![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুসলিম আমি, সংগ্রামী আমি, আমি চির রণবীর। আল্লাহকে ছাড়া কাউকে মানিনা, নারায়ে তাকবীর...নারায়ে তাকবীর
প্রথমেই বুঝে নিতে হবে “ইসলাম শান্তির ধর্ম” এটা কুর’আন বা হাদীস কোথাও বলা হয় নাই। কোন সাহাবা বা তাবেয়ীনদের কেউ বলেছে আজ পর্যন্ত আমি শুনি নাই। ইসলাম মানে “সমর্পণ”, এক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, নিজের ইচ্ছাকে বাদ পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া হল ইসলাম।
শুধু নিজের ইচ্ছা নয়, সমাজের প্রচলিত জাহেলি যুগের বাপ দাদার সংস্কৃতি, মানুষের বানানো আইন, ফেরাউনের স্বেচ্ছাচারিতা, প্লেবয়-গ্যাংস্টারদের অন্ধ অনুকরণ -এই সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে এক আল্লাহকে এই দুনিয়ার সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে মেনে নেয়া হল ইসলাম। কুর’আনে আল্লাহর আনুগত্যের কথাই বারবার বলা হয়েছে। পশ্চিমা গণতন্ত্র চালু করে ‘শান্তি’ অর্জনের কথা কুর’আনে বলা হয় নাই।
এখন কথা হল, “ইসলাম শান্তির ধর্ম” এই কথাটা কেন আসল ? এর কারণ ইসলামে জিহাদ বলে একটা ব্যাপার আছে, সেটা ইসলামের একটা শক্তিশালী এবং অবিচ্ছেদ্য অস্ত্র। এই অস্ত্রকে নির্বিষ করে মুসলিম জাতিকে যেন ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই জন্য “ইসলাম শান্তির ধর্ম” টাইপের কথাগুলো আমদানি করা হয়েছে। এই কথাগুলো এমনভাবে হজম করানো হয়েছে যে এখন কোন মুসলিমের পক্ষে জিহাদের কথা বলাই সমস্যা হয়ে গেছে, বললেই জঙ্গি হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ফাউলের দল আমেরিকান আর্মি কিংবা ছাত্রলীগকে জঙ্গি মনে করে না, এরা যতই খুনাখুনি ধর্ষণ করুক না কেন। এদিকে আবার একদল apoplectic ভীতু টাইপ মুসলিমের জন্ম হয়েছে এরা জিহাদের অর্থ বিকৃত করে ফেলছে। তারা বলে জিহাদ মানে শুধুই নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ, অথবা জিহাদ শুধুই রক্ষণাত্মক।
মারামারি, কাটাকাটি, যুদ্ধ যাই বলেন না কেন, এগুলো হচ্ছে মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা। এইসব ঘটনা সবসময় হয়ে আসছে, avoid করা যায় না। কেউ অর্থের জন্য, কেউ ক্ষমতার জন্য, কেউ নারীর জন্য যুদ্ধ করে। আবার কেউ “গণতান্ত্রিক শান্তি” প্রতিষ্ঠার নামে পুজিবাদী কোম্পানির deconstruction -reconstruction ব্যবসার জন্য যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধ ব্যাপারটা সব সভ্যতাতেই হয়ে আসছে, হোক সেটা ড্রোন বিমানের আধুনিক যুগ কিংবা ঢাল-তলোয়াড়ের প্রস্তর যুগ। এমন কোন সভ্যতা নেই যে যুদ্ধ না করে টিকে ছিল।
যুদ্ধের বাস্তবতা কোনভাবেই অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। তাই ইসলাম কখন, কিভাবে, কেন যুদ্ধ করতে হবে এই ব্যাপারে কিছু rules and regulations সেট করে দিয়েছে। এই নিয়মটা মহাজ্ঞানী আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন, এগুলো নিয়ে apologetic হওয়ার কিছু নেই। আপনার পাশের বাড়ির হিন্দু ছেলেটা কিংবা কোন মুক্তমনা নাস্তিক ছাগুর এই নিয়ম ভাল না লাগলেও কিছু করার নেই। এরা আল্লাহর দ্বীনকে পছন্দ না করলে আল্লাহর দ্বীনকে আমরা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করার কোন ক্ষমতা রাখি না, এই কাজ ইহূদী,খ্রিস্টানরা করত।
তো যাই হোক, ইসলামে জিহাদ হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা। আবু হানিফা, ইমাম শাফীঈদের বই খুলে দেখেন এই কথাই লেখা হচ্ছে। জিহাদ এর শাব্দিক অর্থ চেষ্টা করা-এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু জিহাদের শরীয়াগত অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আইনকে সর্বোচ্চ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা, যেটার সর্বোচ্চ form হচ্ছে ক্বিতাল-এটা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই। এইখানে আবার অনেকে আছে শাব্দিক আর শরীয়াগত অর্থে মধ্যে প্যাচ লাগানোর চেষ্টা করে ওবামাকে খুশি করতে চায়,এটা খুবই বাজে অভ্যাস। সালাতের শাব্দিক অর্থ দু’আ করা, কিন্তু আল্লাহ সালাহ বলতে একটা স্পেসিফিক ritual বুঝিয়েছেন যেটা আমরা দিনে ৫ বার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করি। যাকাত এর শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা কিন্তু শরীয়া অর্থ হচ্ছে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অতিরিক্ত সম্পদের ২.৫% নির্দিষ্ট খাতে বছরান্তে ব্যয় করা।
আল্লাহ বলছেন,
“আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়” [সূরা বাকারাঃ১৯১]
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। [সূরা তওবাঃ২৯]
অর্থাৎ, অমুসলিমদেরকে প্রথমে ইসলামের দিকে আহবান করতে হবে, তাতে সাড়া না দিলে জিযিয়ার বিনিময়ে তাদের ধর্ম ব্যাক্তিগত পর্যায়ে পালন করতে দেয়া হবে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে ইসলামিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। সেটাতেও রাজি না হলে তাদের সাথে জিহাদ করতে হবে। অতীতে ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রের বিস্তৃতি এভাবেই হয়েছে, তবে কোন অঞ্চলে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে জোরজবরদস্তি করা হয় নি, বরং তারা নিজেরা ইসলামের সত্যে convinced হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে।
আমাদের আবার এই জিনিষটা হজম হইতে চায় না। মানবতাবাদীরা প্যাটপ্যাট করে, “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই”। আরে বেকুবের দল, ফেরাউন, বুশ, বাশার আল আসাদ এদের মত বদমাইশদের সাথে মিষ্টি করে মেয়েলী ভাষায় রিকোয়েস্ট করলে এরা শুনবে ? এদের সাথে যুদ্ধ না করলে শান্তি কি উড়ে উড়ে আসবে ?
