![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(দৃশ্যপট-১)
(বাসার সামনের মোড়টাতে কুলিং কর্ণার ধাঁচের ছোট্ট একটা দোকান । এলাকার সবার কাছে সেটা মামার দোকান নামে পরিচিত । চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছরের চিকনা-চাকনা গড়নের সদা হাস্যোজ্জল আমাদের মামা । কার মামা, কোন সূত্রে মামা এটা কোন ফ্যাক্টর না ! আর তার দোকান টা হল আমাদের সবার প্রিয় মামার দোকান, আমাদের আড্ডাবাজির মূল কেন্দ্রবিন্দু । কাজ থাকুক আর না থাকুক প্রতিদিন তার দোকানে একবার ঢুঁ মারা চাই ! এ ঘটনার সূত্রপাত ও সেভাবে ঢু মারতে গিয়ে ।
টিউশনি থেকে বাসায় ফিরছি । রাত সাডে আটটা তখন । ঢুকলাম মামার দোকানে....)
:- মামা, এক কাপ চা লাগাও, কড়া লিকার, চিনি এক চামচ....
:- লাগাইতেছি । বস ।
:- তা দিনকাল কেমন কাটতেছে ?
:- এই তো ! আল্লাহর রহমতে চলে যাচ্ছে । তুমি এখন কই থাক ? দেখা যায় না যে ?
:- আগের সে দিন কি আর আছে মামা ? এখন অনেক কিছুই চিন্তা করতে হয় ! ক্যারিয়ার নিয়া ভাবতে হয় ! শান্তি মত ঘন্টাখানেক বসে যে আড্ডা দেব তারও উপায় নাই !
:- তা ঠিক কইছ । এই লও চা...
:- (চুমুক দিয়ে) ওহ ! সেই রাম হইছে মামা ! চা বানানোর উপর যদি নোবেল প্রাইজ থাকত তবে সেটা তুমিই পাইতা ! কোন সন্দেহ নাই ।
:- হা হা হা ! ভাইল কইছ ।
(এমন সময় দোকানে অনিকের প্রবেশ । পাতি মাস্তান । বদমাইশির জন্য কুখ্যাত । সবাই ওকে ডাকে অনিক্ক্যা বলে । রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে পাওয়ারও কিছু কামিয়েছে । দুই একটা মার্ডার কেইসও আছে ওর নামে । বয়স বেশি না । আমাদেরই সমান । দুই-তিন বছর বেশিও হতে পারে !)
:- এই নীল, শোন...
:- কি বলবি বল ।
:- জানের মায়া তো আছে, নাকি ?
:- দেখ অনিক, তুই আমারে স্কুলের পোলা ভাবিস না যে তুই একটা ধমক দিলি আর আমি ভয় থরথর করে কাঁপা শুরু করলাম !! কিছু বলার থাকলে বল । নইলে ফুট !
:- বেশি সেয়ানা হই গেছস না ? পা ভাইঙ্গা হাতে ধরাই দিমু । মৌনিতার পিছনে ঘুরা ছাইড্যা দে । নইলে............ফিন্নিশ !!
:- মৌনিতা ? সেটা আবার কে ?
:- দেখ, ঢং করিস না ! আমার ঢং ভাল্লাগে না । তোদের সামনের বাসার মেয়েটা । ওরে আমার অনেক পছন্দ হইছে । যদি এলাকায় থাইকতে চস, তাইলে ওরে ভুইল্যা যা ! এটাই লাস্ট ওয়ার্নিং । এরপর আর মুখে কিছু কমু না । ডাইরেক্ট একশান !!
(অনিক দোকান থেকে রাগ ভঙ্গিতে বেরিয়ে গেল । বিস্ময়ে আমি পুরাই থ !)
:- ঘটনা কি মামা ?
:- আরে মামা, ঘটনা কি আমি নিজেই জানি না ! তোমারে কমু কেমনে ?
:- তাইলে ও তোমারে ধমক দিয়া গেল ক্যান ? আর মৌনিতা কেড়া ?
:- ধমক ক্যান দিয়া গেছে সেটা তো আমিও বলতে পারছি না । আর ওই তো বলে গেল- আমাদের সামনের বাসার মেয়েটাই মৌনিতা !
:- বুঝলাম ! কিন্তু তার লগে তোমার কি চক্কর ? প্রেম ট্রেম না তো ?
:- ধুর মামা । কি যে কও ? ছাদে উঠলে একটা মেয়েরে অবশ্য প্রায়ই দেখি । কিন্তু কোন দিন কথা বলি নাই । এফেয়ার হইবো কেমনে ? আর ওর নাম যে মৌনিতা আজই সেটা প্রথম শুনছি ।
:- তাইলে ঘটনা কি ?
:- কে জানে কি ঘটনা ? তবে কিছু একটা যে আছে তাতে কোন সন্দেহ নাই । দেখতে হবে ব্যাপারটা....
:- সাবধানে থাইকো । অনিক্ক্যা পোলা ভালা না ।
:- ধুর, বাদ দাও । ওর হেডাম আমার জানা আছে । বাদ দাও এসব । এখন একটা বেনসন দাও ।
:- এই নাও ।
:- মামা এখন যাই তাইলে... বিল খাতায় লিইখ্যা রাইখো । বেতন পাইলে দিয়া দিমু নে...
:- ঠিক আছে মামা । সমস্যা নাই ।
(বেরিয়ে এলাম দোকান থেকে । মাথায় শুধু একটা ভাবনাই ঘুরছে - ঘটনা কি ?)
