছু তথ্যচিত্র বানিয়ে, যাদের হয়ে বানাতে হয়েছিল, সেই সেন্ট্র্যাল গাভমেন্টের রেস্যার্চ প্রতিষ্ঠানের সিনিয়রমস্ট বিজ্ঞানীদের এক জন ছিলেন আমার বাবা। সেই ডকুর একটায় আমি ছিলাম। আরেকটাতে ভয়েস ওভারে আমার একটা খালি গলায় রেসায়টেশ্ন ছিল। ইচ্ছে করেই বর্ণনাগুলো অনেকটাই কেটেছেঁটে দিচ্ছি। নেই নেই করেও বেশ কয়েক জন কলকাতা থেকে ব্লগাচ্ছে! এগুলো থেকে বাঘ-বাহাদুর অব্ধি সব টুকু কাজ আসলে বাবারই করা। কিন্তু য়্যাকনলেজমেন্ট ছাড়া কোথাও বাবার নাম দেখতে পাবেন না। কারণটা কিন্তু একই, বাবা কাজ করে খুশি ছিলেন, তখন হ্যান্ডেক্যাম তো আর এখনকার মতো সহজলভ্য ছিল না - ডকুমেন্টেড হতে চাননি একেবারেই। আমিও কৌশিকদাকে কিছুই পাঠাইনি, শুধু শেয়ার করেই আমি তৃপ্ত, আবার ছাপাছাপির দরকার কি আছে বাপু! তো বাবা দ্বিতীয় ছবিটায় আমায় বাদ দিলেন, শুধু গলাটা নিলেন, কারণ আমার চেহারায় নাকি নাগরিক ছাপ স্পষ্ট - গ্রাম্য বালকের ভূমিকায় মানাবে না। এই কথাটা বল্লাম কারণ যারা আমার কবিতা নামের অখাদ্যগুলো পড়ে, তাদের মধ্যে এক জন বলেছে, সেগুলোতে নাকি নাগরিক / কলকাত্তাইয়া ছাপ সুস্পষ্ট - কেন যে এ সব বলে কিছুই বুঝিনা। আর যে বলে সে বুঝিয়েও দেয় না!

বুদ্ধদেব কেমন বানান সেটা নিয়ে কিছু বলবো না এই কারণে, যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার বাবা ঘরোয়া আড্ডায় সহজেই বলে উঠতে পেরেছিলেন, ধুর তুমি ছবিফবির কিস্যু বোঝো না - সেই প্রজ্ঞার ছিটেফোঁটাও আমার নেই। তবে যদি এই টুকু বলি, সেটা বেশ আগেরই কথা, লাল দরজার পর থেকেই আপ্রচে ইম্প্রভায়জেশ্ন এসেছে - আশা করি ছোটো মুখে বড়ো কথা হয়ে যাবে না।

অবশ্যই অপর্ণা। এবং অঞ্জন। দত্ত আমার কাছে কিন্তু ডার্ক হর্স ছিল না কারণ আমি ওর টেলেফেল্ম দেখেই বুঝেছিলাম ও নিশ্চয়ই ভালো কিছু করবে আগামীতে। তাছাড়া ইটিভি ও আকাশে আরো অনেক নতুন ছেলেমেয়ে সুন্দর টেলেছবি বানাচ্ছে। এই সব চ্যানেল গুলো ওপারে দেখায় না?

খোসলা কে ঘোসলা বা ভেজা ফ্রায় দেখার পরে বলতে ইচ্ছে করে এমন ছবিও হয় হিন্দীতে! জগার্স পার্ক দেখার পরে ভিক্টরের কাছ থেকে দারুণ কিছু আশা করছি। চাইছি নানাও কিছু একটা দিক। আরেক জনও খুব পছন্দের, এখন নাম মনে পড়ছে না, ঐ যে হায়দ্রাবাদ ব্লুজে ছিল।

চাই সন্দীপ শুধু ছোটোদের ছবি বানাক। ওদের কথা কেউ ভাবে না। বাংলাদেশে কে বা কারা ছোটোদের ছবি বানায় - আছে কেউ?