ফেরাউন, নমরুদ এরা বেকুব টাইপ ছিল, তাই এরা সরাসরি মানুষকে oppress করত। কিন্তু সে তুলনায় স্ট্যালিন, বুশ, ওবামা অনেক চালাক। এরা সিস্টেমেটিক্যালি লোকজনকে oppress করে। আগে গণতন্ত্র আর freedom এর মদ খাইয়ে মাতাল করে, তারপর oppress করে। একুশ শতকের লোকজন খুবই বোকা টাইপ।
বাস্তবে আল্লাহর দ্বীন ছাড়া অন্য যেকোন মানবরিচত জীবনব্যবস্থা মানুষের innate nature এর প্রতি oppressive। কারণ আপনি যদি আল্লাহকে বাদ দেন, তাহলে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য তখন হবে জাগতিক ভোগ। আর এই জাগতিক ভোগের জন্য যদি আপনি বেঁচে থাকেন তাহলে কখনই শান্তি আসবে না।কারণ মানুষজন যখন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে দেখে আরাম করে বেঁচে থাকা, তখন এত ভাল সেজে লাভ কি ? শুরু হয় ব্যাক্তিগত প্রতিযোগিতা, শেষ হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস war on terrorism এ গিয়ে।
বিস্তারিত আরও পড়ুন এখানে
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬
মুহাম্মদ ফজলে রাব্বী বলেছেন: হুমম! ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ করা। তা নিশ্চয় একমাত্র আল্লাহর নিকট।
ধন্যবাদ।
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১
দিশার বলেছেন: সাবাস মর্দে মুমিন। সুরা নিসার ও ভালো ভালো আয়াত আসে এ বেপারে। আগায়ে যাও। তো ৯০ ভাগ মুসলিম এর দেশ য়ে কার সাথে "জিহাদ" করবেন ? পাশের বার্মা আসে , ইন্ডিয়া আসে কাফের , ওদের দাওয়াত দেন ইসলাম গ্রহনের, তারপর না মানলে ঝাপায়ে পরেন ঈমানী দন্ড হাতে নিয়া, ওহ সরি তলওয়ার হাতে নিয়ে। মরলে সহিদ, বাচলে ডবকা দাসী আর গনিমতের মালামাল। দাসী কিন্তু আবার লিমিট লেস, বিয়ে ৪ টা হলেও, দাসী আনলিমিটেড . শুরু করে দেন। বাংলা হবে আফগান আপনারা তালেবান .
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩
মুহাম্মদ ফজলে রাব্বী বলেছেন: জ্বিনা ভাই। এই মুহুর্তেও আমাদের উপর যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে।তবে আপনার কথা বলছি না। যারা মুসলিম তাদের কথা।
আপনি তাকিয়ে দেখেন-আফগান, ফিলিস্তিন, চেচনিয়া, পাশেই রয়েছে মায়ানমার, প্যালেস্টাইন, কাশ্মির এগুলার খবর জানেন তো! নাকি চোখে এখনো রঙ্গিন চশমা লাগাইয়া আছেন?
ইসলাম ধর্ম গ্রহণে কারও প্রতি জুলুম করেছে কিনা দয়া করে একটা দৃষ্টান্ত যদি দেখাতেন।
আর নাইলে এই ৯০ ভাগ মুসলমানের দ্যাশ ছাড়।
আর দুঃখিত ভাই।
আপনার মনে হয় ইসলাম সম্পর্কে খুব কম পড়ালেখা আছে।
ইসলামে এখন দাসী প্রথা সম্পূর্ণ রহিত হয়ে গেছে।
সেটা অনেক আগেই।
অল্প বিদ্যা যে ভয়ঙ্করী সেটাই মনে হয় প্রমাণ করলেন এইখানে আইসা।
তবে সব মিলে ধন্যবাদ।
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫
দিশার বলেছেন: ভাই পড়াশোনা কি করি নাই বললাম। ইসলাম জিহাদ এর নিয়ম কি এটাই না? প্রথমে দাওয়াত দিবেন একটা দেশ কে ইসলাম গ্রহণ করার, না করলে জিহাদ, এবং দাসী প্লাস গনিমত এর মাল বন্টন ?
নবী (স) থেকে শুরু করে ইসলামের প্রতিটা খলিফা থেকে ধরে, যত সুলতান, আর শাসক আর আপনাদের বিন কাশেম সব কি জিহাদ এভাবে করেনি বলতে চাচ্ছেন?
ইতিহাস সাক্ষী দেয় বুজলেন, গায়ের জোরে উল্টা পাল্টা বলে লাভ নাই। মঙ্গল দের হাতে মাইর খাবার আগ পর্যন্ত এভাবেই তো :শান্তির" ধর্ম প্রচার করে গেসে মুসলিম শাসক রা, নাকি তসবি জপে জপে অভিযান করত, মালিক আসতারি , আবু মুসা এরা কি সুফী বাদ প্রচার করত তলওয়ার হাতে ?
ইতিহাস নিজে পরে দেখেন। দেশ ছাড়তে বলার আগে নিজে ইতিহাস পরে দেখেন . আর এই দেশ ভালো না লাগে, সরিয়াহ আইন অলা দেশ য়ে চলে যান . জিহাদ করবেন বৈসা আসেন কেন ? নেমে পরেন . বম মারবেন নাকি গলা কাটবেন ঠিক করসেন ?
৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
দিশার বলেছেন: আর সয়ং কোরানে , হাদিস য়ে যেখানে দাস দাসী এলাও করে, আপনে কোথাকার কে যে আল্লাহর আইন "রহিত" করেন। মশকরা করেন? কোরান কি তাহলে সর্ব কালের সর্ব যুগের জন্য প্রযোজ্য নয়? নবী বিদায় হজের ভাষণে পর্যন্ত বলেনি যে আমি আজ থেকে দাস প্রথা বিলুপ্ত করলাম, বলসে দাস দের সাথে ভালো বেবহার করতে, দাস যদি খলীফাও হয় তারে মানতে। কোরান এর আইন আপনে ফতওয়া দিয়া রদ করতে চাইলে তো হবে না। তাইলে আপনের মানতে হবে যে কোরানের আইন সর্বকালের সর্ব মানবের জন্য নয়। গাসের টাও খাইবেন তলার টাও কুরাবেন তা তো হবে না .
৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭
নিষ্কর্মা বলেছেন:
জিহাদ ইসলাম ধর্মের অঙ্গ এবং অন্যতম অঙ্গ, তা লেখকের লেখায় পরিস্কার হল। মানব রচিত কোন বিধান ১০০% ভাল নয়। একটা প্রশ্ন, খেলাফতের নামে যে বংশানুক্রমিক রাজবংশগুলো কায়েম হয়েছিল এবং তারা যে কাফেরদের মতই আচরণ করত, তা কি ইসলাম সম্মত?