(দৃশ্যপট-২)
(সকাল নয়টা। আমার বাসার নিছে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে ঠিক দাঁড়িয়ে নেই, বলা যায় অপেক্ষা করছি। মৌনিতার জন্য। কাল রাতে টেনশনে ঘুমাতে পারি নি। স্বপ্নে কয়েকবার অনিক্ক্যার সাথে ফাইটও করেছি। আর মৌনিতার মিষ্টি চেহারাটাও বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। এমনিতে ওকে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু কখনো তেমন কিছু ভাবি নি। কিন্তু থ্রেটের পর থেকে কেন জানি ওকে নিয়ে ভাবতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন- হয়তো বা সেজন্যই। তাছাড়া ঘটনা কি সেটাও তো জানতে হবে।
স্কুলগামী মেয়েরা সাধারণত এই সময়েই ঘর থেকে বের হয়। তাই অপেক্ষা করছি। প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়ানোর পর বাসা থেকে বের হল সে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে হটাত্ গতি বাড়িয়ে দিল সে। অদ্ভূত তো.....
পিছন থেকে ডাক দিলাম আমি। আমার ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকাল সে। চোখ মুখে ভয়ার্ত দৃষ্টি। আশ্চার্য ! ভয় পেল নাকি ? এলাকায় আমার রেপুটেশন তো ভাল। আমার ডাক শুনে তো ভয় পাওয়ার কথা না। আচ্ছা যাক, কথা বললে বুঝা যাবে। এগিয়ে গেলাম আমি।)
:- এই, তোমার নাম মৌনিতা না ?
:- জ্বি ।
:- তোমার সাথে কিছু কথা আছে ।
:- জ্বি বলেন ।
:- আচ্ছা আমাকে নিয়ে কি তোমার সাথে কিছু হয়েছে ?
:- নাহ ! কি হবে ?
:- আসলে যদি কিছু হয়ে থাকে তবে সেটা আমাকে বলতে পার । কাল অনিক নামের একটা ছেলে এসে তোমাকে নিয়ে আমাকে অনেক থ্রেট ফ্রেট দে । এখন কি হয়েছে সেটা জানলে না হয় আমি কিছু করতে পারতাম । কিন্তু কিছুই না জেনে একেবারে অন্ধকারে থেকে আমি কি করতে পারি বল----
:- আসলে...... আসলে আমি একটা ভুল করে ফেলেছি ।
:- ওওওও ! তাই নাকি ? কি ভুল ?
:- ওই অনিক্ক্যা হারামজাদা আমাকে অনেকদিন ধরে ডিস্টার্ব করে । স্কুলে বিষয়টা জানিয়েছিলাম । স্কুল থেকে বলে- বাসায় জানাতে । কিন্তু বাসায় জানাতে সাহস পাচ্ছি না । আসলে আমার আব্বু খুব কড়া । পুরো বিষয়টা হয়ত বুঝতেও চাইবেন না । উল্টা আমার দোষ দিবেন । বলবেন- এত মেয়ে থাকতে ও তোর পিছনে লাগছে ক্যান ? নিশ্চয় তুই কিছু করছস ! এও বলে বসতে পারেন যে- তোর আর পড়াশুনা করা লাগবে না ! তাই বাসায় বলতে সাহস পাচ্ছি না । ঐদিন বান্ধবীরা পরামর্শ দিল এটা বলতে যে আমার বয় ফ্রেন্ড আছে ! তাহলে হয়তো আর ডিস্টার্ব করবে না । তাই গত পরশু ও যখন মিশা সওদাগর স্টাইলে আমাকে প্রপোজ করতে আসে তখন আমি ওর মুখের উপর বলে দি যে আমার অলরেড়ি বয়ফ্রেন্ড আছে । তাই চাইলেও ওর সাথে প্রেম করতে পারব না ! ও যাতে আমাকে ডিস্টার্ব না করে । আমি ভেবেছিলাম- এতে হতাশ হয়ে ও চলে যাবে । কিন্তু আমার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে বদমাইশটা আমার বয়ফ্রেন্ড কি করে কোথায় থাকে এসব জিজ্ঞাস করতে শুরু করে । আমার তো আসলে কোন বয়ফ্রেন্ড নাই । কি করা যায় ? আমি চাইলে আমাদের ক্লাসের কোন ছেলের নাম বলতে পারতাম ! কিন্তু সমস্যা হল ওরা সবাই বাচ্ছা ! একটা ধমক দিলেই ভ্যাঁ করে কেঁদে সব বলে দিবে । তখন হয়ত বা হিতে বিপরীত হতে পারে । আর আমি তো বড়সড় তেমন কোন ছেলেকে চিনি না । আপনাকে প্রায় সময় ছাদে দেখি আর একদিন ফোন কথা বলার সময় আপনাকে আপনার নাম নীল বলতে শুনেছিলাম ! তাই ঐদিন অনিক্ক্যা কে আপনার নাম বলে দিই !!
(মৌনিতা যখন তার দীর্ঘ লেকচার শেষে থামল তখন আমি বিষ্ময়ে পুরাই থ ! একজনের টিজ থেকে বাঁচার জন্য আরেকজন কে যে কেউ এভাবে শূলে চড়াতে পারে এ মেয়েকে না দেখলে তা বিশ্বাস করতাম না ! তাছাড়া কাহিনীটাও কেমন যেন খাপছাড়া মনে হচ্ছে । ও তো ওর মামাত/ফুফাত/খালাত কোন ভাইয়ের নামও বলতে পারত ! আমার নাম কেন ?)
:- ও আচ্ছা ! ঘটনা তাহলে এই ? এতক্ষণে বুঝলাম কাহিনী কি ?
:- আসলে আমি ভেবেছিলাম- আপনার কথা শুনলে ও আর তেমন কিছু করবে না ! কিন্তু ও যে আপনার সাথেও তাল্লি বাল্লি শুরু করে দিবে বুঝি নি । যাই হোক, সমস্যা টা আমার । এতে আপনাকে জড়ানো টা ঠিক হয় নি । ও আরেকবার সামনে আসলে ওকে সব খুলে বলে আপনাকে আর ঘাঁটাতে নিষেধ করব । আমার সমস্যা হলে হোক । কিন্তু আমি চাই না আমার কারণে আপনি কোন সমস্যায় জড়ান । এমনিতে যা কিছু হয়েছে তার জন্য I am really sorry......