মৃণালকে নিয়ে এক দম মনের কথাটি ধরে ফেলেছেন। আজেন্ডার উগ্রতা দেখে বড্ডো কাঠ-কাঠ লাগে। ফিল্ম না ম্যানেফেস্টো? বাবার সঙ্গে অবশ্য ছবির ব্যাপারে অনেক বার দেখা সাক্ষাত হয়েছে। ব্যক্তিগত স্মৃতি বলতে, এক দিন সেই বিখ্যাত সাদা রঙের সুতির পাঞ্জাবী-পাতলুন পড়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, আমায় কিছু একটা জিজ্ঞেশ করেছিলেন।

কি? সেটা মনে নেই!

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:২৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য।
আপনার নাম জানতে চাচ্ছি না, আপনার বাবার নাম জানতে পারি কি?
অপর্ণার মিস্টার এ্যান্ড মিসেস আইয়ার বারবার দেখি। চৌরঙ্গী লেন, পরমা, পারমিতার চাইতেও ভালো লেগেছে। ঋতুপর্ণও কিন্তু আমার ভালো লাগে। অঞ্জন বড়ো অভিনেতা, গায়ক হিসেবে আমাদের এখানে খুব জনপ্রিয়। কিন্তু ফিল্মমেকার হিসেবে খুব উচ্চ ধারণা নেই আমার -- দু্টা টেলিফিল্ম মনে হয় দেখেছিলাম, ইটিভি বাংলাতেই। (আপনাদের সব চ্যানেলই দেখা যায়, আমাদের একটাও না। এখানে একটা রাজনীতি কাজ করে বোধহয়) খুব নাগরিক, খুব আধুনিক। সেটাও সমস্যা না, কিন্তু ভালোলাগা তো অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করে। বুদ্ধদেব, গৌতম ফুরিয়ে এসেছেন মনে হয়। ঋতুপর্ণ সেতুলনায় ভার্সাটাইল। সন্দ্বীপের ফেলুদা ৩০ সিরিয়াল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ছোটদের ছবি বাংলাদেশে নিয়মিত হয়না। মোরশেদুল ইসলামের আগ্রহ আছে বলে জানি। তার অন্তঃত দুটো ছবি আছে -- দীপু নাম্বার টু (১৯৯৫) ও দূরত্ব (২০০৪)। তারেক মাসুদের মাটির ময়নাকেও (২০০২) বলা যায়, মেইন প্রটাগনিস্ট একজন বালক, তার অনেক বন্ধুও আছে চরিত্র হিসেবে, কিন্তু রাজনৈতিক ঘটনাবলী ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য চিত্রায়ণে অধিক ঝোঁক থাকায় তা আর ছোটদের ছবি থাকেনি।

১১| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ ভোর ৬:৪৯

শফিউল আলম ইমন বলেছেন: চমৎকার লেখা।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন।

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:৩০

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন।

১২| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:০৭

আকাশচুরি বলেছেন: অমলকান্তি বলেছেন:
শৈশব চুরি যাওয়ার মতো বর্বরতা কখনই শোধ হবার নয়।
এ ব্যথা কেউ বুঝবে না,কোনভাবেই সম্ভব না।

সত্যিই

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:৪৪

ফাহমিদুল হক বলেছেন: সত্যিই

১৩| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:১৪

জেনারেল বলেছেন: +

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:৪৫

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ

১৪| ১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:৫০

অমিত বলেছেন: অসাধারণ

১৪ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:০১

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৫| ১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:১৬

. . . এখনো খুঁজি বলেছেন: পড়তে দেবার জন্য থ্যাংকু !