গণতন্ত্র ইসলামের বিরোধী হলে প্রথম চার খলিফা (উনাদের সাথে যদিও মুহম্মদ (সঃ ) এর বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ক ছিল -- দুইজন ছিলেন শ্বশুর আর দুইজন ছিলেন মেয়ের জামাই) কেন সবার মতাততের ভিত্তিতে নির্বাচিত হলেন? এই উদাহরন অনেক লেখাতেই দেয়া হয় যে গণতন্ত্র ইসলামের ভেতরেও আছে।
ইসলামের শুরু হয়েছিল নবুয়ত প্রাপ্তির পরে। তার আগে নবীর ৪২ বছরের জীবনী আমাদের জন্য কি অনুকরণ যোগ্য? সেইগুলাও কি ছুন্নাত? যদি সুন্নাত হয়, তা হলে বিপদ আছে। কেননা, খাদিজার নিজের বয়ানেই আছে যে সে মুহাম্মদ নামের কর্মচারীকে বিয়ে করার জন্য তার আত্মীয়কুলকে মদ খাইয়ে মাতাল করেছিল এবং সেই মাতাল অবস্থায় আত্মীয়রা রাজি হয়েছিল [সূত্রঃ প্রথম জীবনীকার]। সে সময়ে, মানে বিয়ের আগে, মালিকিন এবং কর্মচারীর ভেতরে মেলামেশা অবাধই ছিল, যেটা হেফাজতের দাবীর সাথেও যায় না।
তার মানে হচ্ছে, ১৪০০ বছর আগে কড়া ভাষায় যা লেখা আছে, তা অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে। সেই সাথে ১৪০০ বছর ধরে বিভিন্ন লোকের যে সব মনগড়া বয়ান আর ব্যাখ্যা আছে, সেইগুলাও মেনে চলতে হবে। ফলে এখন এসে দেখা যাচ্ছে, মুল দুই বই সরিয়ে আমরা ১৪০০ বছর ধরে যে যার মনের মাধুরী যা ইচ্ছা লিখে গেছে, সেইগুলা নিয়েই মেতে আছি।
ইসলামের মোটা দাগে বড় সমস্যা বের হয়েছে দুইটাঃ মেয়েদের শিক্ষা এবং মেয়েদের পোষাক। ৭০ কদম না ৪০ কদম না শুধু গলা খাকারি দেওয়া, এইগুলা নিয়ে অনেক তর্ক থাকলেও মেয়েদের ব্যাপারে স্কলাররা প্রায় এক জায়গায় একমতঃ মেয়েদের শিক্ষিত করা যাবে না। মেয়েরা শিক্ষিত মানেই অনেক সমস্যা। তাই প্রথমে পোষাক দিয়ে অবরোধ কর, এর পরে অশিক্ষায় কাবু করে ফেল। মুখে বলতে হবে, ইসলাম পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য জ্ঞান অর্জন ফরজ করেছে।
এই রকমের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের ইসলাম নিয়ে চলেন বলেই আজ এতো সমালোচনা করতে পারে সবাই। সেই জন্যই ইসলামের আজ এতো অধঃপতন। যদি মূল দুই কিতাব পড়তেন, বুঝতেন সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলে নিতে হয়, তা হলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হতো না, ইসলামও সবার কাছে শান্তির ধর্মই থাকত।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:২৫
মুহাম্মদ ফজলে রাব্বী বলেছেন: জিহাদ সম্পর্কে বিভ্রান্তির নিরসন হোক।
নিচের লেখাটি ভালভাবে পড়ার জন্য বলা হচ্ছে।
সাধারণত ইংরেজি ভাষায় জিহাদ শব্দটির অনুবাদ holy war (পবিত্র যুদ্ধ) করে মারাত্মক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়। দীর্ঘকাল যাবত এই শব্দটির যেরূপ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, তার ফলে ইহা এখন ‘উন্মাদনা’ বা ‘পাগলামীর’ প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। এই শব্দটি শ্রুত হওয়ার সংগে সংগেই শ্রোতার কল্পনা দৃষ্টিতে এমন এক ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় দৃশ্য ভেসে উঠে যে, ধর্মপাগলের একটি দল যেন নগ্ন তরবারি হস্তে, শ্মশ্রু উত্তোলন করে রক্ত পিপাসু চোখে ‘আল্লাহ আকবার’ ধ্বনি করতে করতে অগ্রসর হচ্ছে আর কাফেরদের পাওয়া মাত্র গ্রেফতার করছে এবং তাদের গর্দানে তরবারি রেখে বলছেঃ ‘কালেমা পড়’ নতুবা এক্ষুণি গর্দান দ্বিখণ্ডিত করা হবে। শঠ লেখকগণ বিশেষ চাতুর্যের সাথে আমাদের এরূপ চিত্র অংকিত করছে এবং তার সাথে এ মন্তব্যটি জুড়ে দিয়েছে “রক্তের গন্ধ আসে এ জাতির ইতিহাস হতে।”
মজার ব্যাপার এই যে, আমাদের এই চিত্র যারা অংকিত করেছে, তারা নিজেরাই বিগত কয়েক শতাব্দীকাল যাবৎ মারাত্মক অপবিত্র যুদ্ধে (unholy war) লিপ্ত রয়েছে। তাদের চরিত্র অত্যন্ত বীভৎস। তারা সম্পদ ও শক্তির লোভে সকল প্রকার অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিতান্ত দস্যুর ন্যায় সমগ্র পৃথিবীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা সর্বত্র ব্যবসায়ের বাজার, কাঁচামালের সম্ভার, উপনিবেশ স্থাপনের উপযোগী অঞ্চল এবং মূল্যবান দ্রব্যের খনির সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে। লালসার আগুনের ইন্ধন সংগ্রহ করে এটাকে চির প্রজ্বলিত করে রাখাই হলো তাদের লক্ষ্য। লালসা ও লোভের পংকিল পথেই তাদের সকল চেষ্টা নিয়োজিত। তাদের দৃষ্টিতে কোনো দেশে বিপুল খনিজ সম্পদ বর্তমান থাকা কিংবা প্রচুর কাঁচামাল উৎপন্ন হওয়াই তার উপর প্রচন্ড বিক্রমের সাথে তাদের আক্রমণ করার পক্ষে যথেষ্ট কারণ। এমন কি, তাদের নিজ দেশে উৎপন্ন ব্যবসায় পণ্য বিক্রয়ের উপযুক্ত বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা কোথাও পরিলক্ষিত হলে অথবা তাদের অতিরিক্ত জনসংখ্যা সে দেশে প্রেরণ করা সম্ভব হলে সে দেশের উপর অনায়াসেই তারা আক্রমণ চালাতে পারে। আর কিছু না হলেও তাদের অধিকৃত কিংবা অধিকার করতে ইচ্ছুক এমন কোনো দেশে যাওয়ার পথে অপর কোনো দেশের অবস্থানও উহার আক্রান্ত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট কারণ। বলা বাহুল্য, আমরা যা কিছু করেছি তা অতীতের ইতিহাস ; কিন্তু তাদের এ র্কীতিকলাপ তো অত্যাধুনিক। সাম্প্রতিক কালের প্রত্যেকটি দিন ও রাত্রই বিশ্ববাসীর চোখের সম্মুখেই তাদের কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, ভূ-মণ্ডলের কোনো একটি অংশও এই লালসা পঙ্কিল যুদ্ধ লিপ্সু জাতির অপবিত্র আক্রমণের আঘাত হতে রক্ষা পাচ্ছে না। তথাপি তাদের চতুরতা বড়ই প্রশংসনীয়। কারণ তারা আমাদের চিত্র এতোখানি ভয়ানক ও বিভীষিকাপূর্ণ করে তুলে ধরেছে যে, তাদের নিজস্ব কদর্য চিত্র উহার অন্তরালে লুকিয়ে গিয়েছে।
পক্ষান্তরে আমাদের সরলতাও কম প্রশংসার যোগ্য নয়। শত্রুপক্ষ কর্তৃক অংকিত আমাদের চিত্র দেখে আমরা এতোদূর ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি যে, উহার পশ্চাতে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে স্বয়ং চিত্র নির্মাতাদের চেহারাটি দেখার কথা পর্যন্ত একদম ভুলে বসেছি। উপরন্তু আমরা কাতর কণ্ঠে ও অনুতাপের সুরে বলতে শুরু করেছিঃ “হুযুর যুদ্ধ ও প্রাণ-নাশের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই। আমরা তো বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পাদ্রির ন্যায় শান্তিপ্রিয় ধর্ম প্রচারক মাত্র। নির্দিষ্ট কয়েকটি বিশ্বাসের প্রতিবাদ এবং তদস্থলে অপর কয়েকটি আকীদা-বিশ্বাসের প্রচার ও লোকদের তা মেনে নিতে বলাই আমাদের কাজ। তরবারির সংগে তো আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অবশ্য আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার অপরাধ কখনো কখনো হয়ত আমরা করে ফেলেছি। কিন্তু বর্তমানে তা হতেও তওবা করেছি ; এমনকি, হুযুরের অস্বস্তির জন্য ‘তরবারির যুদ্ধকে’ সরকারিভাবে বাতিল করেও দেয়া হয়েছে। এখন শুধু মুখ ও লেখনির মারফতে ধর্ম প্রচারেরই নাম হচ্ছে জিহাদ ; কামান, বন্দুক ও গোলা-বারুদ ব্যবহার করা সরকারের কাজ, মুখ ও লেখনি প্রয়োগই হচ্ছে আমাদের একমাত্র উপায়।”