(মেয়েটা খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে । তারচেয়েও বেশি সুন্দর করে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে পারে । শেষের কথাগুলো শুনার পরে কোন ছেলের পক্ষে কি আর এটা বলা সম্ভব যে- আপনার সমস্যা আপনি সামলান ! আমাকে আর জড়াবেন না ! তার উপর আমি আবার হাজী মুহাম্মদ মহসীন টাইপের । তাই তার এহেন দুরবস্থা দেখে ভেতর থেকে আমার অন্তঃরাত্মা কথা বলে উঠল)
:- মাথা খারাপ ? যা বলছ, ঠিক বলছ । আর কিছু বলার দরকার নেই । আমি দেখছি ওর কি করা যায় !
:- আপনি শিওর তো- আপনার কোন সমস্যা হবে না ?
:- হ্যা । আমি শিওর ।
:- থ্যাংকস ।
:- ওয়েলকাম !
:- স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে, যেতে হবে ।
:- কোন স্কুলে পড় তুমি ?
:- দক্ষিণ মুদরাপাড়া হাই স্কুল ।
:- ও । কোন ক্লাস ?
:- ক্লাস টেন । সামনের বছর SSC দেব, Science থেকে ।
:- ভাল । ঠিক আছে যাও ।
:- যাই ।
(মেয়ে হাটা শুরু করল । খেয়াল করলাম- মেয়ের হাটার ভঙ্গিটাও খুব সুন্দর ! আচ্ছা আমি এসব কেন খেয়াল করছি ?
অদ্ভুত তো.......
যাক, ঘটনা পরিষ্কার হল । এখন অনিককে দেখতে হবে । কিন্তু কিভাবে ??)
(দৃশ্যপট-৩)
(আমি, ইমন, তানভীর, জিয়া, নোবেল, আরিফ, রিজভী, শিহাব, তুষার, তুহিন, মামুন ও নাবিল । আমার ফ্রেন্ড সার্কেল । ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তুমুল আড্ডা চলছে ।
আমাদের ১২ জনের সখ্যতা সেই ফার্স্ট সেমিস্টার থেকে । অবশ্য এর পেছনে ছোট্ট কিন্তু মজাদার একটা ঘটনা আছে ! আমরা যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টে ২৮ জন ছেলে ছিল । এর মাঝে ৩ জন কখনো প্রেম করে নাই, ১৩ জন ছিল গার্লফ্রেন্ডওয়ালা আর আমরা ১২ জন ছিলাম ছ্যাকা খাওয়া পার্টি !!! এর মাঝে জিয়া আবার তিনবার এবং জাহেদ দুইবার ছ্যাঁক খেয়েছিল । তাই জিয়া কে প্রেসিডেন্ট আর আরিফকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে আমরা ছ্যাকা খাওয়া পাবলিকরা একটা ক্লাব খুলেছিলাম- হ্যাপি ক্লাব ! ক্লাবের মূলনীতি ছিল-
আমরা সবর্দা প্রেম থেকে ১০০ হাত দূরে থাকব এবং সুখী থাকব !!!
কেউই অবশ্য শেষ পর্যন্ত মূলনীতিতে অটুট থাকতে পারেনি । বার জনের মাঝে ১০ জনই এখন প্রেমিকা পালে ! বাকি আছি আমি আর তানভীর ।
ক্লাবের মূলনীতি থেকে সরে আসলেও আমাদের বন্ধুত্ব এখনো আগের মতই আছে । তুমুল আড্ডা চলছে । আড্ডার মাঝখানে আমিই হটাত্ একটা অপ্রাসঙ্গিক একটা বিষয়ের অবতারণা করলাম !)
:- মামা, চিটাগাং এ জুড়ো কোথায় শিখায় কেউ কি জানস ?
:- ক্যান মামা ? তোর হটাত্ জুড়ো শিখার শখ হইল ক্যান ?
:- একজনের মাথা ফাটামু !
:- হা হা হা ! এই তোরা শুনছস ? নীল মামা একজনের মাথা ফাটাইবো ! এজন্য জুড়ো শিখবার চায় ! হা হা হা !
:- কও কি মামা ? তুমি একজনের মাথা ফাটাইবা ? এজন্য জুড়ো শিখন লাগবো ? তাইলে আমরা আছি কিইল্লাগ্যা ?
:- দেখ । সব সময় ফাইজলামি ভাল্লাগেনা ।
:- মামা, তোমার ক্যান মনে হইল যে আমরা তোমার লগে ফাইজলামি করতাছি ? কার মাথা ফাটান লাগবো একবার খালি কও । তারপর দেখ, আমরা তার মাথারে কয়টুকরা করি !
:- হাহ্ !!
:- হাহ্ ক্যান ? আইচ্ছা কও, ঘটনা কি ? হটাত্ মাথা ফাটাইবার মুন্ঞ্চায় ক্যান ?
:- ঘটনা হইল- আমার সামনের বাসায় একটা মাইয়্যা থাকে ।
:- থাকতেই পারে । তাতে কি ?
:- দেখ, কথার মাঝখানে কথা কইলে ঘুষি মাইরা নাক ফাটাই দিমু ।
:- উরে বাবা ! ভয় পাইছি । আইচ্ছা ঠিকাছে । কও...
:- মেয়েটারে একটা ফালতু পোলা ডিস্টার্ব করে । পলিটিক্যাল পাওয়ার টাওয়ার আছে ঐ পোলাটার । ঐ পোলার হাত থেকে বাঁচার লাইগ্যা মাইয়া কইছে- আমি নাকি তার বয়ফ্রেন্ড !!
