নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জন্মগত ভাবেই একজন উৎকৃষ্ট পাঠক । তবে একাকীত্ব কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট মানের লেখাও লিখি ।

ফরহাদ আহমদ নিলয়

ফরহাদ আহমদ নিলয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধু, তোকে অনেক বেশী ভালবাসি.....

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৬

এক.



একটি বিয়ে বাড়ি অনেক উত্সবের আধার । চারদিকে কত হাসি, কত কোলাহল ! কি ভীষণ ব্যস্ততা সবার মাঝে । একেক জনের লাজ, একেক জনের সাজ, একেক জনের ঢং আর একেক জনের রঙ.... কি অদ্ভুত বৈচিত্রতা ।



চশমিস আঁতেল তরু, বইয়ের বাইরেও যে আলাদা একটা দুনিয়া আছে এটা ওর অজানা ছিল । অথচ আজ ও ই নেচে গেয়ে মন্ঞ্চ কাঁপাচ্ছে । ওর এরূপটি কি আমাদের কারো জানা ছিল ? কিংবা ধরা যাক, মোটকু ইমনের কথা । সারাদিন খাওয়া ছাড়া আর কিছু চিনতো না । অথচ কাল থেকে ও নিজের খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে মেহমানদারীতে লেগে আছে । সবাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত শুধু নিজে খাওয়া ছাড়া । কিংবা ধরা যাক লাজুক নিলয়ের কথা । সে তো তার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে আসর মাত করে দিয়েছে । কে জানত সারাদিন চুপচাপ একা একা বসা থাকা ছেলেটা এত সুন্দর, এত রোমান্টিক কবিতা লিখতে পারে ?



এমন অনেকেরই অনেক অজানা রূপ বেরিয়ে এসেছে এই অনুষ্ঠানে, এই বিয়ের অনুষ্ঠানে । আমাদের বন্ধু রিয়ার বিয়ে । আমার বন্ধু রিয়ার বিয়ে ।



এই বিয়েতে সবাই খুশী । শুধু একমাত্র আমি ছাড়া । আমি এজন্য খুশী না যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । বরং আমি এজন্য খুশী না, কারণ আমি ওকে ভালবাসি ।



হ্যাঁ, আমি রিয়াকে ভালবাসি । এ ভালবাসার উত্পত্তি আজকে কিংবা কালকে হয় নি । যখন থেকে মানব-মানবীর গোপন রহস্য বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমি রিয়াকে ভালবাসি । সেই পিচ্চিকাল থেকে ভালবাসি । কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি ।



আসলে, বলা হয়নি- এটা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক না । আমি তাকে বলেছিলাম । একবার না, বেশ কয়েকবার বলেছিলাম । সরাসরি 'আলাভু' বলি নি, একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছিলাম । কিন্তু ও বুঝতে পারে নি । কিংবা বুঝতে চায় নি । অথবা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে এড়িয়ে গেছে । জানি না কোনটা ঠিক, কিন্তু এখন আর এসবের কোন দাম নেই । কিছুক্ষণ পরেই ও অন্যের হয়ে যাবে । অন্যের ঘরের ঘরণী হয়ে চিরদিনের মত আমায় ছেড়ে যাবে । অর্থহীন হয়ে যাবে আমার সব আবেগ ।



হ্যাঁ, রিয়ার বিয়েতে আমি খুশী না । কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কষ্টে যে আমার বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে এটা আমি কাউকে দেখাতেও পারছি না । আমার বন্ধুরাই এমন । কেউ যদি খানিকটাও আঁচ করতে পারে তবে সেটা অবশ্যই রিয়ার কানে যাবে । আর সে এটা শুনতে পেলে অনেক কষ্ট পাবে । আমি হাসি মুখে পৃথিবীর সব দুঃখ আপন করে নিতে পারি, কিন্তু কখনো ওকে কষ্ট দিতে পারি না । ওর চোখে পানি, তাও আবার আমার জন্য- এটা আমি সহ্য করতে পারবো না । তাইতো ওর মুখে হাসি দেখার জন্য শত কষ্ট বুকে চেপেও আমি সবার সাথে হাসছি, নাচছি, গাইছি.....



দুই.



আমি রিয়া । আজ আমার বিয়ে । বিয়ে উপলক্ষে নতুন অনেক কিছুই দেখছি যেটা আগে কখনো ভাবি নি । এত হাসি, এত কোলাহল- অকল্পনীয় ।

এতদিন জানতাম বিদায় অনুষ্ঠানগুলো শোকাবহ হয় ! কিন্তু এখন দেখছি পুরো উল্টো । আমার বিদায়ে এরা তো রীতিমত ঈদের খুশী বানাচ্ছে । মা-বাবা, চাচা-চাচী, মামা-মামী, দাদু-নানু, ফুফু-খালা বন্ধু-বান্ধব.... একেক জনের আনন্দ যেন উপচে পড়ছে !