জিহাদ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার কারণ
শুধু রাজনৈতিক কূটকৌশলের পরিণামেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু যেসব কারণে আল্লাহর পথে জিহাদ এর নিগূঢ় তত্ত্ব দুরূহ হয়ে পড়েছে, বৈজ্ঞানিক পন্থায় তা যাচাই করলে তাতে দুইটি প্রধান ও মৌলিক ভুল ধারণার সন্ধান পাওয়া যায়।
প্রথম ভুল ধারণা এই যে, ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় সাধারণত যে অর্থে এ শব্দ ব্যবহৃত হয় তদনুযায়ী নিছক একটি ধর্ম বলে মনে করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় ভুল ধারণা এই যে, মুসলমানদেরকে অন্যান্য জাতির ন্যায় সাধারণত যে অর্থে এ শব্দ ব্যবহৃত হয় তদনুযায়ী একটি জাতিই মাত্র মনে করা হয়েছে।
এই দুইটি ভ্রান্তধারণা কেবল জিহাদের ব্যাপারটি নয় সামগ্রিকভাবে গোটা ইসলামের রূপকেই পরিবর্তিত ও বিকৃত করে দিয়েছে। এবং মুসলমানদের স্থান ও মর্যাদা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে ফেলেছে।
সাধারণ পরিভাষা অনুযায়ী ধর্ম বলতে কতকগুলি আকিদা-বিশ্বাস ও কয়েকটি ইবাদত-অনুষ্ঠানের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই বুঝা যায় না। এ অর্থের দিক দিয়ে ধর্ম একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, তা নিঃসন্দেহ। এমতাবস্থায় যে কোনো আকিদা মনে স্থান দেয়া, মন যার ইবাদত করতে ইচ্ছুক তারই ইবাদত করা যেভাবে ইচ্ছা তাকে ডেকে প্রভৃতি কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রত্যেক ব্যক্তিই লাভ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট ধর্মের জন্য খুব বেশি দরদ ও প্রেমবোধ করলে পৃথিবী ব্যাপী নিজ আকিদার প্রচার করা এবং অন্যান্য আকিদাপন্থীদের সাথে ‘বিতর্ক ও বাহাস’ করার স্বাধীনতাও তার রয়েছে। এতোটুকু কাজের জন্য তরবারি ধারণ করার কি প্রয়োজন থাকতে পারে? লোকদের মারধোর করে তো কোনো আকিদার প্রতি বিশ্বাস জন্মানো যায় না। বস্তুত ইসলামকে সাধারণ পরিভাষা অনুযায়ী একটি ‘ধর্ম’ হিসেবে মেনে নিলে এবং মূলত ইসলাম তা হলে প্রকৃতপক্ষে জিহাদের সমর্থনে কোনো সংগত যুক্তিই পেশ করা যেতে পারে না।
অনুরূপভাবে ‘জাতি’ বলতে সমপ্রকৃতি বিশিষ্ট কতগুলো লোকদের এমন একটি সমষ্টি (a homogeneous group of men) বুঝায়, যারা কয়েকটি মৌলিক ব্যাপারে অংশীদার হওয়ার কারণে একত্রিত এবং অন্যান্য সমষ্টি হতে স্বতন্ত্র মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অর্থের দিক দিয়ে যে মানব সমষ্টি একটি জাতির মর্যাদা পাবে মাত্র দু’টি কারণেই তাদের পক্ষে তরবারি ধারণ করা সংগত হতে পারে। একঃ তাদের ন্যায়সংগত অধিকার হরণ করার জন্য কেউ তাদের উপর আক্রমন করলে। দুইঃ তারা নিজেরাই অপরের ন্যায়সংগত অধিকার কেড়ে নেবার জন্য আক্রমণ করতে চাইলে। প্রথম অবস্থায় তরবারি ধারণের কিছু না কিছু নৈতিক বৈধতা রয়েছে (যদিও কোনো কোনো ধর্মাত্মার দৃষ্টিতে এটাও পাপ), কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থাটিকে চরম ডিকটেটর ছাড়া অপর কেউ বৈধ বলে দাবি করতে পারে না। এমনকি ফ্রান্স ও বৃটেনের ন্যায় বিশাল সাম্রাজ্যের কূটনীতিকরাও এটাকে সংগত বলার দুঃসাহস করবে না।
জিহাদের তত্ত্ব কথা
অতএব ইসলাম যদি ‘ধর্ম’ মাত্র হয়ে থাকে এবং মুসলমান যদি নিছক একটি ‘জাতি’ হয় তবে জিহাদ কিছুতেই ‘সর্বোত্তম’ ইবাদত হতে পারে না, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এটার অর্থহীনতা ও অযৌক্তিকতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এটা সম্পূর্ণ বিপরীত। বস্তুত ইসলাম কোনো ‘ধর্ম’ এবং মুসলমান কোনো জাতির নাম নয়। ইসলাম একটি বিপ্লবী মতাদর্শ। সমগ্র পৃথিবীর সমাজ ব্যবস্থার (social order) আমূল পরিবর্তন সাধন করে তার নিজস্ব আদর্শ অনুযায়ী নতুন করে তা ঢেলে গঠন করাই ইসলামের চরম লক্ষ্য। আর ‘মুসলমান’ একটি আন্তর্জাতিক বিপ্লবী দল (international revolution Party) বিশেষ, ইসলামের বাঞ্ছিত কার্যসূচী বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই তাদের সংঘবদ্ধ করা হয়েছে। আর এ উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য ইসলামী দলের বিপ্লবী চেষ্টা-সাধনা ও চূড়ান্ত শক্তি (revolutionary struggle) প্রয়োগের নামই হচ্ছে ‘জিহাদ’।
অন্যান্য বিপ্লবী মতাদর্শের ন্যায় ইসলামও সাধারণভাবে প্রচলিত শব্দ পরিত্যাগ করে নিজস্ব একটি পরিভাষা (terminology) ব্যবহার করেছে। ফলে তার বিপ্লবী ধারণা প্রচলিত সাধারণ ধারণা হতে বিশিষ্টতা লাভ করেছে। ‘জিহাদ’ শব্দটি এ বিশেষ পরিভাষার অন্যতম। ‘হারব’ (যুদ্ধ) বা এ অর্থবোধক অন্য কোনো আরবি শব্দই ইসলাম স্বতপ্রবৃত্ত হয়েই প্রয়োগ করেনাই, এর পরিবর্তে ব্যবহার করেছে ‘জিহাদ’। ইহা struggle (সংগ্রাম) এর সমার্থবোধক, বরং এটার আধিক্যের অর্থ জ্ঞাপক। ইংরেজিতে এটার মর্মার্থ হতে পারে to exert one’s utmost endeavour in promoting a cause অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করা।
কিন্তু পুরাতন ও সাধারণ প্রচলিত শব্দ ত্যাগ করে এ নতুন শব্দ কেন ব্যবহার করা হলো? এর একমাত্র উত্তর এই যে, ব্যক্তি কিংবা দলসমূহের পংকিল স্বার্থ উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও সাম্রাজ্যগুলো যেসব যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড করেছে, ‘যুদ্ধ’ শব্দটি তা বুঝার জন্য চিরদিন ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এসব যুদ্ধের লক্ষ্য হয় ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত উদ্দেশ্য সিদ্ধি। তাতে কোনো মতাদর্শ অথবা কোনো নিয়ম-নীতির সমর্থন ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য মোটেই থাকে না। কিন্তু ইসলামের যুদ্ধ এধরনের নয় বলে গোড়াতেই এ শব্দটি ব্যবহার করেনাই। বিশেষ কোনো জাতির লাভ বা ক্ষতি সাধন এর লক্ষ্য নয়। দেশের উপর কোন্ শাসকের শাসন চলবে সে বিষয়েও এর ভ্রুক্ষেপ নেই। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শুধু মানবতার কল্যাণ সাধন। এ কল্যাণের জন্য ইসলাম একটি বিশেষ আদর্শ এবং বাস্তব কর্মসূচী পেশ করেছে। এ নীতি ও মতাদর্শের বিপরীত যেখানেই যে হুকুম প্রতিষ্ঠিত রয়েছে ইসলাম সেটাকে নির্মূল করতে চায় তা যে জাতি বা দেশেই হোক না কেন। ইসলাম তার নিজস্ব আদর্শ ও কর্মসূচী অনুযায়ী নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় কে তার পতাকা বহন করছে, আর কার শাসন কতৃêত্বের উপর উহার চরম আঘাত পড়ে, সেদিক দিয়ে কোনো পার্থক্যই করা হয়না। ইসলাম চায় পৃথিবী, পৃথিবীর কোনো অংশ নয়। সমগ্র ভূ-মন্ডলই ইহার লক্ষ্য। কিন্তু বিশেষ কোনো জাতি বা বহু জাতির হাত হতে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া অন্য কোনো বিশেষ জাতির হাতে তুলে দেয়া ইসলামের লক্ষ্য নয়। এর একমাত্র লক্ষ্য এই যে, গোটা মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্য তার যে মতাদর্শ ও কর্মসূচী রয়েছে যার নাম হচ্ছে ইসলাম সমগ্র বিশ্বমানবকে তার দ্বারা পরিতৃপ্ত ও ঐশ্বর্যমন্ডিত করে তুলতে হবে। এ মহান উদ্দেশ্যে বিপ্লব সৃষ্টির অনুকূলে ইহা সমগ্র কার্যকর শক্তিকেই প্রয়োগ করতে চায়।
এভাবে সমস্ত শক্তি প্রয়োগের সমষ্টিগত নামই হচ্ছে ‘জিহাদ’। মুখের ভাষা ও লেখনির সাহায্যে মানুষের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভংগিতে পরিবর্তন করা এবং তাদের মধ্যে ‘অন্তর্বিপ্লব’ সৃষ্টি করাকেও জিহাদ বলা যায়। তরবারি (শক্তি) ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠিত জীবন ব্যবস্থা নির্মূল করে নবতর সুবিচারমূলক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাকেও জিহাদ বলা হয়। এপথে ধন মাল ব্যয় করা, শারীরিক শক্তি সামর্থ নিয়োগ করাও জিহাদ।
জিহাদ আল্লাহর পথে
মনে রাখতে হবে যে, ইসলামের জিহাদ শুধুমাত্র ‘জিহাদই’ নয়, এই জিহাদ হবে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর পথে। ‘আল্লাহর পথে’ কথাটি ইহার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ শব্দ দু’টি ইসলামের বিশেষ পরিভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট। অবশ্য ‘আল্লাহর পথে’ কথা দ্বারা অনেক লোকের মনে এক ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করে যে, মানুষকে জোরপূর্বক ইসলামের আকিদা-বিশ্বাসের অনুসারী করে তোলাই বুঝি আল্লাহর পথে জিহাদ। সংকীর্ণমনা লোকেরা ‘আল্লাহর পথে’ কথাটির এই বিকৃত অর্থই গ্রহণ করেছে, এতদ্ব্যতীত অন্য কোনো অর্থই তাদের মনে স্থান পায় নাই। কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। সামাজিক কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে যে কাজই করা হবে, তার নিয়ত যদি কোনো বৈষয়িক স্বার্থ ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করা না হয়, বরং আল্লাহর সন্তোষ লাভই যদি তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হয়, তবে ইসলাম এ সকল কাজকে ‘আল্লাহর পথে’ বলে ঘোষণা করে। উদাহরণ স্বরূপ দান-খয়রাতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। কোনো বৈষয়িক কিংবা নৈতিক স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত করলে তা ‘আল্লাহর পথে’ হবে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তোষ লাভ করার উদ্দেশ্যে কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে সাহায্য করা হলে ইহা নিশ্চয়ই ‘আল্লাহর পথে’ হবে। অতএব পরিপূর্ণ নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতার সাথে সকল প্রকার স্বার্থবাদের উর্ধ্বে থেকে যে কোনো কাজই করা হবে এবং এই ধারণার বশবর্তী হয়ে করা হবে যে, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করাই হচ্ছে আল্লাহর সন্তোষ লাভের একমাত্র উপায়, আর বিশ্ব-স্রষ্টার সন্তোষ লাভ ভিন্ন মানব জীবনের আর কিছু লক্ষ্যও হতে পারে না- ইহার প্রত্যেকটি কাজকেই ‘আল্লাহর পথে’ বলে ঘোষণা করা যাবে।
বস্তুত জিহাদের পূর্বেও ‘আল্লাহর পথে’ শর্তটি এ জন্যই যুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ এই যে, কোনো ব্যক্তি কিংবা দল যখন রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন অথবা ইসলামী মতাদর্শ অনুযায়ী নব বিধান প্রণয়ন করতে অগ্রসর হবে, তখন তার এই প্রচেষ্টায় ও আত্মদানে ব্যক্তিগত স্বার্থলাভ তার লক্ষ্য হতে পারবে না। ‘কাইজার’কে বিতাড়িত করে সে নিজেই যেন ‘কাইজার’ সাজবার ইচ্ছা পোষণ না করে। নিজের জন্য ধন-মাল, খ্যাতি-প্রসিদ্ধ, মান-সম্মান, কোনো কিছু লাভ করাই যেন তার চেষ্টা- শ্রমের মূল লক্ষ্য না হয়। তার সমস্ত কুরবানী ও শ্রম-সাধনার প্রকৃত উদ্দেশ্য হবে মানবসমাজে এক সুবিচার পূর্ণ জীবন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা। এতদি্ভন্ন তার কোনো উদ্দেশ্যই থাকবে না। কুরআন শরীফে বলা হয়েছেঃ
الَّذِينَ آمَنُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ
‘ঈমানদার লোকেরা আল্লাহর পথে লড়াই করে, কাফেরগণ লড়াই করে তাগুতের পথে।’ (সূরা আন নিসাঃ ৭৬)
‘তাগুত’ শব্দের মূল হচ্ছে ‘তুগইয়ান’ ইহার অর্থ সীমা লংঘন করা। নদীর পানি উচ্ছ্বসিত হয়ে যখন ইহার সীমা অতিক্রম করে, তখন বলা হয় নদীতে ‘তুগইয়ানী’ (প্লাবন) এসেছে। মানুষ যদি নিজের সংগত সীমা অতিক্রম করে অন্য মানুষের ‘খোদা’ (সার্বভৌম) হবার জন্য কিংবা অতিরিক্ত স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে নিজের শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তবে এটাকেই বলা হয় ‘তাগুতের পথে সংগ্রাম’। ‘আল্লাহর পথে’ সংগ্রাম এটার সম্পূর্ণ বিপরীত। ইহার চরম লক্ষ্য হবে পৃথিবীতে আল্লাহর সুবিচারমূলক আইন প্রতিষ্ঠিত করা। সংগ্রামী ব্যক্তি নিজেও ইহা পালন করার জন্য চেষ্টা করবে এবং অন্যকেও ইহা পালন করানোর চেষ্টা করবে। কুরআনে বলা হয়েছেঃ
تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
‘পারলৌকিক সম্মান ও মর্যাদা তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছি, যারা পৃথিবীতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চায় না। বস্তুত পারলৈাকিক সাফল্য এধরনের পরহেযগার লোকদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।’ (সূরা আল কাসাসঃ ৮৩)
হাদিসে উল্লেখিত হয়েছেঃ “এক ব্যক্তি নবী করীম (সা)-কে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধের’ অর্থ কি? এক ব্যক্তি ধন সম্পদের জন্য যুদ্ধ করে অপর ব্যক্তি বীরত্বের খ্যাতি লাভ করার জন্য যুদ্ধ করে, আর তৃতীয় ব্যক্তি শত্রুতা সাধনের জন্য কিংবা জাতির গৌরব অহংকার রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে। ইহাদের মধ্যে কার যুদ্ধ ‘আল্লাহর পথে’ হচ্ছে?”