:- খাড়াও মামা । একখান কথা- মাইয়্যা কি আর পৃথিবীতে মানুষ দেখে নাই ? ৭০০ কোটি মানুষ ফালাইয়্যা তোমারে ক্যান কইল যে তুমিই ওর বয়ফ্রেন্ড । ঘটনা কি মামা ?
:- আমারে বিশ্বাস করস না তোরা ? ঘটনা কিছু হইলে তো জানতিই ! ঐ মাইয়্যার নামই জানছি থ্রেট খাওয়ার সময় !
:- থ্রেট ? কও কি মামা ? কে দিছে ?
:- আরে সেটাই তো কইতাছি ! মাইয়্যা যখন কইছে যে আমিই তার লাভার, এটা শুইন্যা ঐ পোলা আসি আমারে অনেক ধমক ধামক দে !
:- কি ? এত্ত বড় সাহস ? চল তারে গিয়া বানাই আসি ।
:- Are you serious ?
:- Absolutely....
:- চল তাইলে....
:- খাড়াও মামা, মোর একখান কথা ছিল ।
:- কি কথা ?
:- ধর, আমরা এখন তারে গিয়া ধমক ধামক লাগাইলাম । চড় থাপ্পরও দুই একটা লাগাইলাম ! কিন্তু এতে তো সমস্যার সমাধান হইবো না ! বরং আরো বাড়বো !
:- কেমনে ?
:- কারণ, আমরা হইলাম বাইরের পোলা । এখন সবাই গিয়া না হয় তারে মাইরা আসলাম । কিন্তু আমরা তো সবসময় তোমারে কিংবা সেই মাইয়ারে প্রটেকশান দিতে পারমু না । তোমরা যখন একলা থাকবা তখন সেই পোলা তো তার দলবল লইয়্যা আইসা অনেক কিছু করতে পারে ! তার উপর পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে বলছ !
:- কথা তো হাঁচা কইছ মামা । তাইল কি করা যায় এখন ?
:- সবচেয়ে ভাল হয় কি জান ? স্থানীয় কাউরে দিয়া থ্রেট দেয়াতে পারলে !
:- কিন্তু আমার এলাকায় পাওয়ারফুল কারো সাথে তো আমার তেমন পরিচয় নাই !
:- ওহ । থাকস কই ? অলংকার না ?
:- হুম ।
:- মুন্না ভাই কর্ণেল হাট থাকে । পাশেই....
:- মুন্না ভাইটা কে ?
:- জেলা যুবলীগের সেক্রেটারি !
:- ওরে ব্বাস ! খাইছে । উনারেই তো দরকার । তুই উনারে কেমনে চিনছ ? উনি কাজটা করব ?
:- করব মানে ? ১০০ বার করব ! আমি আর উনার ছোট ভাই কলেজ ফ্রেন্ড । আমাদের বাসায় অনেকবার আসছিলো উনি । আমারে অনেক আদর করে । আমি কইলে অবশ্যই করব !
:- তাইলে ক না....
:- দাঁড়া । ফোন দিতাছি উনারে....
(রিজভী উঠে চলে গেল । আমরা তার দিকে তাকিয়ে আছি । মিনিট চারেক পরেই ফিরে এল সে)
:- কইছিলাম না- আমি কইলেই মুন্না ভাই রাজি হইবো ! তবে তিনি কইছেন আমাদেরও সাথে থাকতে, যাতে সবাইরে চিনে রাখে । সময় করে সবাইরে যাইতে কইছেন ।
:- কখন যাবি ?
:- মামা হিন্দিতে একটা কথা আছে- কাল করে তো আজ কর, আজ করে তো আভি !!
:- মানে কি ? এখনই যাবি ?
:- হুম । এখনই....
:- ঠিকাছে । চল তাইলে....
:- চল....
:- চল....
:- চল চল চল, উর্ধঃ গগনে বাজে মাদল, নিম্নে উতলা ধরণী তল, অরুণ প্রাতের তরুণ দল, চলরে চলরে চল......
খানিক বাদেই ১২ জনের তরুণ দলটাকে বাসে ঝুলে পড়তে দেখা গেল ।
(এরাই হচ্ছে আমার বন্ধু । আমার যে কোন কাজে আমার চেয়ে তাদের গরজই বেশি । আমার সব কাজকেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এরা আপন করে নেয় । সত্যিই এমন বন্ধু পাওয়া মুশকিল । জানি না, নিজের অজান্তে কবে কোন পুণ্য করেছিলাম- যার বদৌলতে সৃষ্টিকর্তা এমন অসাধারণ কিছু বন্ধু দিয়েছেন আমাকে ।)
(দৃশ্যপট-৪)
(রড় ধরে ঝুলছি ৮ জন । বাকি ৪ জন সিটে বসা । সিটে বসা হতভাগাদের ব্যাগগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমার আট জন তুমুল আড্ডায় মেতেছি । আশে পাশের বাকিদের যদি এতে ডিস্টার্ব হয় তাতে আমাদের কি ?)
:- মেয়েটা কেমন রে ?
:- কোন মেয়ে ?
:- যার জন্য এত কিছু করতেছি আমরা ?
:- তোরা মেয়েটার জন্য করতেছস ? আমি তো ভাবছিলাম আমার জন্য করতেছস !!
:- ধুর ! একই কথাই তো ! আমরা তোর জন্য করতেছি আর তুই মেয়েটার জন্য ! যুক্তিবাদের একটা সূত্র আছেনা- মানুষ মুরগী খায়, মুরগী গু খায়- তাই মানুষ গু খায় !! সেই রকম ।
:- ঐ বেটা ! বকছ ক্যান ?
