নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জন্মগত ভাবেই একজন উৎকৃষ্ট পাঠক । তবে একাকীত্ব কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট মানের লেখাও লিখি ।

ফরহাদ আহমদ নিলয়

ফরহাদ আহমদ নিলয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমীমাংসিত.....

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০১

স্টেশনের ওয়েটিং বেন্ঞ্চিতে বসে আছে মাইশা । তার বসার ভঙ্গিটি বিষণ্ন । সাড়ে এগারোটায় তার ট্রেন । সময় প্রায় হয়ে এল । কিন্তু তার ব্যস্ত চোখ এখনো এদিক ওদিক কাকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে । সে চোখে স্পষ্ট হতাশা, আশা ভঙ্গের যাতনা ।



মাইকে লাস্ট এনাউন্সিং টা শোনা গেল । ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল সে । ধীর পায়ে এগিয়ে গেল তার কামরার দিকে । তার হতাশা এখন ক্ষোভে রূপ নিয়েছে । 'হারামির এত্তবড় সাহস, আমাকে সি অফ করতে আসে না ! আর জীবনেও বদমাইশটার সাথে কথা বলব না'- দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে সে ।



ট্রেনের সিঁড়িতে পা রাখতেই চোখের কোণা দিয়ে কাকে যেন ছুটে আসতে দেখা গেল । সেদিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারল নীল আসতেছে । এতক্ষণে ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসি দেখা গেল । হাঁদারামটা অলওয়েজ লেট । আর একটু দেরি হলে তো দেখা হওয়াটাই মিস হয়ে যেত ।



নীল এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল- স্যরি স্যরি স্যরিরে...

মাইশার কন্ঠে কপট রাগ- তোরে না বলছি ঐ বাজে শব্দটা আমার সামনে আর উচ্চারণ করবি না ? এত দেরি করলি ক্যান ? আর একটু হলেতো দেখাই হত না । যা তোর সাথে আজ আর কথা নাই !

নীল কান ধরে ন্যাকু ন্যাকু স্বরে বলে- এত রাগ করিস ক্যান ? এই যে দেখ- কান ধরছি । আর কোনদিনও দেরি হবে না ।



নীলের মুখের দিকে তাকাতেই মাইশার সব রাগ কর্পূরের মত উবে গেল । ছেলেটার চেহারায় এত মায় কেন ? এই চেহারার দিকে তাকিয়ে কি রাগ করে থাকা যায় ?



:- হয়েছে হয়েছে । আর ঢং করতে হবে না । বাকিরা কই ?

:- বাকিরা আসবে না ।

:- ওহ । কিন্তু তুই এত দেরি করলি কেন ?

:- একটু আটকে গিয়েছিলাম রে...

:- তা তো আটকাবিই ! তোর মাথায় কি হয়েছে ?

:- আর বলিস না । ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট ।

:- এক্সিডেন্ট !? কি হয়েছে ? কেমনে ? মাথা ফাটছে ? বেশী নাকি ?

:- উঁহু ! এত ব্যস্ত হইস না । সামান্যই....

:- সত্যি তো ?

:- হুম ।

:- তুই যা বেখেয়ালী ! এখনো যে মরছ নাই এটাই ভাগ্য ।

:- কে বলল মরিনি ?

:- তুই মরেছিস ? তাহলে তো ভালই ! বন্ধুদের মাঝে দু একটা ভূত থাকা মন্দ না !

:- একটা কথা বলি ?

:- বল...

:- তোকে না আজ খুব সুন্দর লাগছে !

:- তোর কাছে আমাকে কোনদিন সুন্দর লাগেনা বলতো ?



মাইশা হেসে উঠল । নীলের চেহারায় লজ্জার আভা । আচ্ছা, ছেলেটা এত লাজুক কেন ?



প্রচন্ড একটা হুইসেল । তারপর ট্রেন চলতে শুরু করল । মাইশা গেইটে দাঁড়িয়ে, নীল প্লাটফর্ম ধরে ট্রেনের সাথে হাঁটছে ।



:- তোকে আরেকটা কথা বলি ?

:- হ্যাঁ বল না....

:- তোকে খুব ভালবাসি রে....

:- জানি তো !

:- না জানিস না তুই ।



মরিয়া হয়ে উঠল নীল । সে জানে মাইশাকে কিছু বলার এটাই তার শেষ সুযোগ । এই সুযোগ দ্বিতীয় বার কখনো আসবে না । তাই সবটুকু সাহস, সবটুকু শক্তি একত্রে করে বলে উঠল- তুই জানিস না । তুই জানিস আমি শুধুই তোর বন্ধু । কিন্তু তুই জানিস না- আমার সবটুকু জুড়েই আছিস শুধু তুই ।



:- নীল, তুই এসব কি বলছিস ?