খুশী হবার অনেকগুলো কারণ আছে । কাজিনদের মাঝে আমার বিয়েটাই প্রথম হচ্ছে । আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে এই প্রজন্মের ভিতর আমার বিয়েটাই প্রথম । তাই প্রথম বিয়ে হিসেবে সবার আনন্দ করার যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি । তাছাড়া ফ্রেন্ড সার্কেলের ভিতরও সবার আগে আমার বিয়েই হচ্ছে । এজন্যই সবার এত লাগাম ছাড়া খুশী, এত বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ ।



সবার আনন্দ দেখে তো আমি ভুলেই গেছি যে এই বিয়েতে আমি খুশী না ।

আসলে অখুশী হবার আমার তেমন কোন কারণ নেই । বর ইন্জ্ঞিনিয়ার, সপরিবারে ইউকে তে সেটেল্ড । পরিশ্রমী, উদ্যোমী । পাশ্চাত্যের আল্ট্রা মডার্ণ সমাজে বাস করেও সহজ সরল জীবন যাপন করে । কোন বদ অভ্যাস নেই । দেখতেও রাজপুত্রের মত । হ্যাম্পশায়ারে ছোট মামার প্রতিবেশী । তারাই এসব বিষয় কনফার্ম করেছে ।

বলা যায় আমার হবু বর মিঃ পারফেক্ট, মেয়েরা যেমন স্বপ্ন পুরুষের স্বপ্ন দেখে ঠিক তেমন ।



আমার অসুখী হওয়ার কোন কারণ নেই তবুও আমি সুখী নই । কারণ বোধহয় আমি লাইফ পার্টনার হিসেবে কোন মিঃ পারফেক্টকে চাই নি । আমি চেয়েছিলাম অলস একটা ছেলে, সারা বছর যার পড়াশোনা, এস্যাইনমেন্টের কোন খবর থাকবে না আর পরীক্ষা দুয়ারে এলে আমার পিছে পিছে ঘুরবে নোটের জন্য । আমি চেয়েছিলাম স্পাইক করলে সজারুর মত লাগা সত্ত্বেও নিজেকে আল্ট্রা মডার্ণ প্রমাণের জন্য চুলে স্পাইক করে ঘুরে বেড়াবে এমন একটা ছেলে । আমি চেয়েছিলাম রাস্তা দিয়ে হাঁটতে যার তার দিকে নজর দেবে আর এজন্য তাকে আমি ঠেঙ্গানি দেবো এমন একটা ছেলে । আমি চেয়েছিলাম রঙ উঠা টিশার্ট আর ছেঁড়া ফাটা জিন্স পরে সদর্পে বাইক ছুটিয়ে বেড়াবে এমন একটা ছেলে । সিগারেটের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারি না জেনেও মহাসুখে বেনসনে টান দিয়ে আমার মুখে ধোঁয়া ছেড়ে চোখ বুঝে বলবে 'আহ ! কি আরাম !' আমি এমন একটা ছেলেই চেয়েছিলাম ।



হ্যা, আমি কোন মিঃ পারফেক্ট চাই নি । জীবনের বন্ধুর পথে পাড়ি দেয়ার জন্য আমি তো আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকেই চেয়েছিলাম । রাজু, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে ।



যখন থেকে একটি মেয়ে তার হৃদয়ের ছোট্ট কুঠিরে কোন স্বপ্নের রাজকুমারকে পুষতে শুরু করে ঠিক তখন থেকেই আমি রাজুকে ভালবাসি । সে শুধু আমার বন্ধুই ছিল না, আমার পৃথিবীটাও ছিল তাকে ঘিরেই । কিন্তু আমি কখনোই তার পৃথিবী হয়ে উঠতে পারি নি । শুধু বন্ধুই রয়ে গেলাম ।



কত রাত যে আমার বিনিদ্র কেটেছে শুধু ও ফোন করবে বলে । কত বর্ষা যে আমি একা কাটিয়েছি ও একগুচ্ছ কদম দেবে বলে । কত পথ যে আমি একা হেঁটেছি শুধু ও এসে হাতখানা ধরবে বলে । কিন্তু সব আশা আশাই থেকে গেল ।



মাঝে মাঝে ওর কিছু আচরণ দেখে মনে হত ও ও বোধহয় আমাকে ভালবাসে । কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হতে বেশী দেরি হয় নি যেদিন দেখলাম ও তন্নীকে প্রপোজ করেছে ।



একেই বোধহয় কপাল বলে । যে চায় সে পায় না, যে পায় সে চায় না । কি অদ্ভুত বিধির বিধান....



তিন.