:- যেটা জিগাইছি সেটার উত্তর দে !
:- খারাপ না । ভালই । ফিগারও চমত্কার !!
:- প্রেম করা যাবে ?
:- শালা, কয়টার সাথে প্রেম করবি ?
:- ধুর বেটা ! আমি আমার জন্য বলছি নাকি ?
:- তাইলে কার জন্য ?
:- তোর জন্য !
:- আমি ? আমি প্রেম করব ঐ মাইয়্যার সাথে ?
:- কেন ? সমস্যা কি ? তুই না বললি- দেখতে শুনতে খারাপ নাহ ! ফিগারও মাশাল্লাহ !
:- ধুর ! ও তো একটা বাচ্চা মেয়ে !!
:- বাচ্চা মেয়ে ? কিসে পড়ে রে ?
:- ক্লাস টেনে ।
:- ক্লাস টেনে পড়ে ঐ মাইয়্যা রে তোর বাচ্চা মনে হয় ? তুই জানস আগে বাংলাদেশে ৮ বছরের মেয়েদের বিয়ে দেয়া হত ! আগের কথা বাদ দে ! এখনো সৌদি আরবে ৮ বছরের মেয়ের বিয়ে দেয়া হয় ! আমরা যখন ক্লাস সিক্সে ছিলাম তখন আমাদের সাথের একটা মেয়ের বিয়ে হয়েছিল ! আর এ মেয়ে তো পড়ে ক্লাস টেনে ! ক্লাস টেনের একটা মেয়ের বয়স কত হয় তুই জানস ? কমপক্ষে ১৬ ! ষোল বছরের একটা মেয়েকে তোর বাচ্চা মনে হয় ?
:- আরে বাপ ! ভুলের কারণে মিসটেক হইয়্যা গেছে ! আর কোনদিনও ওরে বাচ্চা মেয়ে কমু না ! কিন্তু তারও তো আমাকে পছন্দ হতে হবে । তাই না ?
:- পছন্দ হইবো না মানে ? বললেই হল ? আর আমার কি মনে হয় জানস ? ঐ মাইয়্যা তোরে মনে মনে ভালও বাসে !
:- তোর এটা মনে হবার কারণ ?
:- কারণ, সে যদি তোরে ভাল না বাসত তবে অনিক্ক্যারে কিছুতেই তোর নাম বলত না ।
:- দেখ, সে এটা বিপদে পড়ে করেছে । এটারে তুই কিছুতেই অন্য......
:- ঢং করিস না । কোন মাইয়্যা যত বড় বিপদেই পড়ুক না কেন, কখনোই অজানা অচেনা একটা ছেলেরে তার বয়ফ্রেন্ড বানাই দেবে না ! ঐ মেয়ে নিশ্চয় তোরে চয়েস করে ।
:- তাতে আমার কি ? আমি ঐ মাইয়্যার লগে প্রেম করমু না !
:- ক্যান ?
:- আমার খুশি !
:- ধুর শালা । দূরে গিয়া মর । এতক্ষণ যে বগর বগর করলাম সেটাও লস !
:- ঐ ব্যাটারা ! খালি বকবক করবি ? নাকি নামবি ? আইস্যা পড়ছি তো !
:- তাই নাকি ? নাম না....
:- তুই নাম আগে !
:- না । তুই নাম আগে ।
:- ঐ শালারা ! সবাই নাম......
(মুখে তো বললাম- ঐ মেয়ের সাথে প্রেম করব না ! কিন্তু...... মৌনিতাকে কি আমার আসলেই ভাল লাগে না ? আচ্ছা, ও কি আমাকে পছন্দ করে ? তা না হলে ও এমন করল কেন ? কনফিউজিং একটা বিষয় । ভাবতে হবে বিষয়টা নিয়ে)
(দৃশ্যপট-৫)
(যুব লীগের কর্ণেলহাট অফিস । মুন্না ভাইসহ মোট পাঁচ জন নেতা বসে আছেন । আমরা ১২ জন এসেছি আধা ঘন্টা হচ্ছে । এতক্ষণ তাদেরকে কাহিনী বলছিলাম যেটার কারণে এখানে আসা ! তিলকে তাল করতে নোবেলের জুড়ি নেই । বেচারা এমন ভাবে পুরা কাহিনী বলল আমি পর্যন্ত টাশকিত হয়ে গেলাম ! আমার আসার পর পরই মুন্না ভাই অনিককে ফোন করে আসতে বলেছেন । তার জন্যই অপেক্ষা করছি । অবশ্য মাঝখান দিয়ে একবার পেটপূজাও হয়েছিল !! এমন সময় অনিক এসে ঢুকল)
:- মুন্না ভাই, ডাকছেন আমারে ?
:- এতক্ষণ লাগে আসতে ?
:- রাস্তায় জ্যাম ছিল ভাই !
:- এরে চিন ? আমার ছোট ভাই !
(আমার দিকে তাকিয়ে ভুত দেখার মত চমকে উঠল অনিক । আমার ঠোঁটে তখন হিটলারীয় হাসি !! মুন্না ভাই ই আবার বলতে শুরু করলেন-)
:- তুমি নাকি এর লগে ঝামেলা করতেছ ? এগুলা তো ঠিক না । যা হবার তা হই গেছে । এরপর থেকে আর কোন কথা যাতে কানে না আসে !
:- কিন্তু মুন্না ভাই.........
:- নীল আর মৌনিতা একজন আরেকজনরে লাভ করে !! এদের ভিতর থার্ড পার্সন হিসাবে তোমার ঢুকার তো দরকার নাই । শেষ বারের মত কইতাছি, ছাড়ি দাও এসব....
:- কিন্তু মুন্না ভাই.....
:- চোপ হারামজাদা......!!!