:- যেটা শুনছিস সেটাই । তোকে আমি ভালবাসি । অনেক অনেক বেশী ভালবাসি । এ ভালবাসা বন্ধুর ভালবাসা নয় । তার চেয়েও অনেকখানি বেশী কিছু ।



ট্রেনের গতি বাড়ছে । এখন আর হেঁটে এর সাথে ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব না । নীল দৌড়াচ্ছে, তার দৃষ্টি মাইশার দিকে ।



:- তুই জানিস নীল, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । দুদিন পরেই আমার বিয়ে । আমি গ্রামে ফিরছিই বিয়ে করার জন্য । তুই এটা জানিস । দুইদিন পর তোরা সবাই সেখানে আসছিসও । আর তুই কিনা আজ আমাকে এসব বলছিস ?

:- হয়ত আর কখনো বলার সুযোগ পাবো না, তাই বলছি রে....

:- না, এখন আমি কিছু শুনবো না । ভালই যদি বাসতি, তাহলে আগে বলতি ? এখন কেন বলছিস ? এখন আমি কিছু শুনবো না । তুই চলে যা নীল.... তুই চলে যা এখান থেকে....



নীল থমকে দাঁড়িয়েছে । মাইশা দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে । ভালবাসার মানুষটির এভাবে চলে যেতে দেখা অনেক কষ্টের... অনেক অনেক কষ্টের একটি দৃশ্য ।



নীলকে চলে যেতে বলেই মাইশা ভিতরে চলে এল । প্রচন্ড কান্না আসছে তার । চেপে রাখার কোন চেষ্টাই সে করল না । ডুঁকরে কেঁদে উঠল ।



কেন কাঁদছে সে ? প্রিয় বন্ধুটিকে ফিরিয়ে দেয়ার কষ্টে ? নাকি পরম আরাধ্য ভালবাসাকে হাতের নাগালে পেয়েও ধরতে না পারার যন্ত্রনায় ?

সে জানে না । সে কিছুই জানে না.....



(লুতুপুতুর পাঠকরা এখানেই ক্ষ্যামা দেন ! বাকি অংশটা তাদের জন্য না । আর কিউরিয়াস পাঠকরা- যারা বাকিটা পড়তে চান, নিজ দায়িত্বে পড়বেন । পড়েই চুপ মেরে যাবেন । কোন ব্যাখ্যা চাইবেন না !)



জানালার পাশেই মাইশার সিট । অঝোর ধারায় কাঁদছে সে । এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল । বান্ধবী তিশা করেছে । নিজেকে কোনমতে সামলে ফোন ধরল ।



:- হ্যাঁ বল....

:- কোথায় তুই ?

:- এই তো... ট্রেনে ।

:- ট্রেন কি ছেড়ে দিয়েছে ?

:- এইমাত্র ছাড়ল । তোরা আমাকে সি অফ করতে আসলি না কেন ?

:- তোর কি আজকে যেতেই হবে ? আজ না গেলে হয় না ?

:- কেন ? কি হয়েছে ?

:- খুব বেশী দরকার না হলে সামনের স্টেশনে নেমে যা ।

:- আরে আজিব ! কি হয়েছে সেটা তো বলবি !

:- নীল আর নেই ।

:- নেই মানে ? কোথায় গেছে ?

:- মাইশা, নিজেকে একটু শক্ত কর.... নীল মারা গেছে ।

:- ফাইজলামি করছ ? একটু আগেই তো.....



জানালা দিয়ে পিছনে তাকাল মাইশা । সেখানে কেউ নেই । থাকার কথাও ছিল না ।



:- একটু আগে কি ?

:- একটু আগেই তো ওর সাথে দেখা হল । আমাকে সি অফ করতে এসেছিল ।

:- মাথা খারাপ তোর ? সাড়ে দশটায় ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিল । সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু লাভ হয় নি । ব্রেনে প্রচুর ড্যামেজ হয় । রিকভার করা যায় নি ।

:- কি বলছিস তুই ? আমি....

:- দেখ মাইশা, তোর হয়ত কোথাও ভুল হচ্ছে । আমরা সবাই না তোকে সি অফ করতে যাওয়ার কথা ছিল ? ওকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলেই তো যাওয়া হয়নি । এক্সিডেন্টের পর থেকেই ওর সাথে আছি । একটু আগে ডাক্তার তাকে অফিসিয়াল ডেড ঘোষণা করে । তোকে অনেকবার ফোন দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তোর ফোন আনরিচেবল ছিল । ও তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল । ওকে শেষ দেখাটা দেখার জন্য কি তুই থাকবি না ? প্লিজ, তুই চলে আয় না....



তিশা আরো অনেক কথাই বলে চলেছে । কিন্তু সেসবের কিছুই মাইশার কানে ঢুকেছে না ।

বন্ধু বিয়োগের ব্যথা তাকে এখনো স্পর্শ করছে না । সে বুঝতে পারছে না আসলে তার সাথে কি হচ্ছে ? নিজেকে কেমন যেন অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে ।





[[পনের বছর পর]]



:- স্কুল থেকে ফিরে আন্টিকে একটুও জ্বালাবে না, ঠিকাছে আব্বু ?