রিয়া, আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু । ক্লাস ওয়ানে, যেদিন প্রথম স্কুলে যাই সেদিনই ওর সাথে প্রথম দেখা হয় । ছুটির পর কি একটা কারণে জানি ওর সাথে ঝগড়া বেঁধে যায় । মারামারি, চুলোচুলিতে গিয়ে দাঁড়ায় তা । সেই দিন থেকেই শুরু । সেই প্রথম পরিচয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোন দিন যায় নি যেদিন ওর সাথে ঝগড়া হয় নি । আসলে ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে একদিন ঝগড়া না করলে আমাদের কারোই পেটের ভাত হজম হয় না ।



দিন গড়িয়েছে, বেড়েছে আমাদের বন্ধুত্বের বয়স, বদলেছে ঝগড়ার ধরনও । আগে পিচ্চিকালে যখন মারপিট করতাম, কিল-ঘুষি যা কিছু দেয়ার তা আমিই দিতাম ! ও শুধু খেত, দিতে পারত না । আর এখন...? কিল-ঘুষি সব ও ই দেয়, আমি শুধু খাই ! দিতে পারি না ।

তবে মারপিট, ঝগড়া যা ই করি না কেন এটা শুধু আমাদের মাঝে ঘনিষ্টতাই বাড়িয়েছে । কখনো আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে বন্ধুর পথ রচনা করতে পারে নি ।



ধীরে ধীরে একটা সময় আমি বুঝতে পারি রিয়া শুধু আমার বন্ধুই নয় । বন্ধুর চেয়েও বেশী কিছু । জানি না ও কখনো আমাকে তেমন কিছু ভেবেছিল কিনা ।



রিয়াকে প্রথম বারের মত মনের কথা জানানোর উদ্যোগ নিই ক্লাস এইটে থাকতে । রাজ্যের যত কথা ওর সাথে শেয়ার করলেও এই বিষয়ে কথা বলার সাহস আমার ছিল না । তাই মনের সকল কথা একটি কাগজে লিখে কৌশলে ওর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের মাঝে ঢুকিয়ে দিই । কিন্তু কে জানত ঐদিন আয়েশা ম্যাডাম ক্লাসে আসার সময় বই আনতে ভুলে যাবেন ! কে জানত তিনি পড়ানোর জন্য রিয়ার বইটিই চেয়ে বসবেন ! কে জানত আমার মনের মাধুরী মেশানো জীবনের প্রথম প্রেম পত্রটি প্রাপকের হাতে না গিয়ে ম্যাডামের হাতে পড়বে ! কে জানত অন্যের পার্সোনাল জিনিসে হাত দেয়া নিষেধ জেনেও ম্যাডাম আমার পুরো পত্রটি পড়বেন ! সমাজ ক্লাসে অসামাজিক কার্যকলাপ করার জন্য পুরো ক্লাস আমাকে নিল-ডাউন করে রাখলেও মনে মনে ম্যাডামকে ধন্যবাদই দিয়েছিলাম সেদিন । ভাগ্যিস তিনি রিয়াকে কিছু বলেন নি । তাহলে যে আর মুখ দেখানোর লায়েক থাকতাম না !



রিয়া পরে শতবার জিজ্ঞাসা করলেও ওকে আর বলিনি কি লেখা ছিল সে কাগজে । তবে দুর্ভাগ্য এত অল্পতে পিছু ছাড়ে নি । তৃপ্তি নামে আমাদের সাথে একটা মেয়ে ছিল যে আমার সেদিনের নিল ডাউন হয়ে পড়ে থাকায় যথেষ্ট তৃপ্তি পেয়েছিল । প্রায় সময় এটা নিয়ে আমাকে খেপাত । পরে সেকেন্ড টার্মে নকল করতে গিয়ে ধরা খেয়ে এক্সফেল্ড হওয়ার পর তার জ্বালাতন বন্ধ হয় ।



রিয়াকে যতবারই মনের কথা জানাতে গেছি ততবারই কোন না কোন বিপত্তি বাঁধিয়েছি । কখনো সুবিধা করতে পারি নি । স্রষ্টা বোধহয় ডিসিসান নিয়েই রেখেছিলেন যে আমাকে কখনো আমার মনের কথা প্রকাশ করতে দেবে না । তাই তো প্রত্যেকবার ঝামেলা বাঁধত ।



ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে থাকাকালীন সময়ের ঘটনা । রিয়ার জন্মদিন । প্রপোজ করার জন্য এরচেয়ে ভাল সময় আর হয় না । ঠিক রাত ১২টায় ওর নাম্বারে একটা মেসেজ দিলাম-



"শুভ জন্মদিন তোমার ।

জানি এটুকুই পর্যাপ্ত নয়,

অনেক কিছুই তো তোমাকে

খুব বলতে ইচ্ছে হয়।



কতটুকু জল জমলে

তুমি বলবে একে নদী ?

কতটুকু কাঁদবে তুমি

আমি হারিয়ে যাই যদি ?



এসব কথা বলার জানি

সময় এখন নয়,

তবুও তোমায় প্রতি বেলা

খুব হারানোর ভয়।



কত আবেগ জমা হলে

কবিতার সৃষ্টি হয় ?

কত মেঘের আয়োজনে

ভালোবাসার বৃষ্টি হয় ?



কত আঁধার জমে গেলে

অমানিশা পূর্ন হয় ?

কতটুকু কাছে এলে

পাশে আছো মনে হয় ?



শুভ জন্মদিন তোমার....

জানি এটুকুই পর্যাপ্ত নয় ।

অনেক কিছুই তোমাকে

বলতে খুব ইচ্ছে হয় !



ভালোবাসি তোমাকে খুব

জেনে রেখ সবসময়....."