১৫ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:০৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনাকেও

১৬| ১৫ ই মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪

মানস চৌধুরী বলেছেন: ফাহমিদ, আমার ছন্নছাড়া (এই মুহূর্তের) মনোগড়ন ও প্রস্তুতি ছাড়াও সময় একটু টানাটানি যাচ্ছে বেচক্কর জনিত জমিয়ে-রাখা কাজে। সেই সঙ্গে অবিশ্বাস্য এক ঢিলা কম্প্যুটার। তার মধ্যেও পড়লাম এই অনুবাদ ... দেশবিভাগ সম্পর্কিত লেখালেখি নিয়ে আমার একটা প্রগাঢ় অস্বস্তি আছে। প্রধান কারণ হলো এগুলো 'সেন্টিমেন্টালিটি' এবং 'বিদ্যাধর্মিতা' জটিলভাবে মিলে মিশে থাকে। অবশ্য এর একটা রাস্তা নিশ্চয় 'মেমোয়ের' থেকে 'ফিকশনে' সরে যাওয়া। ঋত্বিক নিশ্চয়ই সেটা ভাবতেন। আমি নিশ্চিতভাবে জোর দিয়ে বলছি না। একটা ভাবনা মাত্র। আপনার অনুবাদ দারুণ ... আমি আমার একটা লেখা বিনয়ের সঙ্গে এখানে জুড়ে দিচ্ছি। খুব একটা দক্ষ এখনো হইনি কীভাবে আপনার বাংলা লিখে টিখেই লিংক দিচ্ছিন। একেবারেই সম্পৃক্তি হিসেবে।
Click This Link
মৈথুনানন্দ অনেকগুলো চিত্তাকর্ষক ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর সম্পৃক্তির। তবে আমি কাউকে পরিচয়ের আধুনিক প্রপঞ্চ দিয়ে না ঠাহর করতে পারলে সংমিশ্রণে অস্বস্তি বোধ করি। আমি নিশ্চিত না তিনি তাঁর বা বাবার পরিচয় দেবেন কিনা যদিও তাঁর আলাপে সেটা কেন্দ্রীয় ছিল। এসূত্রে, আমি ছবির ভাল দর্শক নই। তবে গৌতম ঘোষের একটা ছবি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখার সুযোগ হয়েছিল। একটা রিফ্লেক্সিভ লেখায় ছবিটা নিয়ে আমি আলোকপাত করেছিলাম।
Click This Link

শুভেচ্ছা জানিয়ে ....

[বি. দ্র. আপনার ক্যাডেট কলেজ সিরিজটা একটু চোখ পড়ল। এই বিষয়বস্তু আমার দারুণ পছন্দ। নিশ্চয়ই ২৪ ঘণ্টা আমি ভালভাবে ব্যবহার করতে পারব এবং পড়তে পারব।]

১৭| ১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:২৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: লিঙ্ক দুইটা পড়লাম। দুটাই অসাধারণ।
গল্পটা (যদি বলেন) খুব প্রাঞ্জল, খুঁটিনাটিসমেত জীবন্ত।
আবার অরণ্যে খাসা। তবে সত্যজিতেরটা আমার খুব প্রিয় একটা ছবি। জঙ্গল নাগরিকের রিলাক্সেশন না কী যেন বলেছেন, তবে তাদের অন্তঃসারশূন্যতা তো প্রকাশ হয়ে পড়েছে ওখানে গিয়ে। আমার এই গল্পটা কি পড়তে পেরেছিলেন শেষপর্যন্ত -- এখানে প্রাসঙ্গিক: Click This Link

(আমিও মন্তব্যে লিঙ্কিংটা শিখি নাই)

১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৩২

ফাহমিদুল হক বলেছেন: তবে গৌতম কীসব করে ফেললেন, গুবলেট যাকে বলে। শর্মিলার অভিনয় মনে পড়ে। তব্বুর কান্নাকাটি -- তবে কিনা বলিউডের সবচাইতে প্রিয় হবার কারণে সেটাও কেমন মায়া মায়া লাগে। আর পু্ত্র আর পুত্রবধূদের জাপ্টাজাপ্টি করা ছাড়া কোনো রোল ছিল বলে মনে পড়েনা।

১৮| ১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৫১

সবুজ আরেফিন বলেছেন: ভালো লাগলো এইসব আলোচনা। গৌতম ঘোষের 'দেখা' বাংলাছবির ইতিহাসে একটা মূল্যবান সংযোজন।

গতকাল তারকোভস্কির 'সোলারিস' দেখলাম। আমরা প্রত্যেকেই আসলে এক একটা স্বপ্ন, আর দৈহিক এবং মানসিক অনুভূতিগুলো প্রতিনিয়ত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তা আরো বেশী রক্তাক্ত করে তুলছে। বিজ্ঞান আমাদের কি কোনো নতুন বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে?