হযরত (সা) উত্তরে বললেনঃ “এদের কারো যুদ্ধই ‘আল্লাহর পথে’ নয়। যে ব্যক্তি কেবল ‘আল্লাহর বিধান’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই যুদ্ধ করবে, শুধু তার যুদ্ধই ‘আল্লাহর পথে’ হবে।” অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছেঃ “যদি কেহ যুদ্ধ করে আর উট বাঁধবার একগাছ রশি লাভ করাও তার ‘নিয়ত’ হয় তবে সে কোনো ফল লাভ করতে পারবেনা। যে কাজ কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য হবে, আল্লাহ শুধু তাই কবুল করবেন। অবশ্য যদি তার কোনো ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত স্বার্থ লাভ উদ্দেশ্য না থাকে।”
অতএব ইসলামের দৃষ্টিতে জিহাদের সঙ্গে ‘আল্লাহর পথে’ একটি অপরিহার্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। নিছক যুদ্ধ তো পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবই করছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ উদ্দেশ্য লাভের জন্য পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে চেষ্টা করছে। কিন্তু মুসলমান একটি বিপ্লবী দলের নাম ; জীবন ও ধন-মাল প্রয়োগ করে দুনিয়ার সকল আল্লাহদ্রোহি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং এতদুদ্দেশ্যে দেহ ও আত্মার সকল শক্তি নিযুক্ত করা ইসলামের বিপ্লবী মতাদর্শের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু তা প্রতিষ্ঠিত আল্লাহদ্রোহিদের বিচূøত করে নিজেই তাদের স্থান দখল করার জন্য নয়। বরং এজন্য যে, পৃথিবীর বুক হতে আল্লাহদ্রোহিতার (সীমালংঘন) মূলোৎপাটন করা এবং সর্বত্র একমাত্র আল্লাহর আইন চালু করা বিশ্বমানবতার নিরাপত্তার জন্য একান্ত অপরিহার্য।
অতপর আমি ইসলামের বিপ্লবী আহ্বানের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করতে চাই। এ আলোচনা দ্বারা জিহাদের অপরিহার্যতা এবং এর মূল লক্ষ্য (ড়নলবপঃরাব) সুস্পষ্ট রূপে বুঝা যাবে।
ইসলামী বিপ্লবের আহ্বান
ইসলামের বিপ্লবী আহ্বান নিম্নলিখিত আয়াতে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছেঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ
‘হে মানুষ তোমাদের সেই ‘রব’ এর দাসত্ব কর যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আল বাকারাঃ ২১)
ইসলাম এখানে মজুর, জমিদার, কৃষক কিংবা কারখানার মালিক প্রভৃতি কোনো এক বিশেষ শ্রেণীকে আহ্বান জানায়নি। বরং ইসলামের ডাক সমস্ত মানুষের প্রতি। ইসলাম মানুষকে মানুষ হিসেবেই আহ্বান জানিয়েছে। এর নির্দেশ শুধু এতোটুকু যে, তোমরা যদি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো দাসত্ব, আনুগত্য ও অনুসরণ করতে থাকো তবে তা পরিত্যাগ কর। তোমাদের নিজেদের মধ্যে প্রভুত্ব লাভের লিপ্সা থাকলে তাও দূর কর। কারণ অন্য লোককে নিজের দাস বানাবার কিংবা কাউকেও নিজের সম্মুখে মাথা নত করতে বাধ্য করার কোনো অধিকারই তোমাদের কারো নেই। তোমাদের সকলকে একই আল্লাহর দাসত্ব কবুল করতে হবে। আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগীর ব্যাপারে তোমাদের সকলকে একই স্তর ও শ্রেণীভুক্ত হতে হবে।
تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ
‘আসো তোমরা ও আমরা এমন একটি কথায় একমত হই যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সমভাবে গ্রহণযোগ্য। তা এই যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করবো না, প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে কাউকেও আল্লাহর অংশীদার বলে মনে করবো না। পরন্তু আমাদের মধ্যে কাউকেও আল্লাহর পরিবর্তে আদেশ-নিষেধ দানের অধিকারী বলেও মানবো না।’ (সূরা আল ইমরানঃ ৬৪)
বস্তুত ইহা সর্বাত্মক ও নিখিল বিশ্বব্যাপী এক বিপ্লবের আহ্বান। ইসলাম উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করছেনঃ ان الحكم الا لله .