রিয়ার রিয়্যাকশনের অপেক্ষায় ছিলাম । রিয়্যাকশন এল পরদিন কলেজে । ভয়াবহ রিয়্যাকশান ! ওর সাথে দেখা হতেই বলে উঠল- কি রে ব্যাটা ? কি মেসেজ পাঠাইলি ? কিছুই তো বুঝলাম না ! বার্থ ডে উইশ করছস এটা বুঝছি । কিন্তু বাংলাতে লিখতে গেলি কেন ? ইংলিশে লিখতে পারলি না ? তুই জানস না আমার সেটে বাংলা সাপোর্ট করে না ?



তখন ক্যাবলাকান্তের মত একটা হাসি দেয়া ছাড়া আর কি ই বা বলার ছিল আমার ?



এরপরও অনেকবার চেষ্টা করেছি । কিন্তু ফুটা কপাল সহায় হয় নি । 'আলাভু' বলার লাস্ট এটেম্পট টা ছিল থার্ড ইয়ারে থাকতে । জীবনানন্দের চমত্কার কিছু পংতি দিয়ে একটা চিঠি লিখে ওর সাথে থাকা বায়োকেমেস্ট্রির বইতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম । ক্যান্টিনে বসে খাওয়ার ছলে কাজটি করেছিলাম । ও টের পায় নি ।



উত্তরের অপেক্ষায় ছিলাম । আমার ধারণা ছিল ও রাজি হবে । এতদিন ধরে আমরা একে অপরকে চিনি । রাজি না হওয়ার যৌক্তিক কোন কারণ খুঁজে পাই নি । কিন্তু যেটা ঘটল সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না । ও সম্পূর্ণ বদলে গেল । আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইত । ঠিকমত কথা বলত না । জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলত না । সারাক্ষণ চুপচাপ থাকত । আমাদের বন্ধুত্বটাও কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল ।



ওর অবহেলার মাঝেই আমি আমার জবাব পেয়ে গিয়েছিলাম । তাই ওকে আর বিরক্ত করতাম না । নিজের মাঝেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম ।



সপ্তাহ দুয়েক পর আরেক ক্লাসমেট তন্নীর কাছে বায়োকেমেস্ট্রির কিছু এস্যায়েনমেন্ট চেয়েছিলাম । জবাবে ও যা বলল তাতে আমি আক্কেল গুড়ুম !

"রাজু, তোমাকে আমি অনেক ভাল জানতাম । তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি ! তুমি শুধু শুধু টাইম নষ্ট করছ ! তুমি যা চাইছ তা কখনোই সম্ভব না !"

আরে বাপ ! এস্যায়েনমেন্টের কপিই তো চেয়েছিলাম । প্রেম করতে তো আর চাই নি । না দিলে নাই । এত ঢং করার কি দরকার ছিল ?



পরীক্ষা গেল । রেজাল্ট খারাপ হল । মন মেজাজ যথেষ্ট খারাপ ছিল । এর উপর আরো মন খারাপ করা সংবাদ পেলাম- রিয়ার বিয়ে ।



চার.



প্রথম দিন স্কুলে এসেই এক ছেলে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল ! কি আজিব ছেলেরে বাবা ! অবশ্য আমিও ছেড়ে দেই নি । তক্কে তক্কে জবাব দিয়েছি । এরপর থেকে প্রতিদিনই কোন না কোন কারণে ঝগড়া হতে লাগলো । মারপিট করতে করতেই কেমন করে জানি আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম !



একবারের ঘটনা । কিছু ছেলে আমাকে বাজে কথা বলে ক্ষেপাত । কথাটা কিভাবে জানি রাজুর কানে যায় । রাজু এলাকার কয়েকজন বড় ভাইকে নিয়ে ঐ ছেলেদের ঠ্যাঙ ভেঙ্গে আসে । আমাকে কিছু বলে নি । তবুও খবরটা আমি পেয়ে গিয়েছিলাম ।



ক্লাস এইটে থাকতে আয়েশা ম্যাডাম একবার রাজুকে নিল ডাউন করে রেখেছিল । এটা নিয়ে তৃপ্তি নামের একটা মেয়ে তাকে খুব ক্ষেপাত । তাকে কয়েকবার নিষেধ করার পরও সে কথা শোনে নি । তাই তাকে একটা শিক্ষা দেয়ার জন্য সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষায় কৌশলে তার জিওমেট্রি বক্সে কিছু নকল রেখে দিয়েছিলাম । ম্যাডাম সেগুলো দেখে তাকে হল থেকে বের করে দেয় । এরপর সে আর কখনো রাজুকে ক্ষেপায় নি । তৃপ্তির জন্য আমার খানিকটা খারাপ লেগেছিল । কিন্তু ও আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে দিনের পর দিন ক্ষেপাবে এটা আমি সহ্য করি কি করে ?