( মুন্না ভাইয়ের ধমকের চোটে পুরা অফিসটা কাঁপতে লাগল ! ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও এত জোরে কাঁপত কিনা সন্দেহ । কেউ যে এত জোরে ধমকাতে পারে আগে জানতাম না)
:- ঐ মাইয়্যার দিকে যদি আর কোন দিন চাইয়্যাও দেখস তবে তোর একদিন কি আমার একদিন ! ঐ মাইয়্যা যে রাস্তা দিয়া হাঁটছে, তুই সেই রাস্তা দিয়া হাঁটছস এমন খবরও যদি কোন দিন কানে আসে তবে তোর খবর আছে ! যা ভাগ এখন.....
( অনিক চলে গেছে । জানের মায়া থাকলে আর কোন ঝামেলা বাধাবেনা আমাদের সাথে । মুন্না ভাই যে এমন কাজের জিনিস আগে জানতাম না ! বেলা তো অনেক হল । এখন আমাদেরও যাওয়া দরকার)
:- মুন্না ভাই, অনেক ধন্যবাদ । আমরাও এখন আসি তাইলে.....
:- দুপুরে খাওয়া হইছে ?
:- না, ভার্সিটি থেকে সরাসরি তো এখানেই আসলাম । বাসায় গিয়ে করব আরকি !
:- এখন সাড়ে ৪ টা বাজে । বাসায় গিয়ে আর কখন করবা ? আমার বাসায় চল । সেখান থেকে খেয়ে তারপর বাসায় যেও ।
:- না মুন্না ভাই, বেশি দেরি হ.......
:- একবার বাসায় যাইতে বলছি না ? আবার কথা কও ক্যান ?
(মুন্না ভাইয়ের শীতল দৃষ্টি দেখে আমাদের আর কথা বাড়ানোর সাহস হল না)
:- ঠিক আছে । চলেন.....
[পলিটিক্যাল পাওয়ার এক বড় অদ্ভুত জিনিস । মুহুর্তেই যে কাউকে জিরো থেকে হিরো কিংবা হিরো কে জিরো বানিয়ে দিতে পারে । ভাবছি বড় হলে (!!!) আমিও পলিটিক্স করব !]
(দৃশ্যপট-৬)
(এসব ঘটনার পর ৪ সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে । এস্যাইমেন্ট, পরীক্ষা নিয়ে এত বিজি ছিলাম যে অন্য কোন দিকে নজর দেয়ার সময় ছিল না ! মৌনিতা কিংবা অনিক কারো সাথে দেখাও হয় নি ।
৪ সপ্তাহ পর, একদিন বিকেলে বাসা থেকে বের হচ্ছি এমন দেখি মৌনিতা আসছে স্কুল থেকে । এ কয় দিনে মেয়েটা আরও সুন্দর হয়েছে । ওকে দেখে বুকের বাঁ পাশটায় কেমন জানি চিনচিনে একটা ব্যথা করে উঠল ।
অদ্ভুত তো ! এমনটা তো হবার কথা না ! তাহলে এমনটা কেন হচ্ছে ?
কাছাকাছি এসে মৌনিতা আমার দিকে তাকিয়ে একটি ভূবন ভুলানো হাসি দিল । সারাদিন ক্লাস করে আসছে কিন্তু ক্লান্তির কোন ছাপ নেই তার চোখেমুখে । আশ্চার্য সতেজ মেয়েটা । আর একটু আগে যে হাসিটা আমাকে উপহার দিল সেটা যদি আমি না দেখে লিওনাদো দ্য ভিন্ঞ্চি দেখত তাহলে এতদিনে আমরা মোনালিসার পাশাপাশি মৌনিতা নামেও একটা অসাধারণ চিত্রকর্ম দেখতে পেতাম !)
:- কেমন আছ ?
:- এই তো, ভাল । আপনি ?
:- হ্যা আছি মোটামুটি ।
:- মোটামুটি কেন ?
:- আআআম..... ভালই আছি ।
:- হুম !
:- অনিক আর ডিস্টার্ব করেছিল ?
:- নাহ্ ! ঐদিনের পর থেকে তো সে আর চোখেও পড়ে নি । কি করেছিলেন আপনি ?
:- করেছিলাম কিছু একটা ! শুনে কি করবে ? বাদ দাও ! তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে ??
:- জ্বি ভাল চলছে ।
:- তোমার কি দেরি হচ্ছে ? তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল ।
:- জ্বি বলুন না ! সমস্যা নাই তো ।
:- আসলে আমি জানি না তুমি কথাগুলো কিভাবে নাও ? যেভাবে খুশি নিতে পার । তবে তোমার মতের বাইরে আমি কিছু করতে যাব না ।
:- কিসের কথা বলছেন আপনি ?
:- শুন বলছি !
(প্রপোজ করতে হলে সাহসের দরকার হয় । হোক না সেটা পিচ্চি মেয়ে তাতে কি ? লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে খানিকটা সাহসের সন্ঞ্চার করে বলে ফেললাম তাকে না বলা কথাগুলো !)
:- আসলে আগে আমার একটা রিলেশান ছিল । অনেক ভালবাসতাম মেয়েটাকে । কিন্তু মেয়েটা আমার ভালবাসাটুকু বুঝে নি । ছেড়ে চলে গেছে আমাকে । প্রায় তিন বছর আগের কথা এটা । আচ্ছা যাই হোক, যেটা বলতে চাই তোমাকে- মানে তুমি মিথ্যা মিথ্যি ভাবে যেটা অনিককে বলেছিলে আরকি..... মানে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড...... আই মিন...... তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ আমি কি বলতে চাইছি ?! তোমার যদি কোন পার্সোনাল চয়েস না থেকে থাকে এবং এই মূহুর্তে যদি তোমার কোন রিলেশনে জড়াবার ইচ্ছা থেকে থাকে তবে আমার অফারটি বিবেচনা করে দেখতে পার ! আমি তোমাকে কোন জোর করছি না । যদি তুমি আগ্রহী হও তবেই আমি অ্যাডভান্সড হব ! আর তোমাকে এখনই কিছু বলতে হবে না । সময় নাও । ভাবো । আমি তো কোথাও চলে যাচ্ছি নাহ ! পরে কোন এক সময় দেখা হলে তোমার উত্তরটি জানিয়ে দিও ! বাই ।
(বলেই আর দাঁড়ালাম না । পালালাম ওখান থেকে !