:- ঠিকাছে আম্মু ।

:- দুপুরে ঠিকমত খেয়ে নিবে, বিকেলে জুস খেয়ে বাইরে খেলতে যাবে, ভিডিও গেমস নিয়ে একদম বসবা না । মনে থাকবে তো ?

:- বললাম তো থাকবে । একই কথা প্রতিদিন বলো কেন ? আমি তো এখন আর বাচ্চা নাই !

:- ওরে আমার পিচ্চিরে..... তিনি তো এখন বড় হয়ে গেছেন ! দেখি তো কত বড় হয়েছেন ?

:- ধরবা না আম্মু... ধরবা না... ধরবা না....



মাইশা হৃদয়কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে যায় । কিন্তু হৃদয় হাত গলিয়ে বেরিয়ে যায় । যা দুষ্টু হয়েছে পিচ্চিটা ! সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসে মাইশা । তারপর ব্যাগ নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় ।



মাইশা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর । অনেক বড় পোস্ট, দায়িত্বও অনেক । সময় মত বাসায় আসা হয় না তার । এজন্য বাচ্চাকে নিয়ে টেনশনের শেষ নেই । হৃদয়, তার ছেলে । তাকে দেখাশোনার জন্য একজন গভর্নেস আছে । কিন্তু তারপরও সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না । মায়ের মন তো !



পুরো কাহিনী না জানা থাকলে বাইরে থেকে দেখে কেউই বুঝতে পারবে না যে হৃদয় তার গর্ভের ছেলে না । তাকে সে একটি অরপানেজ থেকে দত্তক নিয়েছিল । সত্য ঘটনা হচ্ছে- মাইশা কখনো বিয়েই করেনি ।



সেদিন সামনের স্টেশনে নেমে গিয়েছিল সে । ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালের মর্গে, যেখানে তার প্রিয় বন্ধুটি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে । লাশেল পাশে বসে ছিল কিছুক্ষণ । তারপর তার কি হল কে জানে ?

সিদ্ধান্ত নিল সে আর বিয়ে করবে না । বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর বিয়েতে রাজি করাতে পারে নি ।



সে বিয়ে করেনি এটা সবাই জানে । কিন্তু কেন করেনি এটা কেউই জানে না । সব কথা কি সবার জানতে হয় ?

কিছু রহস্য না হয় অমিমাংসীতই থেকে যাক.....



(( The End ))





অফটপিকঃ বিখ্যাত ব্লগার নাজিম-উদ-দৌলা ভাইয়ের একটা গল্প পড়েছিলাম । সেখানে- নায়ক মারা যাওয়ার পরও ফিরে এসে তার বউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেয় ! আমার গল্প না হয় নায়ক মারা যাওয়ার পর এসে তার প্রেমিকাকে প্রপোজ করে গেল ! ক্ষতি কি ?



প্রথমেই বলেছি, গল্পের কোন ব্যাখ্যা চাইবেন না । পৃথিবীতে সব ঘটনার ব্যাখ্যা থাকতে হয় না ।

তবে আসল কথা হল- এই গল্পের কোন ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই । :P

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১৬

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: কিছু রহস্য না হয় অমিমাংসীতই থেকে যাক.....

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৯

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: :)

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্প ইন্টারেস্টিং!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৯

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: Thanks....

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

মারুফ মুকতাদীর বলেছেন: নিলু ভাই, ফেবুতে বলছিলাম,

“কে বলল মরিনি ?
ঃ- তুই মরেছিস ? তাহলে তো ভালই ! বন্ধুদের মাঝে দু একটা ভূত থাকা মন্দ না !”

এই লাইনটা দেখেই বুঝে গেছি, নায়ক অলরেডি অক্কা পাইসে, এখন পড়েও দেখলাম তাই। এখন বুঝছেন, কী বোঝাইছি কমেন্টে ?

গল্পে প্লাস!!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩০

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: Ohon bujchi.............. :P

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
একটু আধিভৌতিক রহস্য মন্ডিত গল্পে বর্ণনা নিয়ে কাজ করার কিছু স্কোপ রাখা ভাল। এনভাইরনমেন্টাল হরর বলে নতুন একটা টার্ম এখন অনেকেই ইউজ করে দেখি। অনেক বেশি ডায়লগ নিভর হয়ে গেলে মুল উদ্দেশ্য থেকে গল্প খানিকটা সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গল্পের থিম নিয়ে তো আরবলার কিছু নাই! আমার থিম নিয়ে লেখা গল্প যখন ভাল তো হবেই! :P তবে কিছু যায়গায় ইউনিকনেস চোখে পড়ার মত হয়েছে। সব মিলিয়ে গল্প খারাপ হয়নি :)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩২

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: Thanku vai....
Thanku :)

Amar problem holo ami dialouge nirvorota theke berute parchi na.....
Ki j kori ??????? :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.