আমার ধারণা ছিল রাজুও আমাকে ভালবাসে । হয়ত লজ্জায় বলতে পারছে না । তাই তন্নী যখন বলেছিল রাজু ওকে প্রপোজ করেছে খবরটা রীতিমত শকের মত লেগেছে তখন আমার কাছে । বিশ্বাসই করতে চাইনি । আমার রাজু আমাকে না, তন্নীকে ভালবাসে... এটা কি করে মেনে নেব আমি ? কিন্তু না নিয়েও উপায় ছিল না । ওর নিজের হাতের লেখা চিঠিটা যখন তন্নী আমাকে দেখালো তখন পুরো পৃথিবী দুলে উঠেছিল আমার । একবার ভেবেছিলাম ওকে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসা করি । কিন্তু আবার ভাবলাম, কি লাভ ওকে বিব্রত করে ? ও তো আমার শুধু বন্ধুই, এর বেশী কিছু তো নয় । ও কখনো আমাকে বলেনি ও আমাকে ভালবাসে । আমিও কখনো তাকে বলিনি যে আমি তাকে ভালবাসি । ওর যদি তন্নীকে ভাল লেগে থাকে তবে আমার কি অধিকার ওর পছন্দে দখলবাজি করার ?



এ ঘটনার পর নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিলাম । রাজু সামনে আসলেই কেমন জানি নার্ভাস হয়ে যেতাম । অনেক চেষ্টা করেও ওর সামনে আগের মত স্বাভাবিক থাকতে পারতাম না । তাই শেষে বাধ্য হয়ে ওকে এড়িয়ে চলতে শুরু করি ।



এর মাঝে বিয়ের প্রস্তাবটা আসে । দেখলাম মা-বাবা সবাই এটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড । আমিও অমত করার মত তেমন কোন কারণ খুঁজে পাই নি । কার জন্য করবো ? যার জন্য সব করতে রাজি ছিলাম সে ই তো বুঝল না । তাছাড়া রাজুর সামনে থেকে দূরে সরে যাওয়াটাও জরুরি হয়ে পড়েছিল । তাই রাজি হয়ে গেলাম ।



আজ আমার বিয়ে । কিছুক্ষণ পর আমি অন্যের হয়ে যাবো । সবাই খুব আনন্দে মেতে আছে । আর সবচেয়ে বেশী খুশী মনে হচ্ছে রাজুকে ।



শেষদিকে ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম । এটা উচিত হয়নি । দোষটা আমারই ছিল । আমি বোধহয় ওর কাছ থেকে একটু বেশীই প্রত্যাশা করেছিলাম । কিন্তু ওর কি দোষ ? ওকে তো আমার সে প্রত্যাশার কথা কখনো জানাই ই নি । বিদায়ের আগে ওর সাথে একান্তে একবার কথা বলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে ।



বন্ধু, তুই খুশীই থাক । এই হাসি যেন কোনদিনও তোর মুখ থেকে না সরে । তুই খুশী থাকলেই যে আমি খুশী হই ।



পাঁচ.



"আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি । তুই একটু ছাদে আয় প্লিজ । ইটস ইমারজেন্সি"- রিয়ার পাঠানো মেসেজটা দেখে রাজু খানিকটা হতবুদ্ধি হয়ে গেল । একটু বাদেই বরপক্ষ আসবে । আর এসময়ই রিয়া তাকে গোপনে জরুরি তলব করেছে ! ঘটনা কি ?

কোন অঘটন ঘটে নি তো ? রাজু খানিকটা ভয় পেল । ভয়ে ভয়েই এগিয়ে গেল ছাদের দিকে ।



ছয়.



ছাদে উঠতেই রিয়াকে দেখতে পেলাম । এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে । বধূর সাজে তাকে কেমন যেন মত্যের মানুষ মনে হচ্ছে না । মনে হচ্ছে পরীস্থান থেকে আসা কোন ডানাকাটা পরী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে । মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে ?



নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল । একটু পরেই রিয়া চিরতরে অন্যের হয়ে যাবে । তার উপর সমস্ত অধিকার মিথ্যে হয়ে যাবে । অথচ চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই ।

চোখের কোণায় জমে উঠা পানিটুকু মুছে ধীর পায়ে রিয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম । পায়ের শব্দ পেয়ে রিয়া ঘুরে তাকাল ।



:- কিরে ? হঠাত্ এভাবে ডাক দিলি যে ?

:- কেমন আছিস ?

:- আরে আজিব ! কেমন আছি মানে ? একটু পরেই তোর বিয়ে ! আর তুই কিনা এখন আমাকে ছাদে জরুরি তলব করে জিগাস কেমন আছি !

:- আর হয়ত কখনো জিজ্ঞাসা করা হবে না, তাই শেষ বারের মত জিজ্ঞাসা করলাম আরকি ।

:- আরে এভাবে বলছিস ক্যান ? তোর বর কি তোকে বিয়ের পর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নাকি !

:- না না, তা হবে কেন ? তবে চাইলেও তো আর আগের মত কন্ট্রাক করা হবে না ।

:- বুঝতেছি ! বুঝতেছি ! বিয়ের আগেই ভুলে যাওয়ার প্লান করতেছ !

:- না রে.... তোকে বোধহয় কখনোই ভুলতে পারবো না ।



রিয়ার দীর্ঘশ্বাস শুনে চমকে উঠলাম । তার কন্ঠেও যে না পাওয়ার বেদনা । তবে রিয়া কি এই বিয়েতে সুখী না ?