আচ্ছ, এটা আমি কি করছি ? প্রপোজ ? ইহজন্মে কেউ আর কোনদিন কাউকে এভাবে প্রপোজ করেছিল ? এভাবে কেউ প্রপোজ করে ? অদ্ভুত !
আর এভাবে কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়া হুট করে প্রপোজ করে ফেললাম ? ধুর ! এইডা কিছু অইলো ?)
(দৃশ্যপট-৭)
অদ্ভুত সেই প্রপোজের পর ২ দিন পেরিয়ে গেছে । এর মাঝে আর মৌনিতার সাথে দেখা হয় নি । ২ দিন পর এক বিকেলে লোডশেডিং চলছিল । পরদিন ছিল থ্রি পেইজ ফোর ওয়্যার মোটরের ওয়াইন্ডিং নিয়ে এস্যাইনমেন্ট জমা দেয়ার লাস্ট ডেট । ছাদে গিয়ে তাই ওয়ার্কশফ রেডি করছিলাম । এমন সময় অপজিট ছাদে দেখি মৌনিতা এল ।
ওয়াও ! ২ দিনে মেয়েটা আরো সুন্দরী হয়ে গেছে ! আচ্ছা মেয়েটা কি প্রতিদিনই একটু একটু করে সুন্দর হচ্ছে নাকি এটা আমার দৃষ্টিভ্রম, অলীক কল্পনা ??
যেটাই হোক, এখন এসব অদ্ভুত জিনিস ভেবে এই সুন্দর মূহুর্তটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না । আমি মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি । বুঝতে পারছি, আমার দিকে সরাসরি তাকাতে ও লজ্জা পাচ্ছে ! তাই এদিক ওদিক পায়চারী করছে । ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মিষ্টি হাসি ওর আকর্ষণটা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ।
হঠাত্......
হঠাত্ ও আমার দিকে তাকাল । সরাসরি । চোখাচোখি । এবং ঠোঁটের কোণায় ভুবন ভুলানো সেই হাসি । আমার কি হল জানি না । তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ওর তুলনাহীন সেই দৃষ্টির দিকে । চোখ নামিয়ে নিলাম । সারা শরীরে অদ্ভুত এক যন্ত্রনা । অসহ্য ।
হয় এ মেয়েকে পেতে হবে নাহয় এ মেয়ের কাছ থেকে পালাতে হবে । এভাবে আর থাকা যাবে না । ভাবলাম, জিজ্ঞাসা করি আমার প্রপোজালের ব্যাপারে কিছু ভেবেছে কিনা ? কিন্তু আমাকে হতাশ করে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে চলে গেল ।
কিছুক্ষণ হতাশ চোখে চেয়ে থাকলাম সেদিকে । তারপর ভগ্ন হৃদয়ে আবার যখন ওয়ার্কশফে মন দিচ্ছিলাম তখন দেখি সে ফিরে এল । পাতলা ঠোঁটে তার হাসির আভা । এক হাতে সাদা কাগজ অন্য হাতে মার্কার মে বি । ছাদের কিনারে এসে দাঁড়াল সে । হয়ত কিছু বলতে চায় । আমিও উঠে গিয়ে কিনারে দাঁড়ালাম কিছু শুনার আসায় ।
কিন্তু কিছু বলল না সে । কি জানি লিখতে শুরু করল । আমি অবাক দৃষ্টিতে তার কাজ দেখছি । তারপর কাগজটা মেলে ধরল !
সাদা কাগজের বুকে লাল মার্কারে লেখা- I LOVE YOU......
নিঃশব্দে একটা ভিক্টরি ল্যাপ দিলাম । আমার পাগলামি দেখে সে নিঃশব্দে হাসল । আর আমি অবাক চোখে তার সে হাসির দিকে তাকিয়ে ছিলাম । কতক্ষণ ? জানি না ।
হঠাত্ হুঁশ ফিরে এলাম । বাংলালিংক দেশ স্টাইলে ডান হাত কানের কাছে লাগিয়ে নাম্বার চাইলাম, নিঃশব্দে.... সে মুচকি হেসে লিখতে শুরু করল । তারপর মেলে ধরল সেই কাগজখানি যেটি আমাকে অমূল্য খুশি এনে দিয়েছিল । পড়তে একটু কষ্ট হলেও বুঝতে অসুবিধা হল না- 016804613......
আমার ও এয়ারটেল ছিল । ভালবাসার নেটওয়ার্ক । ১০ টাকায় ৩৫ মিনিট কিনে সাথে সাথে ফোন দিলাম ।
: হ্যালো ।
: হ্যালো ।
: নীল বলছি ।
: মৌনিতা ।
....
....
....
....
....
....
....
....
....
ভাই,
আপনাদের কি খাই দাই আর কোন কাম নাই ? এটা আমাদের প্রেমিক প্রেমিকার পার্সোনাল কথাবার্তা । আপনারা কেন শুনছেন ? প্রাইভেসি বলতে তো একটা জিনিস আছে নাকি ??
