নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামু তে সময়ক্ষেপণ করি, অতি জানাশোনার ভিড়ে নিজের স্বল্পকায় জ্ঞান আজিকে সার্থক বলিয়া বোধোদয় হইতেছে। পড়াশুনা আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাবি।

মার্কো পোলো

মার্কো পোলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ণগ্রাফি কেন দ্রুত বন্ধ করা উচিত; আমাদের আইনে এ সম্পর্কে কি বলা আছে?

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯


আমাদের যুব সমাজের ধংসের অন্যতম কারন পর্ণগ্রাফি। যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে নেশার মতো ছড়িয়ে পড়ছে এ আসক্তি। উঠতি বয়সী তরুণরা দিনদিন প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে পর্ণগ্রাফিতে ঝুঁকছে। স্বল্পমূল্যে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা সম্বলিত হ্যান্ডসেট কিনে মোবাইল ব্যবহার যেমন সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহারও বেড়েছে।

ইন্টারনেটভিত্তিক ওয়েবসাইট গুলোতে বিচরণ করে অশ্লীল চিত্র, ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আবার কারো নগ্ন ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার মত ঘটনা বর্তমানে হরহামেসাই ঘটে চলছে। যার ফলাফল অতি ভয়াবহ। এর কারনে হত্যা ধর্ষন আর আত্মহত্যার মত ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সেরকমই এক ঘটনার স্বীকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় হাসি নামের নবম শ্রেনীর এক মেধাবী ছাত্রী। হাসির নগ্ন ভিডিও তৈরি করে এক ছেলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। এতে হাসি লজ্জায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এরকম হাজারো হাসি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে আছে। যাদের অনেকের গল্প আমাদের পর্যন্ত পৌছায় না।

বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে পর্ণগ্রাফি আসক্তির কারনে মানুষ যে শারীরিক এবং মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে- এ ব্যাপারে অনেকেরই এখনো স্বচ্ছ কোন ধারনা হয়নি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে শৈশব বা কৈশোরেই পর্ণে আসক্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে মানুষের কাছে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের মত ব্যাপারগুলো খুব গতানুগতিক বা সাধারন আচরন বলে মনে হয়। এসব আচরণের মাঝে যে বীভৎসতা কিংবা কদর্যতা আছে- তা আর পরবর্তীতে পর্ণ আসক্ত মস্তিষ্কটি আলাদাভাবে বুঝতে পারেনা। আর পর্ণ আসক্তদের অস্বাভাবিক আচরণের কারনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে শিশুরাই।

প্রসঙ্গত, বৈজ্ঞানিক গবেষকদের দাবি, যাঁরা অধিক মাত্রায় অশ্লীল দৃশ্য উপভোগ করেন, তাঁদের মগজের ধূসর পদার্থ উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে।

আইনস্টাইন প্রায় ৮০ বছর আগে বলেছিলেন , প্রযুক্তি এক সময় একটি নির্বোধ প্রজন্ম উপহার দেবে। বলতে কোন দ্বিধা নেই, বর্তমান প্রজন্মটা আইনস্টাইনের সেই ইঙ্গিত বহন করা প্রজন্ম।

এখন যদি এসব বন্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে অচিরেই যুবসমাজের নৈতিক অধঃপতনও ঠেকানো সম্ভব হবে না।

বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইন বা নির্দেশনা নেই। তবে বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধের জন্য পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইন প্রণয়ন করেছেন।
এই আইন প্রণয়ণ এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের ফলে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে, বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

★★এখন আসুন জেনে নেই এ আইনে পর্ণগ্রাফির সংজ্ঞা কিভাবে দেওয়া হয়েছে-

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ধারা ২ এর (গ) উপধারা অনুসারে ‘পর্নোগ্রাফি’’ অর্থ—

(১) যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই;

(২) যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেট;


★★পর্নোগ্রাফির শাস্তিঃ
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক এর শাস্তি সম্পর্কে-

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ধারা ৮ অনুসারে:-

(১) কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করলে বা উৎপাদন করবার জন্য অংশগ্রহণকারী সংগ্রহ করে চুক্তিপত্র করলে অথবা কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করলে অথবা কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে কোন প্রলোভনে অংশগ্রহণ করিয়ে তার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থির চিত্র, ভিডিও চিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

(২) কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদা হানি করলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোন সুবিধা আদায় বা কোন ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণকৃত কোন পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

(৩) কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

(৪) কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

(৫) কোন ব্যক্তি—
(ক) পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, ভাড়া, বিতরণ, সরবরাহ, প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যে কোন প্রকারে প্রচার করলে অথবা উক্ত সকল বা যে কোন উদ্দেশ্যে প্রস্তুত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করলে; অথবা
(খ) কোন পর্নোগ্রাফি প্রাপ্তি স্থান সম্পর্কে কোন প্রকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে; অথবা
(গ) এই উপ-ধারার অধীন অপরাধ বলে চিহ্নিত কোন কার্য সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে;
—তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

(৬) কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, বিতরণ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অথবা শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, সরবরাহ বা প্রদর্শন অথবা কোন শিশু পর্নোগ্রাফি বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

(৭) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তাকারী ব্যক্তি প্রত্যেকেই একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

★★এর প্রতিকার কি হতে পারে? এটির নিয়ন্ত্রণে আমাদের কি করণীয়?

এতক্ষণ এর শাস্তি সম্পর্কে জানলাম, কিন্তু শুধু শাস্তিই কি এ অধঃপতন ঠেকাতে পারবে! এর নিয়ন্ত্রণে আমাদের কি করণীয় আছে?

♣সরকার চাইলেই পর্ণসাইটগুলো যেকোন সময় বন্ধ করতে পারে। আমরা পূর্বে বহুবার লক্ষ করেছি ইউটিউব, ফেসবুক বন্ধ করতে। সুতরাং সরকারকে পর্ণ ও চটি বিষয়ক সব সাইট বন্ধ করে দিতে হবে।
♣তরুণদের মনোযোগের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাঠ্যাভাস, খেলাধুলা, বিনোদনধর্মী কাজকর্মে উৎসাহিত করতে হবে।
♣অল্পবয়সে সন্তানের হাতে মোবাইল বা সহজলভ্য ডিভাইস তুলে দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের সুযোগ করে না দেওয়া।
♣এছাড়া মনে রাখা দরকার ঢেকে রাখা জিনিষের প্রতি আকর্ষণ সর্বদাই বেশি। এজন্য যৌন শিক্ষার অভাব ও নৈতিক মূল্যবোধ ধারন করার ব্যর্থতাও এর জন্য দায়ী। এসব বিষয়ের প্রতিও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।
♣পর্ণ বিষয়ক চলচ্চিত্র কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
♣পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে।
♣সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
♣কঠোর শাসন, মারধোর না করে বরং আপনার সন্তানের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করুন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সহমত। তবে ধর্মীয় ভাবে নৈতিকতা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। আর মোবাইল ১৮ বছরের আগে কারো হাতে না দেয়ার আইন করা উচিত...

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০

মার্কো পোলো বলেছেন: ঠিক বলেছেন, তবে বিশেষ প্রয়োজনে ১৮ এর আগে মাল্টিমিডিয়া সুবিধাহীন মোবাইল ব্যবহার করতে পারে।।
ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.