:- আচ্ছা বাদ দে এসব কথা । আসলে তোকে একটা স্যরি বলার জন্য এখানে ডেকেছি ।

:- স্যরি ? আমাকে ? কাহিনী কি ম্যাম ?



রিয়া নিশ্চুপ । বোধহয় কথা সাজাচ্ছে । তবে আমার কেন জানি মনে হল রিয়া কান্না থামানোর চেষ্টা করছে । অধীর আগ্রহে রিয়ার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । একটু দম নিয়ে রিয়া কথা বলার জন্য প্রস্তুত হল ।



:- শেষের দিকে তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছিলাম রে । এজন্য স্যরি । পারলে মাপ করে দিস ।

:- এসব কি বলছিস তুই । বাদ দে....

:- আসলে কি করবো বল ? তোর কাছ থেকে পালানোর আর কোন উপায় ছিল না যে....



খানিকটা অবাক হলাম । আমার ধারণা ছিল- রিয়া আমাকে এভয়েড করছিল । সে যে আমার কাছ থেকে পালাতে চাচ্ছিল এটা তো কখনো মাথায়ই আসে নি ! অবাক কন্ঠেই বললাম- মানে ? কি বলছিস এসব তুই ? তুই আমার কাছ থেকে পালাবি কেন ?



রিয়া একটু থামল । তারপর মুখে করুণ একটা হাসি ফুটিয়ে বলল- তোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম রে....



আমি নিশ্চিত ভূমিকম্প হচ্ছে না । তারপরও আমার পা দুটো ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল । কি বলছে এসব ও । ফাইজলামি করছে না তো ! কিন্তু চেহারা দেখে তো ফাইজলামি বলে মনে হচ্ছে না । তবে....



আমার সব কনফিউশান ক্লিয়ার করতেই সে বলতে শুরু করল- কি করবো বল ? সেই পিচ্চিকাল থেকেই তোর সাথে একসাথে খেয়েছি, খেলেছি, একসাথে বড় হয়েছি আমরা । খেলাচ্ছলে কখন যে তোকে মন-প্রাণ সব দিয়ে বসেছি নিজেই টের পাইনি । খুব ভালবেসে ফেলেছিলাম তোকে । আমার ধারণা ছিল তুইও আমাকে ভালবাসতি । তাই কখনো তোকে কিছু বলতেও যাইনি । কিন্তু কে জানত তুই আমাকে না, তন্নীকে ভালবাসতি । আমাকে শুধু বন্ধুই ভাবতি, এর বেশী কিছু না । এই চরম সত্যটা যখন সামনে আসল তখন আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে গিয়েছিল । তোর সামনে দাঁড়ানোর শক্তি আমার ছিল না । তাই তোর কাছ থেকে পালাতে চেয়েছিলাম রে...



আমার পৃথিবী দুলছে তখনো । রিয়া কি বলছে এসব ? ও আমাকে ভালবাসত । আর আমি কিনা তন্নীকে ভালবাসতাম ! আরে আমি তন্নীকে কেন ভালবাসতে যাবো ? ভালবাসা কি- যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে তো ওকেই এই মনের রাণী করে রেখেছি । তবে আজ এসব কি ?



আমাকে ভাবনায় নিমগ্ন থাকতে দেখে রিয়াই আবার বলল- তোর কাছ থেকে পালাতে গিয়ে তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম রে.... পারলে আমাকে ক্ষমা করিস । আর অনেক... অনেক ভাল থাকিস ।



আমার একটি গালে মৃদু স্পর্শ করে রিয়া চলে গেল । ওর প্রস্থান পথের দিকে তাকালাম না । আমার মাথায় এখন শুধু একটিই চিন্তা- সমস্যাটা কোথায় ? কোথায় সমস্যা ?



সাত.



:- হ্যালো তন্নী...

:- হু

:- আচ্ছা, আমি কি কখনো তোকে প্রপোজ করেছিলাম ?

:- হোয়াট ? এটা কি ধরনের কথা ?

:- না মানে, আমার কোন আচরণে কখনো কি এটা প্রকাশ পেয়েছিল যে আমি তোকে ভালবাসি ?

:- তোর আচরণে প্রকাশ পেতে যাবে কেন ? তুই নিজেই তো চিঠি দিয়ে আমাকে জানালি- আমাকে তুই অনেক ভালবাসিস । আমাকে ছাড়া তুই বাঁচবি না, আমাকে না পেলে তুই হ্যান করবি, ত্যান করবি....

:- হোয়াট ?

:- কি হোয়াট ?

:- তোকে কে বলল যে চিঠিটা আমি তোকেই দিয়েছি ?

:- আরে আশ্চার্য ! বলা লাগবে ক্যান ? আমার অজান্তে আমার বইয়ে চিঠি ঢুকিয়ে দিবি । এটা তো আমাকে দিয়েছিস বলেই ধরে নেবো, তাই না ?

:- কি বলছিস তুই ? বায়োকেমেস্ট্রির বইটা তোর ছিল ?

:- হু ।

:- কিন্তু বইটা তো রিয়ার কাছে ছিল....