Making two possibilities a reality
Predicting the future of things we all know
Fighting off the diseased programming
Of centuries, centuries, centuries, centuries
Science fails to recognise the single most
Potent element of human existence
Letting the reigns go to the unfolding
Is faith, faith, faith, faith
Science has failed our world
Science has failed our mother earth
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Letting the reigns go to the unfolding
Is faith, faith, faith, faith
Letting the reigns go to the unfolding
Is faith, faith, faith, faith
Science has failed our world
Science has failed our mother earth
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Spirit-moves-through-all-things
Science has failed our mother earth


SCIENCE/soad

১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:১০

ফাহমিদুল হক বলেছেন: সোলারিস দেখা হয়নি।
মিরর আর নস্টালজিয়া দেখেছি।

১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:৫০

ফাহমিদুল হক বলেছেন: এই এক পরিচালক, যার ছবি আমি বুঝিনা। একজন ভালো এন্টারপ্রেটারের কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে।

১৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:৫১

ফাহমিদুল হক বলেছেন: মিরর বেশ খানিকটা বুঝেছি, নস্টালজিয়া? উপস...

১৯| ১৭ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৩৮

আসম বলেছেন: মাস্টার, খুব সুন্দর। সারাদিন ব্লগে, ব্যবসা-বানিজ্য শিকেয়।

১৭ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:০০

ফাহমিদুল হক বলেছেন: এইটা বিপর্যয় হবার সমূহ সম্ভাবনা। ভেবেচিন্তে ...

২০| ১৭ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:১০

পুতুল বলেছেন: লেখা খুব মনে ধরছে! আমরা এত বোকা কেন! ভারত কাটাকুটি না করলেও হয়তো পারতাম! আল্লাহ হরি রাম রহিমে প্রভেদ করতে কত রক্ত ঝড়ল!
এখনো আমরা প্রভেদ খুঁজি!

অনেক কথা মনে পড়ে যায় যা আপাত অপ্রাশংগিক, কিছু মনে করবেন না।
ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:১৩

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনার মন্তব্য ভালো লাগলো।

২১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৮

সুদীপ্ত শর্মা বলেছেন: ভালো লেগেছে। পড়েছি এক নিশ্বাসে। তথাকথিত অনুবাদে যে থেমে থেমে পড়তে হয় তা হয়নি একবারও।
কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাকে বার বার খোঁচাচ্ছে। দীর্ঘ ৪৭ বছরে ঢাকায় বার বার এসেও মানুষটি কিভাবে নিজের শৈশব কাটানো জায়গাটি না দেখে চলে যেতে পারতেন?
৪৭ বছর পর এসে মৃণাল সেন বলছেন, তিনি জানেন না। এটা এ প্রশ্নটিকে পাশ কাটানো ছাড়া আর কিছু বলে আমার মনে হয়নি।

১০ ই এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:২৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

"দীর্ঘ ৪৭ বছরে ঢাকায় বার বার এসেও মানুষটি কিভাবে নিজের শৈশব কাটানো জায়গাটি না দেখে চলে যেতে পারতেন?"

সেটা একটা প্রশ্ন বটে।

২২| ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৫৩

মৃদুল মাহবুব বলেছেন: আপ্লুত হলাম খুব। ভালো লাগলো। লেখাটা আগে চোখে পড়েনি।

১২ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:০৫

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ।

২৩| ০২ রা মে, ২০১২ রাত ৯:৪৭

কাউসার রুশো বলেছেন: চমৎকার লেখা
+++ :)

২৪| ০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ১:১০

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: অসাধারণ স্মৃতিচারণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.