‘হুকুম দেয়ার কিংবা প্রভুত্বের অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারই থাকতে পারেনা।’
কোনো মানুষ নিজেই অন্য মানুষের শাসক ও নিয়ামক হতে পারে না, নিজ ইচ্ছামত কোনো কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং কোনো কাজ হতে নিষেধ করারও কোনো অধিকার কারও নেই। কারণ, কোনো মানুষকে সার্বভৌম প্রভু ও স্বাধীনভাবে আদেশ-নিষেধের অধিকারী মনে করার অর্থই হচ্ছে সকল বিপর্যয়ের মূল উৎস। মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা যে নির্ভেজাল প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন-যাপনের যে সহজ-সরল ব্যবস্থা দান করেছেন মানুষ তা হতে ঠিক তখনই বিচূøত ও বিচ্ছিন্ন হয় যখন সে আল্লাহকে ভুলে যায় এবং ফলত নিজকে, নিজের সত্তাকেও ভুলে বসে। ইহারই অনিবার্য পরিণামে মুষ্টিমেয় কতিপয় লোক কিংবা পরিবার অথবা শ্রেণী গোপনে কিংবা প্রকাশ্যভাবে খোদায়ী লাভ করবার দাবি উত্থাপন করে এবং নিজের সকল শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায় ও অসংগত উপায়ে অন্য মানুষকে নিজেদের দাসানুদাসে পরিণত করে। অপর দিকে এই আল্লাহকে ভুলে যাওয়া ও আত্মবিস্মৃত হওয়ার ফলেই মানব সমাজের এক বিরাট অংশ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রশক্তিগুলোর নিরংকুশ প্রভুত্ব স্বীকার করে নেয় এবং এদের প্রত্যেকটি হুকুম নত শিরে পালন করবে বলে নিশ্চয়তা দান করে। বস্তুত বিশ্বব্যাপী যাবতীয় অত্যাচার, যুলুম, বিপর্যয়, শোষণ ও দুর্নীতির মূল কারণ এটাই। এজন্যই ইসলাম সর্বপ্রথম এরই উপর আঘাত হানে এবং জলদগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করেঃ
وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ - الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ
‘যারা সীমালংঘন করে, পৃথিবীতে অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং কোনরূপ সংস্কার প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে না তাদের কোনো হুকুমই তোমরা মানিও না।’ (সূরা আশ শুআরাঃ ১৫১-১৫২)
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
‘যার মনকে আমার স্মরণ হতে গাফেল করে দিয়েছে, নিজের নফসের খাহেশ- লালসারই যে দাস হয়ে গিয়েছে এবং যার শাসন-কর্তৃত্ব সীমালংঘনকারী, তোমরা আদৌ তার আনুগত্য করিও না।’ (সূরা আল কাহাফঃ ২৮)
أَلاَ لَعْنَةُ اللّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ - الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا
‘আল্লাহর নির্ধারিত সরল জীবন ব্যবস্থায় যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং তাকে জটিল ও বক্র করে তুলতে চেষ্টা করে তারা যালেম এবং এ যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।’ (সূরা হূদঃ ১৮-১৯)
ইসলাম লোকদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেঃ
ءارباب متفرقون خير ام الله الواحد القهار
অর্থাৎ যেসব ছোট-বড় খোদার দাসত্ব করে তোমরা নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত হচ্ছো তাদেরই দাসত্ব গ্রহণীয়, না একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর দাসত্ব? এক আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ না করলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘খোদাদের’ দাসত্ব-শৃংখল হতে মুক্তি পাওয়া কখনও সম্ভব নয়। যে কোনো প্রকারে এরা তোমাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে থাকবে।
إِنَّ الْمُلُوكَ إِذَا دَخَلُوا قَرْيَةً أَفْسَدُوهَا وَجَعَلُوا أَعِزَّةَ أَهْلِهَا أَذِلَّةً وَكَذَلِكَ يَفْعَلُونَ
এই বাদশাগণ যখন কোনো এলাকায় প্রবেশ করে তখন সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে এবং সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে। বস্তুত ইহাই তাদের চিরন্তন স্বভাব। (সূরা আন নামলঃ ৩৪)
وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيِهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الفَسَادَ
‘এই ধরনের লোকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারলে পৃথিবীতে ধ্বংস ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে, শস্যক্ষেত ও অধস্তন বংশধরদের বিনাশ করে। আল্লাহ তা’য়ালা বিপর্যয় ও ধ্বংসাত্মক কাজ-কর্ম আদৌ পছন্দ করেনা।’ (সূরা আল বাকারাঃ ২০৫)
বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশ এখানে নেই। সংক্ষেপে আমি একথাই বুঝাতে চাই যে, ইসলামের তাওহীদ ও ‘খোদাবাদের’ আহ্বান অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসের ন্যায় নিছক ধর্মীয় আমন্ত্রণই নয়। বরং ইহা এক সর্বাত্মক সমাজ-বিপ্লবের (social revolation) ডাক। সমাজে যারা ধর্মের ক্ষেত্রে পুরোহিত, রাজনীতির দিক দিয়ে বাদশাহ, নেতা, শাসক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মহাজন, জমিদার ও ইজারাদার সেজে জনগণকে নিজেদের দাস বানিয়ে নিয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই উপর ইসলামের এই বিপ্লবী দাওয়াতের প্রত্যক্ষ ও প্রচন্ড আঘাত পড়ে। কারণ এরা কোথাও প্রকাশ্যভাবে ‘খোদা’ হয়ে বসেছে আর কোথাও নিজেদের জন্মগত কিংবা শ্রেণীগত অধিকারের ভিত্তিতে জনগণের আনুগত্য লাভের দাবি করছে, এরা স্পষ্ট ভাষায় বলেঃ ما لكم من اله غيرى (আমি ভিন্ন তোমাদের কোনো প্রভু নেই) انا ربكم الاعلى (আমি তোমাদের সর্বোচ্চ রব) انا احى واميت (জীবন-মৃত্যুর মালিক আমিই) এবং من اشد مناقوة (আমার তুলনায় অধিক শক্তিশালী আর কে হতে পারে?) আবার কোথাও এরা জনগণের অজ্ঞতা ও মূর্খতা আপন স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য কৃত্রিম খোদার মূর্তি ও হাইকাল বানিয়েছে এবং এসবের অন্তরালে এরা লোকদের উপর নিজেদের খোদায়ী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। অতএব কুফর, শির্ক ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে ইসলামের দাওয়াত এবং এক আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব স্বীকৃতির জন্য ইসলামের প্রচারমূলক কার্যক্রম সরাসরিভাবেই সমসাময়িক সরকার, সরকার সমর্থক কিংবা সরকার আশ্রিত শ্রেণীসমূহের স্বার্থের সাথে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। একারণে যখনই কোনো নবী
ياقوم اعبدوا الله مالكم من اله غيره .
‘হে জাতি, একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব স্বীকার কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো প্রভু ও মাবুদ নেই বলে আহ্বান জানিয়েছেন, সমসাময়িক রাষ্ট্র সরকার তখন তার প্রবল শক্তি সহকারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, সকল প্রকার দুর্নীতিপরায়ণ ও শোষক শ্রেণী তার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। কারণ ইহা নিছক কোনো অতি-প্রাকৃতিক ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাপারের বিশ্লেষণ (metaphysical proposition) নয়; প্রকৃতপক্ষে এটা ছিলো এক সর্বাত্মক সমাজ-বিপ্লবের উদাত্ত ঘোষণা। এ ঘোষণা কর্ণগোচর হওয়ার সংগে সংগে প্রবল রাজনৈতিক আলোড়নের আভাস পাওয়া যেতো।