:- হু । রিয়া নিয়ে গিয়েছিল । তুই যেদিন চিঠিটি দিয়েছিলি সেদিন ফেরত্ এনেছিল ।

:- ও



কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি । বিধির লীলা বোঝা সত্যিই দায় ।



:- হঠাত্ এসব প্রশ্ন কেন ? চিঠিটা কি তুই আমাকে লিখিস নি ?

:- নাহ...

:- ও মাই গড ! কাকে লিখেছিলি ? রিয়া ?

:- হু...

:- ওহ শীট । এখন...

:- ওকে । ভাল থাকিস । রাখি । বাই....



তন্নীর সাথে কথা বলার পরই ঘটনা পরিস্কার হল আমার কাছে । রিয়াকে আমি যতটা ভালবাসতাম, রিয়াও ঠিক ততটা ভাল আমাকেও বেসেছিল । কিন্তু এবার ভাগ্যটা অনেক বেশী নির্দয় ছিল । ভাগ্যদোষে রিয়াকে লেখা চিঠিটা গিয়ে পড়ে তন্নীর হাতে ।



শুধু যে ভাগ্যের দোষ ছিল তাও না । আমারও খানিকটা দোষ ছিল- আমি চিঠিতে আমি প্রাপকের নাম লিখি করি নি । শুধু তুই বলেই সম্বোধন করেছিলাম । আমার ধারণা ছিল, চিঠিতো রিয়ার হাতেই পৌঁছাবে, তাই নাম লেখার কি দরকার ? কিন্তু এই ছোট্ট ভুলটার জন্য সব যে উলট পালট হয়ে যাবে কে জানত সেটা ?



রিয়া ভেবেছিল, আমি তন্নীকে ভালবাসি । তাই সে আমার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছিল যাতে আমার প্রতি তার দূর্বলতা প্রকাশ না পায় ।

আর আমি ভেবেছিলাম, আমার প্রস্তাব রিয়ার পছন্দ হয় নি । সে আমাকে শুধুই বন্ধু ভেবেছিল, এর বেশী কিছু না । তাই ওকে যখন প্রেমিকা হিসেবে কাছে পেতে চাইলাম ও তখন সব ছেড়ে ছুড়ে আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেল ।



আরও বুঝতে পারলাম সেদিন তন্নীর কাছে বায়োকেমেস্ট্রির নোট চাওয়াতে সে কেন বলেছিল এসব সম্ভব না.... দিনের আলোর মতই এখন সব পরিস্কার ।



হায়রে বিধি....

শেষ পর্যন্ত এই খেলাটাই খেললি তুই আমার সাথে ? কিভাবে পারলি তুই ?



রিয়া তো ওর ভালবাসার কথা বলে চলে গেল ।

আমি....?

আমি কি ওকে বলব না যে, আমিও তোকে অনেক ভালবাসি রিয়া...

ওকে কি বলব না যে, তুই যা জেনেছিস সব মিথ্যা । আমি শুধু তোকেই ভালবাসি । তোর প্রতি আমার এই ভালবাসা একদিনে সৃষ্টি হয় নি । তিলে তিলে একটু একটু করে তোর জন্য আমি ভালবাসার এভারেস্ট গড়েছি ।

ও কি বলব না যে, প্লিজ তুই আমাকে ছেড়ে অন্য কারো হয়ে যাস না.... তোর জন্য আমি মিঃ পারফেক্ট হয়ে যাবো । অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাবো না । নিজের সব কাজ নিজে নিজে করবো । তোকে একটুও জ্বালাতন করবো না । এমনকি সিগারেট টাও ছেড়ে দেবো । তুই প্লিজ অন্য কারো হয়ে যাস না....

ওকে কি কখনো বলব না এসব ?



সময় আর খুব বেশী নেই । যা করার এখনই করতে হবে । ছুট লাগালাম নিচে.....



আট.



পুরো বাড়িতে নিঃস্তব্দতা এসে ভর করেছে । অথচ একটু আগেও এখানে ছিল শত প্রাণের উন্মাদনা, ছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, ছিল হাজারো গানের সুর । কিন্তু এখন... চারদিকে ক্লান্তির ছায়া । যেদিকেই চোখ যায়, কেমন যেন বিষণ্নতা এসে ভর করছে । সব উন্মাদনা হঠাত্ করেই যেন মিইয়ে গেছে ।



হ্যা, এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল । কনে বিদায়ের পর তো সব বিয়ে বাড়িতেই বিষণ্নতা ভর করে । হয়ত সবচেয়ে আদরের মানুষটি বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার বেদনাই এমনটা হওয়ার কারণ ।



হুম, আকাশ ভাইয়ের সাথে রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে । একটু আগেই তারা বউ নিয়ে চলে গেল । আমার সামনে দিয়েই । আসলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকেই ওদের বিয়ে দিয়েছি ।



আমি এসেছিলাম রিয়াকে বলতে ওর প্রতি আমার তীব্র অনুভূতির কথা, পিচ্চিকাল থেকে পুষে রাখা আমার ভালবাসার কথা । কিন্তু পারিনি বলতে ।



নাহ, এবার ভাগ্য আমায় কোন বাঁধা দেয় নি । এবার আমি ইচ্ছে করেই বলিনি ।



কেন বলিনি ?