(দৃশ্যপট-৮)
হাওয়ায় উঠছি আমি । আজ আমাদের রিলেশানের এক মাস পূর্ণ হল । আসলে আমাদের রিলেশানটা অনেক অদ্ভুত । এর স্ট্যার্টিং টা অদ্ভুত, প্রপোজালটা আরও এক ডিগ্রী বেশি অদ্ভুত ! এখন প্রেম টাও অদ্ভুত ভাবে চলছে । মেয়েটাও অনেক অদ্ভুত ! প্রেমের মাত্র একমাস চলছে কিন্তু সে এখন থেকেই বিয়ের পর হানিমুন কোথায় করবে, বাচ্চা কয়টা নেবে, ছেলে হলে কি নাম রাখবে আর মেয়ে হলে কি নাম রাখবে- এসব নিয়ে তার টেনশনের শেষ নেই ।
আজিব এক মেয়ে রে বাবা ! প্রতিদিন তার সাথে কমপক্ষে এক ঘন্টা কথা বলা চাই ! না হলে তার সে কি রাগ ! আর খবরদারিও করতে পারে বেশ । আমার দীর্ঘ ছয় বছরের শখ, মরলেও যেটা ছাড়তে রাজি ছিলাম না, দুই ঝাড়ি খেয়ে সেই সিগারেট পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে । আমার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও খুব সচেতন সে । আগের মত খেলে খেলাম, না খেলে নাই- এখন আর তেমনটা করা চলে না । তিন বেলা ফোন করে খবর নেয়, খেয়েছি কিনা ! আরও কত যে নিয়ম-নীতি বলে শেষ করা যাবে না ! একটি জিনিস হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি- এ মেয়েকে বিয়ে করলে আমার লাইফ শেষ । তবে অবাক করা বিষয় হল- আমি ওর এই ভালবাসার মধুর শাসনটুকু উপভোগ করতে শুরু করেছি ! যেমনটা হবার কথা ছিল না । কেউ একজন আমাকে নিয়ে ভাবে- ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে যায় ।
অদ্ভুত !!
একদিন রাস্তায় অনিকের সাথে দেখা । ওরে একটা থ্যাংকস দেয়া দরকার । ওর জন্যই তো আজ আমি.......
এগিয়ে গেলাম ওর দিকে । আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছিল । ডাক দিলাম ওকে । বেচারা এখনো রাগ করে আছে । কিন্তু তাতে আমার কি !
:- অনিক, তুই নিজের অজান্তেই আমার জন্য অনেক কিছু করছস ! তোর জন্যই আজ মৌনিতার মত একটা মেয়েকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেলাম । থ্যাংকস ইয়ার.......
ওর চোখের দৃষ্টিটা অন্য রকম ছিল । কিন্তু আমি সে দৃষ্টি পড়তে চেষ্টা করি নি । এখন আমার শুধু একজনের চোখের ভাষা পড়তে পারলে চলবে । মৌনিতার ।
আমার মৌ-র !!
(দৃশ্যপট-৯)
বন্ধুদের আড্ডা বসেছে বিপ্লব উদ্যানে । তানভীরের বার্থ ডে । সে উপলক্ষে এখানে জড় হওয়া । তুমুল আড্ডা চলছে এন্ড অভিয়াসলি ছেলেদের আড্ডায় যে বিষয়টা অবধারিত- "গার্লফ্রেন্ড" সেটাই আড্ডার মূল টপিক ! আড্ডার এক পর্যায়ে জাহেদ বলে উঠল-
:-নীল তুই এটা কি করলি ?
:- ক্যান ? কি হইছে আবার ?
:- কি হইছে মানে ? আমাদের পুরা গ্রুফের ইজ্জত ডুবার পথে ! শেষ পর্যন্ত কিনা তুই একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে লাইন মারা শুরু করলি ?
:- চুপ হারামি । কে বাচ্চা ?
:- কে বাচ্চা মানে ? ক্লাস টেনের একটা মাইয়্যার সাথে লাইন......
:- দেখ...
:- দেখা !
:- ক্লাস টেনের একটা মাইয়্যারে তুই মোটেও বাচ্চা কইতে পারস না ! টেনের একটা মেয়ের বয়স কমপক্ষে ১৬ । তুই সূর্যরে চাঁদ, রাইতেরে দিন কইতে পারস কিন্তু ১৬ বছরের একটা মাইয়্যারে মোটেও বাচ্চা কইতে পারস না ! তুই জানস, সৌদি আরবে এখনো ৮ বছরের মাইয়্যাগো বিয়ে দেয়া হয় । আর মৌর বয়স ১৬ । তার দ্বিগুণ । এর পর যদি আর কখনো ওরে বাচ্চা কস তয় বডির সব গিট্টু লুজ কইরা ফেলামু !!
:- একশ বার কমু ! তুই একটা বাচ্চার লগে প্রেম করস !
:- চুপ কর কইলাম ।
:- বাচ্চা ! বাচ্চা !! বাচ্চা !!
:- ইয়া আলীর ভিসুয়া !!
আজ আমি খুব সুখী । আমার জীবনের সব আশা বুঝি পূর্ণ হল । মমতাময়ী মায়ের স্নেহ, রাগী বাবার কড়া শাসন, ছোট বোনের আহ্বলাদি আবদার- এসব তো আগে থেকেই ছিল । অসাধারণ কিছু বন্ধু আর এক নিস্পাপ মেয়ের ভালবাসা আজ বাকি অপূর্ণতাটুকুও পূরণ করে দিল । হে খোদা, অনেক ধন্যবাদ তোমাকে । আমার মত এক অধমকে এক জীবনে এত কিছু দেয়ার জন্য ।
(সমাপ্ত - THE END)
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন:
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৮
তুন্না বলেছেন: সুন্দর লাগলো।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন:
৩| ২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: জোস ....চরম.....
০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:২৭
ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪
নগর বালক বলেছেন: হুম । ভালো লাগলো