ইসলামী বিপ্লবী দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ প্রেরিত সকল নবীই যে ‘বিপ্লবী’ নেতা ছিলেন এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী নেতা, এতে কোনোই সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু পৃথিবীর সাধারণ বিপ্লবী পুরুষ এবং এই আল্লাহ প্রেরিত বিপ্লবী নেতাদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অপরাপর বিপ্লবী নেতা ব্যক্তিগতভাবে যতোই পূণ্যবান ও সৎ হউক না কেন সুবিচার ন্যায়বাদের নির্ভুল আসন তারা কখনই লাভ করতে পারেন না। এরা হয়তো নিজেরাই মযলুম শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন, কিংবা মযলুমের দুঃখ মোচনের উচ্ছ্বসিত আবেগ নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ান। ফলে নিজ নিজ শ্রেণীগত দৃষ্টিভংগীর মানদণ্ডেই তারা সমস্ত ব্যাপারে যাচাই করে থাকেন। এর অনিবার্য পরিণাম তাদের দৃষ্টি কখনও নিরপেক্ষ এবং নিখুঁত মানবতাবাদী হতে পারে না; বরং এক পক্ষের প্রতি ক্রোধ ঘৃণা এবং অপর পক্ষের প্রতি সমর্থন সাহায্যের মনোভাব তীব্র ও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে। তারা অত্যাচারের প্রতিবিধান করার জন্য এমন পন্থা খুঁজে বের করেন যা প্রকৃতপক্ষে আর একটি যুলুমে পরিণত হয়। প্রতিশোধ গ্রহণ, হিংসা-দ্বেষ ও শত্রুতামুলক বিষাক্ত ভাবধারা হতে মুক্ত হয়ে সুস্থ, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ভারসাম্যযুক্ত এমন এক সমাজ-ব্যবস্থা নির্ধারণ করা তাদের দ্বারা সম্ভব হয় না, যাতে সমষ্টিগতভাবে গোটা মানবতা প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারে ; কিন্তু নবীদের কাজ কর্ম এর সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের হয়ে থাকে। তাঁরা যতোই নির্যাতিত, নিস্পেষিত ও নিপিড়ীত হন না কেন, তাঁদের সংগী-সাথীদের উপর যতোই অত্যাচারের ষ্টিম-রোলার চালানো হোক না কেন, তাঁদের পরিচালিত বিপ্লবী আন্দোলনে ব্যক্তিগত ভাবপ্রবণতা কখনই প্রভাব বিস্তার করতে পারে নাই। তাঁরা সরাসরিভাবে আল্লাহর নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের অধীনে থেকে কাজ করতেন। আর আল্লাহ যেহেতু মানবীয় ভাবপ্রবণতার সম্পূর্ণ উর্ধ্বে, মানুষের কোনো শ্রেণীর সাথে তার বিশেষ কোনো সম্পর্ক বা আত্মীয়তা নেই, কোনো শ্রেণীর সাথে তাঁর কোনো শত্রুতা বা কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, এজন্য আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন নবীগণ সমস্ত ব্যাপারকে ন্যায়ানুগ ও খাঁটি মানবতাবাদী দৃষ্টিতেই দেখে থাকতেন। যে কাজে সমগ্র মানবজাতির সমষ্টিগত কল্যাণ এমন কি স্বয়ং যালেম শ্রেণীসমূহের জন্যও প্রকৃত মংগল নিহিত রয়েছে, নবীগণ তাই করতেন এবং এমন এক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা প্রাণপণে সাধনা করতেন যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের সংগত সীমার মধ্যে থাকতে পারে, ন্যায়সংগত অধিকার লাভ ও ভোগ করতে পারে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক সম্বন্ধ রক্ষা করে চলতে পারে এবং সর্বোপরী ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক পরিপূর্ণ ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য সহকারে স্থাপিত হতে পারে। এ কারণেই নবীদের বিপ্লবী আন্দোলন কখনও শ্রেণী সংগ্রামে (class war) পরিণত হয়নি। তাঁরা এক শ্রেণীকে অপর শ্রেণীর উপর প্রতিষ্ঠিত করে সামাজিক পূনর্গঠনের কাজ (social reconstruction) শুরু করে নাই। তাঁরা এমন এক সুসামঞ্জস্য পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন যাতে সকল মানুষই বৈষয়িক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং সার্বিক কল্যাণ লাভের সুযোগ সমানভাবে পেতে পারে।
জিহাদের প্রয়োজন ও উহার লক্ষ্য
এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে ইসলাম কর্তৃক উপস্থাপিত সমাজ ব্যবস্থার বিস্তারিত আলোচনার অবতারণা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, সময়-সুযোগ হলে অন্যত্র তার চেষ্টা করা হবে। এখানে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর মধ্যে থেকে আমি বিশেষভাবে যে কথা বলতে চাই তা এই যে, ইসলাম নিছক একটি ধর্মবিশ্বাস এবং কতকগুলো ইবাদাত অনুষ্ঠানের সমষ্টিমাত্র নয়। মূলত ইসলাম এক পরিপূর্ণ ও ব্যাপক জীবন ব্যবস্থা। বিশ্ববাসীর জীবনক্ষেত্র হতে সকল প্রকার অত্যাচার ও বিপর্যয়মূলক নিয়ম-নীতি মুলোৎপাট করে তদস্থলে এক পূর্ণাঙ্গ সংস্কারমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়িত করাই এর একমাত্র লক্ষ্য। কারণ মানবতার কল্যাণ ও মংগল বিধানের জন্য তার দৃষ্টিতে এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম ব্যবস্থা।
এই ভাঙ্গাগড়া এবং বিপ্লব ও সংশোধনের জন্য ইসলাম বিশেষ কোনো জাতিকে আহবান জানায় না। ইহার ডাক হচ্ছে সমগ্র মানবতার প্রতি গোটা মানবজাতি এমন কি স্বয়ং যালেম, শোষক ও দূর্নীতিপরায়ণ জাতি ও শ্রেণীসমূহের প্রতি রাজা, বাদশাহ, সমাজপতি ও নেতৃবৃন্দকে ইসলাম এই বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণের আহবান জানায় আর সকলের প্রতিই ইহার পয়গাম এই যে, সৃষ্টিকর্তার নির্ধারিত সীমার মধ্যেই জীবনযাপন ও যাবতীয় কার্য সম্পাদন কর, তোমরা সত্য ও সুবিচারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই তোমাদের জীবনে সর্বাংগীন শান্তি ও নিরাপত্তা সূচিত হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো মানুষের সাথে ইসলামের শত্রুতা নেই, শত্রুতা যুলুমের সাথে, বিপর্যয় ও বিশৃংখলার সাথে, নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের সাথে, আর আল্লাহর নির্ধারিত স্বাভাবিক ব্যবস্থা অনুযায়ী যা একজনের প্রাপ্য নয় তা লাভ করার জন্য কেউ চেষ্টা করলে তার সাথে শত্রুতা রয়েছে।
এ আহবান যারাই গ্রহণ করবে তারা যে কোনো জাতির, বংশের, শ্রেণীর বা দেশেরই লোক হোক না কেন, তারা সকলেই সমান অধিকার ও সমান মর্যাদার ভিত্তিতে ইসলামী দল ও সমাজের সদস্যরূপে গণ্য হবে এবং এরূপে এরাই সেই আন্তর্জাতিক বিপ্লবী দলে রূপান্তরিত হংবে, যাকে কুরআন মজীদ ‘আল্লাহর দল’ নামে অভিহিত করেছে এবং যার অন্য নাম হচ্ছে ইসলামী দল কিংবা মুসলিম উম্মাত।
এই দলটি অস্তিত্ব লাভ করেই স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জিহাদ শুরু করে দেয়। এই দলের বর্তমান থাকাই অনৈসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চূর্ণ করা এবং ইহার পরিবর্তে এক সুবিচারপূর্ণ ও ভারসাম্যযুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা- কুরআন যাকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বলেছে- প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করা অপরিহার্য সাব্যস্ত করে। এই দল যদি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা না করে, তবে এর অস্তিত্ব লাভের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ ইহার অন্য কোনো উদ্দেশ্য তো আদৌ ছিলো না। আর উহার অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য এই জিহাদ ভিন্ন অন্য কোনো পন্থাই থাকতে পারে না। কুরআনের ভাষায় এই দলে অস্তিত্ব লাভের একটি মাত্র উদ্দেশ্যই রয়েছে এবং তা এইঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ
‘তোমরা সেই সর্বোত্তম জাতি, বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধনের জন্যই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ ও ন্যায় কাজের জন্যই লোকদেরকে নির্দেশ দাও
৬| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭
এ জাফর বলেছেন: ইসলাম অবশ্যই শান্তির ধর্ম। তবে যারা শান্তিতে বিশ্বাস করে। কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা উল্লেখ আছে।
৭| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:২২
এ জাফর বলেছেন: আমি নিষ্কর্মার পরিচয় জানতে চাই। আপনি যদি অমুসলিম হন তবে ইসলামের সমালোচনা করতে পারেন অবশ্যই যথার্থ ডকুমেন্ট সহ। আপনাদের মত ব্লগারদের কারনেই আজ সকল ব্লগাররা কলন্কিত।
৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৩
নিষ্কর্মা বলেছেন:
নিষ্কর্মা হৈল অলস মস্তিষ্ক, আর কে না জানে, অলস মস্তিষ্কেই ফেরেশতাদের বসবাস! হে হে হে হে ....
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯
নক্শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: যাক, ইসলাম শান্তির ধর্ম নয় সেটা জেনে ভালো লাগলো। আমাদের এই ধর্মের লোকজনের কার্যকলাপের সাথে আর যাই হোক "শান্তি" শব্দটা একেবারেই যায়না।