কেন এত ভালবাসা সত্ত্বেও ওকে এভাবে চলে যেতে দিলাম ?

কেন ওকে এই বুকে ধরে রাখার কোন চেষ্টাই আমি করি নি ?



সব প্রশ্নের একটাই উত্তর ।

আমি ওকে ভালবাসি ।



তাহলে কেন ওকে চলে যেতে দিলাম ?



রিয়ার জেদ সম্পর্কে আমি খুব ভাল করেই জানি । ও যদি বিন্দুমাত্রও টের পেত তবে সাথে সাথে এই বিয়ে ভেঙ্গে দিত ।

তখনও ঠিক এইভাবে সব সানাই থেমে যেত । তবে এখন সবার চেহারায় হাড়ভাঙ্গা ক্লান্তির পরও যে হাসির রেশ দেখা যাচ্ছে, সে হাসিটুকু দেখা যেত না । সেখানে থাকত লজ্জা । এত আয়োজনের পর এভাবে বিয়ে ভেঙ্গে দিলে পুরো পরিবার কারো কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারত না ।



না, এতটা পাষাণ হতে আমি পারি নি । পারিনি কেবল নিজের সুখের জন্য আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির পরিবারকে, যারা আমাকে তাদের দ্বিতীয় সন্তান মনে করে, তাদের এত বড় লজ্জা উপহার দিতে ।



তাছাড়া আকাশ ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর কোন যোগ্যতাই আমার নেই । তিনি একজন পরিশ্রমী সেটেল্ড ইন্জ্ঞিনিয়ার । আর আমি ? কাল কি হবে আমার সেটাও জানি না । আমার মত চালচুলো হীন উড়াধুড়া পাবলিকের সাথে রিয়া কখনো পূর্ণ সুখী হতে পারত না । আকাশ ভাই রিয়াকে যা যা দিতে পারবেন, আমি তার এক দশমাংশও দিতে পারবো না । রিয়ার জন্য আমি নই, আকাশ ভাই ই পারফেক্ট ।



কিন্তু এসব কথা রিয়াকে কে বোঝাবে ? সে যদি বিন্দুমাত্রও আঁচ করতে পারত আমি তাকে ভালবাসি, সব ছেড়ে ছুড়ে আমার সাথে বেরিয়ে আসত । এতে হয়ত একা আমি সুখী হতাম । কিন্তু বাকি সবাই.....??



তাই আমার কাছে চুপ থাকাটাই সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে ।

রিয়া কখনো না ই বা জানল, আমিও তাকে ভালবেসেছিলাম ।

সে যেটা জেনেছে, সেটা হোক না ভুল । ভুলটা জেনেই সে সুখে থাকুক ।



বন্ধু, তোর সুখই আমার সুখ । কারণ, তোকে অনেক বেশী ভালবাসি যে......



(The End)



কৃতজ্ঞতাঃ তৃতীয় প্যারায় ব্যবহৃত মেসেজের কবিতাটি রাব্বী আহমেদ এর । তাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা কবিতা লিখার জন্য ।



ক্ষমা প্রার্থনাঃ তাসনুভা রিয়া (রিয়াপ্পি) , তৃপ্ত সুপ্ত (তৃপ্তিপু), কল্প বিলাসী (তন্নীবু), আয়েশা আক্তার (গুলাবী বানু), কল্প তরু (তরুপ্পি), ইমরান নিলয়, সালেহীন ইমন এবং হাসান মাহমুদ তুষার (ঠুসা) ভাই....

আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাই নামগুলো গল্পে ব্যবহার করেছি বলে ! (:পি)



উত্সর্গঃ পিংকি - দ্য গ্রেট । আমাদের পিনাক দা, পিকান দা, পিংপং, কিংকং, পিচ্চি.... উনার যে এত্তগুলা নাম !

পিনাক দার সাথে আমার পরিচয় খুব বেশী দিনের নয়, তবুও যেন মনে হয় কতদিনের পরিচয় !

আমারে এত্ত বেশী স্নেহ করেন, এত্ত বেশী উত্সাহ দেন..... বলে শেষ করা যাবে না ।



লাভ ইয়ু পিংকি.....

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৮

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন। ++++++++++

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪৭

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: Thanks......

২| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:৪৯

মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো....অসাম :-B :-B :-B

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: Thanks......

৩| ২২ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: মনোযোগ দিয়ে পড়লাম গল্পটা।

নিলয়, আপনার লেখনী ভাল। খুব সুন্দর সাবলীল বর্ণনা দেখলাম। কিছু যায়গা একটু বেশি ক্লিসে মনে হয়েছে। অবশ্য রোম্যান্টিক লেখায় একটু লুতুপুতু ভাব এসেই যায়, এভয়েড করার উপায় নেই। আমার মনে হয় আপনি থিম নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারেন। আরও ভাল ও ইউনিক থিম নিয়ে লিখতে চেষ্টা করুন।

শুভকামনা রইল।

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: Thanks......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.